![অনুদান পাওয়ার সাত বছর পর মুক্তি পাচ্ছে ‘আজব কারখানা’](https://i0.wp.com/bmdb.co/wp-content/uploads/2024/06/ajob_karkhana1_bmdb_image.jpg?resize=150%2C150&ssl=1)
কবরী-শাবানা-ববিতার শূন্যতা পূরণে বাধা কোথায়?
কবরী চলে গেছেন। তাকে হারানোর বেদনার চেয়েও বেশি এখন আক্ষেপ— তার জায়গা কেউ পূরণ করতে পারেননি। কবরীর উত্তরসূরি আসেনি তার আবির্ভাবের পঞ্চাশ বছর পরেও। কেন আসেনি?
![](https://i0.wp.com/bmdb.co/wp-content/uploads/2024/04/subash_datta_zahir_raihan_ehtesham_kobori_shabana_bobita_bmdb_image.jpg?resize=900%2C600&ssl=1)
পরিচালক সুভাষ দত্ত, এহতেশাম ও জহির রয়হান এবং অভিনেত্রী কবরী, শাবানা ও ববিতা
শাবানা সিনেমাকে বিদায় জানিয়েছেন ২৫ বছর হয়ে গেল। এ দুই দশকের বেশি সময়ে আরেকজন জনগণনন্দিত নায়িকার জন্ম হয়নি। শাবানার পুনর্জন্ম সম্ভব নয়। কিন্তু তার উত্তরসূরি আসতে বাধা ছিল কোথায়?
ববিতার মতো এমন আরেকজন বাংলাদেশি অভিনেত্রীও আত্মপ্রকাশ করলেন না, যাকে বাইরের দুনিয়া এক নামে চেনে। ববিতার ক্লোন আমরা চাইনি কোনোদিন। কিন্তু তার ফেলে যাওয়া জুতায় পা গলাতে পারে এমন কারো পদধ্বনি আমরা কেন শুনিনি?
প্রতি বছর নতুন মুখের মিছিলে যোগ হচ্ছে উজ্জ্বল উচ্ছল সব মুখ। কারো ফ্যাশনে মেরিলিন মনরোর ছায়া। কারো চেহারায় ঐশ্বরিয়ার আদল। কারো চোখ যেন কাজল আগরওয়াল। তবুও বেরিয়ে আসছে না সুচন্দার উত্তরসুরি। শবনমের মতো রূপনগরের রাজকন্যার বড় অভাব। সুজাতার সেই রূপবানের ধারে-কাছে যেতে পারছে না কেউ।
এ প্রজন্মের নায়িকাদের দুর্ভাগ্য! উর্দু সিনেমার বিরুদ্ধে লড়তে যেমন বীর বিক্রমে ময়দানে নেমেছিলেন একজন সালাহউদ্দিন, তেমন তেজস্বী নির্মাতা আজ আর নেই।
![](https://i0.wp.com/bmdb.co/wp-content/uploads/2022/08/shabnam_bmdb_image.jpg?resize=797%2C526&ssl=1)
শবনম
আরেকজন কবরীর জন্ম হতে হলে আগে সুভাষ দত্তকে জন্ম নিতে হবে। এমন দরদী শিক্ষক ছাড়া ‘সুতরাং’-এ কবরীর দর্শকচিত্তকে নাড়া দেয়া ছিল অসম্ভব। আর একটা ছবিতেই তো নায়িকার পঠন-গড়ন শেষ হয়ে যায় না। দিনের পর দিন ভাস্করের মতো যত্নে নায়িকার মূর্তি গড়তে হয় নির্মাতাকে। ‘কাগজের নৌকা’ ছবিতে সুচন্দাকেও একইভাবে গড়েছেন সুভাষ দত্ত।
ববিতার বেলায় একই ভূমিকা জহির রায়হানের। শিল্পী কীভাবে তৈরি করতে হয়, তা ছিল এই নির্মাতাদের নখদর্পণে। কারণ, তারা ছিলেন শিল্পী তৈরির কারিগর। জহির রায়হান তার নিজের ছবিতে, তার অনুসারী নির্মাতাদের ছবিতে ববিতাকে অভিনয় করিয়ে-করিয়ে এক খণ্ড পাথর থেকে তাকে খাঁটি স্বর্ণে পরিণত করেছেন।
![](https://i0.wp.com/bmdb.co/wp-content/uploads/2022/07/surrender_jashim_olivia_bmdb_image.jpg?resize=800%2C511&ssl=1)
অলিভিয়া
এহতেশাম, তার নির্মাতা-ভাই মুস্তাফিজ, আর তাদের প্রডাকশন হাউজ মিলে নায়িকার পর নায়িকা গড়ে তুলেছেন। শিশুশিল্পী থেকেই শাবানা ছিলেন ক্যাপ্টেন সাহেবের নজরবন্দি। তার ‘চকোরী’ ছবিতে শাবানা নায়িকা হলেন প্রথমে। তারপর আর তাকে কেউ রুখতে পারেনি। একইভাবে এহতেশামের যত্নে, আদরে, পৃষ্ঠপোষকতায় ইন্ডাস্ট্রি পেয়েছে শবনম, শাবনাজ, শাবনূরের মতো কিংবদন্তিদের।
সিনেমার ইতিহাস ছাত্রী-শিক্ষক সম্পর্কের ইতিহাস। এফ কবির চৌধুরী গুরুর মতো দণ্ডায়মান না থাকলে অঞ্জু ঘোষের মতো মেধাবী সুপারস্টারের আত্মপ্রকাশ ঘটত না। আলমগীর কবিরের নিরবচ্ছিন্ন সমর্থন ছাড়া জয়শ্রী কবিরের পক্ষে সম্ভব হত না কালজয়ী সব চরিত্র রূপায়ণ করা। চম্পার ক্যারিয়ারের সূচনায় শিবলী সাদিক যেভাবে এগিয়ে এসেছিলেন, তেমনটা দেখা গেছে প্রত্যেক তারকার উত্থানের গল্পে।
![](https://i0.wp.com/bmdb.co/wp-content/uploads/2024/04/shabnur_bmdb_image.jpg?resize=1021%2C599&ssl=1)
শাবনূর
সেই রামও নেই, সেই অযোধ্যাও নেই। এসএম শফির মতো নির্মাতাও আসছে না, অলিভিয়ার মতো নায়িকাও আসছে না। আজকাল খুব গ্ল্যামারের দোহাই চলে তো, আধুনিকতার বড়াই চলে; তাই শেষ উদাহরণটা দিলাম শফি-অলিভিয়াকে দিয়েই। একালের নির্মাতারা যদি শিল্পী নাও গড়তে পারুন, অন্তত অলিভিয়ার মতো গ্ল্যামারাস নায়িকারই জন্ম দিয়ে দেখান!
নায়িকা গড়তে এহতেশামের মতো জহুরী নির্মাতাদের ছাড়াও প্রভাব ছিল প্রযোজকদের। আজকাল যেন প্রযোজকদেরই লাফালাফি বেশি। পরিচালকরা চলে গেছেন ব্যাকফুটে। যদিও একেএম জাহাঙ্গীর খানের মতো অনুসন্ধানী প্রযোজক না হলে উপযুক্ত পৃষ্ঠপোষকতা কখনোই পেতেন না নায়িকারা।
এখনকার নির্মাতারা নির্মাণে দক্ষ হয়ে উঠলেও শিল্পীমনের অভাবে হয়ে উঠতে পারছেন না অনুসন্ধিৎসু। জহুরী-চোখের অভাবে খুঁজে আনতে পারছেন না মুক্তো। কবরীর সঙ্গে দত্তদার, জহির ভাইয়ের সঙ্গে ববিতার, এহতেশাম দাদুর সঙ্গে শাবনাজ-শাবনূরদের যে অফস্ক্রিন কেমেস্ট্রি, এর পুনর্বিস্ফোরণ ছাড়া সুপারস্টার নায়িকার জন্য প্রতীক্ষা অরণ্যে রোদন মাত্র।