Select Page

সাহিত্য থেকে টেলিফিল্ম: শিল্প থেকে শিল্প

সাহিত্য থেকে টেলিফিল্ম: শিল্প থেকে শিল্প
বঙ্গ বিডি-র ‘বঙ্গ বব’ নামের ঈদ আয়োজনে এবার চমৎকার একটি উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছিল। সাম্প্রতিক কথাসাহিত্য থেকে টেলিফিল্ম নির্মাণ করেছে এ ওয়েব প্ল্যাটফর্মটি। ‘বই থেকে শুরু’ তাদের শ্লোগান। ইতোমধ্যে দর্শক সমাদৃত হয়েছে সিরিজটি। ঈদে ৭ দিনে ৭টি টেলিফিল্ম প্রচার করেছে তারা। সাহিত্য থেকে টেলিফিল্ম যাকে বলা যায় শিল্প থেকে শিল্প। একটা ক্রিয়েটিভ কাজ থেকে আরেকটা ক্রিয়েটিভ কাজ। ‘arts for arts sake’ বলে লিটারারি টার্মটা চালু আছে তাও বলা যেতে পারে। মানের দিক থেকেও শিল্পোত্তীর্ণ হয়েছে কাজগুলো।
৭টি টেলিফিল্ম যথাক্রমে :

শহরে টুকরো রোদ (শাহাদুজ্জামান, নূর ইমরান মিঠু)
আলিবাবা ও চালিচার ( শিবব্রত বর্মণ, অনিমেষ আইচ)
মরণোত্তম ( সাদাত হোসাইন, সঞ্জয় সমদ্দার)
লাবণী (মারুফ রেহমান, কিসলু গোলাম হায়দার)
চরের মাস্টার (রাহিতুল ইসলাম, ভিকি জাহেদ)
মিস্টার কে (মাহবুব মোর্শেদ, ওয়াহিদ তারেক)
কেমনে কি ( যোবায়েদ আহসান, ইফতেখার আহমেদ ফাহমি)
‘শহরে টুকরো রোদ’ প্রচারিত হয়েছে ঈদের দিন। জনপ্রিয় কথাসাহিত্যিক শাহাদুজ্জামানের ‘শহরে’ ও ‘টুকরো রোদ’ দুটি গল্প থেকে টেলিফিল্মটি নির্মাণ করেছেন নূর ইমরান মিঠু। টেলিফিল্মের নামকরণে ‘শহরে টুকরো রোদ’ এমনভাবে খাপ খেয়েছে যে দুটি গল্প থেকে যে এটি নির্মিত এটা মনেই হবে না। এর প্রধান চরিত্রে ছিল পার্থ বড়ুয়া ও বাঁধন। প্রথম গল্পে বাঁধনকে স্বামীর চালাকি ধরার জন্য তদন্ত করতে দেখা যায়। অল্প সময়ের মধ্যে একটা উত্তেজক পরিস্থিতির তৈরি হয়। দ্বিতীয় গল্পে চিঠিকে একটা আবেদনময়ী ভঙ্গিতে তুলে ধরা হয়েছে। পার্থ-র অভিনয় আবেদনকে পূর্ণতা দিয়েছে। নূর ইমরান মিঠুর নির্মাণে আধুনিকতা ছিল।
‘আলিবাবা ও চালিচার’ প্রচারিত হয় ঈদের পরের দিন। শিবব্রত বর্মণের গল্প থেকে নির্মাণ করেছেন অনিমেষ আইচ। এতে প্রধান চরিত্রে ছিল নূর ইমরান মিঠু। তার বিপরীতে ছিল অশনা হাবিব ভাবনা। অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ চরিত্রে ইশতিয়াক আহমেদ রোমেল, সোহেল মণ্ডলকে দেখা গেছে। এই টেলিফিল্মে লোভ ও তার পরিণতিকে তুলে ধরা হয়েছে। স্টোরি টেলিং অনেকটা ‘fairy tale’-এর স্বাদ দেবে। শুরু থেকে শেষের আগ মুহূর্ত পর্যন্ত নূর ইমরান মিঠু-র আধিপত্য থাকলেও একদম ক্লাইমেক্সে গিয়ে সোহেল মণ্ডল চমক দেখায়। বেশ উপভোগ্য কাজ।
‘মরণোত্তম’ প্রচারিত হয় ঈদের তৃতীয় দিন। সাদাত হোসাইনের উপন্যাস থেকে নির্মাণ করেছেন সঞ্জয় সমদ্দার। এর প্রধান চরিত্রে ইলিয়াস কাঞ্চন এবং অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ চরিত্রে শহীদুজ্জামান সেলিম, ইমতিয়াজ বর্ষণ, মাহিমা। মেয়ের সামাজিক নির্যাতনের বিচার চেয়ে একজন বাবা শহীদ মিনারে যায়। সেখানে কি ঘটতে যাচ্ছে সেটাই ছিল গল্পের চূড়ান্ত দিক। সমাজবাস্তবতায় যা বলে ন্যায় বিচার অনেক সময়ই মেলে না সেজন্য বিচার চাওয়া বাবার কাছে মরণই উত্তম কিনা তারই মর্মস্পর্শী উপস্থাপনা দেখা যাবে এ টেলিফিল্মে। ইমোশনাল একটি কাজ।
‘লাবণী’ প্রচারিত হয় ঈদের চতুর্থ দিন। মারুফ রেহমানের লেখা থেকে নির্মাণে ছিলেন কিসলু গোলাম হায়দার। প্রধান চরিত্রে মনোজ প্রামাণিক, মুমতাহিনা টয়া। অন্যান্য চরিত্রে শাহাদাত হোসেন, সুলতানা মৌ। এ টেলিফিল্মটি মানের দিক থেকে এগিয়ে আগের গুলোর থেকে। এর স্টোরি টেলিং ছিল প্যারালাল এবং সাইকোলজিক্যাল। একটা বইকে কেন্দ্র করে অদ্ভুত সব ঘটনা ঘটতে থাকে এবং রিয়েলিটি ও ফ্যান্টাসির একটা দ্বন্দ্ব চলতে থাকে। ক্লাইমেক্সে গিয়ে দর্শক হোঁচট খায়। নির্মাণ ছিল অসাধারণ এবং মনোজ প্রামাণিক এ টেলিফিল্মের জন্যই এবারের ঈদের অন্যতম সেরা অভিনেতা।
‘চরের মাস্টার’ প্রচারিত হয় ঈদের পঞ্চম দিন। রাহিতুল ইসলামের ‘চরের মাস্টার কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ার’ গল্প থেকে নির্মাণ করেছেন ভিকি জাহেদ। এর প্রধান চরিত্রে নবীন প্রতিভাবান অভিনেতা খায়রুল বাশার। অন্যান্য চরিত্রে লুৎফর রহমান জর্জ, সাফা কবির, শাহবাজ সানি। প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর উন্নয়ন চিন্তা এবং সামাজিক বাধার বাস্তব চিত্রায়ন ছিল এ টেলিফিল্ম। অভিনয়ে খায়রুল বাশার ও জর্জ অসাধারণ। নির্মাণে ভিকি জাহেদ প্রাকৃতিক পরিবেশকে দৃষ্টিনন্দন ভাবে তুলে ধরতে পারলেও শেষের দিকে দ্রুত শেষ হয়ে যাওয়ার সমস্যার পাশাপাশি কারিগরি কিছু ত্রুটি করেছেন এবং গ্রামীণ পটভূমিতে এর আগে তার কাজ না হওয়াতে এ সমস্যাটি হয়েছে। তবে ভালো কাজ অবশ্যই।
‘মিস্টার কে’ প্রচারিত হয় ঈদের ষষ্ঠ দিন। মাহবুব মোর্শেদের ‘নোভা স্কশিয়া’ উপন্যাস থেকে পরিচালনায় ওয়াহিদ তারেক। প্রধান চরিত্রে পার্থ বড়ুয়া এবং অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ চরিত্রে অর্ষা, মনির আহমেদ, শাহেদ, সুষমা সরকার। এর গল্পটি সবচেয়ে ব্যতিক্রমী এবং পরিচালনাও সবচেয়ে আলাদা। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক পার্থকে অপহরণ করা হয় একটা পাসওয়ার্ড খোঁজার দায়িত্ব দিতে। পাসওয়ার্ড খুঁজতে গিয়ে পার্থ মনোজাগতিক এক রহস্যময় জগতে ঢুকে যায় যা তার জন্য খুবই চ্যালেঞ্জিং হতে থাকে। প্যারালালি দ্বৈত ঘটনা চলতে থাকে তার সামনে এবং এটা ছিল টেলিফিল্মের অদ্ভুত এক এক্সপেরিমেন্ট। পার্থ বড়ুয়ার প্রফেশনাল অভিনয় টেলিফিল্মকে শিল্পোত্তীর্ণ করেছে। অন্যান্য চরিত্ররাও ভালো ছিল। পরিচালক ওয়াহিদ তারেকও তাঁর পূর্বের কাজের মতো ক্লাস দেখিয়েছেন এই টেলিফিল্মে। মানের দিক থেকে ভাবলে এ টেলিফিল্ম প্রথম অবস্থানে থাকবে।
‘কেমনে কি’ শেষ প্রচারিত টেলিফিল্ম এই আয়োজনের। যোবায়েদ আহসানের ‘হাকুল্লা’ গল্প থেকে নির্মাণে ইফতেখার আহমেদ ফাহমি। প্রধান চরিত্রে ইয়াশ রোহান। অন্যান্য চরিত্রে মিশৌরী রশিদ, অপর্ণা ঘোষ, সোহেল খান, শামীমা নাজনীন, শাহেদ আলী, শরাফ আহমেদ জীবন। ‘হাকুল্লা’ বা বিনা দাওয়াতের মেহমান হয় ইয়াশ রোহান এক অজানা বন্ধুর সাথে। ধনীর সন্তান হয়ে জীবন সাধারণ জীবনযাপন তার দেখা হয় না তাই এ আয়োজন কিন্তু সে কতটুকু সফল হবে এ যাত্রায় সেটাই গল্প। ইয়াশ রোহান লাইভলি অভিনয় করেছে, আঞ্চলিক ভাষায় কথা বলা অভিনেতা দারুণ। বাকিরাও ঠিকঠাক। ফাহমি টেলিফিল্মটি খুব সাদামাটাভাবে নির্মাণ করেছেন কিন্তু এনজয়অ্যাবল ছিল।
‘বঙ্গ বব’-এর ঈদের সাতদিনের সাত টেলিফিল্ম ইতোমধ্যে দর্শক প্রশংসিত হয়েছে। নিরবচ্ছিন্ন ভালো সার্ভিসের সাথে মানসম্মত কনটেন্টের জন্য দর্শক এখন প্রত্যাশাও বাড়িয়েছে তাদের কাছে। আশা করা যায় আগামীতে সিজনেও তারা ভালো কাজ করবে। ক্রিয়েটিভ কাজের মাধ্যমে তাদের প্ল্যাটফর্মকে এগিয়ে নেবে।


মন্তব্য করুন