Select Page

শাকিব খানের জবানবন্দি: অজ্ঞান অবস্থায় নায়িকার সঙ্গে ভিডিও করে ৪০ লাখ টাকা আদায়

শাকিব খানের জবানবন্দি: অজ্ঞান অবস্থায় নায়িকার সঙ্গে ভিডিও করে ৪০ লাখ টাকা আদায়

অবশেষে প্রযোজক রহমত উল্ল্যাহর বিরুদ্ধে আদালতে মামলা করেছেন শাকিব খান। অভিযোগে চাঁদা দাবি ও হত্যার হুমকির প্রসঙ্গ এনেছেন তিনি। সেখানে বলা হয়, অজ্ঞান অবস্থায় এক নায়িকার সঙ্গে আপত্তিকর ভিডিও করে ৪০ লাখ টাকা আদায় করা হয়।

আজ বৃহস্পতিবার (২৩ মার্চ) ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আরাফাতুল রাকিবের আদালতে হাজির হয়ে মামলা করেন শাকিব খান। পরে আদালত তার জবানবন্দি রেকর্ড করেন। শুনানি শেষে আগামী ২৬ এপ্রিল আসামিকে আদালতে হাজির হতে সমন জারি করেন আদালত।

বাসার গ্যারেজে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে শাকিব খান

মামলার অভিযোগে বলা হয়েছে, চার বছর আগে চিত্রনায়ক শাকিব খান ‘অপারেশন অগ্নিপথ’ নামে বাংলা সিনেমায় অভিনয় করতে চুক্তিবদ্ধ হন। এ সিনেমায় নায়িকা হিসেবে শিবা আলী খানকে মনোনীত করা হয়। সিনেমার শুটিংয়ের জন্য ২০১৬ সালের ৩০ আগস্ট অস্ট্রেলিয়া যান শাকিব। শিবা আলী খান ভিসা জটিলতার জন্য শুটিং করতে অস্ট্রেলিয়ায় যেতে পারেনি। তার জায়গায় বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত অস্ট্রেলিয়ান নাগরিক এক নারীর সঙ্গে শাকিবকে অভিনয় করার প্রস্তাব দেন রহমত উল্ল্যাহ। তবে শাকিব তার ক্যারিয়ারের কথা চিন্তা করে বিষয়টি নাকচ করে দেন।

আরও বলা হয়েছে, শুটিং শেষে শাকিব রিফ্রেশমেন্টের জন্য ক্লাবে যান। সেখানে অস্ট্রেলিয়ার ওই নারীসহ আরও দুই-তিনজন অপরিচিত লোককে দেখতে পান শাকিব। মামলার আসামি রহমত উল্ল্যাহসহ অন্যদের সঙ্গে একত্রে ক্লাবের খাওয়া-দাওয়াসহ বিভিন্ন রকম পানীয় পান করেন। এক পর্যায়ে শাকিব অসুস্থবোধ করেন। হোটেলে ফেরত আসার সময় রহমত উল্ল্যাহসহ অন্যদের খুঁজে না পেয়ে ওই নারীর কাছ থেকে বিদায় নিয়ে শাকিব গভীর রাতে হোটেলে ফেরত আসতে চান।এসময় ওই নারী তাকে জানান, ‘আপনি যেহেতু অসুস্থবোধ করছেন তাহলে চলেন আমি আপনাকে হোটেল রুমে পৌঁছে দিয়ে আসি।’ শাকিব অনেকটা নিরুপায় হয়ে তার প্রস্তাবে রাজি হয়ে হোটেল রুমের উদ্দেশে রওনা দেন। আসার সময় বেশি অসুস্থ হয়ে পড়লে শাকিব অজ্ঞান হয়ে যান।

অভিযোগে উল্লেখ করা হয়েছে, অজ্ঞান হয়ে যাওয়ার পরদিন সকাল বেলা আসামি রহমত উল্ল্যাহ শাকিবকে ফোনে বলে, তুমি রাতে ওই নারীর সঙ্গে কী করেছো সব কিছুর ভিডিও ক্লিপ আমার হাতে। তুমি যদি আমাকে এক লাখ ডলার চাঁদা না দাও তাহলে আমি সমস্ত ভিডিও ক্লিপ এবং ওই নারীকে নিয়ে পুলিশের কাছে গিয়ে তোমার নামে অভিযোগ করবো। তুমি বাংলাদেশে যেতে পারবে না।’

জবানবন্দিতে শাকিব দাবি করেন, এ রকম বিভিন্ন ভয়ভীতির একপর্যায়ে তিনি ভয় পেয়ে যান। নিজের ব্যক্তিগত জীবন ও পারিবারিক সমস্যার কথা চিন্তা করে রহমত উল্ল্যাহকে পাঁচ হাজার অস্টেলিয়ান ডলার দেন। পরবর্তীতে রহমত উল্ল্যাহ তাকে বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন ভয়ভীতি দেখয়ে মোট ৪০ লাখ টাকা চাঁদা নিয়েছেন। পরবর্তীতে আরও টাকা দিতে না পারায় শাকিবকে জানানো হয়, তোমার নামে অস্ট্রেলিয়ার অভিযোগ করা হয়েছে। চাঁদা দেওয়া বন্ধ করে দিলে আসামি রহমত উল্ল্যাহ বিভিন্ন জায়গায় ইলেক্ট্রনিক মিডিয়া, প্রিন্ট মিডিয়া, বিভিন্ন  ইউটিউব চ্যানেল, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এবং শাকিবের পরিবারের সদস্যদের কাছে মিথ্যাচার ও কুৎসা রটাতে থাকেন। ২০২৩ সালের ১৬ মার্চ রহমত উল্ল্যাহ চিত্রনায়ক শাকিব খানের কাছে এক লাখ ডলার চাঁদা দাবি করেন ও প্রাণনাশের হুমকি দেন।

এর আগে ২০ মার্চ রাতে শাকিব খান মামলা করতে গুলশান থানায় যান। প্রায় দেড় ঘণ্টা থানার ভেতরে পুলিশ কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলেন তিনি। এরপর থানা থেকে আদালতে মামলা করার পরামর্শ দেন।

এদিকে মামলা বিষয়ে বিস্তারিত জানাতে গুলশানের বাসার গ্যারেজে সংবাদ সম্মেলন ডেকেছিলেন শাকিব খান। পুরো সংবাদ সম্মেলন জুড়ে নিজেকে নির্দোষ দাবি করেন তিনি। শাকিব বলেন, ‘আমি নির্দোষ না হলে আদালত মামলা গ্রহণ করতো না। আমার আইনজীবী তথ্য প্রমাণ উপস্থাপন করেছেন কীভাবে রহমত উল্ল্যাহ আমার বিরুদ্ধে মিথ্যে অভিযোগ করেছেন।’

আপনি হত্যার হুমকির কথাও লিখেছেন মামলার বিরণীতে। তিনি কবে কোথায় আপনাকে এ হুমকি দিয়েছেন? শাকিব বলেন, এ ব্যাপারে আদালতে আমরা তথ্য প্রমাণ দিব।

তিনি বলেন, দিনশেষে সত্যের জয় হয়, আজকে আমরা জয়ের হাসি হাসছি। প্রতারক কিন্তু পালিয়ে গেছে। শাকিবের দাবি, রহমত উল্ল্যাহর পিছনে এক চক্র কাজ করছে তার ক্ষতি করার জন্য। তিনি সাংবাদিকদের প্রতিও উষ্মা প্রকাশ করেন, শুরুতে যাচাই না করে সংবাদ ছাপানোয়। একই সঙ্গে বলেন, কেউ অভিযোগ করলো আর অমনিই নিউজ না ছেপে দুদিন অপেক্ষা প্রযোজক সমিতিতে খোঁজ নিয়ে নিউজ করলে আজকের এত কিছু হতো না।

প্রযোজক সমিতিও না বুঝে অভিযোগপত্র গ্রহণ করেছে, এমনটাই বলেন শাকিব। রহমত উল্ল্যাহর অভিযোগ নিয়ে প্রযোজক সমিতি থেকে তাকে ৭ দিনের মধ্যে জবাব দিতে বলে দেওয়া চিঠি কিংবা রহমত উল্ল্যাহর আইনি নোটিশ পাওয়ার ব্যাপারে কোনো সুদত্তর দেননি শাকিব। বরং তিনি তাড়া দেখিয়ে সংবাদ সম্মেলন শেষ করেন।

রহমত উল্ল্যাহর অভিযোগ, ২০১৭ সালে অস্ট্রেলিয়ায় ‘অপারেশন অগ্নিপথ’ সিনেমার দৃশ্যধারণের সময় এক নারী সহপ্রযোজককে ‘ধর্ষণ’ করেন শাকিব খান, এরপর তিনি দেশে পালিয়ে আসেন। এই ঘটনা নিয়ে ছয় বছর পর গতকাল বুধবার বাংলাদেশ চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতিতে শাকিবের বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ দেন প্রযোজক। অভিযোগে প্রযোজক উল্লেখ করেন, শাকিব খানের বিরুদ্ধে সেই ভুক্তভোগী অস্ট্রেলিয়া পুলিশের কাছে একটি লিখিত অভিযোগও করেছিলেন। সেই অভিযোগে নিজেকে একজন সাক্ষী হিসেবে দাবি করেন রহমত উল্ল্যাহ। অভিযোগের পর অপু বিশ্বাসের মধ্যস্থতায় শাকিব খানের সঙ্গে বসলেও কোনো সমঝোতা হয়নি। এরপর রহমত উল্ল্যাহেক মিথ্যুক, বাটপার বলায় এই চিত্রনায়কের নামে নোটিশ পাঠানো হয়।

সূত্র: বাংলা ট্রিবিউনসারা বাংলা


মন্তব্য করুন