Select Page

অযথা না টানলে দারুণ কিছু হতো ‘ব্ল্যাক মানি’

অযথা না টানলে দারুণ কিছু হতো ‘ব্ল্যাক মানি’
Black Money (7)

বাংলা সিনেমার ট্রেইলার সাধারণত খুব একটা নজর কাড়ে না। কাকরাইল পাড়ার নির্দেশে সব ট্রেইলারই পাঁচ মিনিটের ওপারে চলে যায়। খুব সাধারণ কাস্টিং হওয়া স্বত্বেও, ব্ল্যাক মানির ট্রেইলার থেকে ঝাঁঝালো মশলাদার এক মুভির ঘ্রাণ আসছিলো।

সায়মনের এইম ইন লাইফ একটাই, যে কোন মূল্যে টাকা কামানো (তা সে যে পথেই হোক না কেন)। শয়নে-স্বপনে তার মাথায় শুধু একলাফে কোটিপতি হবার চিন্তা। মিশা সওদাগরের এইম ইন লাইফ সাংসদ হওয়া  (তা সে যে পথেই হোক না কেন)। নির্বাচনে জেতার জন্য মিশা তার প্রতিদ্বন্দ্বী ডি জে সোহেলকে ১০০ কোটি টাকা দিলো। কিন্তু ঘটনাচক্রে সে টাকা গিয়ে পড়লো সায়মনের হাতে। অন্যদিকে কেয়া আর মৌসুমী হামিদ দুজনেই সায়মনকে ভালোবাসে। আর সায়মন এখনো ঠিক করে উঠতে পারেনি সে কাকে ভালোবাসে- ছোটবেলার বন্ধু বোরকাওয়ালী কেয়াকে নাকি ধনী, আধুনিকা মৌসুমীকে? টাকা আর ভালোবাসা সব মিলে এক অদ্ভুত জটের মাঝে আটকে গেল সায়মন।

হাতে ১০০ কোটি টাকা আর পাশে দুইটা গার্লফ্রেন্ড, কোন মানব সন্তানের জীবনে আর কিছু করার আগ্রহ থাকার কথা না। সায়মনেরও ছিলনা, অন্তত: অভিনয় করার আগ্রহ ছিল না। সায়মনের চরিত্রে অ্যাকশন, রোম্যান্সের মিশেল থাকলেও, একটা বড় অংশ জুড়ে কমেডিও ছিল। স্ক্রিপ্টে অনেক ফানি মোমেন্ট ছিল, যার বেশিরভাগই সায়মন কাজে লাগাতে পারেননি। তুলনামূলকভাবে অ্যাকশন অথবা রোম্যান্টিক দৃশ্যে তাকে অনেক সাবলীল লেগেছে। সায়মনের সবচে বড় সমস্যা তার কণ্ঠস্বর। ভয়েস মডুলেশন নিয়ে তার অনেক কাজ করা উচিৎ। এর আগ পর্যন্ত কাউকে দিয়ে ডাবিং করালেই ভালো করবেন। কারণ নায়কের প্রতিটা ডেলেভারিতেই যদি দর্শক বিরক্ত হয়, তাহলে এটা ছবির জন্যও মাইনাস পয়েন্ট হয়ে দাঁড়ায়। উচ্চতা, চেহারা মিলিয়ে নায়ক হবার প্রাথমিক গুণগুলো সায়মনের আছে। বাকি যে কমতিগুলো আছে (অভিনয়, নাচ, কণ্ঠ, নায়কোচিত শরীর ও শরীরী ভাষা) এগুলো চাইলেই ঠিক করে ফেলা যাবে। অনেকেই সায়মনকে বাতিলের খাতায় ফেলে দিচ্ছেন। আমার চোখে এখনো সায়মনের সবচে সম্ভাবনাময় নায়ক।

সিনেমার মূল নায়িকার চরিত্রে অভিনয় করেছেন কেয়া। এই ছবির মাধ্যমে তিনি বেশ ভালোভাবে কামব্যাক করেছেন। তার অভিনয়, অ্যাপিয়ারেন্স, নাচ সবই ভালো লেগেছে। গত বছরের আয়না কাহিনীর পরে এই ছবিটাতেও দেখলাম কেয়ার অভিনয় অনেক উন্নতি করেছেন। ডেব্যুট্যান্ট মৌসুমী হামিদের কাজ একদমই ভালো লাগেনি। এতদিন নাটক করার পরও, তার অভিনয় অনেক বেশি অ্যামেচারিশ লাগলো। নাচও খুব সাধারণ। তাকে নিয়ে তৈরী প্রত্যাশার বেলুনটা প্রথম দৃশ্যেই ফুটে গিয়েছিল। তবে মৌসুমীর এক্সপ্রেশন আর ফ্যাশন সেন্স ভালো। আর ওজনটা একটু কমাতে হবে। সায়মনের পাশে তাকে অনেক বেমানান লেগেছে। এমনিতেই মৌসুমী’র হাইট বেশি, এর সাথে যদি বাড়তি ওজন যোগ হয়; তবে ইন্ডাস্ট্রীর হাতেগোনা যে কয়জন নায়ক আছে, তাদের সাথেও কাজ করা দুরহ হয়ে যাবে।

মিশার কাজ সবসময়ই ভালো লাগে, এখানেও তাই। ব্ল্যাক মানিতে তার অভিনয়ে লাউডনেসটা অনেক কম ছিল। এটা বেশ ভালো দিক। আফজাল শরীফ অনেক ভালো অভিনেতা। কিন্তু গত চার-পাঁচ বছরে সব কয়টা ছবিতেই তার চরিত্র ও পোর্ট্রেয়াল বড্ড একঘেয়ে হয়ে গিয়েছে। কাবিলাও কিন্তু প্রায়শই একই ধরণের ক্যারেক্টার করেন। কিন্তু এর মাঝেও তার কাজে ভিন্নতা পাওয়া যায়। আফজাল শরীফ এদিকে একটু নজর দিলে ভালো হয়। থ্যাঙ্কফুলি, এই ছবিতে তার জন্য আলাদা কোন গান বরাদ্দ ছিল না। আফজাল শরীফ/কাবিলার সাথে নাসরিনকে রেখে চটুল ধরণের একটা করে গান রাখার বৃত্ত থেকে ঢালিউড বেরিয়ে আসছে, এটা একটা ভালো দিক। যদিও এই গানের জায়গা দখল করে নিয়েছে আইটেম সং, তবে এটা নিয়ে এখনি মাথা ঘামানোর মত দুর্দশা শুরু হয়নি। ব্ল্যাক মানিতে সবচে উপভোগ করেছি ধর্মভীরু সাদেক বাচ্চু আর টুইস্টেড পুলিশ অফিসার রুবেলকে। তাদের দুজনের ক্যারেক্টার অনেক ডিফরেন্ট ছিল। সাফি উদ্দিন সাফি’র পূর্ববর্তী ছবি ওয়ার্নিং-এও রুবেল পুলিশের চরিত্রে ছিলেন। তবে সেই পুলিশ অফিসার ছিল সৎ আর এই অফিসার নিপাট ঘুষখোর। আর রুবেলের ডায়লাগ “আকাশের যত তারা, পুলিশের তত ধারা” শুনে দর্শক দারুণ মজা পেয়েছে। অনেক দিন পর কোন বাংলা সিনেমায় এমন দারুণ ক্যাচফ্রেজ পেলাম।

সাফি উদ্দিন সাফির কাজ আমার তেমন ভালো লাগে না। কিন্তু ব্ল্যাক মানিতে তার কাজ অনেক গোছানো মনে হয়েছে। গল্পটা আব্দুল্লাহ জহির বাবুর, যার বেশ বড় একটা অংশ তেলেগু ছবি Paisa থেকে নেওয়া। সময়ে সময়ে গল্পে বাবু বেশ কিছু পরিবর্তন এনেছেন। চেঞ্জগুলো ভালো ছিল। ছবির সবচে বড় নেগেটিভ দিক হচ্ছে এর রানিং টাইম- প্রায় পৌনে তিন ঘণ্টা। তাছাড়া ছবির প্রথমার্ধে তেমন কোন ঘটনা নেই, অথচ দ্বিতীয়ার্ধ পুরো জমজমাট। ফার্স্ট হাফ অযথা না টানলে দারুণ একটা মুভি হতে পারতো ব্ল্যাক মানি

ছবির গানগুলো অনেক অ্যাভারেজ। তবে, লোকেশন আর কোরিওগ্রাফি ভালো ছিল। “চার দেয়ালের কামরা” গানটার সুর আর কোরিওগ্রাফি ধুম-১ এর শিকদুম গানের সাথে মিলে যায়। কিন্তু কথা হল, ধুমের শিকদুম গানটিও টার্কিশ শিল্পী তারকানের শিকদিম গানের নকল। সুতরাং, চোরের উপর বাটপারিটা মন্দ হয়নি। কবির বকুল আর শওকত আলী ইমন (সায়মন) জুটি নিয়মিতভাবে দক্ষিণী ছবি থেকে সুর নকল করে গান করেন। অনেক দিন পর তারা হিন্দি গানে ফিরে এলেন। এই দুজনকে আমার সাধুবাদ। চালিয়ে যান, গুরু!


Leave a reply