![অনুদান পাওয়ার সাত বছর পর মুক্তি পাচ্ছে ‘আজব কারখানা’](https://i0.wp.com/bmdb.co/wp-content/uploads/2024/06/ajob_karkhana1_bmdb_image.jpg?resize=150%2C150&ssl=1)
কো-ইনসিডেন্টাল ‘আঁখি আলমগীর’
কণ্ঠশিল্পী আঁখি আলমগীরের প্রতি আপনার ইমপ্রেশন কী— প্রশ্নটা যদি র্যান্ডমলি ৩৭৯ জন বিভিন্ন বয়সের ব্যক্তিকে করা হয় কেমন উত্তর আসবে কিছুটা অনুমান যদি করাও যায়, অনুমানে বিঘ্ন ঘটাবে অন্তত ১৯ জন, তারা জবাব দেবে কাউন্টার প্রশ্নে- ‘বাংলাদেশে এত মানুষ থাকতে আঁখি আলমগীরই কেন, what’s her exclusiveness, আপনি বরং কানিজ সুবর্ণা বা পিলু মমতাজের পাবলিক ইমপ্রেসন সংগ্রহ করলে বেটার ইনসাইট পেতেন।
![](https://i0.wp.com/bmdb.co/wp-content/uploads/2023/01/ankhi_alamgir1_bmdb_image.jpg?resize=1024%2C631&ssl=1)
শেখ নাবিল নামে এক বন্ধুকে করেছিলাম প্রশ্নটা। তার উত্তর ছিল, ‘আঁখি আলমগীর মানে নেচে নেচে গান গাওয়া, যার কোনোটাই ভালো লাগে না শুনতে।’
তবে পাবলিক পারসেপশনের বাইরে আমার নিজস্ব পরিমাপক স্কেলে আঁখি আলমগীরের জন্য যদি ৭টা বিশেষণ বরাদ্দ থাকে, সেখানে ৩টা হবে- intelligent, inquisitive, adaptive, বাকি ৪টা জমা থাকুক নিয়তিঘরে! আমি তার গানের টার্গেট অডিয়েন্স নই, তাই পারফরমার হিসেবে তার প্রতি সুনির্দিষ্ট কোনো ইমপ্রেসন নেই, যে কোনো পেশাজীবীই সর্বপ্রথম একজন স্বতন্ত্র মানুষ, আমার ইমপ্রেসনের ইশতেহারও ব্যক্তি আঁখি আলমগীরকে পর্যবেক্ষণ করে!
তবু ‘আঁখি আলমগীরই কেন’ এই অমীমাংসিত জিজ্ঞাসার নেপথ্যে রয়েছে এক উদ্ভট সাররিয়েল প্লটের গল্প!
ডলি সায়ন্তনী নামটা শুনলে নায়ক রুবেল আর মিশেলাকে মনে পড়ে। ‘রঙ চটা জিন্সের প্যান্ট পরা, জ্বলন্ত সিগারেট ঠোঁটে ধরা’— এই গানের দৃশ্যায়ন একবার দেখলে বাকিজীবনের স্মৃতিতে জমে থাকার কথা।
এসডি রুবেল নামে একজন গায়ক ছিল এককালে। তার প্রকাশিত গানের এলবামের সঠিক সংখ্যা জানা নেই আমার, অনুমান করি ৫০ এর বেশি। তার ক্ষেত্রে মনে পড়ে তারই গাওয়া এক বাংলিশ লিরিক- ‘how much time i cry for you, how much time i cry for my love’!
মনি কিশোর, হাসান চৌধুরী, সাবাতানি, মৌটুসী, মনির খান, রবি চৌধুরী, নাসিরসহ অসংখ্য গায়ক-গায়িকার প্যানেল মনে করতে পারি যাদের অন্তত দুটি গান শোনা হয়েছে। সাব-আরবান ক্লাস্টারে তাদের কেউ কেউ কিংবদন্তী। যেমন রবি চৌধুরীর ‘প্রেম দাও’ অ্যালবাম যখন প্রকাশিত হয়, আমরা মানিকগঞ্জের ঘিওর উপজেলায় থাকতাম, আশপাশের বাড়িতে অনবরত বাজতো- ‘প্রেম দাও নয় বিষ দাও, ফুল দাও নয় জ্বালা দাও, আমার জীবন নিয়ে খেলো না তুমি খেলা, লাভ ইউ নীলা মাই লাভ’।
কিন্তু ঘিওর উপজেলা থেকে মানিকগঞ্জ সদরে আসার পরই রবি চৌধুরী, হাসান চৌধুরীদের প্রভাব বলয়ে শিথিলতা লক্ষ্য করি। এসএসসির পরে যখন নটরডেম কলেজে এলাম, দেখি ওয়ারফেজ-আর্টসেল-ব্ল্যাক কিংবা ব্যাকস্ট্রিট বয়েজ-ব্রিটনি স্পিয়ার্সের গানের ক্রেজ। মনির খান, আসিফ কিংবা পলাশ-রিজিয়া পারভীনের গান শোনে প্রকাশ্যে স্বীকারের সাহসই ছিল না কারো৷
শ্রোতারুচির ক্ষেত্রে ক্লাস এবং রিজিওনাল পলিটিক্স বোঝার সূত্রপাত হয়েছিল সেই বয়সেই।
![](https://i0.wp.com/bmdb.co/wp-content/uploads/2023/01/ankhi_alamgir2_bmdb_image.jpg?resize=960%2C640&ssl=1)
আঁখি যদি নায়ক আলমগীরের পরিবর্তে বাংলাদেশের যে কোনো বিখ্যাত-অখ্যাত মানুষের কন্যা হতেন, সহস্রভাগ নিশ্চয়তা দিতে পারি তার সম্বন্ধে ততটাই জানার আগ্রহ বোধ করতাম যতটুকু করি ঝুমু খান, রুক্সি, রুনা খন্দকার, দিনাত জাহান মুন্নী কিংবা মেহরিন বা তিশমার ব্যাপারে।
আলমগীর ফ্যাক্টরটা তাই উল্লেখ করা প্রয়োজন। বাংলা সিনেমার প্রতি বিশেষ ফ্যাসিনেশন কাজ করে। অন্তত দুটা সিনেমায় অভিনয় করেছে অথচ নাম জানি না এমন নারী-পুরুষ আর্টিস্ট পাঁচজনের বেশি খুঁজে পাওয়া যাবে না হয়ত। শুধুমাত্র বাংলা সিনেমার প্রতি আসক্তিতে যত সময় গেছে তার কারণে পাঁচটা বই কম লেখা হয়েছে। এর মধ্যেও নায়ক আলমগীরের কেইসটা আলাদা, ইতোপূর্বে অন্য এক লেখায় উল্লেখও করেছি।
একদম শিশু বয়সে বিটিভিতে শাবানা-আলমগীরের সিনেমা দেখাকালীন আম্মুর করা একটা ক্যাজুয়াল মন্তব্য চিরস্থায়ীভাবে মাথায় রয়ে গেছে। শাবানা-আলমগীরের গানের দৃশ্য দেখে করা মন্তব্য- ‘আলমগীর হলো দোতলা বাস, নায়িকারে তো ছোট লাগবোই’, তারপর থেকে অদ্যাবধি নায়ক আলমগীরকে স্ক্রিনে দেখামাত্র রাস্তা দিয়ে বাস চলার ইমেজ আসে স্বয়ংক্রিয়ভাবে। একে কল্পনা-হ্যালুসিনেশন যা-ই ভাবা হোক, আলমগীর আর বাস একীভূত হয়ে গেছে!
বাংলা সিনেমার প্রতি ন্যুনতম পজিটিভ ইমপ্রেসন না থাকলেও ‘বাস সিনড্রোম’বশত আলমগীরের প্রতি কৌতূহল কাজ করত। বিটিভির এক বিনোদনমূলক ম্যাগাজিন অনুষ্ঠানে অতিথি হয়ে আসেন আলমগীর, তখন জানতে পারি তার জ্যেষ্ঠ কন্যা অনার্সে পড়ে, গান গায়। এরকমই এক ঈদের অনুষ্ঠানে সেই কন্যার গানও শুনতে পাই, সহশিল্পী রবি চৌধুরী! একেবারেই মনে রেখাপাত করে না সে গান!
বয়ে যায় সময়, বয়স বাড়ে, হয়তবা বড় হন আঁখি আলমগীরও। বুয়েটে পড়াকালীন জানতে পারি ‘ভাত দে’ সিনেমায় শাবানার ছোটবেলার চরিত্রে অভিনয় করেছিল আলমগীরের কিশোরী কন্যা! ততদিনে ভাত দে দেখে ফেলেছি, কিন্তু শিশু শিল্পীটাকে মনে করতে পারি না। তখনো ইউটিউব ছিল না, তাই ভাত দে পুনরায় দেখার আকাঙ্ক্ষা তীব্র হতে থাকে। ভিসিআর, ভিসিপি যুগের আয়তাকার ক্যাসেটের যুগ পেরিয়ে তখন সিডি-ডিভিডি প্লেয়ারের যুগ। বেশ কয়েকটা দোকান খুঁজেও ‘ভাত দে’ সিনেমার সিডি মিললো না, বুয়েটে ক্রমাগত ব্যর্থতার চাপে কোন ফাঁকে মাথা থেকে খসে পড়ে ভাত দে, আলমগীরের কিশোরী কন্যা প্রভৃতি।
![](https://i0.wp.com/bmdb.co/wp-content/uploads/2015/05/Bhat_Dey.jpg?resize=408%2C477&ssl=1)
তবে পরিণত বয়সের আঁখি আলমগীরের আপডেট জানা হতো মাঝেমধ্যে, সামহোয়ারইন ব্লগ সূত্রে। সেখানে গান নয় ব্যক্তিগত জীবনের বিবিধ কন্ট্রোভার্সিই থাকত ছড়িয়ে-ছিটিয়ে।
বুয়েট লাইফ শেষ, পুরোদস্তর লেখালেখি আর হিউম্যান নেচার স্টাডি নিয়ে আছি, এরই মধ্যে রোযার ঈদে মানিকগঞ্জ বিল্টু ক্লাবে সবান্ধব গেলাম কনসার্ট দেখতে, জানলাম শিল্পী আঁখি আলমগীর। নিম্নমানের সাউন্ড সিস্টেম, অদক্ষ যন্ত্রী, আর চটুল লিরিকের পাশাপাশি এটাও লক্ষ্য করলাম আঁখি আলমগীর গান গায় নিচু স্কেলে, গলা হারিয়ে যায় মিউজিকের আড়ালে! she is not someone to be taken care of; মাত্র কয়েক বছর আগেও ‘ভাত দে’ সিনেমার সিডি খুঁজেছিলাম যার পারফরম্যান্স দেখতে, কালের পরিক্রমায় আগ্রহে পলি জমে গেল! এমনকি আলমগীরকেন্দ্রিক ‘বাস সিনড্রোম’ যেটা তখনো পরাক্রমী, সেটাও পারলো না প্রলেপ আটকাতে!
তার কয়েক বছর গল্পে এন্টিক্লাইম্যাক্স। গায়ক আসিফ অতিথি হয়ে আসে শাহরিয়ার নাজিমের আলোচিত টিভি শো ‘সেন্স অব হিউমার’ এ। তার কথা-বার্তা শুনে ইন্টারেস্ট জাগে। ইউটিউবে আসিফের আরো ইন্টারভিউ খুঁজতে থাকি। এক জায়গায় দুস্থ শিল্পীদের সাহায্যার্থে অন্য শিল্পীদের অবদান প্রসঙ্গে মন্তব্য করে, তার মধ্যেও একটি নামের উল্লেখ থাকে- ‘এসব ব্যাপারে আঁখির ধারেকাছে কেউ নেই। যে কারো সমস্যা হলে সবার আগে আঁখিকে পাবেনই।’
২০১৭ তে আসিফকে নিয়ে নিবন্ধ লিখি একটা ‘ইন্টারেস্টিং মানুষ আসিফ’,ফ্রম নোহোয়ার সেই লেখায় আঁখি আলমগীরের কমেন্ট, এবং কিছুক্ষণ পরে ফ্রেন্ড রিকুয়েস্ট পাঠানো। আলমগীরের ‘বাস সিনড্রোম’ গল্পটা তার সঙ্গে শেয়ার করি, আমার ৬২৪ পৃষ্ঠার নামহীন বইও পাঠাই যেহেতু সেখানে বাস সিনড্রোমের বিস্তারিত ব্যাকগ্রাউন্ড বর্ণিত ছিল। মূলত সেই সময়ের ইন্টারেকশন থেকেই অনুধাবন করি তার ইমোশনাল ইন্টেলিজেন্স এভারেজের চাইতে বেশ খানিকটা উচুতে। কয়েকটা টিভি প্রোগ্রামের লিংক পাঠান, যেখানে তিনি এংকরিং করেছেন। ভিন্ন কিছু করবার প্রয়াস লক্ষণীয়। একটি সিনেমার গল্পতে গাওয়া ‘গল্পকথা’ শিরোনামের একটি গানের সন্ধান দেন। প্রথমবার তার গান শুনি পূর্ণ মনোযোগে, এবং গায়কি পছন্দ হয়। ততদিনে ইউটিউবে অধিকাংশ বাংলা সিনেমা এভেইলেবল, বহুদিন পূর্বে খোঁজা ‘ভাত দে’ সিনেমা দেখে ফেলি। চেহারায় উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন আসেনি, কেবল স্কিন সামান্য বয়স্ক হয়েছে!
কিন্তু
যেহেতু আমাদের কমন ইন্টারেস্টের কোনো প্লাটফর্ম ছিল না, যোগাযোগ স্তিমিত হয়ে পড়ে জাগতিক প্রায়োরিটির শিডিউলিংয়ে। তাছাড়া আমার চিন্তার ধরনে নেগেটিভ টোনের আধিক্যও অনাগ্রহ তৈরির ক্ষেত্রে নিয়ামক ছিল।
![](https://i0.wp.com/bmdb.co/wp-content/uploads/2023/01/ankhi_alamgir_bmdb_image.jpg?resize=700%2C960&ssl=1)
যাহোক লিসেনিং আর রিসার্চ টিসার্চ করেই দুটো পয়সার মুখ দেখছিলাম, হঠাৎ নেশা চেপে বসলো শাবানা-আলমগীরের সব সিনেমা ইউটিউবে দেখব। দেখতেই থাকি। একদিন সাময়িক স্ট্যাটাস লিখি। এসব স্ট্যাটাস মুছে ফেলি কিছুক্ষণ পর, যেহেতু সুচিন্তার পরিবর্তে তাৎক্ষণিক রিএকশনই প্রাধান্য পায় সেখানে। সেই সাময়িক স্ট্যাটাসসূত্রে বহুবছর বাদে পুনরায় আঁখি আলমগীরের সঙ্গে আলাপ। তার ননলিনিয়ার চিন্তাপদ্ধতি আমি এপ্রিসিয়েট করি। সমাজ আমার অপছন্দের কনসেপ্ট। তাই ভালো মানুষ, খারাপ মানুষ জাতীয় ট্যাগিংগুলো মানি না। আমি মানুষকে রিসোর্সফুল, ইউজফুল এবং হার্মফুল এই তিন শ্রেণিতে বিভক্ত করি। রিসোর্সফুল এবং ইউজফুল মানুষ সামাজিক মানদন্ডে খারাপ মানুষ হতে পারে, আবার হার্মফুল মানুষ সমাজের চোখে ভালো মানুষ হতে পারে।
একারণে আমার স্কেলিংয়ে শেষ পর্যন্ত হার্মফুল অথবা হার্মলেস— এই দুই জাজমেন্টেই স্থির হয়ে পড়ি। আঁখি আলমগীরের সঙ্গেকার ইন্টারেকশনে একটা শব্দ শিখেছিলাম ‘ক্রিটিকালি পজিটিভ’; শব্দটা দুর্দান্ত পছন্দ হওয়ায় তার প্রতি কৃতজ্ঞতা।
সুতরাং আমার জগতে সে একজন সেমি-রিসোর্স্ফুল মানুষ, সামাজিক পারসেপশন যেমনই হোক।
সর্বশেষ আলাপে জেনেছিলাম তার জন্মদিন ৭ জানুয়ারি। আমার চাইতে কমপক্ষে ১২-১৩ বছরের সিনিয়র হবেন, সেই নিরিখে ৪৮ বা ৪৯ তম জন্মদিন হওয়ার কথা। সংখ্যা যেটাই হোক, ফিট থাকাটাই মূখ্য।
অসংখ্য কো-ইনসিডেন্স থেকে যার সঙ্গে যোগাযোগের সূত্রপাত, কিংবা যোগাযোগহীনতা, নিয়তির স্ক্রিপ্ট অনুসারে এই গল্পের শেষ অংকে তার একটা চিন্তাগ্রাফি থাকা উচিত, যেখানে আঁখি আলমগীরের unexplored চিন্তাপ্রণালীকেই প্রাধান্য দেয়া হবে।
কিন্তু স্ক্রিপ্টের বাইরেও অনেক গল্প থাকে যেগুলো আচমকা বদলে দেয় গল্পের গতিপথ।
৭ সংখ্যাটা ম্যাগনিফিসেন্ট। এই দিনে জন্ম নেয়া প্রতিটি মানুষের জীবন হোক সিগনিফিক্যান্ট!