Select Page

বাংলা সিনেমার অতীত ও বর্তমান

খুব ছোট বেলায় বাবার হাত ধরে বাজারে যেতাম। মেইন রোডের পাশে বাড়ী হওয়ার দরুন কোন হলে কোন সিনেমা চলছে তার খবর খুব তাড়াতাড়িই জানতাম। বোধহয় আমার বয়স তখন পাঁচ কি ছয়। যতদূর মনে পড়ে বাবা আমাকে নতুন জামা বানিয়ে দেবেন বলে খোকসা বাজারে নিয়ে যান। সেদিন কুষ্টিয়ার খোকসা থানার একমাত্র সিনেমা হল (তখনকার) সূবর্ণা হলে সাপুড়ে মেয়ে সিনেমাটি চলছিল। নায়ক-নায়িকা সম্পর্কে তখন ধারণা জন্মায়নি আমার। কারণ জীবনের প্রথম সিনেমা দেখা হলে বসে। কাহিনী পুরোপুরি মনে নেই। সেদিন ফেরার পর বাবা বলেছিল, তোকে প্রতি সপ্তাহে আমি সিনেমা দেখার জন্য টাকা দেব। তবে শর্ত হলো পড়ালেখায় মনোযোগি হতে হবে।

তখন আমি ক্লাস ওয়ানে পড়তাম। নানা কারণে নিজ এলাকা ছেড়ে নানাবাড়ি এলাকাতে গেলাম। কিন্তু সিনেমা দেখার নেশা গেলনা।তখন প্রতি মাস অন্তর অন্তর বিটিভিতে বাংলা সিনেমা দেখাতো। বাবার কাছ থেকে ১ টাকা নিয়ে চলে যেতাম ক্লাবে সিনেমা দেখতে। বাবা কখনও না করেনি। পরবর্তীতে আবার নিজ এলাকায় চলে এলাম। মাঝখানে ঝিনাইদহের ছবিঘর, চান্দা, প্রিয়া, কুষ্টিয়ার বনানী, রক্সি সিনেমা হলে ঘুরে ঘুরে সিনেমা দেখলাম মামাতো ভাইয়ের সাথে করে। তখনকার জনপ্রিয় নায়ক-নায়িকাদের সিনেমা দেখতাম। বিশেষ করে জসিম, ইলিয়াস কাঞ্চন, মান্না, রুবেল, শাবানা, দিতি, চম্পা, কবিতা প্রমূখদের। ভাল লাগতো আনোয়ার হোসেন, এটিএম শামসুজ্জামান, ওয়াশিমুল বারী রাজীব, খলিল, মিজু আহমেদ, শওকত আকবর, প্রবীর মিত্র, দারাশিকো, কৌতুক সম্রাট দিলদার, আবুল খায়ের প্রমূখদের। সালমান শাহ ছিলেন আমার ফেবারিট নায়ক। তিনি মারা যাবার আগ পর্যন্ত তার কোন ছবি বাদ পড়েনি। কেয়ামত থেকে কেয়ামত, মহামিলন, বিচার হবে, আনন্দ অশ্রু, স্বপ্নের ঠিকানা, তোমাকে চাই, মায়ের অধিকার, এই ঘর এই সংসার, বুকের ভিতর আগুন, স্বপ্নের নায়ক, স্বপ্নের পৃথিবী আরো আরোও অনেক।

তখন কুষ্টিয়ার খোকসা থানায় তিনটা সিনেমাহল – সূবর্ণা, অর্পনা, সাধনা  আর কুমারখালি থানায় একটি জলি । প্রতি সপ্তাহে কমসে কম তিনটি সিনেমা দেখা হতোই। কোন সপ্তাহে মিস হতোনা সিনেমা দেখা। বন্ধুরা মিলে হৈ হুল্লোর করে সিনেমা দেখতে যেতাম। সালমান শাহ পরবর্তীকালীন নায়ক ওমর সানীরিয়াজ, শাকিল খান, ফেরদৌস, আমিন খান, অমিত হাসান এমন আরো অনেক নায়কদের ছবি উপভোগ করেছি বন্ধুরা মিলে। যাঁদের সাথে শাবনূর, মৌসুমী, শাবনাজ, পপি, পূর্ণিমা আরো অনেকে। মান্না মারা গেলেন। প্রচুর আকাল বাংলা সিনেমার। হাল ধরলেন শক্ত হাতে শাকিব খান। কিন্তু একই কাহিনী ঘুরিয়ে ফিরিয়ে বস্তাপচা আর এক ঘেয়েমিতে অ’স্থির হয়ে সিনেমাকে নমস্কার জানালাম।

অনেকদিন বাদে সিনেমা হলে গিয়েছিলাম গিয়াস উদ্দীন সেলিম পরিচালিত “মনপুরা” সিনেমাটি দেখতে। পর পর সাতদিন দেখেছিলাম। কি যেন এক ভাল লাগা ছিল সিনেমাটির মধ্যে। গল্পটিতে কিযে ছিল না তা খুঁজতেই বুঝি বারবার দেখেছিলাম। ব্যর্থ হয়েছিলাম কোন ত্রুটি খুঁজে বের করতে। অতঃপর আর যাওয়া হয়নি সিনেমা হলে বসে সিনেমা দেখতে। মাঝে মাঝে টেলিভিশন চ্যানেলে কোন আগেকার সিনেমা দিলে দেখি আর বর্তমানের সিনেমার কুষ্টি কাড়ি।

তবে এখন বোধহয় ভাল সিনেমা তৈরী হচ্ছে আবার। কিছু কিছু পোষ্টারের বাহারী দেখে তাইই মনে হয়। তবে যাওয়া হয়না সিনেমা হলগুলোর অবস্থা দেখে। তাই প্রযোজক আর পরিচালক ভাইদের কাছে বিনীত আহবান থাকবে। শুধুমাত্র ভাল চলচ্চিত্র তৈরী করে হাত গুটিয়ে বসে থাকলেই চলবেনা। অন্তত কর্তব্য হিসেবে দর্শকদের হলমুখী করতে হলের অবস্থা পরিবর্তনের জন্য হল মালিকদের সাথে যোগাযোগ করুন। আশা নয় বিশ্বাস বাংলাদেশী দর্শক এখনও সিনেমা হলে বসে সিনেমা দেখার জন্য উন্মুখ হয়ে বসে আছে। শুধু মাত্র শহর কেন্দ্রীক হবেন না প্লিজ। কারণ শতকরা ৮৫% লোক গ্রামে বাস করে। অতএব বাংলা চলচ্চিত্রের চালচিত্র পরিবর্তন করার এখনই সময়। নতুবা লগ্নি দিতে দিতে আপনাদেরই কিন্তু সর্বস্বান্ত হতে হবে।(অবশ্য এটা কামনা করিনা কখনই) ফিরিয়ে দিন বাংলা চলচ্চিত্রের অতীত রূপ। যেন বিদেশী চ্যানেল থেকে মুখি ফিরিয়ে নিয়ে আমাদের দেশীয় চ্যানেল মুখী হয় সবাই। এখানে যেমন সরকারের দায়িত্ব রয়েছে আমাদের সংস্কৃতিকে টিকিয়ে রাখার, যেমনি দায়িত্ব চলচ্চিত্র ব্যবসার সাথে যাঁরা জড়িত, তেমনি দায়িত্ব রয়েছে দেশীয় টিভি চ্যানেল গুলোর কর্তা ব্যক্তিদের ও আমরা সাধারণ দর্শকদের। আশাকরি সবাই বিষয়টি ভাববেন। হয়তোবা আরও বললে বলা যেত। হয়তো যেভাবে বলতে চেয়েছিলাম সেভাবে বলা হলোনা। অবশেষে সবার প্রতি একটিই আহবান, দেশকে ভালবাসুন, দেশীয় সব জিনিস ব্যবহার করুন। দেশ বাঁচান, নিজে বাঁচুন। আর সগর্বে বলুন আমার সোনার বাংলা আমি তোমায় ভালোবাসি।


২ টি মন্তব্য

  1. Tselim Rezaa

    আমি অবাক হই কুষ্টিয়া বাংলাদেশের সাংস্কৃতিক রাজধানী অথচ জেলা শহরে মাত্র একটা সিনেমা হল তাও যাচ্ছে তাই অবস্থা . অন্যান্য জায়গার চিত্র একই .। সিনেমা হল নেই, সিনেমার প্রচার নেই সিনেমা এগুবে কিভাবে?

মন্তব্য করুন