Select Page

কমেডিয়ানের হিরোইজম

কমেডিয়ানের হিরোইজম

আব্দুল্লাহ; পরিচালক: তোজাম্মেল হক বকুল; শ্রেষ্ঠাংশে: দিলদার, নূতন, জাভেদ, আবুল হায়াত, জহির উদ্দিন পিয়ার, আমির সিরাজী, আহমেদ শরীফ প্রমুখ; উল্লেখযোগ্য গান: কী করে বলব তোমায় আমি ভালোবাসি; মুক্তি: ৯ মে ১৯৯৭

১৯৯৭ সালের হিট ছবিগুলোর প্রথম কাতারে ছিল ‘আব্দুল্লাহ।’ দিলদার বাংলাদেশী চলচ্চিত্রের এমন এক কিংবদন্তি যার নামটাই যথেষ্ট পরিচিতি ও কাজের জন্য। সেই দিলদার পুরোদস্তুর কমেডিয়ান থেকে নায়ক হয়ে ‘আব্দুল্লাহ’ ছবিতে অভিনয় করে ব্লকবাস্টার পর্যন্ত করিয়েছে সেটা তাঁর একক অর্জন ছিল।

ছবির বড় সাফল্যের জন্য যুক্তি দেয়া যেতে পারে দিলদারের তুঙ্গস্পর্শী জনপ্রিয়তার। তাঁর জনপ্রিয়তা গ্রাম-শহর দুই জায়গাতেই সমান। দেশীয় ছবিতে কমেডিয়ান যারা ছিল যেমন- রবিউল, টেলি সামাদ, মতি, আফজাল শরীফ, কাবিলা তাদের থেকে দিলদার নিজের গুণে সেরা।

‘আব্দুল্লাহ’ ছবি দেখে সেই সময়ের দর্শকরা হাই কমপ্লিমেন্ট দিয়েছিল। দিলদার যে নায়কের কাজটা করে দেখিয়েছে সেটাই দর্শকের কাছে ভালো লাগার বিষয় ছিল। পত্র-পত্রিকাতেও লেখালেখি হয়েছিল। কয়েক বছর আগে আফজাল শরীফ-ও আক্ষেপ করে বলেছিলেন যে তাকে কেউ নায়কের ভূমিকায় ছবি করতে বলল না। বোঝা যায় দিলদারের মতো তারও ইচ্ছা ছিল এ ধরনের ভিন্নধর্মী এক্সপেরিমেন্ট করার যা তার ট্র্যাকের বাইরে। তবে আফজাল শরীফের জন্য এ ধরনের এক্সপেরিমেন্ট টাফ হবে এটা বলাই যায়।

তোজাম্মেল হক বকুল বাংলাদেশের সবচেয়ে ব্যবসাসফল ছবি ‘বেদের মেয়ে জোসনা’-র পরিচালক। তার ফোক-ফ্যান্টাসি ও ব্যতিক্রমী ঘরানার ছবিতে আগ্রহ বেশি ছিল। দিলদারকে ‘আব্দুল্লাহ’ ছবিতে আলাদাভাবে একটা পরিচিতি দেয়ার ক্রেডিট তাঁর। ছবির গল্প এক মেমসাহেবার কর্মচারী বা চাকর হয়ে তার প্রেমে পড়ার বাস্তবতা এবং বিভিন্ন পরিস্থিতি ফেস করা। ছবিতে দিলদারের নায়িকার ভূমিকায় নূতন-কে প্রথমত আপত্তিকর লাগে। তবে মেমসাহেবার ভূমিকায় বয়সে বড়ই ঠিক আছে তাও ঠিক। নূতনের ফিটনেস বা লুক তার সমসাময়িক নায়িকাদের থেকে আলাদা তাই দিলদারের সাথে মানানসই সম্পূর্ণ না।

ড্রামা দিয়ে ছবি ভরপুর। নূতনের বাবা ইলিয়াস জাভেদ তার নিজের বংশ মর্যাদা নিয়ে ব্যস্ত হলেও মানুষকে ছোট করে না। আব্দুল্লাহর আশ্রয়ের পেছনে তার অবদান আছে। জহির উদ্দিন পিয়ারের সাথে নূতনের সম্পর্ক দানা বাঁধলে দিলদার নূতনকে ভালোবেসে কষ্টটা পায় তখনই। পিয়ার ও দিলদারের মধ্যে দ্বন্দ্ব বাঁধে। আহমেদ শরীফ পর্যন্ত গড়ালে জমে ওঠে দ্বন্দ্বটা।

ছবিতে স্মরণীয় একটা সিকোয়েন্স আছে। ছবিটি যারা সিনেমাহলে দেখেছে তাদেরকে এই সিকোয়েন্সের স্মৃতিচারণ করতে দেখা যায়। নূতনের পিঠে আঘাত লাগায় পিঠে মালিশ করতে বলে দিলদারকে। দিলদার তখন চোখে গামছা বেঁধে মালিশ করে। নূতন টের পেয়ে দেখে আর অবাক হয়। সংলাপটা টাচি ছিল তখন-‘আব্দুল্লাহ, যখন সবাই আমার দেহটাকে ভোগ করার জন্য উঠেপড়ে লাগে আর তুই চোখ বেঁধে মালিশ করছিস যাতে আমার শরীর দেখতে না হয়! তুই আমার কে রে আব্দুল্লাহ!’ তখন দিলদার বলে-‘আমি আপনার আব্দুল্লাহ, মেমসাহেব।’

দিলদারের গানও কালজয়ী হয়ে আছে এ ছবিতে। প্রেমিক দিলদার ভালোবাসা হারাবার বেদনায় অসাধারণ অভিনয় করেছে গানে। সুবীর নন্দী-র দরদী কণ্ঠে গানের কথাগুলো টাচি- ‘সারা দুনিয়া হবে দুশমন/ আমি হব দোষী/ কী করে বলব তোমায়/ আমি ভালোবাসি।’

এছাড়া টাইটেল ট্র্যাকের ‘আমি আবদুল্লাহ’ গানটিও হিট ছিল।

ছবির ফিনিশিং মজার। নূতনের সাথে মিল হবার সময় খাটো দিলদার একটা ইট এনে তার উপর দাঁড়িয়ে নূতনের সমান হয়…😃 নূতন বলে-‘এত বুদ্ধি!’

সে বছরের সেরা দশ ব্যবসাসফল ছবির একটি ছিল ‘আবদুল্লাহ’। দিলদার নায়ক হয়ে সফল ছবি উপহার দিয়েছিল দর্শককে।


About The Author

বাংলাদেশের চলচ্চিত্র গত শতকে যেভাবে সমৃদ্ধ ছিল সেই সমৃদ্ধির দিকে আবারও যেতে প্রতিদিনই স্বপ্ন দেখি। সেকালের সিনেমা থেকে গ্রহণ বর্জন করে আগামী দিনের চলচ্চিত্রের প্ল্যাটফর্ম গড়ে উঠুক। আমি প্রথমত একজন চলচ্চিত্র দর্শক তারপর সমালোচক হিশেবে প্রতিষ্ঠিত হবার স্বপ্ন দেখি। দেশের সিনেমার সোনালি দিনের উৎকর্ষ জানাতে গবেষণামূলক কাজ করে আগামী প্রজন্মকে দেশের সিনেমাপ্রেমী করার সাধনা করে যেতে চাই।

Leave a reply