মুক্তিযুদ্ধের ভিন্ন ভিন্ন গল্পে একই জনপদের মাটি-মানুষ
এবারের ১৬ ডিসেম্বরে বাংলাদেশ উদযাপন করছে বিজয়ের ৫৩ বছর। ৫৪ বছরে পা রাখা এ দেশের মানুষের প্রথম পরিচয় আমরা রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ করে স্বাধীন হওয়া দেশের নাগরিক। মহান মুক্তিযুদ্ধ একদিকে যেমন বীরত্বগাঁথার, অন্যদিকে অসংখ্য মানুষের হারানোর বেদনারও। মুক্তিযুদ্ধের সেসব দিক নিয়ে নির্মিত হয়েছে অসংখ্য সিনেমা। তার ভেতর মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক উল্লেখযোগ্য কিছু চলচ্চিত্র নিয়ে আজকের লেখা।
ওরা এগারো জন
বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে প্রথম সিনেমা ‘ওরা এগারো জন’। প্রথিতযশা পরিচালক চাষী নজরুল ইসলাম নির্মিত চল্পচ্চিত্রটি আমাদের ইতিহাসের বিশেষ অংশ হয়ে আছে, মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে বড় আকারে কাজের জন্য। খসরু ও তার বোন মিতা (শাবানা) ঢাকায় মামাবাড়িতে থেকে লেখাপড়া করেন। প্রতিবেশী শীলার (নূতন) সঙ্গে খসরুর বিয়ে ঠিক হয়। অন্যদিকে মেডিকেল কলেজের ছাত্রী মিতার সঙ্গে শীলার প্রকৌশলী ভাই পারভেজের (রাজ্জাক) সম্পর্ক। সবকিছু স্বাভাবিক চলছিল, কিন্তু এরই মাঝে হঠাৎ মুক্তিযুদ্ধ শুরু হয়। খসরু চলে যায় যুদ্ধে । আরো দশজন সঙ্গীকে নিয়ে গড়ে তুলে গেরিলা বাহিনী। বাহিনীটির নেতৃত্ব দেন খসরু। পারভেজ মুক্তিযোদ্ধাদের সহায়তা করায় পাকিস্তানীদের হাতে বন্দী হয়। পারভেজের কাছ থেকে মুক্তিযোদ্ধাদের খবর বের করতে না পারায় তার সামনেই মা আর ছোটভাইকে হত্যা করে পাক বাহিনী। বোন শীলা নির্যাতনের শিকার হয়। অন্যদিকে মিতা বিক্রমপুরে আহত মুক্তিযোদ্ধাদের সেবায় চিকিৎসক দলের সঙ্গে যোগদান করে। একদিন সেও পাকিস্তানি সৈন্যদের নির্যাতনের শিকার হয়। শত্রুবাহিনীর আত্মসমর্পণ আর মুক্তিযোদ্ধাদের বিজয়োল্লাসের মধ্য দিয়ে যুদ্ধ শেষ হয়। যুদ্ধ শেষে অনেকেই ঘরে ফিরে। কারো জন্য পরিবারের সদস্যরা পথ চেয়ে থাকে। কিন্তু তার আর ফেরা হয়না। কেউবা ফিরে এসে পরিবারের খোঁজ পায় না।
মুক্তিযোদ্ধাদের পাশাপাশি মুক্তিযুদ্ধে ব্যবহৃত অস্ত্র ও গোলাবারুদও সিনেমার শুটিংয়ে ব্যবহার করা হয়েছিল। মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সেক্টর কমান্ডার মেজর জিয়াউর রহমানের সহায়তায় পাকিস্তান বাহিনীর ফেলে যাওয়া অস্ত্র ও রসদ দিয়ে যুদ্ধের দৃশ্যধারণ করা হয়। চলচ্চিত্রে ব্যবহারের জন্য গাজীপুর ক্যান্টনমেন্ট থেকে আর্মস ও অ্যামুনেশন সরবরাহ করা হয়। মূলত যুদ্ধের দৃশ্যগুলো আরও বাস্তবিক করে তুলতে এই উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিল। দৃশ্যটি ছিলো ধরা পড়ে যাওয়া পাকিস্তানি সৈন্যকে মেরে ফেলার। মুক্তিযুদ্ধের সময় আটকে পড়া দুই পাকিস্তানি সৈন্য তখন চলচ্চিত্রটির ইউনিটের কাছে বন্দী ছিল। তাদের তখনও বাংলাদেশ সরকারের কাছে হস্তান্তর করা হয়নি। এই দুই সৈন্যকে দিয়েই দৃ্শ্যটিতে অভিনয় করানো হয়। এরপর তাদের সেনানিবাস কর্তৃপক্ষের কাছে সোপর্দ করা হয়।
অরুণোদয়ের অগ্নিসাক্ষী
স্বাধীন বাংলাদেশে মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক দ্বিতীয় সিনেমাটি বানিয়েছিলেন প্রখ্যাত পরিচালক সুভাষ দত্ত। পোস্টার ডিজাইনের জন্য সেসময় বেশ খ্যাতি ছিলো এ নির্মাতা। ঢাকার প্রথম সবাক সিনেমা ‘মুখ ও মুখোশ’-এর পোস্টার ডিজাইনারও তিনি। অরুণোদয়ের অগ্নিসাক্ষী ছবির পোস্টার ডিজাইনও ছিল অভিনব। যাতে লেখা ছিল-‘লাঞ্ছিত নারীদের মর্যাদা দাও’! ধর্ষিত হয়ে মা হতে বাধ্য হয়েছিলেন যে সব নারী, পৃথিবীতে আসা সেই সব যুদ্ধ শিশুদের বরণ করে নেয়ার তীব্র আকুতি ছিল এই ছবিতে! ১৯৭১ সালের শুরুতে এক গ্রামে শ্যুটিং করতে আসে একটি সিনেমার দল। যার অভিনেতা আগের সিনেমায় সিরাজউদ্দৌলা চরিত্র করে ইতোমধ্যে বিখ্যাত। সবাই তাকে চেনে। এই অভিনেতা আনোয়ার হোসেনের পরিচয় হয় আসাদ-রোমানা-বদরুদ্দিনের সঙ্গে। কৃষক আসাদের সাথে রোমানার সম্পর্ক, বদরুদ্দিনের রোমানার প্রতি একপাক্ষিক ভালোবাসা সবই জানতো গ্রামবাসী। ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ গ্রামে আক্রমণ হলো। রোমেনার পরিবার ধ্বংস হয় যায়, তাকে ধর্ষণ করা হয়। অভিনেতাকে তার পরিচিতির জন্য হানাদাররা ছেড়ে দেয়। অভিনেতা কলকাতা চলে যান, সেখানে যুদ্ধের বিভীষিকা আর শরণার্থীদের কথা ভাবতে ভাবতে একসময় সিনেমার নায়কের চেয়ে সত্যিকারের নায়ক হওয়ার সিদ্ধান্ত নেন যুদ্ধ করার মাধ্যমে। পরে আবার যুদ্ধের জন্য রওনা দিয়েও মৃত্যুভয় তাকে সেখান থেকে ফিরে যেতে বাধ্য করে। এদিকে পাকিস্তানিদের হাতে বন্দী রোমেনাকে উদ্ধার করতে এসে প্রাণ দেয় আসাদ, রোমেনাকে উদ্ধারের পর প্রাণ দিতে হয় বদরুদ্দিনকেও। প্রেগন্যান্ট রোমানা সুইসাইড করতে চেয়েও পারে না ভাইবোনদের দিকে তাকিয়ে। দেশ স্বাধীন হওয়ার পর আনোয়ার হোসেন ফিরে আসেন। যুদ্ধশিশু আর বীরাঙ্গনাদের স্বীকৃতির জন্য আন্দোলন শুরু করেন তিনি।
সামাজিক ঘরানা হিসেবে সুভাষ দত্ত সে সময়ে এই দারুণ শক্তিশালী সিনেমাটি নির্মাণ করেন। উজ্জ্বল, ববিতা, আনোয়ার হোসেন, সুভাষ দত্ত ছিলেন অভিনয়ে। কথিত আছে, ১৯৭২ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত ছবিটি সে সময়ে সরকারকে বীরাঙ্গনাদের স্বীকৃতি দিতে প্রভাবিত করে। সিনেমার মিউজিক ডিরেক্টর ছিলেন বাংলা সিনেমার প্রবাদ পুরুষ সত্য সাহা।
আবার তোরা মানুষ হ
স্বাধীনতার পরে মুক্তিযুদ্ধনির্ভর ছবির তালিকায় এক আলোচিত (এবং বিতর্কিত) সংযোজন ‘আবার তোরা মানুষ হ’। ছবিটি মুক্তি পেয়েছিল ১৯৭৩ সালের ৭ ডিসেম্বর। ছবির পরিচালক ছিলেন খান আতাউর রহমান। কাহিনি ও সংলাপ এবং চিত্রনাট্যের অংশ বিশেষ লিখেছিলেন আমজাদ হোসেন। ছবিতে অভিনয় করেছিলেন ফারুক, ববিতা, সুলতানা, রাইসুল ইসলাম আসাদ, ও খান আতাউর রহমান নিজে। যুদ্ধ ফেরত সাত মুক্তিযোদ্ধার গল্প নিয়ে তৈরি হয়েছিল এই ছবি। স্বাধীনতার পর সামাজিক অবক্ষয় ও অনাচার, ঘুষ দুর্নীতি বা কালোবাজারি মেনে নিতে না পারা সাত মুক্তিযোদ্ধার প্রাণান্তকর চেষ্টা, যুদ্ধ শেষে জমা না দেয়া অস্ত্র দিয়ে এসব সামাজিক অনাচার বা অবক্ষয় রোধ করার ব্যক্তি প্রচেষ্টার এক ছবি ‘আবার তোরা মানুষ হ’। খান আতাউর রহমান এই ছবিতে বঙ্গবাণী কলেজের অধ্যক্ষের ভূমিকায় অভিনয় করেছিলেন আর সাত মুক্তিযোদ্ধা তার কলেজেরই ছাত্র ছিল। ছবির দুটি গান আজও কালজয়ী হিসেবে বিবেচিত হয়। প্রথমটি ‘এক নদী রক্ত পেরিয়ে’ গানটি গেয়েছিলেন শাহনাজ রহমতুল্লাহ। অন্যটি হচ্ছে ‘তুমি চেয়েছিলে ওগো জানতে’ যেটিতে কণ্ঠ দিয়েছিলেন আবিদা সুলতানা। দুটি গানের গীতিকার ও সুরকার খান আতাউর রহমান।
সিনেমায় বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ পরবর্তী অরাজকতা নিয়ে প্রথম গল্প তুলে ধরেন খান আতা। পরবর্তীতে অনেকেই তাকে ‘রাজাকার’ আখ্যা দেন। আবার বহু মুক্তিযোদ্ধা অভিনেতা তার পক্ষে দাঁড়ান। এখানে একটা কথা বলে রাখা প্রয়োজন, খান আতা গল্পে মুক্তিযুদ্ধের পরবর্তীতে যোদ্ধা পরিচয়ে বেআইনী কাজ করার কথা তুলেছেন। মুক্তিযুদ্ধকে প্রশ্ন করেননি।
মেঘের অনেক রং
১৯৭১ সালে ডাক্তার ওমরের বাড়িতে হামলা চালায় পাকিস্তানিরা। শিশু আদনান ও ওমরের সামনেই লাঞ্চিত হতে হয় তার বউ রুমাকে। পাগলপ্রায় ওমর সব ট্রমা ফেলে উঠে দাঁড়াতে গিয়ে পাশে পায় ডাক্তার মাথিনকে। দুজনের ভেতর গড়ে উঠে রসায়ন। আর সম্ভ্রম হারানো রুমা চোখের সামনে দেখতে পায় শেষ অবলম্বন নিজের স্বামীও পর হয়ে যাচ্ছে। তারপর রুমা আত্মহত্যা করে। ছেলেকে পাঠিয়ে দেয় তার বাবার কাছে। এক নারীর এমন মর্মান্তিক আত্মত্যাগের গল্প নিয়ে এই সিনেমার নাম ‘মেঘের অনেক রং’। হারুনর রশীদ পরিচালিত সিনেমাটি বাংলাদেশের দ্বিতীয় এবং মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক প্রথম রঙ্গিন সিনেমা।
স্বাধীনতার ছয় বছর পর, ১৯৭৬ সালে নির্মিত এই সিনেমাটি সে সময়েই প্রশ্ন তুলতে পেরেছিলো বিজয়ীর আত্মগাঁথায় বারবার পুরুষদের গল্প উঠে আসা নিয়ে। ১৯৭১ থেকে ২০২৪, সব জনতার বিজয় বলতে যেন পুরুষের বিজয়কেই বুঝায়ে ভালোবাসি আমরা। সিনেমাটি সেসময় বিশেষ ব্যবসা করতে পারেনি। কিন্তু সমালোচকদের মন জয় করে নেয় সিনেমাটি। একদিকে নিপূণ নির্মানশৈলী আর কারিগরি দক্ষতা, অন্যদিকে ফ্রেঞ্চ পপ কালচারের আমাদের অনুকরণে উপমহাদেশের সিনেমার নতুন ধাঁচ তৈরির চেষ্টা, সব মিলিয়ে সে সময়ে সিনেমাটি বোদ্ধামহলে দারুণ সাড়া ফেলে। অভিনয়ে ছিলেন মাথিন, ওমর এলাহি ও রওশন আরা।
আগুনের পরশমণি
মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক সিনেমার কথা এলে হুমায়ুন আহমেদের ‘আগুনের পরশমণি’র কথা এই প্রজন্মের দর্শকের কাছে সবার আগেই চলে আসবে।
৬ জুলাই ১৯৭১। ঢাকার বাসিন্দা মতিন সারাদিন বদিউল আলম নামের একটি ছেলের আসার অপেক্ষা করে কাটিয়ে দিলেন, ছেলেটি যখন এলো সন্ধ্যা পেরিয়ে গেছে, কারফিউ শুরুর সময় হয়ে গেছে ঢাকায়। মুক্তিযোদ্ধা বদি ঢাকা শহরে ৭ জনের একটি দল নিয়ে এসেছে গেরিলা অপারেশন করার জন্য।
সে বাড়িতে ৩ দিন কেটে গেলো কিন্তু যাদের আসার কথা তারা কেউই দেখা করতে এলো না। বদি গোপন মিটিংয়ের স্থানে গিয়ে দেখে সেখানেও কেউ নেই। পরে ৩ দিন বাদে সাদেক আসে দেখা করতে। তারা তাদের পরিকল্পনা পাকাপাকি করে ফেলে। কীভাবে কী করবে সব ঠিক করে ফেলে তারা। দুপুরে দু’জন এক সাথে খেতে বসে, তাদের সাথে খেতে বসে বড় মেয়ে রাত্রি।
অপারেশনের দিন গেরিলারা একত্র হয়। আজকেই তাদের একটা গেরিলা অপারেশানে যাওয়ার কথা। কিন্তু যে বিস্ফোরক বহন করবে সে অসুস্থ, যেতে পারবে না। শেষে তাকে বাদ দিয়েই তারা রওনা করে। বেশ কয়েক জায়গায় ধরাশায়ী করে পাকিস্তানি আর্মিকে। ইন্টারকন্টিনেন্টাল এ গ্রেনেড ছুড়ে। বিদেশীরা যেন জানতে পারে শহরের বুকে যুদ্ধ হচ্ছে।
বদির সাথে রাত্রির সম্পর্কের কথা আঁচ করতে পেরে রাত্রির মা বদিকে ঘর ছেড়ে দিতে বলেন। বদি রাত্রিদের বাড়ি থেকে চলে যায় তার মামার বাড়িতে। এক অপারেশন শেষ করে আসার পথে পাকিস্তানিদের গাড়ির মুখোমুখি হয়ে আহত হয় বদি, তার সহযোদ্ধা আশফাক তাকে রাত্রিদের বাড়িতে রেখে ডাক্তার আনতে যাওয়ার পথে ধরা পড়ে যায় মিলিটারির হাতে, দুইজন শহীদ সহযোদ্ধাসহ।
টর্চার শেষে আশফাককে কারো নাম না বলায় হত্যা করার হুকুম দেয়া হয় আর ডাক্তারের অপেক্ষায় অপেক্ষায় রাত শেষ হয়ে ভোর হওয়ার সময় হয়ে আসে ঢাকার বুকে।
এর আগে হুমায়ূন আহমেদের উপন্যাস অবলম্বনে বিটিভির তত্ত্বাবধানে নির্মিত হয়েছিল ‘শঙ্খনীল কারাগার’। এরপর হুমায়ুন আহমেদ নিজেই দুঃসাহস করেন সিনেমা করার। সেসময়ের তথ্যমন্ত্রী নাজমুল হুদার কাছে গেলে তিনি সে সময়ে সমালোচনা সত্ত্বেও তাকে রাষ্ট্রীয় অনুদান দেন। সে অনুদানে শেষ হয় সিনেমার নির্মাণ। সিনেমাটি মুক্তি পায় ১৯৯৪ সালের ১৬ ডিসেম্বর। আসাদুজ্জামান নূর, বিপাশা হায়াত, ডলি জহুর, আবুল হায়াত, শিলা আহমেদসহ অনেক পরিচিত মুখকেই দেখা গিয়েছিলো সে সিনেমায়। রবীন্দ্র সংগীত, হাছন রাজার গান, হুমায়ুনের নিজের লেখা গান এবং জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারসহ সিনেমাটি যেন আমাদের মুক্তিযুদ্ধের অনন্য দলিল।
ওরা ৭ জন
মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে সর্বশেষ কোয়ালিটি সংযোজন বলা যায় ‘ওরা ৭ জন’কে। গত সরকারের সময়ে মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে অসংখ্য সিনেমা তৈরি হলেও কোনোটিই সে অর্থে দর্শক মানসে জায়গা করে নেওয়ার মতো ছিলো না। ‘ওরা ৭জন’ সেক্ষেত্রে প্রনিধানযোগ্য। ওরা ৭ জন মূলতঃ সিলেট অঞ্চলে ভিন্ন ভিন্ন পেশার মানুষদের নিয়ে এক আহত ডাক্তারকে উদ্ধার করতে লড়াইয়ের গল্প ওরা ৭ জন। প্রতিবেশী দেশের এক নারী চিকিৎসক যিনি জানবাজি রেখে আহত মুক্তিযোদ্ধাদের সেবা দিয়ে আসছিলেন তাকে উদ্ধার করে আনার এক সিনেমা ‘ওরা সাতজন’। ‘
সেই এক দিন ছিল আমাদের। প্রাণের টানে, দেশের টানে যুদ্ধ আমাদের এক করেছিল। সাত মুক্তিযোদ্ধা এক হয়েছিল একটি অপারেশনে। এই সাতজনের একজন মসজিদের মুয়াজ্জিন, একজন ডাক্তার, একজন পুলিশ, দুজন আর্মি, একজন মননে কুস্তিগির আর একজন বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র। সেক্টর পাঁচের অধীনে মেজর লুৎফার নেতৃত্বে এক সফল অপারেশন শেষে এই সাতজনকে দায়িত্ব দেয়া হয় একজন ভারতীয় নারী চিকিৎসককে উদ্ধার করে আনার। দেশ মাতৃকার তরে যুদ্ধের সময়ে কমান্ডারের নির্দেশ মানতে যেয়ে এই সাতজন জড়িয়ে যায় এক রক্তক্ষয়ী অপারেশনে। খিজির হায়াত খান নির্মিত এই সিনেমায় অভিনয় করেছেন তিনি নিজেই, ইমতিয়াজ বর্ষণ, জাকিয়া বারী মম, নাজিয়া হক অর্ষা, ইন্তেখাব দিনার, শিবা সানু প্রমুখ। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে ‘ইসলামিস্ট’দের ভূমিকা নেই এমন যে একটি বয়ান প্রচলিত করার চেষ্টা ছিলো সিনেমায় কিংবা রাজাকার বলতেই যে দাড়ি-টুপির প্রদর্শনী, ওরা ৭জন সিনেমায় মুয়াজ্জিনের (ইমতিয়াজ বর্ষণ) সক্রিয় অংশগ্রহণ এবং ভিন্নধর্মী স্নিগ্ধ-সুমিত বিয়ের ব্যাপারে তার কর্মকান্ড সব মিলিয়ে সে ন্যারেটিভে একটা নতুনত্ব পাওয়া যায়। আবার আমাদের মুক্তিযুদ্ধ যে জনযুদ্ধ ছিলো, সকল শ্রেণিপেশার মানুষের অংশগ্রহণেই যুদ্ধ পূর্ণতা পেয়েছিলো, ওরা ৭জন যেন সে কথাই বলে।