Select Page

ব্যর্থ প্রেমিকের শাকিব খান

ব্যর্থ প্রেমিকের শাকিব খান

আমাদের বাণিজ্যিক ছবিতে ব্যর্থ প্রেমিক বলতেই আমরা বাপ্পারাজকে অনায়াসে চিনি। বাপ্পার প্রেমে ব্যর্থর অভিনয়ের তুলনা নেই এবং এ ধরনের চরিত্রে জনপ্রিয়তা লাভ করে ক্লাসিক একটা পরিচয় পেয়ে গেছে। বাপ্পারাজই সেরা এ চরিত্রে। বাপ্পারাজের পর ব্যর্থ প্রেমিকের চরিত্রে ভালো অবস্থান তৈরি করে শাকিব খান। শাকিব এ ধরনের চরিত্রগুলো যখন করেছিল তখন তার ক্যারিয়ারে স্ট্রাগল পিরিয়ড চলছিলো।

শাকিব খানের ব্যর্থ প্রেমিকের চরিত্রগুলোর বিশেষত্ব ছিল কিছু কিছু ক্ষেত্রে মূল নায়ক থাকার পরেও শাকিব তার অভিনয়ের মাধ্যমে আকর্ষণীয় চরিত্রে পরিণত হত। যেসব ছবিতে ব্যর্থ প্রেমিক হয়েছিল শাকিব সেগুলো নিয়েই এ আয়োজন।

১. আমার স্বপ্ন তুমি
অনায়াসে এ ছবি প্রথম অবস্থানে চলে আসবে। শাকিব খানের আর্লি ক্যারিয়ারের টার্নিং পয়েন্টের ছবি। শাবনূরের সাথে যত ছবি করেছে শাকিব তার মধ্যে এ ছবি সেরা। ছবির গল্পে শাবনূরকে ভালোবাসে শাকিব এবং নানাভাবে জব্দ করে। শাবনূর পরিণত না হওয়ায় ভালোবাসা বুঝত না। ফেরদৌসের সাথে বিয়ের পর শাবনূর পরিণত হয়ে যায় পরিস্থিতি অনুযায়ী। এর মধ্যে হঠাৎ একদিন শাবনূরের শ্বশুরবাড়িতে হাজির হয় শাকিব। শাবনূরকে নিয়ে যেতে চাইলে শাবনূর বলে-‘আমি তোর সাথে কেন যাব?’ জোর করে নিয়ে যেতে চাইলে ফেরদৌস বাধা দেয় তখন ফেরদৌসের দিকে পিস্তল তাক করে শাকিব। শাবনূর তখন বলে-‘ওকে মারলে আমি যে বিধবা হয়ে যাবো রে’। কথাটা শোনার পর শাকিব স্তব্ধ হয়ে যায়। শাবনূর শাকিবকে শান্ত করতে বলে-‘আমি ওকে তালাক দিয়ে তোকে বিয়ে করব’ এ কথা শোনার পর শাকিব রেগে যায় এবং চিৎকার করে শাবনূরকে ‘মিথ্যাবাদী’ বলতে থাকে। তার ভালোবাসার মানুষ অনেক দূরে চলে গেছে যেখানে তাকে আর সে পাবে না কখনো। তাই নিজের বুকে গুলি চালিয়ে দেয় শাকিব। মৃত্যুর আগে শাবনূরকে সেই পুরনো কথাটাই বলে-‘একটা কথা বলি’…বল…কিছু না’। মর্মস্পর্শী এ সংলাপের পর শাকিব চলে যায়।

ছবির শেষের সেই ১০ মিনিট শাকিব হয়ে ওঠে মধ্যমণি এবং ব্যর্থ প্রেমিকের চরিত্রে সবচেয়ে স্মরণীয় অভিনয়টি করে। এখনো দর্শক এ দৃশ্যটিকে স্মরণ করে।

২. স্বপ্নের বাসর
এই ছবিটিতেও শাকিব খানের ব্যর্থ প্রেমিকের ভূমিকা ছিল মন ছোঁয়ার মতোই। ছবির কালজয়ী সেই গান ‘কিছু কিছু মানুষের জীবনে ভালোবাসা চাওয়াটাই ভুল’ সব মানুষের মুখে মুখে ছিল। শাবনূর রিয়াজের জন্য অপেক্ষা করে। রিয়াজকে মিথ্যে অপরাধে জেলে দেয়া হয়। ফিরে এসে প্রতিশোধ নেয় এবং শাকিব তার পাশে থাকে। ছবির শেষে রিয়াজ-শাবনূর মিলে গেলে শাবনূর তাদের কাছে বিদায় নিতে আসে। যাবার সময় বলে-‘তোমাদের ভালোবাসার মাঝেই আমি বেঁচে থাকব’। অসাধারণ ছিল।

৩. বাধা
জমজমাট এ ছবিটিও ত্রিভুজ প্রেমের গল্পের। রিয়াজ-পূর্ণিমা-শাকিব ত্রিভুজ প্রেমে শাকিব হয়ে যায় ব্যর্থ। রিয়াজের সাথে বাজি ধরে শাকিব, তার বিশ্বাস পূর্ণিমা তাকেই ভালোবাসবে কিন্তু রিয়াজই পেয়ে যায়। শাকিব বন্ধুত্বের হাত বাড়িয়ে রিয়াজ-পূর্ণিমার প্রেমের পথে বাধা রিয়াজের বড়ভাই ডিপজলকে মোকাবেলা করতে থাকে। তাদেরকে পালাতে সাহায্য করে। একসময় ধরা পড়ে গেলে প্রাণপণ লড়াইও করে তাদেরকে বাঁচাতে। ডিপজল হেরে গিয়ে তাদের ভালোবাসাকে মেনে নেয়। শাকিব পূর্ণিমার রুমালটি সযত্নে রেখে দেয় ব্যর্থ প্রেমিকের সান্ত্বনা হিসেবে। শাকিবের অভিনয় ছিল খুবই টাচি।

৩. তুমি স্বপ্ন তুমি সাধনা
শাকিব খান-অপু বিশ্বাস জুটির মধ্যে শাকিবের ব্যর্থ প্রেমের সেরা ছবি এটি। আলমগীর-জসিম-চম্পার ত্রিভুজ প্রেমের ছবি ‘নিষ্পাপ’-এর রিমেক এটি। শাকিব-অপুর প্রেমের পর ঘটনাচক্রে তাদের মধ্যে দূরত্ব তৈরি হয়। অমিত হাসানের সাথে বিয়ে হয়ে যায় অপুর। শাকিব জেলখানার কয়েদি হিসেবে জেলার অমিতের বাড়িতেই কাজ পায়। সেখানে অপুকে দেখে স্তব্ধ হয়ে যায়। সিঁড়ির নিচ থেকে শাকিব অপুকে নাম ধরে ডাকলে অপু বলে ‘বেগমসাহেবা’ বলতে এবং শাকিব বিস্মিত দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে এটা ছিল ছবির সেরা সিকোয়েন্স। শাকিবের অভিনয়সমৃদ্ধ ছবির মধ্যে অন্যতম একটি ছবি।

৪. রঙিন সমাধি
শাকিব খান-শাবনূর-আমিন খান ত্রিভুজ প্রেমের গল্প এটি। এখানেও শাকিব শাবনূরকে ভালোবাসে কিন্তু শাবনূরের প্রেম হয় আমিন খানের সাথে। দুজনকে মিলিয়ে দিতে জীবনবাজি রাখতে থাকে শাকিব এবং মিলিয়েও দেয়। পুরো ছবিতে শাকিবের ন্যাচারাল অভিনয় ছিল দেখার মতো।

৫. ও প্রিয়া তুমি কোথায়
রিয়াজ-শাবনূর-শাকিব খান ত্রিভুজ প্রেমের ছবি। শিল্পী আসিফের তুমুল জনপ্রিয় গানকে কেন্দ্র করে ছবিটি নির্মিত হয়েছিল। গানটি রিয়াজের লিপে ছিল। এ ছবিতে রিয়াজ প্রথমে ব্যর্থতার মধ্যে পড়লেও শাকিব ঘটনাচক্রে ব্যর্থ প্রেমিক হয়ে যায় এবং রিয়াজ-শাবনূরকে মিলিয়ে দিতে নিজের জীবন দিয়ে দেয়।

৬. হৃদয় শুধু তোমার জন্য
শাকিব খান-শাবনূর-শাহেদ ত্রিভুজ প্রেমের ছবি। শাবনূরকে ভালোবেসে পায় না শাকিব। শাকিব অপরাধী হয়ে যায় ঘটনাচক্রে। প্রতিশোধ নিতে গিয়ে শেষ পর্যন্ত মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ে। মৃত্যুর আগে শাহেদের সাথে মিলিয়ে দেয় শাবনূরকে।

৭. সুভা ও দেবদাস
‘সুভা’ ও ‘দেবদাস’ সাহিত্যনির্ভর ছবি হলেও গল্প অনুযায়ী শাকিব ব্যর্থ প্রেমিক হয়ে যায়। ‘সুভা’ ছবিতে বোবা পূর্ণিমাকে ভালোবাসে শাকিব যার বিয়ে হয়ে যায় কলকাতায়। শাকিব নিঃস্ব হয়ে বিলাপ করতে থাকে। ‘দেবদাস’-এ পার্বতী চরিত্রে অপুরও বিয়ে হয়ে যায় আর শাকিব তার বিরহে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ে অপুর শ্বশুরবাড়ির সামনে।

৮. তুই যদি আমার হইতি রে
ফেরদৌস-মৌসুমী-শাকিব খান ত্রিভুজ প্রেমের ছবি। এ ছবিতে মৌসুমীকে ভালোবেসে শাকিব পায় না। ফেরদৌসের সাথে মৌসুমীর প্রেম দেখে শাকিব শেষ পর্যন্ত ফেরদৌসের জন্য ত্যাগ স্বীকার করে। নিজে মরে গিয়ে চোখ দিয়ে যায় ফেরদৌসকে। এ ছবিতেও শাকিব ছিল চরিত্রের বিচারে মধ্যমণি।

এভাবেই শাকিব খান ব্যর্থ প্রেমিকের চরিত্রে প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ অভিনয়ের মাধ্যমে দর্শকের মনোযোগ কাড়তে সক্ষম হয়েছিল। স্ট্রাগল পিরিয়ডে তার এ ধরনের চরিত্রের ছবিগুলো দর্শকপ্রিয়তা পেয়েছিল। অন্য নায়কদের সাথে প্রতিযোগিতার মাধ্যমে শীর্ষস্থানে আসার আগে শাকিব খান ব্যর্থ প্রেমিকের চরিত্রগুলোতে সফল একটি অধ্যায় তৈরি করেছিল।


লেখক সম্পর্কে বিস্তারিত

বাংলাদেশের চলচ্চিত্র গত শতকে যেভাবে সমৃদ্ধ ছিল সেই সমৃদ্ধির দিকে আবারও যেতে প্রতিদিনই স্বপ্ন দেখি। সেকালের সিনেমা থেকে গ্রহণ বর্জন করে আগামী দিনের চলচ্চিত্রের প্ল্যাটফর্ম গড়ে উঠুক। আমি প্রথমত একজন চলচ্চিত্র দর্শক তারপর সমালোচক হিশেবে প্রতিষ্ঠিত হবার স্বপ্ন দেখি। দেশের সিনেমার সোনালি দিনের উৎকর্ষ জানাতে গবেষণামূলক কাজ করে আগামী প্রজন্মকে দেশের সিনেমাপ্রেমী করার সাধনা করে যেতে চাই।

মন্তব্য করুন