Select Page

উত্তর আমেরিকায় ৩ কোটি ৭২ লাখ টাকা আয় ‘হাওয়া’র

উত্তর আমেরিকায় ৩ কোটি ৭২ লাখ টাকা আয় ‘হাওয়া’র

পাঁচ সপ্তাহ প্রদর্শনের মাধ্যমে শেষ হলো মেজবাউর রহমান সুমনের ‘হাওয়া’র উত্তর আমেরিকা সফর। এ সময়ে বাংলাদেশি সিনেমা হিসেবে সর্বোচ্চ ৩ লাখ ৫৮ হাজার ডলারের বেশি বা প্রায় ৩ কোটি ৭২ লাখ টাকা গ্রস আয় করেছে। পরিবেশনা সংস্থা স্বপ্ন স্কোয়ারক্রো সূত্রে এ খবর জানা গেছে।

রোববার এ সম্পর্কিত এক ফেসবুক পোস্টে বলা হয়-

‘হাওয়া’,
কানাডা ও আমেরিকার বক্স অফিসে চোখ কপালে তুলে দেয়া অবিশ্বাস্য সব কীর্তি আর অল্প কিছু আক্ষেপের গল্প
.

আমেরিকা ও কানাডায় ‘হাওয়া’র তান্ডব অবশেষে পুরোপুরি থেমেছে। গত সপ্তাহে শেষ সিনেমা হল হিসেবে নিউইয়র্কের জ্যামাইকা মাল্টিপ্লেক্সে টানা ৫ সপ্তাহ চলে শেষ হয়েছে উত্তর আমেরিকার হলগুলোতে ‘হাওয়া’র প্রদর্শন। এই প্রথম বাংলাদেশের কোন সিনেমা উত্তর আমেরিকার কোন থিয়েটারে একটানা ৫ সপ্তাহ চলার রেকর্ড গড়ল।

‘হাওয়া’র ফাইনাল গ্রস বক্স অফিস কালেকশনঃ ৩৫৮,০৫২ ডলার

মোট ৮৭টি স্ক্রীন (থিয়েটার) থেকে এ আয় হয়েছে

কানাডা থেকে আয়ঃ ১৪১,৩৬৯ ডলার (১৪টি স্ক্রীন)
আমেরিকা থেকে আয়ঃ ২১৬,৬৮৩ ডলার (৭৩টি স্ক্রীন)

সপ্তাহ অনুযায়ী ব্রেক ডাউনঃ

১ম সপ্তাহঃ ২৭১,৫৮৮ ডলার (৮৫টি স্ক্রীন)
২য় সপ্তাহঃ ৬২,৮৭৫ ডলার (৩৫টি স্ক্রীন, প্রথম সপ্তাহের ৩৪টির সাথে ১টি নতুন স্ক্রীন যোগ হয় এ সপ্তাহে কানাডায়)
৩য় সপ্তাহঃ ১৫,৮২৪ ডলার (১১টি স্ক্রীন, দ্বিতীয় সপ্তাহের ১০টির সাথে ১টি নতুন স্ক্রীন যোগ হয় এ সপ্তাহে আমেরিকায়)
৪র্থ সপ্তাহঃ ৬,৫৭৮ ডলার (৫টি স্ক্রীন)
৫ম সপ্তাহঃ ১,১৮৭ ডলার (১টি স্ক্রীন)
.

কীর্তি সমূহঃ

১। বক্স অফিস আয় দিয়ে প্রথমবার বাংলাদেশের কোন সিনেমার US TOP CHART এ চলে আসা। প্রথম সপ্তাহের আয়ে ‘হাওয়া’ ঐ সপ্তাহের TOP 30 এ ছিল।

২। প্রথমবার বাংলাদেশের কোন সিনেমার যোগ্য প্রতিদ্বন্দী হিসেবে উত্তর আমেরিকার মার্কেটে আবির্ভাব।

২০২৫ সালের মধ্যে নর্থ আমেরিকান মার্কেটে আমরা হলিউড ও ইন্ডিয়ান সিনেমার পর ৩য় বৃহত্তম ইন্ডাস্ট্রি হতে চাই। ‘হাওয়া’র সাফল্য প্রমাণ করেছে, আমরা খুব ভালভাবেই এটা করতে পারি। নীচে ২য় বৃহত্তম ইন্ডাস্ট্রি ‘ইন্ডিয়ান সিনেমা ইন্ডাস্ট্রি’র এ বছরের কিছু ডাটাঃ

২০২২ সালে এখন পর্যন্ত ইন্ডিয়ান সিনেমা ইন্ডাস্ট্রির যতগুলো সিনেমা উত্তর আমেরিকায় মুক্তি পেয়েছে তার মধ্যে

হিন্দি (বলিউড) মাত্র ১৩টি সিনেমা ‘হাওয়া’র চেয়ে বেশি আয় করতে পেরেছে (Brahmastra – ৭.৫ মিলিয়ন, চলছে, Kashmir Files – ৪ মিলিয়ন, KGF Chapter 2 Hindi – ৩.৭ মিলিয়ন, Laal Singh Chaddha – ৩.৪ মিলিয়ন, Gangubai – ৩.৩ মিলিয়ন, Bhool Bhulaiyaa 2 – ২.৬ মিলিয়ন , Vikram Vedha – ১.৭ মিলিয়ন, চলছে, Juug Juug Jeeyo – ১.৩ মিলিয়ন, Bachchan Pandey – ৬১৮,২৩৩, Runway 34 – ৬১০,৬৮৬, Prithviraaj – ৪৮০,১৪৯, Jayeshbai Jordaar – ৪১৬,২১৯ ও Raksha Bandhan – ৩৬৭,১৪০)। বাকি সব সিনেমা ‘হাওয়া’র চেয়ে কম আয় করেছে। FYI, ২০২২ সালে ৬০টির বেশি হিন্দি সিনেমা এখন পর্যন্ত মুক্তি পেয়ে গেছে।

তেলুগু ১৫টি সিনেমা ‘হাওয়া’র চেয়ে বেশি আয় করতে পেরেছে। বাকি সব সিনেমা ‘হাওয়া’র চেয়ে কম আয় করেছে। সবচেয়ে বেশি আয় RRR এর (১৪ মিলিয়ন ডলার)। এরপরে আছে Bheemla Nayak (২.৪ মিলিয়ন), Sarkaru Vaari Paata (২.৩ মিলিয়ন), Radhe Shyam (২ মিলিয়ন), Karthikeya 2 (১.৬ মিলিয়ন), Sita Ramam (১.৪ মিলিয়ন, চলছে), F3 Fun and Frustration (১.২ মিলিয়ন), Major (১.১৪ মিলিয়ন), Ante Sundaraniki (১.১৩ মিলিয়ন), Acharya (৯৮৫,৭২০), Liger (৭৮৬,১২৩), God Father (৭৫০,৯৫৭), BimbiSara (৫৫৭,৬৫২), D J Tillu (৫৫৩,৪৮২), Oke Oka Jeevitham (৫৩৯,৬১১)। এ বছর এখন পর্যন্ত ৪০টির বেশি তেলুগু সিনেমা মুক্তি পেয়ে গেছে।

তামিল মাত্র ৬টি সিনেমা ‘হাওয়া’র চেয়ে বেশি আয় করতে পেরেছে। বাকি সব সিনেমা ‘হাওয়া’র চেয়ে কম আয় করেছে। সবচেয়ে বেশি PS-1 (৫ মিলিয়ন, চলছে)। এরপর Vikram (২.৯ মিলিয়ন), Beast (১.৪ মিলিয়ন), Thiruchitrambalam (৪৫৮,২৪৪), Valimai (৪০৪,২৪০) & Don (৩৯১,০৪২)।

কান্নাড়া মাত্র ১টি সিনেমা ‘হাওয়া’র চেয়ে বেশি আয় করতে পেরেছে। বাকি সব সিনেমা ‘হাওয়া’র চেয়ে কম আয় করেছে। সিনেমাটি হচ্ছে KGF Chapter 2 Kannada (৭.৪ মিলিয়ন)।

মালায়লাম এবং পাঞ্জাবী কোন সিনেমা ‘হাওয়া’র চেয়ে বেশি আয় করতে পারেনি।

৩। আমেরিকা ও কানাডা মিলিয়ে ৩৯,৫১০ জন দর্শকের ‘হাওয়া’ দেখা। কানাডায় দেখেছে ১৫,৪০৬ জন, আমেরিকায় ২৪,১০৪ জন। শুধু নিউইয়র্ক সিটিতেই সিনেমাটি দেখেছে ৮,৮৯০ জন। এতদিন, আমেরিকা ও কানাডা মিলিয়ে সবচেয়ে বেশি সংখ্যক দর্শক দেখেছিল ‘দেবী’ সিনেমাটি, দর্শক সংখ্যা ছিল ১০,৫০০ জন।

৪। প্রথম কোন বাংলাদেশি সিনেমা হিসেবে উত্তর আমেরিকায় ১টি থিয়েটারে টানা ৫ সপ্তাহ, ২টি থিয়েটারে টানা ৪ সপ্তাহ, ১১টি থিয়েটারে টানা ৩ সপ্তাহ, ৩৫টি থিয়েটারে টানা ২ সপ্তাহ ধরে চলার রেকর্ড।

৫। প্রথম কোন বাংলাদেশি সিনেমা হিসেবে কোন একটি নির্দিষ্ট মাল্টিপ্লেক্স লোকেশনে দিনে ৯টি করে শো চলার রেকর্ড। টানা ২ সপ্তাহ জ্যামাইকা মাল্টিপ্লেক্সে প্রতিদিন ৯টি করে শো চলেছে ‘হাওয়া’র যেখানে ব্রম্মাস্ত্র প্রথম সপ্তাহে চলছিল মাত্র ৩টি শো নিয়ে। টরন্টোর এগলিন্টন সিনেপ্লেক্সে দিনে ৭টি শো ও চলেছে ‘হাওয়া’র।
.

আক্ষেপঃ

‘হাওয়া’র জন্য আক্ষেপটাও বড় মধুর। সবচেয়ে বড় ও প্রধান আক্ষেপ, যে পরিমাণ দর্শক ‘হাওয়া’ দেখেছেন, তাতে ‘হাওয়া’র গ্রস কালেকশন প্রায় ৪১০,০০০ ডলার এর কাছাকাছি হবার কথা। কিন্তু তা হয়নি, তার মূল কারণ, সিনেমা মুক্তির পরেরদিন (৩ সেপ্টেম্বর, শনিবার) আমেরিকা ও কানাডায় ছিল ‘ন্যাশনাল সিনেমা ডে’। এ উপলক্ষে ঐদিন সব সিনেমা হলের সব সিনেমার টিকেট এর দাম ছিল মাত্র ৩ ডলার। সাধারণ সময়ে যা ১০ থেকে ১৫ ডলার। আর সিনেমা ডে এর এই ক্যাম্পেইনটা মাত্র ১০দিন আগে থিয়েটারগুলি ফাইনাল করে, যে কারণে বেশ কিছু KEY THEATRE ‘হাওয়া’র জন্য কনফার্ম থাকার পরও শেষ মুহূর্তে বাদ পড়ে যায়। সব মিলিয়ে নিশ্চিত ৫০/৬০ হাজার ডলার থেকে বঞ্চিত হয় ‘হাওয়া’।
.

তারপরেও যা হয়েছে, থিয়েটার চেইনগুলির দৃষ্টিভঙ্গিই চেইঞ্জ হয়ে গেছে ‘বাংলাদেশের সিনেমা’র প্রতি। ৩৫৮,০৫২ তাই শুধু টাকা পয়সার হিসেব না, এটা একটা অস্তিত্ব জানান দেয়া সংখ্যা। বাংলাদেশের সিনেমা আন্তর্জাতিক বাজারে কত উপরে চলে যেতে পারে তার ভিত্তি প্রস্তর স্থাপন করা দৃঢ় বিশ্বাস।
.


মন্তব্য করুন