‘মুজিব: একটি জাতির রূপকার’-এ স্পটবয়ের কাজ করতে বললেও করতাম: শুভ
রাষ্ট্রীয় আয়োজনে নির্মিত ‘মুজিব: একটি জাতির রূপকার’-এ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ভূমিকায় অভিনয় করেছেন আরিফিন শুভ। এ অভিনয় বললেন, এটি তার স্বপ্নের চরিত্র। যেকোনোভাবেই এমন একটি সিনেমার সঙ্গে থাকতে আপত্তি ছিল না তার। ‘এই ছবিতে যদিতে যদি আমাকে পাসিং শট দিতে বলতো, কিংবা স্পটবয়ের কাজও করতে বলতো, তাও করতাম।’
গতকাল মঙ্গলবার (১০ অক্টোবর) সন্ধ্যায় রাজধানীর একটি পাঁচ তারকা হোটেলে ছবির সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়। সেখানে হাজির হয়েই কথাগুলো বলেছেন আরিফিন শুভ।
টিজার-ট্রেলার প্রকাশের পর সিনেমাটি নিয়ে সমালোচনার সুর লক্ষ্য করা যায়। এ সময় সমালোচকদের উদ্দেশে শুভ বললেন, ‘শ্যাম বেনেগাল (মুজিব ছবির নির্মাতা) কে, একটু খোঁজ খবর নেবেন। এই ছবিতে যদিতে যদি আমাকে পাসিং শট দিতে বলতো, কিংবা স্পটবয়ের কাজও করতে বলতো, তাও করতাম। কারণ শ্যাম বেনেগাল স্যারের সিনেমা, আর বঙ্গবন্ধুর বায়োপিক, এমন সিনেমার অংশ হতে পারাই বড় ব্যাপার। আর এই ছবিতে যুক্ত হওয়ার সময় থেকেই আমি জানতাম অনেক কথা হবে, তবে আমার পক্ষে যতটা সম্ভব, যতটা সম্ভব না, সবই করার চেষ্টা করেছি।’
সবশেষে গণমাধ্যমকর্মীদের উদ্দেশে আরিফিন শুভ বলেন, ‘আপনারা যদি আমাদের গল্প, মানে আপনাদেরই গল্পটার ঠিকঠাক প্রচারণা করেন, মুজিবরে আর ঠেকায় কে, আর দাবায় রাখা যাবে না।’
‘মুজিব’ সিনেমায় বঙ্গবন্ধুর স্ত্রী ফজিলাতুন্নেছা মুজিবের কিশোর বয়সী চরিত্রে কাজ করেছেন প্রার্থনা ফারদিন দীঘি। ছবিটিতে যুক্ত হওয়ার স্মৃতি হাতড়ে তিনি বললেন, “আমাকে যখন অডিশনে ডাকা হয়, আমার বিশ্বাসই হয়নি যে ‘মুজিব’ ছবির জন্য ডাকা হয়েছে। বাবার হাত ধরে অডিশনে গিয়েছিলাম, আমি মোটেও কনফিডেন্ট ছিলাম না। তবে বাবা আশ্বাস দিয়েছিলেন। এরপর যেদিন ফোন পাই, সেদিন বাবাকে জড়িয়ে অনেক কেঁদেছিলাম। আমার সঙ্গে বাবাও একটা চরিত্রের জন্য অডিশন দিয়েছিলেন, কিন্তু তার সিলেকশন হয়নি। কিন্তু আমার খুশিতেই অনেক বেশি আত্মহারা হয়ে গিয়েছিলেন।”
বঙ্গবন্ধুর বাবা শেখ লুৎফুর রহমান চরিত্রে অভিনয় করা চঞ্চল চৌধুরী বললেন, ‘সিনেমাটিতে বঙ্গবন্ধুর চরিত্রে অভিনয় করেছেন শুভ, সিনেমাটিতে শুভ’র যে চেষ্টা, সেটা সত্যিই প্রশংসনীয়। অভিনেতার জন্য অনেক বড় চাপ যখন কোনো বায়োপিকে বিখ্যাত কোনো মানুষের চরিত্রে অভিনয় করা হয়। পুরো সিনেমাটি আমরা দেখব, আশা করি ভালো লাগবে।’
২০২১ সালে সিনেমাটির শুটিং দিনের কথা স্মরণ করে চঞ্চল বলেন, ‘আজকে এই অনুষ্ঠানে আসার আগেও সেই সময়ের বিভিন্ন ছবি ঘেঁটে দেখছিলাম। মাঝে দুই বছর কাটল, আমরা অপেক্ষায় ছিলাম কবে সিনেমাটি আমরা দেখতে পাব? কারণ বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে এই প্রথম এত বড় আকারে একটি কাজ, যেখানে বাংলাদেশ ও ভারত যুক্ত আছে। ভারতের বিখ্যাত নির্মাতা শ্যাম বেনেগাল সিনেমাটি বানিয়েছেন। প্রথম ২০ দিন শুটিং করে আমি দেশে ফিরে এসেছিলাম। পরে আবার গিয়ে শুটিং করেছি। একজন মানুষ একটা দেশের জন্য জীবন দিয়েছেন, সেই সত্যি ইতিহাস কিছু আমরা দেখতে পাব সিনেমাটিতে।’
সিনেমাটিতে খন্দকার মোশতাক আহমেদ চরিত্রে অভিনয় করেছেন ফজলুর রহমান বাবু। আরিফিন শুভর চেষ্টা তাকেও মুগ্ধ করেছে জানিয়ে বাবু বলেন, ‘আমি আপনাদের আশ্বস্ত করছি, শুভ সিনেমাটিতে অত্যন্ত ভালো অভিনয় করেছে। বায়োপিকে অভিনয় করা আসলেই ভীষণ কঠিন কাজ। শুভ সেই কঠিন কাজটিই করেছে তার সর্বাত্মক চেষ্টা দিয়ে।’
১৩ অক্টোবর দেশজুড়ে দেড় শতাধিক প্রেক্ষাগৃহে মুক্তি পাচ্ছে ‘মুজিব’। যা সাম্প্রতিক সময়ে ঢালিউডের যে কোনও ছবির জন্য রেকর্ড। এ প্রসঙ্গে পরিবেশক জাজ মাল্টিমিডিয়ার কর্ণধার আব্দুল আজিজ বলেছেন, “আমরা মনে করি না, জোরজবরদস্তি রিলিজ করছি। হল মালিকেরাই আগ্রহী। বিশেষ করে ট্রেলার দেখার পর তারা আগ্রহী হয়ে উঠেছে। তারা বলেছে, বাংলাদেশের ছবিতে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ জিনিস হলো কান্না আর আবেগ। যে ছবি দেখে দর্শক কাঁদে, সেটা হিট। ‘মুজিব’র ট্রেলার দেখে হল মালিকদের মনে হয়েছে যে, এটা দর্শকের মন ছুঁয়ে যাবে।”
কথার ফাঁকে আরিফিন শুভকে নিয়ে নতুন একটি ছবির ইঙ্গিতও দিয়েছেন জাজ-কর্তা। জানালেন, নির্মাতার সঙ্গে তার আলাপ হয়ে গেছে। ছবিটিকে শুভর ক্যারিয়ারে ‘স্বপ্নের প্রজেক্ট’ বলেও অভিহিত করেন আজিজ।
বাংলাদেশ ও ভারত সরকারের যৌথ প্রযোজনায় বিশাল বাজেটে নির্মিত হয়েছে ‘মুজিব: একটি জাতির রূপকার’। এতে আরিফিন শুভর সঙ্গে অভিনয় করেছেন নুসরাত ইমরোজ তিশা, নুসরাত ফারিয়া, রিয়াজ আহমেদ, জায়েদ খান, দিলারা জামান, চঞ্চল চৌধুরী, সিয়াম আহমেদ, খায়রুল আলম সবুজ, ফেরদৌস আহমেদ, দীঘি, রাইসুল ইসলাম আসাদ, গাজী রাকায়েত, তৌকীর আহমেদ, মিশা সওদাগরসহ দেশের শতাধিক শিল্পী।
/বাংলা ট্রিবিউন ও এনটিভি অনলাইন