Select Page

বাপবেটা কাহিনী : রাজ্জাক-বাপ্পারাজ

বাপবেটা কাহিনী : রাজ্জাক-বাপ্পারাজ

সব ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রিতেই জেনেটিক ফর্মের প্রতিভা আছে। কে কাকে ছাড়িয়ে গেল বা না গেল ঐ হিশাব কষা জরুরি না। জরুরি হচ্ছে কে কতটুকু নিজের প্রতিভার সবটুকুর মধ্যে দর্শককে দিতে পারল। নায়করাজ রাজ্জাকের ছেলে বাপ্পারাজ জেনেটিক ফর্মের প্রতিভা। বাপবেটা মিলে বাংলাদেশের বাণিজ্যিক চলচ্চিত্রকে সমৃদ্ধ করেছেন।

আশির দশকের জনপ্রিয় চলচ্চিত্র পত্রিকা ‘চিত্রালী’-তে বাপ্পারাজের ঢালিউড ইন্ডাস্ট্রিতে আগমন উপলক্ষে একটা কভার স্টোরি করা হয়েছিল। শিরোনাম ছিল-‘বাপ্পা এলেন।’ আমাদের শৈশব-কৈশোরের দিনগুলোতে বাপ্পা নামেই সবাই ডাকত। ছোট করে ডাকায় কিন্তু মিষ্টি লাগত শুনতে।

বলতে গেলে কেউ কারো মতো হতে পারে না। বাপের মতো হওয়া ছেলের পক্ষে সম্ভব না। নায়করাজ একটা ইতিহাস। বাপ্পারাজ তাঁর সুযোগ্য সন্তান চলচ্চিত্রে। রাজ্জাকের পরিচালনা ও পরিচালনার বাইরেও তাঁদেরকে এক ছবিতে দেখা গেছে। নায়করাজ পরিচালিত ‘প্রফেসর, প্রেমশক্তি, বাবা কেন চাকর, সন্তান যখন শত্রু, বাবা কেন আসামী, মরণ নিয়ে খেলা’ ছবিগুলোতে তাঁদেরকে একসাথে দেখা গেছে। রাজ্জাকের পরিচালনায় বাপ্পা ছবি করেছে কিন্তু একসাথে দেখা যায়নি এমন ছবি হচ্ছে ‘জিনের বাদশা, চাঁপা ডাঙ্গার বউ’ আবার অন্য পরিচালকের ছবিতে বাপবেটাকে একসাথে দেখা গেছে এমন ছবিও আছে। যেমন – শফিকুর রহমান পরিচালিত ‘ঢাকা-৮৬, রাজা মিস্ত্রী’, দেলোয়ার জাহান ঝন্টু পরিচালিত ‘স্বাক্ষর’ ইত্যাদি। গ্রাম-শহর প্রেক্ষাপটে ফ্যামিলি ড্রামা ঘরানার ছবিতে বাপবেটাকে দেখা গেছে।

বাপবেটার অন স্ক্রিন কেমিস্ট্রি কেমন এবার আসা যাক এ প্রসঙ্গে। তাঁরা দুজন পর্দায় সত্যিকারের বাবা-ছেলে হয়ে যান। একেবারে চরিত্রের সাথে মিশে যান। ‘বাবা কেন চাকর, সন্তান যখন শত্রু’ এই দুটি ছবিই যথেষ্ট উদাহরণের জন্য। বাবার শেষ বয়সের সাংসরিক গ্লানিকে নিজে ভাগ করে নিতে অবদান রাখার যে অভিনয় বাপ্পারাজ করেছে তার কোনো তুলনা হয় না। বাপ্পা যখন ঠেলাগাড়ি চালানো অবস্থায় বাবাকে দেখে তার প্রতিক্রিয়া যেমন হৃদয়টাকে ছিন্ন করে দেয় পাশাপাশি ছেলে বাপ্পাকে বড় ছেলে মিঠুনকে অপমানের দায়ে শাসন করার সময় বাবা হিশাবে তারও অভিনয় দর্শকের হৃদয় স্পর্শ করে। ‘সন্তান যখন শত্রু’-তেও বাবার রেখে যাওয়া পারিবারিক দায়িত্ব পালনে বাপ্পা ছিল অসাধারণ। ‘ঢাকা-৮৬, রাজা মিস্ত্রী’ ছবি দুটিতে তারা ছিলেন মামা-ভাগ্নে। মামা-ভাগ্নের ভূমিকায় অনবদ্য দুজনই। ‘ঢাকা-৮৬’ ছবিতে পার্টি সং-এ রাজ্জাকের লিপে ‘আউল বাউল লালনের দেশে’ গানটিতে অসাধারণ পারফরম্যান্স ছিল। ‘রাজা মিস্ত্রী’ ছবিতেও দায়িত্বশীল মামার চরিত্রে রাজ্জাক অসাধারণ এবং বাপ্পারাজ তার যোগ্য ভাগ্নে। ‘প্রফেসর’ ছবিতে বাপবেটার পরিচয় হবার আগে কমেডিও ঘটে এবং খুবই উপভোগ্য। ক্লাসরুমে প্রফেসর রাজ্জাকের ক্লাসে ব্ল্যাকবোর্ডে ডিম ছুঁড়ে মারে ছাত্র বাপ্পা ও তার দল। রাজ্জাক তাদের সাথে একটা খেলা করেন ক্লাসে। বাকি ডিমগুলো ছুঁড়তে বলেন চ্যালেন্জ ছুঁড়ে দিয়ে। বাপ্পা, নাসির খান-রা ডিম ছুঁড়লে রাজ্জাক খপাখপ ধরে ফেলেন সব। তারপর নিজে ছুঁড়তে থাকেন তাদের দিকে। বাপ্পা, নাসির খান ও বাকি সবার গায়ে ডিম ফেটে অবস্থা কাহিল করে তাদের। অসাধারণ ছিল। রাজ্জাক পরিচালিত যে ছবিগুলোতে বাপবেটা ছিলেন না সেগুলোতে বাপ্পার পারফরম্যান্স ছিল বাবার পরিচালনার সুযোগ্য সম্মান বজায় রাখার এক একটা উদাহরণ। ‘জিনের বাদশা’ কিংবা ‘চাঁপা ডাঙ্গার বউ’ ছবি দুটিতে বাপ্পার গ্রামীণ ভিন্ন দুটি গল্পে চরিত্রকে জীবন্ত করে তোলার দক্ষতা ছিল। আদর্শ সন্তানের পক্ষেই সম্ভব বাবার সম্মান অক্ষুণ্ন রাখা।

ছোট ছেলে সম্রাটের সঙ্গে রাজ্জাক। তাকেও একাধিক সিনেমায় দেখা গেছে।

বাপবেটার কাহিনী ঢালিউডে আরো আছে তবে সবগুলো জেনেটিক ফর্মের উপযুক্ত প্রতিভা নয়। রাজ্জাক-বাপ্পারাজ ঢালিউডে সবচেয়ে উজ্জ্বল এবং দৃষ্টান্তমূলক উদাহরণ প্রতিভার পরবর্তী ধারা এবং চলচ্চিত্রে তার যথার্থ উপস্থাপনের দিক থেকে। তাঁদের কাছে দর্শক ঋণী।


Leave a reply