Select Page

মুগ্ধকর ‘পদ্ম পাতার জল’

মুগ্ধকর ‘পদ্ম পাতার জল’

1_252081

পদ্ম পাতার জল’ মুক্তি পাবে ঈদের দিন। অথচ মুক্তির আগেই রিভিউ লিখছি? কিভাবে সম্ভব? ব্যাপারটা জটিল কিছু নয়। আমি এই সিনেমার প্রিমিয়ারে ছিলাম। রিভিউ লেখার জন্য দেখেছি এমন নয়, ছবিটা এ রকমই যে দেখার পর লিখতে এমনিতেই ইচ্ছে হতো।

এ সিনেমার প্রতি আগ্রহের সাথে জড়িয়ে আছেন সবার প্রিয় লতিফুল ইসলাম শিবলী ভাই। তাকে সবাই গীতিকার হিসেবে চিনলেও আমার কাছে তার আলাদা একটা পরিচয় আছে। শিবলী ভাই ট্রাস্টেড ব্রিলিয়ান্ট।

‘পদ্ম পাতার জল’র কাহিনী, চিত্রনাট্য ও সংলাপ তার। পরিচালনা করেছেন তন্ময় তানসেন। প্রধান দুটি চরিত্রে অভিনয় করেছেন ইমন বিদ্যা সিনহা মিমশহীদুজ্জামান সেলিমতারেক আনামের মতো প্রতিভাবান অভিনেতা আছেন। আছেন মিরাক্কেলখ্যাত আবু হেনা রনি।

চলুন একটু গল্পের দিকে যাওয়া যাক। এক অত্যাচারী ও ক্ষমতালোভী বাবার সন্তান ইমন। ইমন কবিমনা ছেলে, বেহালা বাজায়। উচ্চশিক্ষার জন্য শহরে আসে। এক বাঈজী মহলে দেখা হয়ে যায় মিমের সাথে। সেখান থেকেই প্রেম। প্রেমের সাথে অধিকাংশ ক্ষেত্রেই একটা ল্যাঞ্জা থাকে। যেন প্রকৃতির তৈরি করা একটা সুন্দর আয়োজন। বাধা-বিপত্তি পেরিয়ে সবকিছুই আপনাকে অর্জন করে নিতে হবে। ছবির গল্পে সেই বিপত্তিটা হলো অমিত হাসান।

-এই বাধা-বিপত্তিটা কিভাবে কাটাল? হাঁ, এতো গতিময়ভাবে?

– ইউ কান্ট ইভেন থিঙ্ক। (এই ফ্রেজটার সত্যতা আপনি কয়টা টাকা খরচ করলেই বুঝতে পারবেন।)

image_215422.11171625_928415140552901_514778609_o

যাইহোক, মিমকে বাঈজীমহল থেকে মুক্ত করতে সক্ষম হয় ইমন। রওনা হয় বাবার উদ্দেশ্যে। গল্পে প্রবেশ করে দারুণ চরিত্র সরফরাজ। শহীদুজ্জামান সেলিমের এই চরিত্রটি আমার সব থেকে বেশি এক্সপেরিমেন্টাল মনে হয়েছে। এখান থেকেই গল্পে অন্য রূপধারণ করে। বিশ্বাস করুন, আপনি বাংলা কমার্শিয়াল ফিল্মে এরকম কিছু দেখতে অভ্যস্ত নন। ফিল্মের ক্লাইম্যাক্সে এসে কিছু আবস্ট্রাক্ট ফ্রেজ তৈরি হয়। মনে চলে আসে প্রশ্ন। আসলে এই প্রশ্নগুলোর উত্তরই ‘পদ্ম পাতার জল’।

‘পদ্ম পাতার জল’ একটা মেলো-ড্রামা। বাংলা ভাষায় মেলো-ড্রামা সব থেকে বেশি সমাদৃত জনরা। আফটার অল, শরৎচন্দ্র বাংলাদেশে সব থেকে পপুলার রাইটার। দেবদাস-পারুর গল্পের মতো অতটা ট্রাজেটিক হয়ে ওঠেনি সত্যি কথা- কিন্তু স্টোরি লাইনটা বেশ স্ট্রং। মনে হতে পারে সৃজিত মুখার্জীর সমান্তরাল প্রভাব (এমন মন্তব্য খানিক বাড়াবাড়ি!)। এ দিক থেকে সিনেমাটা সত্যিই প্রশংসার পায়।

গল্পটা প্রায় একশ বছর আগের। ওই সময়টাকে স্ক্রিনে তুলে আনতে কতটা সাহসের দরকার তা যারা চলচ্চিত্রকে একটু গভীরভাবে বিশ্লেষণ করেন তারা জানেন। বিশাল ক্যানভাসে ধারণ করা হয়েছে। মনকাড়া লোকেশান। সিনেমা শেষ হলে আমার মাথায় প্রথম প্রশ্নটা আসে, ‘হু ওয়াজ ইনচার্জ ইন কসটিউম?’ এসিস্ট্যান্স ডিরেক্টর আশিক মাহমুদ রনী ভাইকে জিজ্ঞেস করেছিলাম প্রশ্নটা।

ড্রিম সিকোয়েন্সের একটা গান ছিল শুরুর দিকে। পুরো ফিল্মটা ন্যাচারাল কালারে করা হয়েছে এবং ড্রিম সিকোয়েন্সটাও। এটা কোনো এক্সপেরিমেন্টের অংশ কিনা আমি জানি না। আমি ধরে নিচ্ছি এটা একটা ভুল। অর্ণবের গানটার দৃশ্যায়ন আরেকটু মেলো-ড্রামাটিক হতে পারত। শিরোনামহীনের তুহিন ভাইয়ের টাইটেল গানটা অসাধারণ, এক কথায় অনবদ্য। একটা গানে নিপুনকে দেখা গেল নাচতে। মা বলত, এক বালতি দুধে যদি এক ফোটা লেবুর রস পড়ে তবে সেটা বাতিল হয়ে যায়। গানটা দেখে, কথাটা মনে পড়েছে।

বর্তমান সময়ের আলোচিত ব্যন্ড চিরকুট এটার চলচ্চিত্রটির আবহ সঙ্গীত করেছে। অনেকের যে আশঙ্কা ছিল, নাটক নাটক ভাবটা এ ছবিতে ছিলনা এবং সমস্যাটা কাটিয়ে ওঠার পেছনের ক্রেডিট আমি শিবলী ভাই আর তন্ময় ভাইকে দেব। দুখঃজনক হলেও সত্যি চিরকুটকে ক্রেডিট দিতে পারছি না। কেন না ব্যাকগ্রাউন্ড এর থেকে সুন্দর করা সম্ভব। গ্রাফিক্সে প্রচুর ক্রিয়েটিভির দরকার হয় মানলেও আমি কিছুতেই মানতে পারিনা যে ব্যাকগ্রাউন্ড মিউজিকে এতটা ক্রিয়েটিভিটির জায়গা।Poddo-iner_thereport24

অন্য প্রসঙ্গে ফিরি। আমার বন্ধু তানিম চৌধুরীকে জিজ্ঞেস করছিলাম, ‘কেমন লাগল পদ্ম পাতার জল?’ তার উত্তর, শিবলী ভাইকে নিয়মিত হতে হবে। এদেশ একটা সৃজিত মুখার্জী পেতে যাচ্ছে। সৃজিত, মৈনাকরা যখন মিডিয়াতে পায়ের ছাপ রাখতে শুরু করে তখন অনেক কমপ্লেক্স বিষয় থাকলেও তাদের সাহায্য করা হয়েছে। সত্যি কথা বলতে কী, ওদের দর্শক অতটা সাহায্য করেনি যতটা মিডিয়ার বাসিন্দারা করেছে। এই বিষয়টা ঘটলে নিশ্চিন্তে বলতে পারি- দিশেহারা বাংলা চলচ্চিত্র দারুণ কিছু পাবে।

মিম ছিল দেখার মত। ‘বাংলার মাধুরী দিক্ষীত’ উপমা দিতে আমি পিছপা হবো না। ক্লাসিকাল ড্যান্সে ওর পারদর্শিতা মুগ্ধকর। ইমনের ভয়েজ এমনিতেই সুন্দর। কবিতাতে একটা এক্সট্রা চাপ নিচ্ছিল। না নিলেই পারত। শহীদুজ্জামান সেলিমের অভিনয় তাক লাগিয়ে দেবার মত। আবু হেনা রনি মোটেও জোকার হিসেবে আসেননি। আমি সিনেমা বানালে, কাস্টিং লিস্টে রনি থাকবেন।

শুরুর দিকে মনে হচ্ছিল গল্প কিছুটা ফ্যামিনিজমের দিকে যাচ্ছে। পরে অবশ্য মনে হয়নি। আবার এক জায়গায় মনে হলো নায়ক মুসলমান, ভিলেন হিন্দু। সাম্প্রদায়িকতা নয়ত? কখন মনে হচ্ছিল নামটা ‘পদ্ম পাতার জল’ কেন? জেমসের ‘পদ্ম পাতার জল’ গানটার কিন্তু একটা সুন্দর ব্যবহার করা যেতো। একশ বছর আগে গেল, একটা রবীন্দ্রসঙ্গীত রাখল না? অর্ণবই গাইত।

একটা ভালো কিছু নির্মাণ করতে গেলে তা একা একা করা সম্ভব হয় না। ফিল্ম মেকিং একটা টিম ওয়ার্ক। কাহিনী যতই শক্তিশালী হোক, পরিচালকের যতগুলো ডিগ্রি থাকুক, ফিল্ম সার্থক হয়ে উঠবে না যতক্ষণ না এর সাথে সম্পর্কিত প্রত্যেকটা মানুষ মেধাবী হবে। মুলত চলচ্চিত্রে এটাই প্রধান সমস্যা। অবশ্য এই সমস্যা নতুন নয়, ইতিহাসে যারা এই সমস্যাকে সমাধান করে ভালো সিনেমা বানিয়েছেন তারাই লিজেন্ড।

এত চমৎকার সুন্দর একটা চলচ্চিত্র উপহার দেবার জন্য ‘পদ্ম পাতার জল’র সাথে সম্পর্কিত প্রত্যেকটা মানুষকে ধন্যবাদ। এই চলচ্চিত্রের হাত ধরেই শুরু হোক ‘নিউ এইজ এরা’। গড়ে উঠুক একটা কমিউনিটি।

 


Leave a reply