Select Page

নস্টালজিক লিটু আনাম

নস্টালজিক লিটু আনাম

১.

‘রোদ নেই জেগে ওঠা ভোরে

আজ তাই মেঘের ঘুড়ি ওড়ে

মন বলে আকাশের সূর্যটা তোমার এই ঘরে

কাছ থেকে দেখবে বলেই সে তোমার চাদরে

দূরে ছিলে ছিল তাই অনেক ভালো

মেঘ ধোয়া জলে ছিল স্বপ্নগুলো

তুমি এলে মোর রাত যেন রাতের কালো’…♥♪

২.

‘যাবে কোথায় ফেলে আমায়

ভাবি তোমায় সারা প্রহর,

তুমি হেঁটে যাবার আগে

রাখি তোমার পথের খবর

একটু দাঁড়াও দুজনে মিলে দেবো পাড়ি

অথই সাগর’…♥♪

রিঙ্গোর সাড়া জাগানো বহুল জনপ্রিয় টেলিফিল্ম ‘স্বপ্ন’-র জনপ্রিয় গান ‘দূরে কোথাও’-র লিরিক প্রথম গানটিতে। গানে শমী কায়সারের সাথে লিটু আনামের রোমান্স বিভোর করে দেয় রোমান্টিক মুডে। রেডিয়াম বলের সাথে লিটু আনামের খেলা, রোমান্টিক চাহনি তাকে সেই সময়ের অন্যতম সেরা রোমান্টিক অভিনেতা হিসেবে চেনায়।

দ্বিতীয় গানটিতে ‘ঢং’ নাটকে সুমাইয়া শিমুর সাথে লিটুর অভিমান ও প্রেমের দারুণ রসায়ন দেখা যায়। অসাধারণ একটা গান।

নব্বই ও তার পরবর্তী সময়ে রোমান্টিকের পাশাপাশি অ্যাকশন, ড্রামা প্রায় সব ধরনের নাটকের একজন নির্ভরযোগ্য অভিনেতা ছিল লিটু আনাম। সহজাত অভিনয়প্রতিভা দিয়ে দর্শকের মনে স্থান করেছিল।

কে ভুলতে পারে সাজ্জাদ হোসেন দোদুলের অ্যাকশন নাটক ‘জাল, মুখোশ, খড়ের পুতুল, লালঘুড়ি’-র মতো নাটকগুলোর কথা! রফিকউল্লাহ সেলিমের লোকাল গুণ্ডামির বিপরীতে প্রতিবাদী লিটু আনাম অসাধারণ হয়ে উঠত এসব নাটকে। আবার সেই দোদুলেরই ‘বাবুদের ফুটানি’ নাটকে কমেডিতে ভরিয়ে তুলত নিজেকে। সমুদ্রপ্রিয় পরিচালক মোহন খানের ‘দূরে কোথাও’ নাটকে শমী কায়সারের সাথে লিটুর দারুণ রোমান্টিসিজমও মনে পড়ে। মনে পড়ে ঈশিতার বিপরীতে ‘কিছুদিন পরে’ নাটকের কথা যেখানে ঈশিতা মনে মনে তাকে ভালোবাসে কিন্তু সে জানত না লিটু বোবা। খুব ছোট ছোট কিছু মুহূর্তকে কী চমৎকার রোমান্টিকে সাজানো হয়েছিল নাটকে! ফেরদৌস হাসান, লাকী ইনাম, আহমেদ ইউসুফ সাবের-দের মতো গুণী ব্যক্তিত্বদের নাটকে কাজ করেছে লিটু।

লিটুর উল্লেখযোগ্য নাটক : দূরে কোথাও, বিবর, মেঘদূত, জাল, খড়ের পুতুল, মুখোশ, বাবুদের ফুটানি, লালঘুড়ি, সম্পূর্ণ রঙিন, ঢং, হরতনের বিবি, দুর্ঘট, শ্যাওলা, আমাদের আনন্দবাড়ি, কিছুদিন পরে, বন্যার চোখে জল, রিক্তের বেদন, কানামাছি, আঙুরলতা, গল্পকথার কল্পলোকে, আকাশ যাত্রা, ক্রোড়পতি, পাহাড় ও সমুদ্রের গল্প, আত্মগ্লানি, উদ্দেশ্যহীন, ঘূর্ণি, পরিণতি, ফাঁদ, সেদিন দুজনে, জুয়া, কর্কট ভালোবাসা, টু লেট।

অভিনেতা লিটু আনাম কয়েকটি ছবি করেছে। এর মধ্যে ‘নন্দিত নরকে’ সেরা। খুব হাসিখুশি চরিত্র কিন্তু শেষে গিয়ে ভয়ঙ্কর হয়ে ওঠে। মন্টু চরিত্রটির নাম। বোন সুমনা সোমা মারা যায় গর্ভপাত করাতে গিয়ে এর জন্য দায়ী ছিল বাড়ির মাস্টার কেরামত মওলা। বিষয়টা শুধু লিটু আনাম জানত। সুমনা সোমা মারা যাবার পর লিটু বটির কোপে মেরে ফেলে মাস্টারকে। তারপর লিটুরও ফাঁসি হয়। ক্লাইমেক্সে মন্টুই হয়ে ওঠে ছবির প্রধান আকর্ষণ। লিটু আনাম অসাধারণ অভিনয় করেছিল। তার প্রথমদিকের কোমলতা শেষে এসে কঠোরতায় রূপ নেয়। এমনকি ছবির নামের মধ্যে যে ‘নন্দিত নরক’-এর কথা বলা হয়েছে তার শুরুটা লিটুই করে। হুমায়ূন আহমেদের প্রথম উপন্যাস ছিল ‘নন্দিত নরকে।’ উপন্যাস থেকে ছবিটি বানিয়েছেন বেলাল আহমেদ। ‘আধিয়ার’ ছবিতে অন্যতম সেরা অভিনয় ছিল। সামন্তবাদের বিরুদ্ধে গণমানুষের সংগ্রাম ছিল এ ছবিতে। ‘নিরন্তর’ ছবিতে শাবনূরের ভাইয়ের চরিত্রে ছিল যে প্রথমদিকে লক্ষ্যহীন জীবনে অভ্যস্ত ছিল তারপর প্রেমিকার জন্য জীবনে পরিবর্তন আসে। মুক্তিযুদ্ধের ছবি ‘একাত্তরের যীশু’-তে ছিল মুক্তিযোদ্ধার ভূমিকায় যাকে ছবির শেষে পাকিস্তানি হানাদাররা ক্রুশবিদ্ধ করে। টলিউডে ‘চোর ও ভগবান’ ছবিতে অভিনয় করেছিল লিটু।

ব্যক্তিজীবনে ড. ইনামুল হক-লাকী ইনাম দম্পতির মেয়ে হৃদি হককে বিয়ে করেন লিটু আনাম।

মঞ্চের প্রফেশনাল অভিনেতা একজন লিটু আনাম-কে দেখে আজকের দিনে অভিনয়ের থেকে অন্যকিছুকে গুরুত্ব দেয়া অভিনয়শিল্পীরা ফলো করলে অভিনয়শিল্পকে ভালোবাসবে সবচেয়ে বেশি অন্যকিছুকে নয়। একজন লিটু আনাম সেই চেতনা হয়ে থাক। আমরা নস্টালজিক হবো বারবার এমন দারুণ অভিনয়শিল্পীর কাজগুলো নিয়ে।


লেখক সম্পর্কে বিস্তারিত

বাংলাদেশের চলচ্চিত্র গত শতকে যেভাবে সমৃদ্ধ ছিল সেই সমৃদ্ধির দিকে আবারও যেতে প্রতিদিনই স্বপ্ন দেখি। সেকালের সিনেমা থেকে গ্রহণ বর্জন করে আগামী দিনের চলচ্চিত্রের প্ল্যাটফর্ম গড়ে উঠুক। আমি প্রথমত একজন চলচ্চিত্র দর্শক তারপর সমালোচক হিশেবে প্রতিষ্ঠিত হবার স্বপ্ন দেখি। দেশের সিনেমার সোনালি দিনের উৎকর্ষ জানাতে গবেষণামূলক কাজ করে আগামী প্রজন্মকে দেশের সিনেমাপ্রেমী করার সাধনা করে যেতে চাই।

মন্তব্য করুন