Select Page

নূতন কথন

নূতন কথন

‘রুমাল দিলে ঝগড়া হয়
চিঠি দিলে বন্ধু হয়
ফুল দিলে কি হয় বলো না’

নব্বই দশকে রেডিওতে এ গানটি শোনেনি এমন দর্শক কম মিলবে। গানটি জসিম-নূতন জুটির ‘গর্জন’ ছবির। নূতনকে ছোটবেলায় আমরা বলতাম ‘জসিমের নায়িকা।’ জসিমের সাথেই সবচেয়ে বেশি দেখা যেত এবং মানাত।

নূতনের নাম নিয়ে দর্শকের মাঝে দ্বন্দ্ব কাজ করত। এখনও অনেকে লিখতে ভুল করে। নামটা ‘নূতন’ নাকি ‘নতুন।’ মাঝে মাঝে ছোটবেলায় কিছু কিছু ছবিতে নামটা ভুলও দেখাত। মূলত ‘নূতন’ হবে। সুন্দর নাম।

ফিল্মি নাম ‘নূতন।’ মূলনাম ফারহানা আমিন। জন্ম কিশোরগঞ্জ জেলায়। চলচ্চিত্রে অভিনেত্রীর পাশাপাশি নূতন পেশাদার নৃত্যশিল্পীও। প্রযোজকও ছিলেন।

লাক্সের ব্র্যান্ড অ্যাম্বাসেডর ছিল নূতন। আশির দশকে লাক্সের জনপ্রিয় বিজ্ঞাপনে নূতনকে দেখা গেছে। তখনকার সময়ে ক্রেজ তৈরি করেছিল বিজ্ঞাপনটি।

প্রথম ছবি ‘নতুন প্রভাত।’ উল্লেখযোগ্য ছবি – ওরা ১১ জন, সংগ্রাম, বসুন্ধরা, পাগলা রাজা, বারুদ, নাগিন, পুনর্মিলন, ফকির মজনু শাহ, রাজ দুলারী, নাগিন, নাগ-নাগিনীর প্রেম, নাগ-নাগিনী, লাইলী মজনু, সৎভাই, কাবিন, প্রেমিক, বদনাম, সেলিম জাভেদ, মোহাম্মদ আলী, অশান্তি, ব্যবধান, ধর্ম আমার মা, আওয়াজ, প্রেম বিরহ, সওদাগর, রক্তের বদলা, গর্জন, অন্ধপ্রেম, কাজের বেটি রহিমা, আলিফ লায়লা, সুপারম্যান, শক্তির লড়াই, বনের রাজা টারজান, বাঁশিওয়ালা, মিস্টার মওলা।

কমেডিয়ান দিলদারের নায়ক ভূমিকার ছবি ‘আব্দুল্লাহ’তে নূতন ছিলেন নায়িকা। ছবিটি সেই বছরের টপ হিট ছবি ছিল। নায়করাজের সাথে আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ ছবি ‘মালামতি।’

ছোটবেলায় নাগ-নাগিনী বা সাপের ছবি দেখতে পছন্দ করতাম এমন দর্শকের পাল্লাটা ভারিই হবে। নাগিনী চরিত্রে নূতন কমন আর্টিস্ট ছিল। তাকে ঐ গেটআপ মানাত শতগুণে। বীণের সুরে তালে তালে নাচত নূতন। এমনকি আজকের সময়ে যাকে আইটেম সং বলে তার থেকে দ্বিগুণ জৌলুসে নূতনকে সেসব জমকালো গানে পারফর্ম করতে দেখা গেছে। নূতনের স্পেশালিটি ছিল ঐ গানগুলোতে। সে ধরনের ছবিতে জসিমের নায়িকা থাকত নূতন। জসিমের সাথে তার রসায়ন জমত সবচেয়ে ভালো। জসিমের ‘কাজের বেটি রহিমা’ ছবিতে তাঁর বিপরীতে না থেকেও গুরুত্বপূর্ণ চরিত্রে প্রতিবাদী ছিল নূতন। মাহবুব খান তার উপর নির্যাতন করেছিল। ফিনিশিং-এ জসিমকে হত্যা করতে গেলে পেছন থেকে নূতন মাহবুব খানকে ছুরি মারে। মাহবুব খান গালি দিলে নূতন তার মুখে থু থু ছিটিয়ে গালি দেয়। অসাধারণ অভিনয় ছিল।

‘নিশীথে নির্জনে গোপনে গোপনে
করিব প্রেমের আলাপন’
কিংবা,
‘পান খাইতে চুন লাগে
ভালোবাসতে গুণ লাগে
কি করে যে তোমাকে বোঝাই
আকাশেতে চাঁদ আছে
চাঁদের সাথে তারা আছে
তুমি ছাড়া আমার কেহ নাই’
গান দুটি বহুল জনপ্রিয়। ‘বাঁশিওয়ালা’ ছবির গান। ইলিয়াস কাঞ্চনের বিপরীতে অসাধারণ রসায়ন ছিল নূতনের।

জমকালো গানের ক্ষেত্রে নূতনকে গর্জিয়াস লাগত। তার কস্টিউম সিলেকশনও তেমন হত।

নূতনের ক্যারিয়ারে গুরুত্বপূর্ণ কিছু ছবি আছে। খ্যাতিমান পরিচালক চাষী নজরুল ইসলামের ‘ওরা ১১ জন’ ছবিতে বন্দী শিবিরে নারীদের উপর পাকিস্তানি হানাদারদের নির্যাতনের শিকার হয় নূতন। খসরুর প্রেমিকার চরিত্রে থাকে নূতন। খসরুর সাথে শেষ দেখার পরেই তার মৃত্যু হয়। চাষী নজরুলের সেরা ছবি ‘সংগ্রাম’-এও নূতন ছিল। নায়করাজ রাজ্জাকের ‘সৎভাই’ ছবিতে তাঁর বিপরীতে নূতন ছিল। এ ছবিটি পরে ‘সন্তান যখন শত্রু’ নামে রিমেক করেন নায়করাজ। নায়করাজের একক নায়ক হিশাবে শেষ ছবি ‘মিস্টার মওলা’-তে নায়িকা ছিল। এ ছবিতে তার ভূমিকা ছিল মজার। নায়করাজ ‘সেক্রেটারি’ বললে তারপর তাঁর শুনত নূতন।

এর বাইরে ফ্যান্টাসি ঘরানার ‘সুপারম্যান, বনের রাজা টারজান, শক্তির লড়াই, আলিফ লায়লা’ ছবিগুলোতে নূতন ছিল ড্যানি সিডাকের বিপরীতে।

আশির দশকের বিখ্যাত চলচ্চিত্র পত্রিকা ‘চিত্রালী’-তে নূতনকে নিয়ে কভার স্টোরি হয়েছিল। নূতন খুব জেদী ছিল তাঁর ক্যারিয়ার নিয়ে। স্ট্রাগল করে হলেও নিজেকে সফল দেখতে চাইত এবং সফল হয়েছেও। তাই কভার স্টোরির শিরোনাম ছিল-‘নূতনের জেদ নূতনকে আজ কোথায় এনেছে।’

নূতন সফল অভিনেত্রী। তাঁর সময়ের প্রতিষ্ঠিত অভিনেতাদের বিপরীতেই অভিনয় করেছে। নিজের অর্জিত ক্যারিয়ার আছে। মনে রাখার মতো কাজ আছে। বাণিজ্যিক ছবির মধ্যে নাচে-গানে-গল্পে ভরপুর ছবির নায়িকা যেমন ছিল পাশাপাশি নিজেকে এক্সপেরিমেন্ট করার সুযোগ আছে এমন চরিত্রেও অভিনয় করেছে।

নূতন অধ্যায়টি সমৃদ্ধই।

—–
কিছু তথ্যের ঋণস্বীকার – অনুপম হায়াৎ


মন্তব্য করুন