বাপ্পারাজ-শাবনাজ জুটি
বাপ্পারাজ-শাবনাজ মানসম্মত একটি জুটি ছিল। জুটিটা ন্যাচারালি ভালো লাগে। কিছু জুটি আছে যাদের নিয়ে কথা হয়না কিন্তু হওয়া উচিত।
এ জুটির মধ্যে দারুণ রসায়ন ছিল। তাদেরকে দেখলে মনে হত কো-আর্টিস্টের মধ্যে যে বোঝাপড়া থাকলে অভিনয়টা মন ভরে দেখা যায় তারা ঠিক তাই।
এ জুটির ‘প্রেমের সমাধি’ ছবিটা ক্লাসিক। ছবি ও ছবির গান দুটোই। ‘তুমি বন্ধু আমার চিরসুখে থেকো, জীবনের নৌকা চলে’ দুটি গানই অসাধারণ। প্রথমটা সর্বাধিক জনপ্রিয় গান তাদের। ‘প্রতিশ্রুতি, নির্মম, গরিবের ওস্তাদ, রাগ অনুরাগ, চিরশত্রু, তপস্যা’ ছবিগুলো চমৎকার গল্পের ও উপস্থাপনার।
বাপ্পারাজ-শাবনাজ জুটির সেরা ছবি নিঃসন্দেহে ‘প্রেমের সমাধি।’ গ্রাম-শহর দুই প্রান্ত থেকে পুতুল দিয়ে কথা বলত দুজন। অদ্ভুত এক রোমান্টিসিজম। আজকের দিনে ট্রলের বিষয় হয়ে গেলেও নব্বই দশকীয় প্রেক্ষাপটে এটি আইকনিক দৃশ্য ছিল। ‘তুমি বন্ধু আমার চিরসুখে থাকো’ গানটি কালজয়ী হয়ে আছে।
‘প্রতিশ্রুতি’ ছবিতে টাচি একটা সিকোয়েন্স ছিল। শাবনাজের সাথে প্রেম হবার পরে হারিয়ে যায় বাপ্পা। অনেকদিন পর যখন দেখা হয় দুজনের বাপ্পা তখন অটোরিক্সাতে চালক। শাবনাজ ওঠে কার অটোরিক্সাতে। বাপ্পা হঠাৎ থামায় শাবনাজ ভয় পায়। বাপ্পা থামিয়ে হাঁটতে থাকে। শাবনাজ পেছন থেকে ডাকে আর বলে-‘আপনি কোথায় নিয়ে এলেন আমাকে?’ বাপ্পা একটা নদীর সামনে গিয়ে দাঁড়ায় তারপর পুরনো স্মৃতি মনে করিয়ে শাবনাজকে বলে-‘দেখো তো নদীটা চিনতে পারছ কিনা।’ শাবনাজের সব মনে পড়ে বাপ্পা ঘুরে দাঁড়ায় আর শাবনাজের চোখে আসে প্রেমিককে ফিরে পাবার সুখের অশ্রু। টাচি ছিল সিকোয়েন্সটি।
‘তপস্যা’ ছবিতে ‘গীতি আমার গীতি’ গানটা জনপ্রিয়-
‘গীতি আমার গীতি
তুমি প্রেম-প্রীতি
আমার অন্তরে তোমার বসতি’।
রেডিও-র ‘অনুরোধের আসর গানের ডালি’ অনুষ্ঠানে গানটা প্রচারের জন্য শ্রোতারা চিঠি লিখত। এ ছবির ‘তোমারে যে ভালোবাসি’ গানটিও চমৎকার রোমান্টিক। সমুদ্রসৈকতে বাপ্পা-শাবনাজ রোমান্সের সাথে সহশিল্পীদের নাচ দারুণ লাগে।
জনপ্রিয় ছবি ‘রাগ-অনুরাগ’-এ ডাবল রোলের শাবনাজ অসাধারণ ছিল। কাকলি আর কুহেলি-র অদলবদল খেলা জমেছিল দারুণ। বাবা-মাকে চমকে দিতে কান্ড করত দুজনে। বাপ্পার সাথে যে শাবনাজ ছিল সে ছিল চঞ্চল।
‘নির্মম’ ছবিতে শাবনাজ ছিল প্রতিবাদী। বাপ্পা তার সাথে তাল মেলাত। এ ছবিতে অসাধারণ অভিনয়ের জন্য শাবনাজ জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পেয়েছে।
‘চিরশত্রু’ ছবিতেও বাপ্পারাজ-শাবনাজের জুটির ভালো রসায়ন ছিল। বিপথে যাওয়া বাপ্পাকে ভালো পথে আনতে শাবনাজের ভূমিকা থাকে।
‘আজকের হাঙ্গামা’ এ জুটির উল্লেখযোগ্য একটি ছবি। লেডি অ্যাকশন ছবি হওয়ায় শাবনাজের চরিত্রের আধিপত্য বেশি ছিল আর শাবনাজের প্রতিশোধপর্বে তাকে সাহায্য করে বাপ্পারাজ।
বাপ্পারাজ-শাবনাজ সুন্দর জুটি আমাদের ছবি-র। এ জুটিকে ভালো মানের ছবির জন্য দর্শক মনে রাখবে।