Select Page

গল্পে থ্রিল বাড়লেও প্রেজেন্টেশন ‘মনপুরা’র মতোই

গল্পে থ্রিল বাড়লেও প্রেজেন্টেশন ‘মনপুরা’র মতোই

গিয়াস উদ্দিন সেলিমের ‘পাপ পুণ্য’কে এক কথায় সংক্ষেপিত জীবন দর্শন বলা যায়। খুব সম্ভব বন্ধুর কাছে কয়েক বছর আগে শোনা গল্প দিয়ে এবারের সিনেমা বানিয়েছেন তিনি। বলা হচ্ছে, ‘মনপুরা’ ও ‘স্বপ্নজাল’-এর পর এটি দিয়েই নিজের ‘লাভ ট্রিলজি’ পূর্ণ করলেন সেলিম। একটি আলাদা সিনেমা হিসেবে আমার কাছে বিশেষ কিছু টেকনিক্যাল অসামঞ্জস্যতা ও স্ক্রিনপ্লের অগভীরতা বাদে বেশ ভালো লেগেছে।

গল্পে আসি, তবে স্পয়লার দেবো না। ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান খোরশেদের পরিবার বলতে ‘কাকা’ বলে ডাকা বাড়ির কাজের মহিলা ‘পারুল’-এর ছেলে ‘আল আমিন’, স্ত্রী আর মেয়ে ‘সাথী’। আমি স্ত্রী আর মেয়ের কথা পরে বলার কারণ হলো, গল্পের সময় আর গুরুত্ব বিবেচনায় তারাই এগিয়ে থাকবে। জনপ্রিয় চেয়ারম্যান হওয়ায় তার যেমন সমাজে বেশ মানমর্যাদা আছে, তেমনি আছে শত্রুও। আর তাই আল আমিন তার ডান হাতের মতো সবসময় সঙ্গে থাকে। পারুল একসময় টের পায় তার ছেলে বাড়ির মেয়ে সাথীর সঙ্গে একটা সম্পর্কে জড়িয়ে গেছে যা সামাজিক রীতিনীতিতে কোনভাবেই মেনে নেয়া যায় না, বাড়ির মান-সম্মানের ব্যাপার তো আছেই। ওদিকে গল্পের আরেকটা শাখা রেলওয়ের জায়গা নিয়ে খোরশেদের সততায় শত্রু হয়ে যাওয়া এমপির আত্মীয়কে দেখতে পাই বিবাদে জড়াতে। একদিকে অসম প্রেম আর অন্যদিকে বিবাদ নিয়ে গল্প এগোয়।

বছরের আরো সিনেমা মুক্তি বাকি থাকলেও চঞ্চল এই সিনেমায় আরেকটা ‘জাতীয় পুরস্কার’ দাবি করতেই পারেন। রূপসজ্জা, অভিনয়ের স্কেলে উত্থান-পতন, এক্সপ্রেশন আর সর্বোপরি গল্পে তার স্থান বাকিদের থেকে ঢের এগিয়ে দিয়েছে। ‘শান’-এর পর সিয়ামের জন্য ঠিক এমন একটা গল্পই দরকার ছিল যাতে তাকে কোনভাবে মেলানো যাবে না। সিয়াম নিজেকে সরল, স্থির আর বাড়ির পাশের ছেলেটি হিসাবে ধরা দিয়েছে। নবাগত হিসাবে সুমী পাশ মার্ক পেয়েছেন, তার পর্দায় উপস্থিতি স্নিগ্ধতা ছড়িয়েছে। তবে আমাকে আপ্লুত করেছে অন্য একজন, তিনি আফসানা মিমি। কী অভিনয় আর কী চাহনি, কী আহাজারি আর কী আবেগভরা সংলাপ ডেলিভারি। মিমি ফিরে এসে দেখালেন তিনি কখনো ফুরিয়ে যাননি। ফজলুর রহমান বাবু, ফারজানা চুমকি, মামুনুর রশীদ জায়গা কম পেয়েও ভালো করেছেন, তবে রিলিফ পয়েন্ট ছিলেন গাউসুল আলম শাওন!

সিনেমার শক্তির জায়গা যেমন এর গল্প, তেমনি দূর্বল জায়গা এর উপস্থাপন। স্ক্রিনপ্লের একটা অংশে বারবার সেলিমের সিনেমায় ধীরতা আসবেই। মাঝে মাঝে সেটা ভালো আবার অনেক সময় সেটাই বিরক্তির কারণ। টেকনিক্যাল দিক, ক্যামেরার ফোকাস, লাইট, কালার টোনে ‘গরিবানা’ স্বাদ পাওয়া গেছে যা ২০২২ সালে এসে মানা কষ্টের। তবে দৃশ্যায়ন চমৎকার।

খোরশেদ চেয়ারম্যানের বাড়িতে খুব একটা মানুষ দেখা যায়নি বা তার জনপ্রিয়তার বিল্ড আপ ভালো হয়নি। সাথী আর আল আমিনের অন্তরঙ্গতা যেভাবে দেখানো হয়েছে, এক বাড়ির এপাশ আর ওপাশ হিসাবে তা লজিক্যাল লাগেনি। সেলিমের গল্পে থ্রিল বেড়েছে, এডিটিং উন্নত হয়েছে, চিঠির স্থানে ভিডিও কল এসেছে তবে প্রেজেন্টেশন সেই ‘মনপুরা’র মতোই থেকে গেছে।

‘পাপ পুণ্য’ এ সময়েরই গল্প, তবে শহর থেকে দূরের জনপদের। পয়সা উসুল হবে গল্প আর পারফরমেন্স জোরে, সেলিমের সিনেমা বলতে যে গান নিয়ে কথা হয় সেটা বলতে পারছি না। কারো ভালো লাগবে, কারো লাগবে না। তবে এক কথায় ‘পাপ পূণ্য’ একশোভাগ দেশি সিনেমা।

রেটিং- ৭/১০


লেখক সম্পর্কে বিস্তারিত

Graduated from Mawlana Bhashani Science & Technology University. Film maker and writer.

মন্তব্য করুন