রিভিউ/ জলপথে তিন বন্ধুর ‘অভিযান’
রাজ্জাক পরিচালিত ও অভিনীত ‘অভিযান’ মুক্তি পায় ১৯৮৪ সালের ৬ এপ্রিল। ছবিটির কাহিনী, চিত্রনাট্য ও সংলাপ লিখেছেন সৈয়দ শামসুল হক। আরো অভিনয় করেছিলেন জসিম, ইলিয়াস কাঞ্চন, রোজিনা ও অঞ্জনা। বিচিত্রায় সিনেমাটির রিভিউ করেছিলেন মাহমুদা চৌধুরী। পড়ুন তবে।
টিভির ‘ডালাস’ সিরিজের পদাঙ্ক অনুসরণে ঢাকার উচ্চতম দালানটি দেখিয়ে অভিযানের সূচনা হলো। পরবর্তী দৃশ্যকল্প নদীর তীর। রাজ্জাক, ইলিয়াস ও জসিমের ত্রিভূজ বন্ধুত্বের চূড়ান্ত দৃষ্টান্ত রাখতে চলল হৈ হৈ নৃত্যগীত। সেই সঙ্গে জাহাজে পাথর তোলার কাজ।
এই মহানন্দে বিঘ্ন ঘটল জাহাজের ড্রাইভারের আকস্মিক নিরুদিষ্ট হওয়ার ঘটনায়। সেই ছুতো ধরে ভায়োলেন্সপ্রিয় দর্শকের চিত্তে জুটলো এক ডোজ মারপিটের দাওয়াই। চিত্রনাট্যকার ইতিপূর্বেই রহস্যের পূর্বাভাস দিয়েছিলেন। সূত্রানুসারে তিন বন্ধুর সওদাগরী ডিঙ্গার পেছনে লাগল ফেউ। যথাসময়ে যথাস্থানে পাথর নিয়ে জাহাজখানি যেন পৌঁছাতে না পারে সেটাই ছিল শরীফ নামক দুর্বৃত্তের অ-শরীফ উদ্দেশ্য।
একদিন রাতে রাজ্জাক উদ্ধার করল জলমগ্ন জীবন প্রতারিত মেয়ে রোজিনাকে, পুরুষপুরীতে নারীর আগমন ঘটলে প্রেমের জোয়ার নামল। কিন্তু প্রেমের প্রথম পাঠে ইলিয়াস, জসিম ফেল করলেও রাজ্জাক তার বাস্তববুদ্ধির জন্য রোজিনার আস্থা অর্জনে সমর্থ হলো। অতঃপর প্রেমের লুকোচুরি খেলায় বুড়ী ছোঁয়াছুয়ি হলো ফ্যান্টাসি দৃশ্যের বাহার দেখিয়ে। উদর সর্বস্ব জসিমের কাছে ব্যাপারটা দোষনীয় মনে হলো। তার প্রত্যাগমন ঘটল পুরনো ভিলেনীপনার কূট বৃত্তিতে। দীর্ঘকালের প্রগাঢ় বন্ধুত্বে ফাটল ধরল এক সাধারণ নারীর প্রেমাকাঙ্খায়। মওকা বুঝে সেই ফাটলকে খাল বানিয়ে কুমীর ঢোকাতে শরীফ ছুটল ঢাকায়। মঞ্চে এলো … [অষ্পষ্ট] সুন্দরী অঞ্জনা। নিখুঁত অভিনয় চাতুর্যে জসিম ও ইলিয়াসকে কুপোকাৎ করে অঞ্জনা জাহাজে স্থানে নিতেই শুরু হলো রাজ্জাকের মদ্যপান। কাকতালীয়ভাবে এই অঞ্জনাই ছিল তার পূর্ব প্রণয়নী। ব্যর্থতার জ্বালা নিবারণে নিষিদ্ধ তরল পদার্থ গিলতে থাকল। হিতৈষীদের জানিয়ে দিল- এই দ্রব্যটিই নাকি তার হৃদয়ের জ্বালা নিবারণের অব্যর্থ অষুধ। (কথাটা আমরাও সহজে বিশ্বাস করে নেই। কারণ সেই রংবাজ থেকেই তো বোতল তার অবিচ্ছেদ্য সঙ্গী হয়ে বিরাজ করছে। বেঈমান অনন্ত প্রেম বদনাম ইত্যাদিতেও তিনি ধারাটি অব্যাহত রেখেছিলেন।)
রাজ্জাকের এহেন দুর্দশায় বন্ধু ও প্রণয়িনীরা দূর থেকে দেখে গ্যালন গ্যালন যতই অশ্রু ফেলে- দর্শকরা যেন ততই হাসির খোরাক পায়। তারপর হঠাৎ করেই (নাকি তরল পদার্থের দ্রব্য গুনে?) রাজ্জাক অমিতাভ বচ্চন হয়ে গেল। এবং মনো যাতনার ব্যাখ্যাদানের পর ধপাস করে পড়ে বেহুশ হয়ে গেল।
ওদিকে ওয়ারলেসে অঞ্জনার সঙ্গে যোগাযোগ স্থাপনে ব্যর্থ হয়ে স্বয়ং শরীফ সদলে জাহাজ আক্রমণ করে বসল। এই খাণ্ডব দাহনে অঞ্জনার মরণ হলো। অবশেষে তিন বন্ধুর সমবেত অক্রমণে শত্রু নিধন পর্বের সমাপ্তি ঘটে। আর উচ্ছিষ্ট পরিষ্কার করতে যথারীতি আগমন হয় পুলিশ বাহিনীর।
চিত্রনাট্যের প্রথমাংশে পরিমিতি বোধের পরিচয় থাকলেও বিরতির পর থেকে হাওয়া বদলাতে শুরু করে। দীর্ঘ মারপিট ফ্যান্টাসি অসঙ্গত নৃত্য উতু-উতু-কুত-কুত জাতীয় অশ্রাব্য গান, একাধিক ফ্লাশব্যাক দশককে ঘুম পাড়াতে সাহায্য করে। ছবির প্রথমাংশের চিত্রগ্রহণে সচেতন মাপঝোকের দৃষ্টান্ত মেলে। সারেং এর জাহাজ চালানো। নদীর তীরের চলমান দৃশ্য। প্রথম ফ্লাশব্যাক ইত্যাদি এ প্রসঙ্গে স্মর্তব্য।
ইলিয়াসের সহজ সাবলীল অভিনয় ভালো লেগেছে। রোজিনাও তার অন্যান্য অভিনয়ের তুলনায় উজ্জ্বলতর। বেঢপ পরচুলায় অঞ্জনার মুখশ্রী ক্ষুণ্ন হয়েছে। আর তার প্যানপ্যানে নাকি কান্নায় ভেজা অভিনয় দর্শকের চোখে ভালো লাগার অঞ্জন মাখাতে পারেনি। রাজ্জাক আর জসীমের পাল্লা সর্বদাই অতি অভিনয়ের দিকে ঝুঁকেছিল। সুন্দর অভিনয় করেছেন আখতার হোসেন ইদ্রিস ও ড্রাইভার।
*মূল লেখায় কোনো শিরোনাম ছিল না।