Select Page

২০১৮ সালের সবচেয়ে বাজে ছবি

২০১৮ সালের সবচেয়ে বাজে ছবি

বিগত কয়েক বছরের তুলনায় এবছর অনেক কম ছবি মুক্তি পেয়েছে আমাদের ইন্ডাস্ট্রিতে। বোঝাই যাচ্ছে অবস্থা খুব একটা ভালো না। তবে অন্যান্য বছরের তুলনায় এবছর অনেক বেশি মানসম্মত ছবি আমরা পেয়েছি, যার দরুণ মধ্যবিত্তরা ধীরে ধীরে হলমুখী হওয়া শুরু করেছে।

একদিকে যেমন ভালো কিছু করার চেষ্টা চলছে, তেমনি অন্যদিকে এমন কিছু ছবি এবছর মুক্তি পেয়েছে, যেগুলো আমাদেরকে ৪০ বছর পেছনে ফেলে দিচ্ছে। এ বছর হাতেগোনা কয়েকটা বাদে প্রায় সবগুলো ছবিই আমি দেখেছি, নিয়মিত রিভিউও দিয়েছি। তন্মধ্যে কিছু ছবি আমার অত্যধিক খারাপ লেগেছে; কিছু ছবির ট্রেইলার দেখেই আর হলে যাওয়ার সাহস পাইনি, ওই টাকা অল্প অল্প করে গরিব-দুঃখী দের বিলিয়ে দিয়েছি।

আরও পড়ুন : ২০১৮ সালের সেরা ছবিগুলো

আজ আমার অপছন্দের ১০ টি ছবির তালিকা দিচ্ছি, যার সবগুলোই এবছর মুক্তি পেয়েছে। যদিও এখনো “স্বপ্নের ঘর” মুক্তি পাওয়া বাকি, তবে আমার মনে হচ্ছে না ছবিটি এই লিস্টে জায়গা পাবে। অনেকের প্রিয় নায়ক/নায়িকা কিংবা অভিনেতা/পরিচালকের ছবি এই লিস্টে থাকতে পারে, জানি অনেক গালাগাল খেতে হবে এই পোস্ট থেকে। তো শুরু করা যাকঃ

১০. আমি নেতা হবোএছবিটা হলে দেখা ছিল আমার জন্যে একটা ভয়ংকর অভিজ্ঞতা! অন্য একশো জনের মতো (শাকিবিয়ানরা বাদে) আমিও ছবিটা দেখতে গিয়েছি গানগুলো ভালো লেগেছিল বলে। এর ওপর কাস্টিংও ভালো ছিল (শাকিব, মিম, মৌসুমী, ওমর সানী, সাদেক বাচ্চু)। তাই ভরসা করে ট্রেইলার ভালো না লাগা সত্ত্বেও দেখতে গেলাম। এরপরের কাহিনী তো শুধু আমার না, মোটামুটি সবার একই; না আছে গল্প, না আছে অভিনয়, না আছে রোম্যান্স, না আছে থ্রিল, না আছে এ্যাকশন। গান ছাড়া এই ছবিতে কিচ্ছু নেই, উল্টো উত্তম আকাশ সাহেব একটা ৫ মিনিটের কাটপিসওয়ালা গান দেখালেন! ওই গানে অশ্লীল কিছু ছিলনা, গানের পরের অংশে ক্লাইম্যাক্সে কি কি ঘটবে সেগুলো জুড়ে জুড়ে “আমি নেতা হব” টাইটেল ট্র্যাক বানানো হয়েছে। অনেকটা টিভি সিরিয়ালে বিরতিতে যাওয়ার আগে যেমন কিছু চুম্বক অংশ দেখায়, তেমন।

৯. পলকে পলকে তোমাকে চাই : আগেরটির মতো এই ছবিরও কাস্টিং ভালো (বাপ্পী, মাহি, মিশা)। গল্প যে থাকবে এমন কিছু আশা করিনি, শুধু চাচ্ছিলাম মারমার-কাটকাট হিরোইজম দেখতে পারলেই হলো। দিনশেষে কচুকাটা হয়ে বাসায় ফিরেছি.. আজকাল ডিএসএলআর দিয়েও এর চেয়ে ভালো শ্যুট করা যায়, এরা যে কী ক্যামেরা ব্যবহার করছে আল্লাহ মা’বুদ জানে। আর কিছু অংশে মাহির ডাবিং অন্য কেউ করেছে, সম্ভবত মাহি নিজেও এছবির শ্যুটিং করে বিরক্ত হয়ে গিয়েছিল। এ ছবি পরিচালনায় ছিলেন তরুণ পরিচালক শাহনেওয়াজ শানু।

৮. মাতালএ ছবির প্রযোজক মনে হয় কৃপণ প্রকৃতির। ওনার পূর্ববর্তী ছবিগুলো দেখলেই বুঝবেন কেন একথা বললাম। খুবই সস্তা লাগে ওনাদের প্রযোজিত ছবিগুলো। এছাড়া গত ৪/৫ বছর ধরে ধারাবাহিকভাবে বস্তাপচা উপহার দিচ্ছেন সাইমন সাদিক। এবছর “জান্নাত” দেখে মনের এক ছোট্ট কোণে একটু আশা জেগেছিল। “মাতাল” ছবিটি আমাকে জঘন্য মদ খাইয়েছে। বাসায় এসে দুইটি কারণে এছবির কোনো রিভিউ আমি লিখিনি। ১. অযথা সময় নষ্ট। ২. বেশ ভালো দর্শক ছিল বিধায়। তাই ভাবলাম, শাহীন সুমন যাদের জন্য বানিয়েছে, তারাই দেখুক! আর তো আছেই কয়েকদিন, সিঙ্গেল স্ক্রিনগুলো কেন বন্ধ হচ্ছে তাদের বুঝালেও বুঝবে বলে মনে হয়না।

৭. একটি সিনেমার গল্পআমার চোখে মনে হয়েছে আরিফিন শুভর এই ছবিটা করে একটাই লাভ হয়েছে; জাত অভিনেতাদের সাথে স্ক্রিন শেয়ার করতে পেরেছেন, অভিনয়ে পরিপক্কতা আনার সবচেয়ে সহজ উপায় হলো এটি। আর ক্ষতি কি কি হয়েছে তা তো আর চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখানোর প্রয়োজন নেই.. আলমগীর সাহেব অনেক ভালো অভিনেতা, কিন্তু তিনি মোটেও ভালো পরিচালক নন। এই ছবিটা আমার অনেক ধৈর্যের পরীক্ষা নিয়েছে। আমি জানি শুভর পাক্কা ফ্যান আর আমার মতো যারা আছেন তারা ছাড়া কেউ হলে বসে এই ছবিটা পুরো দেখার সাহস করেনি… খুশি হবো যদি আলমগীর সাহেব সামনে নিয়মিত ছবি প্রযোজনা করেন, ভালো একজন পরিচালককে সঙ্গে নিয়ে।

৬. পবিত্র ভালোবাসাএছবিটার টিকেট আমি ফ্রিতে পেয়েছিলাম, তাই দেখতে বসেছি। কীভাবে পেয়েছি সে ব্যপারে কিছু বলতে চাই না। এছবিতে পরিচালক এ.কে সোহেল স্বল্প খরচে একটা তাজমহল বানিয়ে দেখিয়েছেন! সম্রাট শাহজাহান তার হাত কেটে নিতো যদি এই কাজের জন্য, যদি তিনি আজ বেচেঁ থাকতেন আরকি… আর নায়কের অভিনয় লাজওয়াব! আর কিছু বলবো না..

৫. পাংকু জামাইএই ছবিটা ঈদের মতো একটা উৎসবমুখর পরিবেশে ৭০টা হল পেয়েছিল, ভাবতেই অবাক লাগছে। ছবিতে শাকিব খান থেকেও নেই। আর প্রযোজক যাত্রাপালার বাজেট নিয়ে ছবি বানাতে এসেছেন। কি কি সব আজগুবি সাজে সাজিয়েছে শাকিব-অপু কে। দুলারী, এটিএম শামসুজ্জামানদেরও বাদ দেয়নি; সবার ইজ্জত খেয়েছে! ছবিটা জোড়াতালি দেওয়া। এখন হয়তো ভাবছেন, জোড়াতালি হওয়া সত্ত্বেও এটি তালিকার পাঁচ নম্বরে কেন? লেখার বাকি অংশটুকু পড়ুন; কারণ সামনে যেসব ছবির নাম আসছে সেগুলো এবার অস্কারে নমিনেশন পেতে পারে…

৪. প্রেমিক ছেলেএ ছবির পরিচালক হলেন স্বনামধন্য বিখ্যাত মাস্টারমেকার এ.আর মুকুল নেত্রবাদী। এতো বিশেষণ দেওয়ার কারণ আছে, পরেরগুলো পড়লেই বুঝবেন। ছবির নায়ক আদনান আদি-ই এছবির প্রযোজক। গল্পের প্রয়োজনে এছবিতে মোট ৮ জন নায়িকা আছে! ভাবা যায়! ছবিটা আমি হলে দেখতে যাওয়ার সাহস পাইনি, কারণ আমি সাপে প্রচন্ড ভয় পাই! তারপর কয়েকমাস আগে আদনান আদি সাহেবের ফেইসবুক আইডিতে দেখলাম, উনি “থাগস অব হিন্দুস্থান” এর বদলে এই ছবি কোলকাতায় পাঠাচ্ছেন! এটা দেখে আমি ভয়ে আঁতকে উঠেছি, সাপেও এতো ভয় পাই না।

৩. ফিফটি ফিফটি লাভএ.আর মুকুল নেত্রবাদীর আরেকখানা মাষ্টারপিস! ছবির ট্রেইলারে গাজী মাজহারুল আনোয়ার নায়ক শাহরিয়াজকে “সুপারস্টার” ট্যাগ দিয়েছেন। আমি যতদুর জানি, ছবি হিট হওয়াতো দূর ওনার “মেয়েটি এখন কোথায় যাবে” ছাড়া আর কোনোটাই সম্পূর্ণ দেখার মতো ছবি হয়নি। এছবিটার ট্রেইলার টাই বলে ছবি কতটা সস্তামানের; যার দরুণ আর হলে যাওয়ার সাহস পাইনি। পাকিস্তানী একটি ইউটিউব চ্যানেল এই ছবির ট্রেইলারের ওপর একটি রিয়েকশন ভিডিও বানিয়েছেন। বিশ্বাস করেন, সিরিয়াসলি এটা দেখে আমার অনেক বেশি লজ্জা লেগেছে। আমি আর ঐ ভিডিও তে ক্লিক করারই সাহস পাইনি, বিজয়ের মাসে পাকিস্তানি এরকম হাসি-তামাশা সহ্য করতে পারবো না।

২. দেমাগ : হ্যাঁ ভাই, এটাও নেত্রবাদী সাহেবের… ওনার মুখের ওপর কেন এখনো কেউ অস্কার ছুড়ে মারেনি সেটাই আমি এখন ভাবছি। অবশ্য, বছরের শুরুতে যখন এই ছবির ট্রেইলার দেখি তখন বুঝিনি পরিচালক হিসেবে ওনার এবছর সবচেয়ে বেশি ছবি মুক্তি পাবে। ওনার সাথে যুগ্মভাবে একমাত্র উত্তম আকাশ আছেন। এ ছবিটিও আমি হলে দেখার সাহস পাইনি। ওহ ভালো কথা, এছবির টিজার ছিল সাড়ে তিন মিনিটের! সেটাও আমার পুরোটা সহ্য হয়নি।

নাম্বার ওয়ান বলার আগে আরো কিছু ছবির নাম বলি যেগুলো একটুর জন্যে এই লিস্টে আসেনি। কোলকাতার জনপ্রিয় ইউটিউবার ‘দ্য বং গাই’ এর ভাষায়, “জাস্ট একককটুর জন্যওওও…।” “পাগল মানুষ”, “রাঙা প্রেম”, “ধুসর কুয়াশা”, “চিটাগাইঙ্গা পোয়া নোয়াখাইল্লা মাইয়া”।

১. প্রেমের কেন ফাঁসিএ ছবিটা সবার ইজ্জত খেয়েছে। সবার বলতে, এই ইন্ডাস্ট্রির সাথে যারা যারা জড়িত আছে, ছোট একজন সাইড আর্টিস্ট হতে শুরু করে বড় বড় সুপারস্টার অব্দি সবার! ফ্যান্টাসি ঘরানায় কত কত জনপ্রিয় ছবি আছে আমাদের। এক “বেদের মেয়ে জোসনা” যে পয়সা কামিয়েছে, ৩০ বছরেও ঐ ব্যবসার ধারেকাছে কেউ যেতে পারেনি। এছবিটা সেই ফ্যান্টাসি জনরার জন্য কলঙ্ক। এটা দেখার পর আমার ফ্যান্টাসি জনরাটার প্রতিই বিতৃষ্ণা এসে গেছে.. “বাহুবলী” দেখতেও এখন কেমন যেন লাগে (কার্টুন-কার্টুন)। আর অভিনয়ের কথা আর কি বলবো…. অখাদ্য, জাস্ট অখাদ্য!


মন্তব্য করুন