Select Page

বাংলা সিনেমার কমেডিতে চিরস্থায়ী আসন দিলদারের

বাংলা সিনেমার কমেডিতে চিরস্থায়ী আসন দিলদারের

দিলদার। বাংলাদেশের বাণিজ্যিক চলচ্চিত্রের দর্শকদের প্রিয়মুখ ও চিরস্মরণীয় কমেডি চরিত্রের একজন গুণী অভিনেতা।

তার পুরো নাম দিলদার হোসেন, জন্ম ১৯৪৫ সালের ১৩ জানুয়ারি চাঁদপুরে। ১৯৭৫ সালে অমল বোসের ‘কেন এমন হয়’ ছবিটির মাধ্যমে বড়পর্দায় অভিনয়ের সঙ্গে যুক্ত হোন তিনি। এরপর একের পর এক চলচ্চিত্রে অভিনয় করে গেছেন দিলদার আর নিজেকে নিয়ে গেছেন অন্য এক উচ্চতায়।

১৯৮০ ও ৯০ দশকের এমন ছবি খুব কমই আছে যেখানে দিলদার নেই। আজ এ লেখায় দিলদারের কয়েকটি ছবির কথা বলে উদাহরণ দিই; তিনি কত সহজ-সরল ও সাধারণভাবে দর্শকদের হাসাতেন।

দিলদারকে কত চলচ্চিত্রে কত রূপে দেখেছি তার কোন হিসাব নেই। মালেক আফসারীর জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারপ্রাপ্ত ‘ক্ষতিপূরণ’ ছবির দরিদ্র কামার চরিত্রটির কথা আমার আজও মনে পড়ে। সেই ছবিতে খুনি ড্যানি সিডাকের পাল্লায় পড়ে আলমগীরের বাসায় বোবা শিশুটিকে আনতে গিয়ে ধরা পড়ে দিলদার। সেই ছবিতে দিলদারের স্ত্রী চরিত্রে অভিনেত্রীটির একটি সংলাপ ‘ওগো তোমাকে তো বলাই হয়নি আমি এককালে যাত্রাদলে নায়িকার চরিত্রে অভিনয় করতাম’, জবাবে দিলদার বলেছিল, ‘ও এই কথা, আগে জানলে তোরে আমি তালাক দিতাম’… এমনভাবে কত সংলাপ বলে দিলদার হাসিয়েছেন তা হিসাব করে বলা কঠিন।

কাজী হায়াতের ‘দাঙ্গা’ সিনেমায় ঘুষখোর এক কনস্টেবল যে পরবর্তীতে ওসি মান্নার পরামর্শ মেনে সৎ হয়ে যান, ‘ত্রাস’ সিনেমায় কলেজের বড় ভাই ও মান্নার পরামর্শক হিসেবে সব সময় মান্নার সঙ্গে সঙ্গে চলতেন, ‘লুটতরাজ’ সিনেমায় পুলিশ সুপার মান্নাকে ঘুষের মিথ্যা অপবাদ দিয়ে মান্নাকে চাকরিচ্যুত করতে সহযোগিতা করেন, পরবর্তীতে নিজেকে বদল করে মান্নার পাশেই একজন বিশ্বস্ত সহযোগী হিসেবে ছিলেন। এ রকম বৈচিত্র্যপূর্ণ চরিত্রেও কৌতুক অভিনেতা হিসেবে অভিনয় করেছেন অসংখ্য সিনেমায়।

তোজাম্মেল হক বকুল তো সালমান–সানীর যুগে দিলদারকে কেন্দ্রীয় চরিত্রে রেখে ‘আব্দুল্লাহ’ নির্মাণ করে দারুণ সফল হয়েছিলেন, যা আজ ভাবলে অবিশ্বাস্য লাগে। এ সিনেমার নাম ভূমিকায় তিনি, কমেডি চরিত্রেও তিনি। নূতনের বিপরীতে দারুণ অভিনয় করেছিলেন।

‘আব্দুল্লাহ’ সিনেমায় ‘আমি নই ফেরেশতা/ নই দেবতা/ মানুষ ভোলাভালা/আব্দুল্লাহ… আমি আপনার আব্দুল্লাহ’ গানটি দর্শকদের খুব মনে ধরেছিল। পুরো ছবিতে দিলদার দিলদারের চিরচেনা রূপে ছিলেন।

দিলদার অভিনীত অন্য উল্লেখযোগ্য চলচ্চিত্রগুলো হলো কেন এমন হয়, মিন্টু আমার নাম, চ্যালেঞ্জ, অংশীদার, লালু মাস্তান, দোলনা, যন্ত্রণা, বেদের মেয়ে জোছনা, অচেনা, গরীবের বন্ধু, ত্রাস, আত্মঅহংকার, মীরজাফর, মিথ্যার রাজা, ঘাত প্রতিঘাত, আসামী বধূ, স্বপ্নের পৃথিবী, শান্ত কেন মাস্তান, লুটতরাজ ও আনন্দ অশ্রু। ২০০৩ সালের ১৩ জুলাই এই অভিনেতা মারা যান।

দিলদার হয়তো সুশীল সিনেমা দর্শকদের কাছে কিছু নয়। কিন্তু বাংলাদেশের মূলধারার বাণিজ্যিক চলচ্চিত্রের দর্শকদের কাছে যুগ যুগ ধরে বেঁচে থাকবেন।

নিচে দিলদার ও টেলিসামাদ অভিনীত একটি মজার গান দেখুন যা দেখলে বুঝতে পারবেন দিলদার কেমন ছিলেন? টেলিসামাদ ও দিলদার দুজনেই বাংলা চলচ্চিত্রে কমেডিতে নিজেদের আলাদা একটা স্টাইল চালু করেছিলেন।

গরীবের বন্ধু’ সিনেমার ‘ওরে আমার বড় ভাইয়া দিবা নাকি বিয়া’

https://www. youtube. com/watch? v=kEiWXPkQo5 Y


লেখক সম্পর্কে বিস্তারিত

কবি ও কাব্য

আমি ফজলে এলাহী পাপ্পু, কবি ও কাব্য নামে লিখি। স্বর্ণযুগের বাংলাদেশী চলচ্চিত্র এবং বাংলা গানকে এ যুগের সকলের কাছে পৌছে দেয়ার আগ্রহে লিখি।

মন্তব্য করুন