Select Page

সব দিক দি‌য়ে এফ‌ডি‌সি ফি‌ল্মের রি‌মেক ‘হাওয়া’

সব দিক দি‌য়ে এফ‌ডি‌সি ফি‌ল্মের রি‌মেক ‘হাওয়া’

‘বি‌ষে ভার না‌গিনী’র ২০২২ সালীয় রি‌মেক ম‌নে হই‌লো ‘হাওয়া’ …

Truth is beauty. রবীন্দ্রনাথ তথ্য স‌ত্যের কথা ব‌লে নাই, তি‌নি শিল্প সৌন্দর্য‌কে মিন ক‌র‌ছে। শি‌ল্পের সত্য মা‌নে ত‌থ্যের সত্যতা না। মুরাকা‌মি বা কাফকা বা মা‌র্কেজ বা জ‌হির পড়‌তে গে‌লে শিল্প বাস্তবতা জি‌নিসটা বুঝ‌তে পারা যায়। যা শুধুমাত্র বোঝা যায় তা বে‌শির ভাগ ক্ষে‌ত্রে ব্যাখ্যা করা যায় না। ফ‌লে আ‌র্টের বাস্তবতা অন্য জি‌নিস। শিল্প সত্য না হয়েও সত্য, তা‌তে বাস্তবতা না থাক‌লেও বাস্তব।

‘বি‌ষে ভার না‌গিনী’র ২০২২ সালীয় রি‌মেক ম‌নে হই‌লো ‘হাওয়া’। যিনি কা‌হিনী লিখ‌ছেন, যি‌নি প‌রিচালক, তি‌নি মহাফাঁ‌কি দি‌ছেন গল্প লিখ‌তে গিয়া। আমরা যারা লেখক তা‌দের এমন হয়। কিছু একটা জমজমাট লিখ‌লেন। কিন্তু শেষ কর‌তে পার‌তে‌ছেন না। তখন হয় ধৈর্য ধ‌রে ব্রেনওয়ার্ক করা লা‌গে শেষ করার জন্য। না পার‌লে তাকে প্রকাশ করার আশা ত্যাগ করে অন্য কা‌জে হাত দি‌তে হয়। কিন্তু ছোট লেখকদের দেখ‌বেন নি‌জের লেখার মায়ায় প‌রে যায়। প্রথম অংশ ভা‌লো হই‌ছে এমন মুগ্ধতার কার‌ণে শেষে সমাপ্ত কর‌তে না পার‌লেও বা‌জে মাল‌টি প্রকাশ ক‌রে ফে‌লে।

‘হাওয়া’র কা‌হিনী যা তা টাই‌পের। জঘন্য। কোন গল্পকার‌কে দি‌য়ে ঠিকঠাক করা‌য়ে নি‌লে এমন করুণ প‌রিণ‌তি হইতো না কা‌হিনীর। ‘হাওয়া’র সূচনা যেভা‌বে শুরু হই‌ছে, কম বা‌জে‌টে দুর্দান্ত কিছু ডে‌লিভা‌রি দেওয়া যাই‌তো। ছোটগ‌ল্পের প্রাণ হই‌লো গল্পটা। তা‌তে যতই বর্ণনা থাকুক, সুন্দর সুন্দর শব্দ থাকুক তা‌তে গল্প না থাক‌লে তা গল্প না। সি‌নেমায় কা‌হিনী গুব‌লেট মার্কা থাক‌লে তা সি‌নেমা হয় না তা‌তে নাচ, গান, বাদ্য, বাজনা, অ‌ভিনয়, শিল্পী, দৃশ্য যাই থাক না কেন।

বড় কথা হই‌লো ‘হাওয়া’র সি‌নেমা‌টোগ্রা‌ফি আহম‌রি কিছু না। সমুদ্র এ‌ম্নি‌তেই সুন্দর একটা ব্যাপার। অ্যাজ ইউজ্যুয়াল দৃশ্যায়ন। সমু‌দ্র নিয়া যত ফিল্ম দেখ‌ছি (বি‌দে‌শিগু‌লো যে‌হেতু দেখ‌ছি, ফ‌লে অ‌ভিজ্ঞতা এড়া‌নোর সু‌যোগ নাই) তার ভেতর হাওয়ার সি‌নেমা‌টোগ্রা‌ফি বা এক দুইটা সি‌নের কথা ব‌লেন যা অ‌তি অসাধারণ, অ‌নেক দিন ম‌নে থাক‌বে। নাই। লং শ‌র্টে সমুদ্র‌কে সর্বদা সুন্দর হিসা‌বে দেখার চোখ আমা‌দের অ‌নেক‌দিন হ‌লো প্রস্তুত।

ত‌বে ‘হাওয়া’ এ‌তো জন‌প্রিয় ফিলম হই‌তো পার‌লো কিভা‌বে এমন দুর্বল কা‌হিনী নিয়া?

এইটা‌র কারণ আমা‌দের কম্বাইন্ড স্মৃ‌তির মামলা। নব্বই দশ‌কে এমন নাগ না‌গিনীর সি‌নেমা প্রচার পাই‌তো। যারা প‌ত্রিকায় কাজ ক‌রেন তারা জা‌নেন যে‌কোন সা‌পের নিউ‌জের প্রচুর হিট। মানুষ সা‌পের গল্প শুন‌তে পছন্দ ক‌রে। বেহুলা লখিন্দ‌র আমা‌দের অঞ্চ‌লের শ্রেষ্ট গল্প। এছাড়া সাপের অ‌নেক অ‌নেক গল্প সমা‌জে বিদ্যমান। আমা‌দের সাই‌কির ভেতর সা‌পের একটা বিরাট প্রভাব আ‌ছে। যমুনা নদীর নাম শুন‌লে দেখ‌বেন আপনার রাধা কৃ‌ষ্ণের কথা ম‌নে আস‌তে‌ছে। পদ্মা শুধু আর পৌরা‌ণিক নদী না, এটা এখন উন্নয়‌নের একটা প্রতীকি প্রবাহ। পদ্মার নাম আই‌লে আমা‌দের পদ্মা সেতুর নাম ম‌নে আ‌সে। এইটা সাই‌কি‌তে ঢুকায়া দেওয়া হই‌ছে। ফ‌লে, সাপ আমা‌দের আগ্র‌হের কেন্দ্র‌বিন্দু। এ কার‌ণে সাই‌কির সা‌থে সম্প‌র্কিত যে‌কোন কিছুর সা‌থে মানুষ সহ‌জে রি‌লেট কর‌তে পা‌রে। ফ‌লে ২০/৩০ বছর আ‌গে সমা‌জে সা‌পের প্রাদুর্ভা‌বের সা‌থে অসংখ্য সা‌পের সি‌নেমা আপ‌নি পা‌বেন উপমহা‌দে‌শে।

যারা ৯০ দশ‌কে হলগু‌লো‌তে সা‌পের ছ‌বি দে‌খে বড় হই‌ছে তারা এখন পূ‌র্বের হলগু‌লোর প‌রি‌বে‌শে প‌রিবারসহ ফির‌তে পার‌বে না। কিন্তু সা‌পের সি‌নেমার শৈশব মায়া তা‌দের এখ‌নো র‌য়ে গেছে। এফ‌ডি‌সির সর্প কা‌হিনীকে ক্যাপিটাল কর‌ছে সুমন ও তার দল। ফ‌লে, শিল্প কারখানার নাগ‌রিক সামা‌জের সি‌নে‌প্লে‌ক্সের ভোক্তারা এখ‌নো তা‌দের শৈশব চল‌চ্চিত্র স্মৃ‌তি থে‌কে বের হ‌তে পা‌রে নাই। তারা সাপের গ‌ল্পে মুগ্ধ হ‌বে তা‌তো স্বাভা‌বিক।

সব দিক দি‌য়ে এফ‌ডি‌সি ফি‌ল্মের রি‌মেক হাওয়া। এই জন্য হ‌লগু‌লো‌তে এ‌তো ভিড়।

অ্যাজ আ ফিল্ম বেহুদা সময় নষ্ট।


লেখক সম্পর্কে বিস্তারিত

মৃদুল মাহবুব

কবি, গদ্যকার, চিন্তক, সমাজ দর্শক, ক্রিটিক। জন্ম : ৯ অক্টোবর ১৯৮৪। বেড়ে ওঠা ঝিনাইদহ ও ঢাকা।

মন্তব্য করুন