Select Page

ওদের যোগ্যতা কম্পাউন্ডারের, ভাব ডাক্তারের – ওমর সানী

ওদের যোগ্যতা কম্পাউন্ডারের, ভাব ডাক্তারের – ওমর সানী

Omar-Saniনব্বইয়ের দশকের জনপ্রিয় নায়ক ওমর সানী। নূর হোসেন বলাইয়ের ‘এই নিয়ে সংসার’ ছবি দিয়ে অভিষেক। টানা দশ বছর নিয়মিত কাজ করেন। শ’ খানেক ছবিতে অভিনয় করে হঠাৎ করেই নিজেকে সরিয়ে নেন তিনি। দীর্ঘ বিরতির পর আবার ফিরে আসেন। এবার খলনায়ক চরিত্রে। কয়েক বছর পর খলনায়ক চরিত্র থেকেও ইস্তফা। এখন আবার নিয়মিত হয়েছেন তিনি। হাতে থাকা ১৪টি ছবির সবগুলোতেই তাঁর চরিত্র ইতিবাচক। নতুন করে ফেরা এবং বাংলা ছবির নানা দিক নিয়ে সম্প্রতি প্রথম আলোর মনজুর কাদেরের সঙ্গে কথা বলেছেন ওমর সানী। সাক্ষাতকারটির গুরুত্ব বিবেচনা করে বাংলা মুভি ডেটাবেজ (বিএমডিবি)-র পাঠকদের জন্য হুবহু তুলে ধরা হল।

চলচ্চিত্রের এখনকার সার্বিক অবস্থা কেমন মনে হচ্ছে?
যাঁরা চলচ্চিত্র বোঝে তাঁরা ছবির সঙ্গে যুক্ত নেই। এমনকি গত ১০ থেকে ২০ বছরের মধ্যে যাঁরা চলচ্চিত্রে ভালো ব্যবসা করেছেন তাঁদেরও কেউ এখন আর ছবির ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত নেই। এখন যারা ছবি বানাচ্ছে তারা ছবি সম্পর্কে এবং ছবির দর্শক সম্পর্কে কিছুই বুঝছে না। তাদের যোগ্যতা হচ্ছে কম্পাউন্ডারের; ভাব দেখে মনে হয় এমবিবিএস ডাক্তার। এর বেশি আর কি বলব।

আগে অনেক ছবি নির্মাণ হতো। কিন্তু এখন ছবি নির্মাণের হার কমে গেছে। কেন?

ছবি না বানানোর তিনটা প্রধান কারণ আমার চোখে ধরা পড়ে। প্রথমটি শতভাগ ভিডিও পাইরেসি, দ্বিতীয়টি টেকনিক্যাল সাইডে আমাদের পিছিয়ে থাকা। তৃতীয়ত, সরকার থেকে কোনো সহযোগিতা না পাওয়া। এ ছাড়া আর কিছু কারণ আছে।

কেমন সেটা…
পারিশ্রমিক নিয়ে প্রথম সারির নায়কদের গোঁয়ার্তুমি। এখন তা সবাই হরহামেশাই করছে। আমরা যখন ছবিতে অভিনয় করেছি তখন ৬ লাখ টাকা পারিশ্রমিকেও করেছি। আবার কখনো সাড়ে পাঁচ লাখ, কখনোবা তিন লাখ আর ক্ষেত্রবিশেষে আবার এক লাখেও সিনেমার কাজ করেছি। শুধু ছবির স্বার্থে, গল্পের প্রয়োজনে আমরা কম পারিশ্রমিক নিয়েছি। সে সময় আরও অনেকে এ কাজটি করেছে। সবাই চলচ্চিত্রের স্বার্থে পারিশ্রমিকের ব্যাপারে আপস করেছি। পারিশ্রমিক নিয়ে কেউ কোনো ধরনের গোঁয়ার্তুমি করিনি।

এখন ছবির বাজেট কত হওয়া উচিত বলে মনে করেন আপনি?
আমাদের চলচ্চিত্রের যে অবস্থা তাতে সবদিক বিবেচনা করে এই মুহূর্তে ৮০ থেকে ৮৫ লাখ টাকায় ছবি বানানো উচিত বলে মনে করি। এই বাজেটে ছবি নির্মাণ করা হলে মোটামুটিভাবে বলা যায়, ছবির টাকা তুলে আনা সম্ভব হবে। এই বাজেট যদি এক কোটি ক্রস করে তাহলে ঝুঁকির সম্ভাবনা বেশি।

কিন্তু শাকিব খান তো বলছেন ভিন্ন কথা। তাঁর মতে বাজেটের কারণে নাকি ছবি মার খেয়ে যাচ্ছে…
এটা অত্যন্ত ভুল কথা। তাঁর সঙ্গে আমি দ্বিমত পোষণ করছি। অত্যন্ত বিনয়ের সঙ্গে তাঁর বোঝার জন্য বলছি, আমাদের হলগুলোর ক্যাপাসিটি, দর্শকদের সামর্থ্য, ভিডিও পাইরেসি-এসব নিয়ে ভাবতে হবে। আমাদের সার্বিক অবস্থাও কী-সবদিক কিন্তু ভাবতে হবে। আমাদের চলচ্চিত্র যখন এত সমস্যার মধ্য দিয়ে যাচ্ছে ঠিক সেই সময়টাতে ৮০ থেকে ৮৫ লাখ টাকার বেশি বাজেটে ছবি নির্মাণ কোনোভাবেই ঠিক হবে না।

আপনি নিজেও তো ছবি বানাতে যাচ্ছেন…
আমার বাজেটও কিন্তু এমনটাই হবে। আগে একটা সময় ছিল যখন কোনো ছবি একদম অল্প ব্যবসা করলেও প্রযোজকের লগ্নিকৃত টাকা ফেরত নিয়ে আসতে পারত। কিন্তু এখন তা অনেকটাই অসম্ভব।

বাংলা চলচ্চিত্রের খারাপ অবস্থার দিকে যাওয়ার জন্য অনেকে ডিপজলকে দায়ী করেন…

ডিপজল সাহেবের বিনিয়োগে যে অন্য ধরনের ছবি হয়নি তা কিন্তু নয়। কিন্তু এই ডিপজল সাহেবই আবার ‘চাচ্চু’, ‘দাদীমা’, ‘মায়ের হাতে বেহেশতের চাবি’র মতো হৃদয়গাঁথা ছবিও উপহার দিয়েছেন। উনাকে এককভাবে দায়ী করাটা মোটেও ঠিক হবে না।

ঢাকাই ছবির দুর্দিনের পেছনে মাদ্রাজি ছবির কোনো ভূমিকা আছে কী?

এটা অস্বীকার করার কোনো উপায় নাই। বাংলাদেশের ছবির জন্য বাংলাদেশের গল্প লাগবে। ইদানীংকালের ছবিতে যার অভাবটা অনেক বেশি। শুধু গল্প নয়, আবেগ-অনুভূতি, প্রেম ভালোবাসা, স্টাইল সবকিছুই বাংলাদেশের লাগবে। মারামারিও বাংলাদেশি লাগবে। বাংলাদেশেও কিন্তু ড্রাগন ফলের গাছ আছে। কিন্তু এটা তো থাইল্যান্ডের ড্রাগন ফলের মতো হবে না।

একটা বড় সময় বাংলা চলচ্চিত্রের এক নম্বর অবস্থানে ছিলেন। এখন যাঁদের কাজ দেখছেন তাঁদের মধ্যে কাদের সম্ভাবনাময় মনে হচ্ছে?

এখন যাদের আমরা নায়ক বলছি, নায়িকা বলছি, ভিলেন বলছি-ঢাকার বাইরে কোথা গেলে তাদের নাম বললে কেউ চেনে না। আমাদের একটাই সমস্যা হয়ে গেছে, আমাদের ভেতরের জায়গাটা একেবারে ফাঁপা। এখানে আসলে কিছুই নাই। আমরা পায়ের আঙুল দিয়ে হাঁটার চেষ্টা করছি। রাশিয়ান মেয়েরা কিন্তু পায়ের আঙুলে ভর করে ড্যান্স করে। বাঙালি মেয়ের পক্ষে তো তা সম্ভব না। আমাদের অনেকের খুব অল্প সময়ে ইয়ো ইয়ে ভাব চলে আসে। একটা বিজ্ঞাপন, একটা সিনেমা যদি কোনোভাবে কোনো একজনের হিট হয় তাহলে সেই মানুষটাকে ধরাছোঁয়া খুব মুশকিল হয়ে পড়ে। শূন্যে ভাসতে থাকে। আমরা এখনো ভাবি না, মৌসুমী কীভাবে এখনো মানুষের প্রিয় মুখ; সালমান শাহ, মান্নাকে এখনো মানুষ কেন শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করছে। ইদানীংকালে মধ্যে আরিফিন শুভকে নিয়ে শুধু কথা বলতে চাই। আমি শুভকে বলব, তার অভিনয়ের মধ্যে বাঙালিপনা ব্যাপারটি আরও বেশি আনতে হবে। সে খুব স্টাইলিশ। তার নাচের স্টাইল অনেক ভালো। কিন্তু এই স্টাইলের আরও বৈচিত্র্য আনতে হবে। গত কয়েকটা ছবিতে আমি তাকে একই স্টাইলে দেখেছি। এটা থেকে বেরিয়ে আসতে হবে। সে কমেডি করতে চায়, এটা তাকে মানায় না। তবে সবকিছুর পরও আমি শুভর ব্যাপারে আশাবাদী। সুপারস্টার হওয়ার সব ধরনের গুণ শুভর মধ্যে শতভাগ আছে।

শাকিব খানের নেতিবাচক দিক কী বলে মনে হয় আপনার?

প্রথমে ইতিবাচক কথা বলতে চাই। সে আমার চেয়ে অনেক ভালো নাচে। সে আমার চেয়ে ভালো অভিনয় করে। আমার চেয়ে তার ভালো লুক আছে। তবে শাকিবকে তার ছবি নির্বাচনসহ অন্যান্য বিচারের জায়গায় আরও অনেক পারফেক্ট হতে হবে। নিজের দিকে খেয়াল রাখতে হবে।

নিজের কোন দিকে খেয়াল রাখবে…
এটা আমি বলতে চাই না। সে খুব ভালো বুঝবে। শাকিব ভালো করে জানে আমি কি বোঝাতে চেয়েছি।

আপনি একটা সময় শীর্ষ আসনে ছিলেন। যখন আপনার অবস্থান নেমে গেল তখন আপনার মধ্যে কী ধরনের হতাশা কাজ করেছিল?
আমি সেটা খুব স্বাভাবিকভাবে মেনে নিয়েছি। এই ব্যাপারটি নিয়ে আমি বিন্দুমাত্র হতাশ হইনি। তথাকথিত অনেক শিল্পীই আছেন, ফ্লপ হতে হতে মার্কেট আউট হয়ে যান। আমি কিন্তু তা হতে দেইনি। আমি যখন চলচ্চিত্রের মেইন ধারা থেকে আউট হয়ে যাই তখন আমার অভিনীত তিনটি ছবি মুক্তি পায়। তার মধ্যে ‘কুলি’ ছবিটি সুপারহিট ব্যবসা করেছে। তারপরও কেন আমি ছিটকে পড়লাম তা আজও বুঝতে পারিনি। আজকে কিন্তু ১৪টি ছবি আমার হাতে। প্রতিটি ছবিতে আমার চরিত্র ইতিবাচক। একটা সময় নেতিবাচক চরিত্রে অভিনয় করতাম। ডিজিটাল ছবি শুরুর সময়টাতে নেতিবাচক চরিত্রে অভিনয় বন্ধ করে দিই। এরপর নিজেকে বোঝার চেষ্টা করতে থাকি। নিজের সঙ্গে নিজে কথা বলি। এখন তো ১৪ ছবির কাজ করছি।

আপনাকে নিয়ে একটা কথা প্রচলিত আছে…আপনি নাকি মিঠুন চক্রবর্তীতে খুব অনুসরণ করেন…
এটা হয়ে যায়। আমি মিঠুন দা’র ভক্ত ছিলাম। তাঁর ছবি প্রচুর দেখতাম। সে কারণে হয়তো আমার ভেতর অবচেতন মনে তাঁকে নিয়ে অনেক কিছু কাজ করত। মিলে যেত।


মন্তব্য করুন