‘মিয়া ভাই’ ফারুক আর নেই
‘মিয়া ভাই’-খ্যাত অভিনেতা ও সংসদ সদস্য আকবর হোসেন পাঠান ফারুক আর নেই। ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাহি রাজিউন। সিঙ্গাপুরের মাউন্ট এলিজাবেথ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় সোমবার স্থানীয় সময় সকাল ১০টায় তার মৃত্যু হয়েছে।
দীর্ঘদিন ধরে অসুস্থতায় ভুগছিলেন ‘সুজন সখী’ নায়ক। তার মরদেহ মঙ্গলবার ভোরের ফ্লাইটে ঢাকায় আনা হবে।
মাউন্ট এলিজাবেথ হাসপাতালে আট বছর ধরে এই হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছেন এই অভিনয়শিল্পী ও রাজনীতিবিদ। সর্বশেষ ২০২১ সালে মার্চ মাসের প্রথম দিকে নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষার জন্য সিঙ্গাপুরে যান তিনি। পরীক্ষায় তাঁর রক্তে সংক্রমণ ধরা পড়ে। এরপর থেকেই শারীরিকভাবে অসুস্থতা অনুভব করছিলেন তিনি। সিঙ্গাপুরে নিজের পরিচিত চিকিৎসকের পরামর্শে দ্রুত হাসপাতালে ভর্তি করা হয় তাকে। হাসপাতালে ভর্তির কয়েক দিন পর তার মস্তিষ্কেও সংক্রমণ ধরা পড়ে। এরপর থেকে সেখানে তার চিকিৎসা চলছিল।
১৯৪৮ সালের ১৮ আগস্ট গাজীপুর জেলার কালীগঞ্জ উপজেলার তুমলিয়া ইউনিয়নের দক্ষিণসোম গ্রামে জন্ম নেন চিত্রনায়ক ফারুক। পুরো নাম আকবর হোসেন পাঠান দুলু। শৈশব-কৈশোর কেটেছে গ্রামের বাড়ি ও পুরান ঢাকায়। পরে বসবাস শুরু করেন উত্তরায় নিজ বাড়িতে।
ফারুকের বাবার নাম আজগর হোসেন। ৬ বোন ও ২ ভাইয়ের মধ্যে তিনি সবচেয়ে ছোট। ফারুক ভালোবেসে বিয়ে করেন ফারহানাকে। তাদের সন্তান ফারিহা তাবাসসুম পাঠান তুলশী ও রওশন হোসেন পাঠান শরৎ। স্কুলজীবন থেকে আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে সম্পৃক্ত হন ফারুক। যোগ দেন ছয় দফা আন্দোলনে। অংশ নেন মুক্তিযুদ্ধে। ২০১৮ সালে ঢাকা-১৭ আসন থেকে আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে বিজয়ী হন তিনি।।
স্ত্রী ফারহানা পাঠানের সঙ্গে ফারুক
এইচ আকবর পরিচালিত ‘জলছবি’ দিয়ে চলচ্চিত্রে আসেন ফারুক। এ ছবিতে তার নায়িকা ছিলেন কবরী। মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক চলচ্চিত্র খান আতাউর রহমানের পরিচালনায় ‘আবার তোরা মানুষ হ’ ও নারায়ণ ঘোষ মিতার ‘আলোর মিছিল’ ছবিতে অভিনয় করে প্রতিভার স্বাক্ষর রাখেন তিনি। তার অভিনীত ‘সুজন সখী’ ও ‘লাঠিয়াল’ ব্যাপক প্রশংসিত হয়। অর্জন করেন ঈর্ষণীয় জনপ্রিয়তা। ‘সখী তুমি কার’ ছবিতে শাবানার বিপরীতে শহুরে ধনী যুবকের চরিত্রে অভিনয় করে সমালোচকদের প্রশংসা কুড়ান তিনি। ১৯৯০ সালে ‘মিয়াভাই’ চলচ্চিত্রের সাফল্যের পর তিনি চলচ্চিত্রাঙ্গনে ‘মিয়াভাই’ হিসেবে পরিচিতি লাভ করেন।
‘নাগরদোলা’, ‘দিন যায় কথা থাকে’, ‘কথা দিলাম’, ‘মাটির পুতুল’, ‘সাহেব’, ‘ছোট মা’, ‘এতিম’, ‘ঘরজামাই’ ‘সূর্যগ্রহণ’, ‘নয়নমনি’, ‘সারেং বৌ’, ‘গোলাপী এখন ট্রেনে’ তার ক্যারিয়ারের উল্লেখযোগ্য চলচ্চিত্র।
পাঁচ দশকের বেশি সময়ের অভিনয় ক্যারিয়ারে তাকে নানাভাবে দেখা গেছে। ‘লাঠিয়াল’ থেকে শুরু করে ‘প্রেমিক’। কখনও দেখা গেছে সারেং কিংবা প্রতিবাদী যুবকের ভূমিকায়। গ্রামীণ যুবকের চরিত্রের পাশাপাশি শহুরে চরিত্রেও তাকে দেখেছেন দর্শক
‘লাঠিয়াল’-এর জন্য তিনি সেরা পার্শ্ব অভিনেতা হিসেবে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার অর্জন করেন। তবে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার নিয়ে একটা ক্ষোভ রয়ে গেছে তার, দীর্ঘ ক্যারিয়ারের প্রায় সকল ছবিই সফল, তবুও সেরা অভিনেতার পুরস্কার ঠিকই রয়ে গেছে অধরা। তবে তিনি পেয়েছেন আজীবন সম্মাননা।