Select Page

ব্ল্যাক ওয়ার : বেটার দ্যান মিশন এক্সট্রিম

ব্ল্যাক ওয়ার : বেটার দ্যান মিশন এক্সট্রিম

জঙ্গিবাদে জড়িতরা যখন ধর্মীয় ব্যাখ্যায় তাদের পরিচালিত কার্যকলাপের ব্যাখ্যা দেয় এবং মানুষ হত্যাকে বৈধ বলে তার বিপরীতে সাধারণ মানুষ হত্যা ও মানবতাবিরোধী কাজের বিরুদ্ধে ধর্ম কি বলেছে সেটা তারা ভেবে দেখে কী! ‘ব্ল্যাক ওয়ার‘ ছবিতে এই মেসেজটি বিশেষ মনে হয়েছে।

‘মিশন এক্সট্রিম’-এর পরের পার্ট ‘ব্ল্যাক ওয়ার’। বর্তমান বিশ্বে জঙ্গিবাদ সার্বিকভাবেই চলমান সমস্যা। এ সমস্যাকে কেন্দ্র করে নির্মিত ‘মিশন এক্সট্রিম’ ছবির দ্বিতীয় পর্ব বা বর্ধিত অংশ ‘ব্ল্যাক ওয়ার’।

বাংলাদেশে ডিজিটাল ছবির সময় শুরুর পর থেকে প্রশাসনিক পর্যায়ের ভূমিকা নিয়ে ছবি নির্মিত হচ্ছে এটা ভালো দিক। ‘ঢাকা অ্যাটাক’, ‘সুপার হিরো’, ‘মিশন এক্সট্রিম’ ছবিগুলো সে ধরনের উদ্যোগেরই ফলাফল। ডিজিটাল ছবিতে বৈচিত্র্য এনেছে এ ছবিগুলো। রোমান্টিক ও ফ্যামিলি ড্রামার যে প্রচলিত ঐতিহ্য আমাদের চলচ্চিত্রে বরাবরই ছিল তার থেকে বেরিয়ে এ ধরনের ছবিগুলো অন্য ধরনের উদ্যোগের অংশ। ‘ব্ল্যাক ওয়ার’ তার সর্বশেষ সংযোজন। ছবির পরিচালনায় আছে সানী সানোয়ার ও ফয়সাল আহমেদ।

ছবির গল্পে জঙ্গিবাদ প্রধান। দেশের গণ্ডি পেরিয়ে আন্তর্জাতিকভাবে নিয়ন্ত্রিত জঙ্গি দলের শক্তিশালী নেটওয়ার্ক এবং পুলিশের বুদ্ধিদীপ্ত ও কৌশলী অপারেশনের মিশ্রণে নির্মিত হয়েছে ‘ব্ল্যাক ওয়ার’। ছবির নামকরণে বিশেষ একটি কারণও জানানো হয়েছে গল্পে।

পুলিশ থ্রিলারের বাকি ছবিগুলোর সাথে ‘ব্ল্যাক ওয়ার’-এর পার্থক্য হচ্ছে ক্রাইমের ক্লু গুলোকে আগে থেকে তেমনভাবে বোঝা যায়নি এবং সাসপেক্টেও রহস্য ছিল। জঙ্গিবাদের মূলকে চিহ্নিত করার কাজে অন্যান্য যেসব সমস্যা রাষ্ট্রীয়ভাবে হতে পারে তা দেখানোর সরেজমিন চেষ্টা ছিল। বিরতির আগে ও পরে স্টোরি টেলিং-এ ভারসাম্য ঠিক ছিল।

পারফরম্যান্সে আরিফিন শুভ-ই প্রথমে আসবে। অন্য ছবিগুলোর মতো এ ছবিতেও তার বডি ফিটনেস ও গেটআপের সংমিশ্রণ পারফেক্ট। নায়কোচিত ইমেজ আরো বেশি ইম্প্রুভড। বডি বিল্ডিয়ের জন্য তার ফাইটিংও অন্য নায়কদের থেকে আলাদা লাগে। সাদিয়া নাবিলার চরিত্রের ব্যাপ্তি ও অভিনয় ঐশীর তুলনায় বেটার। ঐশীর কিউটনেস আকর্ষণীয়। সুমিত বেশ ইম্প্রেসিভ। শতাব্দী ওয়াদুদ, শহীদুজ্জামান সেলিম, শামস সুমন প্রশাসনিক পদের চরিত্রে পারফেক্ট।

তাসকিন আহমেদ আগের ছবিগুলোর মতোই এ ছবিতে তার মতো চরিত্রে। তার অভিনয়, ব্যক্তিত্ব আকর্ষণ করার মতো কিন্তু তার চরিত্রায়ণ একইরকম হয়ে যাচ্ছে কিনা ভাবার অবকাশ আছে। মিশা সওদাগরের ব্যাপ্তি দর্শকভেদে পছন্দ নাও হতে পারে। ইরেশ যাকের কিছুটা ভিন্ন চরিত্রে ছিল। মনোজ প্রামাণিকের অভিনয় খুবই ভালো ছিল। আরেফ সৈয়দও নেগেটিভে বেশ ভালো।

ছবিতে মায়ের গানটি বেস্ট ছিল। অন্যগুলো প্রয়োজনীয় মনে হয়নি।

শহরের পাশাপাশি ও পাহাড়ি দুর্গম পথের লোকেশন ছিল। বিজিএম কোয়ালিটিফুল। ফিনিশিংটা আনএক্সপেক্টেড।

ছবির দুর্বল দিক বললে অপারেশনের মুহূর্তগুলোকে যথেষ্ট শক্তিশালী মনে হয়নি। প্রযোজনা থেকে যা জানা গেছে ছবির লজিস্টিক সাপোর্টে খরচ বেড়ে গিয়েছিল। এটা একটা কারণ হতে পারে। তবে চেষ্টা ছিল এন্টারটেইনিং করার।

সাধারণত সেকেন্ড পার্ট ভালো হয় না কিন্তু ‘ব্ল্যাক ওয়ার’ নির্মাণের দিক থেকে ‘মিশন এক্সট্রিম’-এর থেকে বেটার হয়েছে।

রেটিং – ৮/১০


লেখক সম্পর্কে বিস্তারিত

বাংলাদেশের চলচ্চিত্র গত শতকে যেভাবে সমৃদ্ধ ছিল সেই সমৃদ্ধির দিকে আবারও যেতে প্রতিদিনই স্বপ্ন দেখি। সেকালের সিনেমা থেকে গ্রহণ বর্জন করে আগামী দিনের চলচ্চিত্রের প্ল্যাটফর্ম গড়ে উঠুক। আমি প্রথমত একজন চলচ্চিত্র দর্শক তারপর সমালোচক হিশেবে প্রতিষ্ঠিত হবার স্বপ্ন দেখি। দেশের সিনেমার সোনালি দিনের উৎকর্ষ জানাতে গবেষণামূলক কাজ করে আগামী প্রজন্মকে দেশের সিনেমাপ্রেমী করার সাধনা করে যেতে চাই।

মন্তব্য করুন