মনের মতো গল্প পাচ্ছেন না শবনম
বাংলা চলচ্চিত্রের শুরুর দিকের নায়িকা শবনম। মনকাড়া অভিনয় ও মিষ্টি হাসি দিয়ে প্রায় তিন যুগ শাসন করেছেন বাংলা ও উর্দু ছবির জগত। মনের মতো কোন গল্প পাচ্ছেন না বলেই দীর্ঘদিন ধরে পর্দায় অনুপস্থিত এই গুণী অভিনেত্রী।
দীর্ঘ দুই দশকের বেশি সময় পাকিস্তানের উর্দু চলচ্চিত্রে সম্রাজ্ঞীর আসনে অধিষ্ঠিত ছিলেন শবনম। উর্দু চলচ্চিত্রের ইতিহাসে শবনম হচ্ছেন একমাত্র অভিনেত্রী যিনি রেকর্ডসংখ্যক ১৩ বার শ্রেষ্ঠ অভিনেত্রী হিসেবে নিগার চলচ্চিত্র পুরস্কার পেয়েছেন। দু’বার পেয়েছেন শ্রেষ্ঠ অভিনেত্রীর জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার।
শবনমের জন্ম ১৯৪৬ সালের ১০ই সেপ্টেম্বর পুরান ঢাকায়। পুরো নাম নন্দিতা বসাক (ঝর্ণা), পিতা একসময়ের বিখ্যাত ফুটবলার ও রেফারি ননি বসাক। বিখ্যাত পরিচালক অশোক ঘোষ তার দেবর। একযুগ ধরে দেশেই অবস্থান করছেন স্বামী খ্যাতনামা সুরকার রবীন ঘোষ ও পুত্র রনী ঘোষের সঙ্গে।
ঝর্ণা নামে শবনমের আগমন শিশুশিল্পী হিসেবে। রথম ছবি ফতেহ লোহানীর ‘আসিয়া’ ১৯৬০ সালে মুক্তি পায়। এরপর কিশোরী অভিনেত্রী হিসেবে অভিনয় করেন ‘এ দেশ তোমার আমার’, ‘তানহা’, ‘বিষকন্যা ইত্যাদি ছবিতে।
ক্যাপ্টেন এহতেশাম ঝর্ণাকে শবনম নাম দিয়ে একক নায়িকা বানান ‘হারানো দিন’ ছবিতে। প্রথম ছবিতেই নায়িকা হিসেবে তারকাখ্যাতি পেয়ে যান শবনম।অভিনয় করেন ‘কখনো আসেনি’ চান্দা’, ‘তালাশ’, ‘প্রীত না জানে রীত’, ‘নতুন দিগন্ত’, ‘দুশমন’, ‘নাচের পুতুল’, ‘আখেরী স্টেশন’, ‘উত্তরণ’, ‘প্যারসে জোয়ার কাটা’, ‘চালোমান গায়ে’ ইত্যাদি ছবিতে।
১৯৬৮ সালে তিনি তৎকালীন পশ্চিম পাকিস্তানে চলে যান। সেখানে প্রায় ২০০ উর্দু ছবিতে অভিনয় করেন। বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর শবনম প্রায়ই বাংলাদেশে এসে এ দেশের ছবিতে অভিনয় করেন। বাংলাদেশে তার অভিনীত উল্লেখযোগ্য ছবি হচ্ছে- ‘সন্ধি’, ‘জুলি’, ‘যোগাযোগ’, ‘আমার সংসার’, ‘শর্ত’, ‘সহধর্মিণী’, ‘ঘর আমার ঘর’, ‘কারণ’, ‘সন্দেহ’, ‘সমস্যা, ‘বিশাল’, ‘লেডিস কমান্ডো’, ‘দিল’, ‘বেপরোয়া’, ‘লাভ ইন আমেরিকা’, ‘সম্পর্ক’, ‘প্রেমশক্তি’ ইত্যাদি। তার অভিনীত সর্বশেষ মুক্তিপ্রাপ্ত ছবি কাজী হায়াৎ পরিচালিত ‘আম্মাজান’ যা ১৯৯৯ সালে মুক্তি পায়। ডিপজল প্রযোজিত এ ছবিতে মান্নার ‘আম্মাজান’-এর চরিত্রে অভিনয় করেছিলেন শবনম।
বাংলাদেশের সিনেমায় কাজ করতে ইচ্ছা হয় না- এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, সেই ‘আম্মাজান’র পর অনেক অফার পেলেও ভালো গল্প পাননি।
মাঝে শুনা গিয়েছিল পরিচালক মালেক আফসারী একটি ছবি করতে চেয়েছিলেন, কিন্তু গল্পের কারণে শবনম তাকে ফিরিয়ে দেন।
চলচ্চিত্র সংশ্লিষ্টরা আশা করছেন অচিরেই ‘আম্মাজান’র মতো হিট কোন ছবি নিয়ে শবনম পর্দায় হাজির হবেন।
সুত্র: মানবজমিন