![অনুদান পাওয়ার সাত বছর পর মুক্তি পাচ্ছে ‘আজব কারখানা’](https://i0.wp.com/bmdb.co/wp-content/uploads/2024/06/ajob_karkhana1_bmdb_image.jpg?resize=150%2C150&ssl=1)
পরিবেশের অভাবেই আরেকজন আলমগীরের জন্ম এখন প্রায় অসম্ভব
চিত্রনায়ক আলমগীর প্রথম ক্যামেরার সামনে দাঁড়ান ১৯৭২ সালের ২৪ জুন, আলমগীর কুমকুম পরিচালিত ‘আমার জন্মভূমি’ ছবির জন্য। বাংলাদেশের বয়সের প্রায় সমান এই কিংবদন্তিতুল্য অভিনেতার ক্যারিয়ারের বয়স। সদ্যস্বাধীন দেশ যে মেধাবী সন্তানদের সৃজনশীলতায় সমৃদ্ধ হয়েছে, তাদেরই একজন আলমগীর।
![](https://i0.wp.com/bmdb.co/wp-content/uploads/2024/04/Screenshot_20240410_233831.jpg?resize=1024%2C636&ssl=1)
একটানা চারবার জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পাওয়ার বিরল রেকর্ড আছে তার। সেই চারবারের আশেপাশের বছরগুলোতেও আরো কয়েকবার পুরস্কার পেয়েছেন তিনি। এই পুরস্কারগুলো না পেলেও তিনি ‘আলমগীর’-ই থাকতেন। কারণ, সেই সময় অভিনয়ের উত্তাপে টগবগ করে ফুটছিলেন তিনি। তার অভিনীত ছবিগুলো মোঘল সাম্রাজ্যের না হলেও, ঢাকাই সিনেমার সম্রাটে পরিণত করেছিল তাকে।
আলমগীরের উচ্চতা নিয়ে নতুন করে আলোচনার অবকাশ খুব কম। এত বিচিত্র ধরনের ছবিতে অভিনয় করেছেন, এত নীরিক্ষা করেছেন এবং সেইসব নীরিক্ষায় এত দারুণ সফলতা পেয়েছেন যে, তাকে নিয়ে লিখতে গেলে এই লেখা মানপত্রে রূপ নেয়ার সম্ভাবনাই বেশি। বরং আমি আজকের দিনে এই প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে চাই: কেন আলমগীরের মতো মহানায়ক তৈরির কারখানা বন্ধ হয়ে গেল, কেন এই মাপের তারকা আর জ্বলে উঠছে না ঢাকার আসমানে।
প্রথমেই দেখতে হবে, আলমগীরকে তৈরি করেছে কারা, কোন মিস্ত্রিদের হাতে তৈরি হয়েছেন তিনি। আলমগীর তো পয়দা থেকেই তারকা নন। ‘আমার জন্মভূমি’ তো কোনো ব্লকবাস্টার নয়। শুরুর দিকে তার ক্যারিয়ার ঢিমেতালেই চলছিল, কারণ, তখনকার মস্ত বড় সব তারকার ভিড়ে তিনি জ্বলছিলেন টিমটিম করে। সেই তারকা আলমগীরই উজ্জ্বল হয়ে উঠলেন যখন তার পাশে এসে দাঁড়ালেন আমজাদ হোসেন, দীলিপ বিশ্বাস, এ জে মিন্টুর মতো নির্মাতারা।
![](https://i0.wp.com/bmdb.co/wp-content/uploads/2022/04/alamgir1_bmdb_image-1.jpg?resize=744%2C992&ssl=1)
আলমগীর ছিলেন প্রতিভার একটা খণ্ডমাত্র। পাথরকে ছেঁনে-ছেঁনে তাকে ভাস্কর্যে পরিণত করেছেন নির্মাতারা। তারাই আলমগীরকে বৈচিত্র্যপূর্ণ সব চরিত্র দিয়েছেন; তাকে শিখিয়েছেন, যাচাই করেছেন, লালন করেছেন। সেই সময়ের তুখোর সব পরিচালক, যেমন, সুভাষ দত্ত, কামাল আহমেদ, আজিজুর রহমানদের সাহচর্যেই আলমগীর হতে পেরেছেন উঁচুমাপের অভিনেতা।
আলমগীরের জন্য গান লিখেছেন কারা? আবু হেনা মোস্তফা কামাল, মোহাম্মদ মনিরুজ্জামান, গাজী মাজহারুল আনোয়াররা গান লিখেছেন তার জন্য। তার জন্য সুর দিয়েছেন সত্য সাহা, আলম খান, আলাউদ্দিন আলীরা। তার জন্য গান গেয়েছেন সৈয়দ আব্দুল হাদী, খুরশীদ আলম, অ্যান্ড্রু কিশোররা। তার নায়িকার জন্য গান গেয়েছেন সাবিনা ইয়াসমীন, রুনা লায়লা, আবিদা সুলতানারা।
আলমগীরকে তো আলমগীর নিজে গড়েননি, এই শিল্পীদের সঙ্গই তাকে গড়েছে। তার জন্য স্ক্রিপ্ট লিখেছেন সৈয়দ শামসুল হক। আজকে কোথায় সৈয়দ হকের মতো একজন সাহিত্যিক যিনি সিনেমার জন্য গল্প লেখেন? তবে আপনি কিভাবে আশা করেন যে আরিফিন শুভ, সিয়াম আহমেদ, জিয়াউল রোশানরা হয়ে উঠবেন আলমগীর?
একজন অভিনেতা একা কিছুই করতে পারেন না। তার সফলতার জন্য সম্পাদনা চাই, সংলাপ চাই, সুর চাই; এগুলো সৃষ্টির জন্য শিল্পী চাই। আর চাই সেই শিল্পীদেরকে পৃষ্ঠপোষকতা করার জন্য প্রডাকশন হাউজ। কোথায় মেট্রো ফিল্মস, মাসুদ কথাচিত্র, গীতি চিত্রকথা; যারা একজন অভিনয়শিল্পীর পায়ের নিচে শক্ত জমি না পাওয়া পর্যন্ত তার হাতটি ধরে রাখত?
![](https://i0.wp.com/bmdb.co/wp-content/uploads/2013/05/Alamgir-B.jpg?resize=793%2C1024&ssl=1)
এখন বিচ্ছিন্নভাবে ছড়িয়ে আছে তরুণ আলমগীরের মতো অজস্র প্রতিভা- কেউ গায়ক, কেউ গীতিকার, কেউ গিটারিস্ট; কিন্তু সবাইকে একসুতায় জুড়ে নেয়ার মতো পরিবেশ নেই; নেই এজে মিন্টু-আলম খান-সৈয়দ হক-আলমগীরের অসাধারণ টিমওয়ার্ক। আর তখন এ রকম টিম একটা দুটো নয়, ছিল অনেক।
সেই সময় একটা প্রযোজনা সংস্থার ডালপালা আঁকড়ে ধরে দিব্যি বিকশিত হতে পারতেন একদল প্রতিভা। এককভাবে কোনো মহামানবের জন্ম নেয়ার সুযোগ ছিল না। আলমগীর মহানায়ক হলেও কোনো মহামানব নন। তিনি দানবিক প্রতিভার অধিকারী কেউ নন, তিনি তিল-তিল করে গড়ে উঠেছেন। যারা তাকে তৈরি করেছেন, প্রতিষ্ঠা দিয়েছেন, সফলতা দিয়েছেন, সেই সমস্ত কারিগর-শিল্পীদের অভাবে এবং সদ্যস্বাধীন দেশে মেধা বিকাশের সেই অভূতপূর্ব পরিবেশের অভাবেই আরেকজন আলমগীরের জন্ম নেয়া প্রায় অসম্ভব হয়ে দাঁড়িয়েছে।