Select Page

সিনেমার গল্প : তারকাবহুল ‘শ্রদ্ধা’

সিনেমার গল্প : তারকাবহুল ‘শ্রদ্ধা’

‘মাল্টিস্টার’ বা ‘ তারকাবহুল’ চলচ্চিত্রের সাথে আজকের বর্তমান সিনেমা দর্শকদের ততোটা পরিচিত নয় অথচ একদিন এই দেশের চলচ্চিত্র ইন্ডাস্ট্রিতে ‘মাল্টিস্টার’ ধারার চলচ্চিত্র হতো প্রায় নিয়মিত।

স্বাধীন বাংলাদেশের চলচ্চিত্র ইন্ডাস্ট্রিতে কয়েকজন তুখোড় পরিচালক ছিলেন যাদের চলচ্চিত্রগুলো থাকত মাল্টিস্টার ধারার। সেইসব পরিচালকদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য ছিলেন জহিরুল হক, নারায়ণ ঘোষ মিতা, দিলিপ বিশ্বাস, এ জে মিন্টু, দেওয়ান নজরুল, শিবলি সাদিক, গাজী মাজহারুল আনোয়ার সহ প্রমুখ।

মাল্টিস্টার ধারার চলচ্চিত্রের মজা হলো একই চলচ্চিত্রে নবীন প্রবীণ মিলিয়ে সময়ের সেরা ও জনপ্রিয় তারকাদের একত্রে অভিনয় উপভোগ করা। এতে যেমন শিল্পীদের মধ্যে একটি আন্তরিকতা গড়ে উঠে ঠিক তেমনি সিনিয়র তারকাদের কাছ থেকে জুনিয়র তারকারাও অভিনয় রপ্ত করতে পারে। এতে করে সবার মাঝে নিজের ভালোটা দেয়ার চেস্টা থাকে যার ফলে চলচ্চিত্রটি হয় দারুন উপভোগ্য।

১৯৯১ সালের পবিত্র ঈদুল ফিতরের চলচ্চিত্রের মাঝে আমাদের কাছে অন্যতম আকর্ষণ ছিল ’শ্রদ্ধা’ নামের চলচ্চিত্রটি যার পত্রিকার বিজ্ঞাপনের কাটিং দেখতে পাচ্ছেন। হুবুহু একই রকম একটি পোস্টার ছিলো ‘শ্রদ্ধা’ চলচ্চিত্রের।রেডিওতে কণ্ঠরাজ নাজমুল হোসেন ভাইয়ের কণ্ঠে ১০ মিনিটের বিজ্ঞাপন শুনে শ্রদ্ধা চলচ্চিত্রটি দেখার অধির আগ্রহে অপেক্ষা করেছিলাম ।

ঈদের দিন থেকেই সিলেটের নন্দিতা সিনেমা হলে প্রদর্শিত হতে থাকলো গাজী মাজহারুল আনোয়ারের ‘শ্রদ্ধা’ চলচ্চিত্রটি যেখানে অভিনয় করেছেন রাজ্জাক শাবানা থেকে শুরু করে রুবেল ,জাফর ইকবাল,চম্পা, ফরীদির মতো তারকারা। শ্রদ্ধা মুক্তি পাওয়ার কিছুদিন আগেই আমরা চিরসবুজ নায়ক জাফর ইকবালকে হারিয়েছিলাম। ঈদের ৪র্থ দিন সব বয়সি দর্শকদের উপচে পরা ভিড়ের মাঝে উপভোগ করি ‘শ্রদ্ধা’। গাজী মাজহারুল আনোয়ারের প্রযোজনা সংস্থা ‘দেশ চিত্রকথা’ ব্যানারে ছবিটি প্রযোজনা করেছিলেন গাজীর স্ত্রী জোহরা গাজী আর পরিচালনা করেছিলেন তারপরেও দর্শকদের কাছে গাজীর সিনেমা নামেই পরিচিত ছিল ‘শ্রদ্ধা’ ।

শ্রদ্ধার গল্পে দেখা যায় গানপ্রিয় এক তরুণী শাবানা গান শেখার জন্য রাজ্জাককে গানের শিক্ষক হিসেবে রাখে। এরপর ঘটনাচক্রে বেকার রাজ্জাকের সাথে বিয়ে। রাজ্জাকের সংসারের হাল ধরার জন্য শাবানা চাকরীর ইন্টারভিউ দিতে যায় ফরিদির প্রতিষ্ঠানে। শাবানার প্রতি ফরীদির লোলুপ দৃষ্টি পরে শাবানা যা বুঝলেও কৌশলে এড়িয়ে যায়।

ফরীদির ব্যক্তিগত সহকারী হিসেবে শাবানার চাকরী হয়। এই দিকে একই প্রতিষ্ঠানে রাজ্জাকেরও চাকরী হয়। রাজ্জাক শাবানাকে ফরীদির সাথে চলতে ফিরতে দেখে ভুল বুঝে। শাবানাকে রাজ্জাককে সব খুলে বলে। একদিন শাবানা অন্তঃসত্ত্বা জানলে ফরীদি ও তার সহযোগীরা ( নাসির খান, জাম্বু ও আশিস কুমার লৌহ) মিলে শাবানার গর্ভের সন্তান নষ্ট করতে গেলে রাজ্জাক এসে বাঁধা দেয় এবং ফরীদির সামনে সব সত্য প্রকাশ পায়। ফরিদি জেনে যায় রাজ্জাক ও শাবানা স্বামী স্ত্রী। এরপরে শাবানাকে পাওয়ার জন্য একে একে ফরীদি নানা কুটচাল চালতে থাকে এবং এতে ব্যর্থ হলে রাজ্জাককে একটি মিথ্যা খুনের মামলায় ফাঁসিয়ে দেয়। রাজ্জাকের যাবজ্জীবন জেল হয়। শুরু হয় দুই শিশু সন্তানকে নিয়ে শাবানার নতুন এক সংগ্রাম তবুও ফরীদি ও তার গ্যাংরা শাবানার পিছু লেগেই থাকে।

একদিন শাবানার এক সন্তানকে (রুবেল) স্কুল থেকে ভুলিয়ে ভালিয়ে শাবানার কারখানার শ্রমিকের কাজ করার দৃশ্য দেখিয়ে আবেগতাড়িত চাপ দিয়ে নিজের দলে ফেরায়। রুবেল পড়াশোনা ছেড়ে দিয়ে ফরিদির দলে যোগ দেয় …জাফর ইকবাল আইন পেশায় জড়িত হয়। একটি মামলায় শাবানাকে বাঁচানোর জন্য মিথ্যা সাক্ষি যোগাড় করার অপরাধে জাফর ইকবালের জেল হয়। শাবানা ধীরে ধীরে নিজেকে একজন জনপ্রতিনিধি হিসেবে দাঁড় করায় এবং নির্বাচনে জয়লাভ করে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর দায়িত্ব পায়।

…..এভাবে নানা ঘটনা পরিক্রমা ও টানটান উত্তেজনা দিয়ে সিনেমাটি এগিয়ে চলে এবং শেষ পর্যন্ত হ্যাপি এন্ডিংয়ের মধ্যে দিয়ে শেষ হয়। হলভর্তি দর্শক একটি দারুন বিনোদনধর্মী সিনেমা দেখে তৃপ্তি নিয়ে বাড়ি ফিরে। এই সিনেমার ফরিদিকে একটু অন্যলুকে দেখা যায়। ফরীদির ‘’মাম্ম…মা’’ ডায়লগটি বেশ জনপ্রিয়তা পায়। ফরীদির আচার আচরণে বা সংলাপ বলার ধরন ছিল হিজড়াদের মতো । শাবানা তাঁর মতোই অনবদ্য ছিল অন্যদিকে রুবেল ও জাফর ইকবাল সমানে সমান অভিনয় করেছে। সত্য সাহার সুরে ‘’ দুখে তো সবাই কাঁদে/ হাসতে কজনে জানে’’ গানটি ছিল সিনেমার থিম সং।

আজকে চলচ্চিত্রে নাকি অনেক তারকা আছে কিন্তু নেই তারকাবহুল চলচ্চিত্র। আজকের দর্শকরা জানে না তারকাবহুল চলচ্চিত্র কি? তারকাবহুল চলচ্চিত্র বানানোর মতো মেধা ও যোগ্যতা কি আজকের পরিচালকদের কি আছে?

: শ্রদ্ধা চলচ্চিত্রের পেপারের কাটিংটি সংগ্রহ করে দেয়ার জন্য হাসান আবিরভাইকে অনেক অনেক ধন্যবাদ।


মন্তব্য করুন