Select Page

বেঈমান কাটে বেঈমানকে!

বেঈমান কাটে বেঈমানকে!

নাম : ক্যাপ্টেন খান
ধরন : গ্যাংস্টার-ক্রাইম-থ্রিলার
পরিচালক : ওয়াজেদ আলী সুমন
কাস্ট : শাকিব খান (আসিফ খান/ক্যাপ্টেন খান), শবনম ইয়াসমীন বুবলি (রিয়া/ মুসকান), খালিদ হোসেন সম্রাট (জয়), আশীষ বিদ্যার্থী (পুলিশ কমিশনার আব্দুর রহমান), মিশা সওদাগর (ইব্রাহীম), অমিত হাসান (আরকে), ডন (টনি), শিবা শানু (আব্বাস), মারুফ খান, নীল (মুন্না), সাদেক বাচ্চু (জামাল), পার্থ সারথী (ককটেল খান), সুব্রত (ইন্সপেক্টর আফজাল), কমল পাটেকার, ডি জে সোহেল, যাদু আজাদ, ববি (ডিরেক্টর), সুমিত গাঙ্গুলী প্রমুখ।
মুক্তি : ২২ আগস্ট, ২০১৮
ভাষা : বাংলা

নামকরণ : ছবির প্রধান চরিত্রের নামানুসারে এর নামকরণ করা হয়েছে “ক্যাপ্টেন খান”। মূলত পুরো ছবির গল্পটি তাকে ঘিরেই। তাই নামকরণ হিসেবে “ক্যাপ্টেন খান” যথার্থ।

কা.চি.স (কাহিনী+ চিত্রনাট্য+ সংলাপ) : ছবিটি ২০১৪ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত তামিল মুভি “আনজান” এর আনঅফিসিয়াল রিমেক। তাই এর গল্প সম্পর্কে খুব বেশি কিছু বলবো না।

আসিফ খান, এক শারীরিক প্রতিবন্ধী, চট্টগ্রাম থেকে ঢাকায় আসে তার গুম হওয়া ভাইয়ের খোঁজে। তিনি শহরে ঘুরে ঘুরে তার ভাইয়ের ঘনিষ্ঠ যারা ছিল তাদের সাথে যোগাযোগ করার চেষ্টা করে এবং তার ভাইয়ের গুম হওয়ার রহস্য উদঘাটন করার চেষ্টা করেন। এরপরই বের হয়ে আসে একে একে সবকিছু। তার ভাই ক্যাপ্টেন খান এবং তার গ্যাং-এর কর্মকান্ড কেমন ছিল, সবার সাথে তাদের বন্ধুত্ব-শত্রুতা, ক্যাপ্টেন খান কীভাবে গুম/খুন হয়, এর পেছনে কাদের হাত ছিল এবং সবকিছু জানার পর আসিফ কী ব্যবস্থা নেয়… এর সবকিছু মুভি দেখার পরই জানা যায়।

বাণিজ্যিক ছবি হিসেবে ছবির গল্প বেশ উপভোগ্যই ছিল। কিন্তু ছবির স্ক্রিনপ্লে, অর্থাৎ চিত্রনাট্য প্লটহোলে ভরা! কোনোরকম স্পয়লার দিতে চাই না, তাই সেসব প্লটহোল সম্পর্কে আলোচনা করছি না। অরিজিনাল ছবিতেও এই প্লটহোলগুলো ছিল, এখানেও সেগুলো রেখে দেওয়া হয়েছে। একটু খেয়াল করলেই বিষয়গুলো ক্লিয়ার করা যেত।

ছবির ডায়লগ মোটামুটি ভালো। অনেকগুলো পাঞ্চলাইন ছিল উপভোগ করার মতো, কমার্শিয়াল ছবিতে যেটা খুবই দরকার।
এ অংশ কে দিচ্ছি ১০০ তে ৬০।

টিমওয়ার্ক : ক্যাপ্টেন খান হিরোইজম বেইজড ছবি। তাই স্বাভাবিকভাবেই এ ছবির প্রাণ শাকিব খান। আসিফ চরিত্রে তিনি তার ইনোসেন্ট লুক আর পারফেক্ট অভিনয় দিয়ে একদম খাপ খেয়ে গেছেন। ক্যাপ্টেন খান চরিত্রেও তার অভিনয় মানানসই ছিল; তবে এই চরিত্রে তার লুক আরো স্টাইলিশ হওয়া উচিত ছিল। কথাটি বলছি কারণ, এর আগে আমরা শাকিব খানকে “বসগিরি”, “রংবাজ” প্রভৃতি ছবিগুলোতে ভিন্নধর্মী স্টাইলিশ লুকে পেয়েছি। আর ছবিটির এই ক্যারেক্টার তো স্টাইলিশ লুক দাবি করেই! এ সমস্যা ছাড়াও শাকিবের মেদবহুল শরীর একজন গ্যাংস্টারের চরিত্রে বেশ দৃষ্টিকটু লেগেছে।

শবনম বুবলির অভিনয়ে দিন দিন উন্নতি হচ্ছে। তার ডাবিং বেশ ভালো হয়েছে। মাথায় ওড়না থাকা অবস্থায় এবং বিয়ের সাজে তাকে অনেক বেশি সুন্দর লেগেছে।

ছবিতে চমক ছিল মিশা সওদাগরের অভিনয়। মেইন ভিলেন হিসেবে শাকিব খানের সাথে একদম পাল্লা দিয়ে অভিনয় করেছেন। তার পরিহিত কস্টিউম, গেটআপ জোশ ছিল। পাশে বসে থাকা অনেকেই মুখেই এইরকম কথা শুনেছি, “মিশা সওদাগর রে অনেক মানাইছে সাদা স্যুট, সাদা দাড়িতে; পুরাই মাফিয়া ডনের মতো”। তার চরিত্রে ব্যবহৃত পলিউশন সম্পর্কিত ডায়ালগগুলো অনেক বেশি উপভোগ্য ছিল। আরেকটা কথা বলা অবশ্যই প্রয়োজন। সম্ভবত প্রায় দুই বছর পর শাকিব-মিশা জুটি পর্দায় আবার হাজির হয়েছে; তাই তাদের নায়ক-ভিলেন জুটিটা আর পূর্বের মতো একঘেয়েমি লাগেনি। সবকিছুতেই একটা সময় ব্যবধান থাকা উচিত; কোনো কিছুই ঘনঘন হলে তা ভালোলাগে না, সেটা যতই ভালো হোক।

ছবিতে জয় চরিত্রে সম্রাটের অভিনয় ছিল আমার কাছে এ ছবির সবচেয়ে দূর্বল দিক। তার অভিনয়, এক্সপ্রেশন, ফাইটিং স্কিল, বডি ফিটনেস.. কোনোকিছুই এই চরিত্রের সাথে যায়নি। চরিত্রটি অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ ছিল, এবং এই চরিত্রে সুযোগ ছিল নায়কের সাথে পাল্লা দিয়ে অভিনয় করার। কিন্তু জয় চরিত্রের অভিনয়ে নিরাশ হয়েছি। যেখানে শাকিব খান মেদবহুল শরীর নিয়েও চেষ্টা করেছেন যতটুকু সম্ভব রাফ অ্যান্ড টাফ লুকে থাকা; ঠিক সেখানে তার এই “গুলুগুলু” টাইপের লুক একদমই ভালো লাগেনি। কাস্টিংটা ভুল ছিল।

সাপোর্টিং কাস্টে যারা ছিলেন তাদের অভিনয়েও যথেষ্ট দূর্বলতা ছিল। ডন এবং শিবা শানু… দুজনের অভিনয়ই গতানুগতিক লেগেছে; ভিন্নতা ছিল না। অমিত হাসানের অভিনয়ও গতানুগতিক ছিল, কিন্তু তার লুকে কিছুটা ভিন্নতা দেখা গেছে। আশীষ বিদ্যার্থীর চরিত্রের স্ক্রিনটাইম বেশ কম ছিল। যতদুর মনে হলো তার ডাবিং অন্য আরেকজনকে দিয়ে করানো হয়েছে। সাদেক বাচ্চুর ডায়ালগ ডেলিভারিতে পূর্বের সেই উচ্চকিত ভাবটা ছিল না; এটা একটা স্বস্তির ব্যপার ছিল।

এই ছবিতে সাপোর্টিং কাস্টের ছড়াছড়ি। ছবি দেখার সময় মনে হচ্ছিল, বাংলা কমার্শিয়াল মুভির ছোট-বড় প্রায় সব ভিলেনকে একসাথে একপর্দায় দেখতে পাচ্ছি। মারুফ খান, নীল, ডি জে সোহেল, জাদু আজাদ, সুব্রত, কমল পাটেকারসহ আরো অনেকে আছেন যারা ছোটছোট রোল প্লে করেছেন। এদের আসলে এক্সট্রা কিছু দেখানোর মতো ছিল না, তাই যা দিয়েছেন মোটামুটি ঠিকঠাক।

এ অংশ পাবে ১০০ তে ৬৫।

কারিগরি : ছবির দেখতে দেখতে মনে হয়েছে, এই ডিপার্টমেন্টে প্রযোজক টাকা ঢালতে কোনোরকম কার্পণ্য করেননি। তার পক্ষে যা যা করা সম্ভব ছিল তার সবই করেছেন।

এছবির দুইটি সিকুয়েন্স নিয়ে বেশ আতংকেই ছিলাম। ভাবছিলাম ভালো করে দেখাতে পারবে কিনা.. এর একটি সন্তোষজনক ছিল!

প্রথমত, ক্রিকেট স্টেডিয়ামে হওয়া সিক্যুয়েন্সটি। দুই বছর আগে “পূর্ণদৈর্ঘ্য প্রেম কাহিনী ২” আমাদের যা খেলা দেখিয়েছে… সেটা দেখার পর এবার বেশ আতংকেই ছিলাম। আবার না লেইম জিনিস দেখা লাগে! তবে মনে শান্তি লেগেছে; কারণ সিক্যুয়েন্সটি ডিরেক্টর ওয়াজেদ আলী সুমন মোটামুটি ভালোই ফুটিয়ে তুলতে পেরেছেন। অন্ততঃ লেইম হয়নি এবং মেকি মনে হয়নি। ভিএফএক্সের কাজ অনেক ভালো হয়েছে।

দ্বিতীয়ত, ট্যাক্সি গ্যারেজে হওয়া এ্যাকশন সিক্যুয়েন্সটি। এখানকার এ্যাকশন সিনটি আগ্রহের কেন্দ্রবিন্দুতে ছিল, আবার সিক্যুয়েন্সটি ফুটিয়ে তুলতে পারবে কিনা এ নিয়ে সংশয়ও ছিল। এবার আর আমি সন্তুষ্ট হতে পারলাম না। ফাইট সিনগুলো তুলনামূলক দূর্বল হয়েছে। ফাইট সিনের ক্যামেরা ওয়ার্ক ও ভালো হয়নি। এছাড়াও ফাইটের দিক থেকে কেন জানি রাজেশ-শাকিব জুটি জমছে না। এর আগে শাকিবের “চালবাজ” এবং “ভাইজান এলো রে” তেও রাজেশ কান্নানের ফাইট কোরিওগ্রাফি দূর্বল লেগেছে। হয়তো ক্যামেরা কাজেও কিছু প্রব্লেম থাকতে পারে। ফাইটের সময় স্লো করে দেওয়া ক্যামেরার কাজ একদমই জমেনি। আমার মতে এটা ছিল ছবির ৩য় দূর্বলতা।

ফাইট সিনগুলো বাদে বাকি অংশের সিনেমাটোগ্রাফি ঠিকঠাক ছিল… ওয়াইড স্ক্রিণে শ্যুট হওয়াতে দেখতে ভালো লাগছিল। এডিটিং এর কাজে কিছু ভুল-ভ্রান্তি ছিল; অভারঅল ভালো ছিল। কালার গ্রেডিং এর কাজ অনেক ভালো লেগেছে, সাথে সেটের লাইটিং ও।

ছবির লোকেশন চয়েজ ছিল এছবির অন্যতম প্লাস পয়েন্ট; সাথে যে দামি দামি গাড়ি ব্যবহার করা হয়েছে, সেগুলোও আমার আশেপাশে থাকা দর্শকদের ভালো লেগেছে। কস্টিউম সিলেকশন ভালো ছিল।

আরেকটা দূর্বল দিক ছিল এছবির ব্যাকগ্রাউন্ড মিউজিক। অরিজিনাল অংশে যে বিজিএম ছিল তার প্রায় ৭০ ভাগ এখানেও ব্যবহার করা হয়েছে। আর বাকি ৩০ ভাগ একদমই ভালো হয়নি, আরো ভালো করার সুযোগ ছিল এখানে।

এ অংশ পাবে ১০০ তে ৭০।

বিনোদন : ছবিতে গান রয়েছে মোট ৪টি; যার মধ্যে একটি ছিল আইটেম সং। সঙ্গীতায়োজন করেছেন রাফাত। মোটামুটি আইটেম সং বাদে বাকি সব গানই ভালো লেগেছে। রাফাতদের মতো এমন আরো আন্ডাররেটেড কম্পোজার রয়েছে আমাদের দেশে, যারা ভালো কিছু দেখানোর ক্ষমতা রাখে। এদের সেই সুযোগ দেওয়া উচিত।

ছবিতে কমেডির তুলনায় সিরিয়াসনেস বেশি ছিল। তাই গল্পের টুইস্টগুলো ছিল ছবির মূল আকর্ষণ! কিছু কিছু জায়গায় দূর্বল অভিনয় এবং দূর্বল ব্যাকগ্রাউন্ড মিউজিকের কারণে টুইস্টগুলো জমেনি। সবমিলিয়ে মোটামুটি ভালো ছিল।

ছবিতে শাকিব-বুবলির রোম্যান্স তুলনামূলক কম ছিল; পক্ষান্তরে শাকিব-সম্রাটের অটুট বন্ধুত্ব বেশি ফোকাসে ছিল। এ গল্প সেটা ডিমান্ড করে।

এ অংশ পাবে ১০০ তে ৭০।

ব্যক্তিগত : “আনজান” ছবিটি আমি প্রায় দুই বছর আগে দেখেছি। এরপর আর রিসেন্ট টাইমে আর দেখা হয়নি। যাই হোক, “ক্যাপ্টেন খান” প্রসঙ্গে আসি।

“ক্যাপ্টেন খান” এর টিজার মনে যতটা আগ্রহ সৃষ্টি করছিল, এর একেকটি জঘন্য হল পোস্টার দেখে আগ্রহ ততটাই কমে যাছিল। তাই মোটামুটি ভালো/খারাপ নিয়েই দেখতে বসলাম। কি কি ভালো লাগলো, কি কি খারাপ লাগলো.. তা পূর্বেই বলে ফেলেছি।

তবে আমার মতে, এবার শাকিব খানের একটা ব্রেক নেওয়া উচিত। তার এই মেদ ঝরিয়ে আবার সেই “শিকারি” লুকে আসতে হবে। সাথে শাকিব-বুবলি জুটিরও একটা গ্যাপ দেওয়া প্রয়োজন। দু বছরের মধ্যে যদি কোনো জুটিকে ৭ বার বড়পর্দায় দেখা যায়, তাহলে যেকোনো জুটিই একঘেয়েমি পর্যায়ে চলে যায়। এই যেমন, এই ছবিতে শাকিব-মিশাকে পেলাম প্রায় ২ বছর পর (‘পাংকু জামাই’ বাদে); তাদের হিরো-ভিলেন দ্বন্দ্ব আমিসহ সবারই অনেক বেশি ভালো লেগেছে। আকাশ সেন এবার মিউজিক কম্পোজিং এ ছিলেন না, তাই গানে ভিন্ন্ররকম স্বাদ পেয়েছি। এভাবে এই জুটিও একটি বিরতি দিলে পরবর্তীতে ভালো লাগবে।

সবমিলিয়ে “ক্যাপ্টেন খান” আমার কাছে এভারেজ লেগেছে। হ্যাঁ, এটা ঠিক, ৬০ কোটি রূপির সাথে ৪ কোটি টাকার তুলনা যায় না। আর সাউথের ফাইট কোরিওগ্রাফি আমরা কোনভাবেই আশা করতে পারি না। কিন্তু সাপোর্টিং কাস্টগুলোর অভিনয় দূর্বলতা, ব্যাকগ্রাউন্ড মিউজিকে দূর্বলতা… এগুলো কোনভাবেই বাজেট দিয়ে কভার করা যায় না। এর জন্য ডেডিকেশনের প্রয়োজন হয়। এদিক থেকে “ক্যাপ্টেন খান” অরিজিনাল মুভি থেকে পিছিয়ে।

রেটিং:- ৬.৫/১০

ছবিটি কেন দেখবেন : এই প্রথমবার মনে হলো শাপলা মিডিয়া কোনো বস্তাপচা দেয়নি। ওয়াজেদ আলী সুমন ডিজিটাল যুগে উত্তম আকাশ এবং সাফি উদ্দিন সাফি অপেক্ষা ভালো ডিরেক্টর। তাই মুভিটি একবার দেখতেই পারেন।

এছাড়া শাকিব ফ্যানদের তো এটা মাস্টওয়াচ! পাশাপাশি যারা গ্যাংস্টার-থ্রিলার টাইপ মুভি পছন্দ করেন তারা একবার দেখতে পারেন।

আর একটা কথা, এই ছবি দেখার সময় “আনজান” এর কথা ভুলে যান… তাহলে ভালো লাগবে।


মন্তব্য করুন