Select Page

হল রিভিউ – অভিরুচি সিনেমা

প্রতি দুমাসে একবার দু’তিনদিনের জন্য বরিশালে আসা হয়। এই দুই তিন দিন আমি সম্পূর্নই স্বেচ্ছা-গৃহবন্দী থাকি। এবারের ইস্যুটা একটু ব্যতিক্রম। এমন সময়ে বরিশালে এসেছি যখন ‘দেহরক্ষী‘ মুক্তি পেতে যাচ্ছে। ঢাকায় থাকলে বলাকায় প্রথম শো’তে সিনেমা দেখা সোজা। দু’চারজন আছেন যারা প্রথম শো-তে নিয়মিত সিনেমা দেখে। তারাই ডেকে নেয়। এ সপ্তাহেও ফোন দিচ্ছে শিমুল, অথচ আমি বরিশালে এবং দেহরক্ষী আমাকে দেখতেই হবে। বৃহস্পতিবারই পোস্টার দেখে জেনেছি ‘অভিরুচি’তে চলবে ‘দেহরক্ষী’, অটো চালককে জিজ্ঞেস করে জেনে নিয়েছি ‘অভিরুচি’র অবস্থান।

প্রথম শো কটায় জানি না, বলাকার হিসেবে সোয়া থেকে সাড়ে দশটার মধ্যে প্রথম শো শুরু হবে ধারনা করে দশটায় চলে গেলাম অভিরুচিতে। খা খা অবস্থা। গেট বন্ধ। দেহরক্ষীর দুই শিটের বিশাল পোস্টার লাগানো অথচ মানুষ নেই একজনও। সম্ভবত গাড়ির জন্য অপেক্ষা করছিল একজন – জিজ্ঞাসা করতে জানালো – প্রথম শো সাড়ে বারোটায়। অদ্ভুত সময়। জুম্মার নামাজের বন্ধ দেবে না? ফিরে এলাম বাসায়।

বিকেল তিনটেয় আবার গেলাম। অভিরুচির বিল্ডিংটা চারতলা। নিচতলায় মার্কেট। সিড়ি বেয়ে দোতলায় উঠলে টিকেট বিক্রেতারা দাড়িয়ে – হাতে টিকেট। দোতলায় রিয়ারস্টল, চারতলায় ড্রেস সার্কেল। অভিরুচির ভাষায় সুলভ ও সৌখিন। দোতলায় ডানদিকে মেয়েদের ঢোকার আলাদা সিড়ি, কিন্তু সেখানে হলের পুরুষরাও ব্যবহার করে। কাঠের বেড়া দেয়া একটি দোকানও আছে – জীর্ণ শীর্ন অবস্থা, দোকানদারও নেই।

রিয়ারস্টলের টিকেট চল্লিশ টাকা, ডিসি পঞ্চাশ। দশটাকা বাঁচানোর জন্য নিচে বসে দেখার লোক মোটেও কম না। ডিসির টিকেট নিয়ে চারতলায় চলে এলাম।

সম্ভবত বরিশালের অভিজাত হল অভিরুচি। আভিজাত্যের যে রূপ তাতে আমারও কষ্ট হচ্ছে। মাথার উপরে ফ্যান অপর্যাপ্ত। টিকেট চেকার যদিও টিকেট দেখে ফ্যানের নিচে আসন দেখিয়ে দিচ্ছে – সেটা কেউ না মানলে সমস্যা করছে না। কাপলদেরকে বসাচ্ছে সবথেকে উপরের সারিতে, কোনার দিকে। বোরকা পড়া প্রস্টিটিউটদের নিয়েও কেউ কেউ এসেছেন।

আমার আশে পাশে যারা বসেছেন তারা প্রায় সবাই তরুণ ছেরে। বয়স ষোলো থেকে পঁচিশের মধ্যে। মাঝের সারিতে উপরের দিকে বসা বোরকা পড়া এক তরুণী এবং মধ্যবয়স্ক এক লোকের দিকে তারা প্রায় সবাই তাকিয়ে দেখছে – কি কারণ কে জানে। গরম থেকে বাঁচার জন্য উর্দ্ধাঙ্গের কাপড় খুলে বসল কয়েকজন, সামনের সিটে পা তুলে আয়েশ করে বসল আরও কয়েকজন।

দেহরক্ষীর পোস্টার সাটানো হয়েছে পাঁচ পদের – সবগুলোতেই নায়িকা ববির দেহ নানা ভঙ্গিতে উপস্তাপন করা হয়েছে – অথচ হলে সব মিলিয়ে দর্শকের সংখ্যা দেড়শর বেশী হবে না। একই সময়ে জোনাকিতে ‘ভালোবাসার রং’ দেখতে গিয়েছিলাম – হালুয়া টাইট অবস্থা। পরের দিন শনিবারে সাড়ে বারোটার শো-র সময়েও একই চিত্র দেখেছি।

পতাকা প্রদর্শন শুরু হলে দাড়ালাম। আশে পাশের দেড়শ লোকের একজনও দাড়ালো না। বরং ঘাড় ঘুরিয়ে এই চিজকে দেখল। সম্পূর্ন বিপরীত চিত্র দেখেছিলাম বলাকায় ‘এইতো ভালোবাসা’ সিনেমার শো-তে। পুরো হল দাড়িয়ে এক কোনায় বসে থাকা এক কাপল ‘চিজ’কে দেখছিল। এত মানুষের দৃষ্টিকে উপেক্ষা করতে না পেরে ছেলেটি শেষ মুহুর্তে দাড়িয়েছিল বটে, মেয়টি নয়।

বিরতির সময় নিচতলার কলাপশেকল গেট বন্ধ থাকে। বন্ধ দরজার ওপারে দোকানের কর্মচারী হাত বাড়িয়ে ড্রিংকস, স্ল্যাকস বিক্রি করে এপারে থাকা দর্শকের কাছে। টয়লেটের অবস্থা করুণ। একটা বেসিন। বিরতি শেষে ঢুকতে একটু দেরী করে ফেলেছিলাম – সিট দখল হয়ে গেল এর মাঝে। আমি একদম উপরের সারিতে গিয়ে বসলাম বটে, তবে ফ্যানের নিচে জায়গা পেলাম না – সিদ্ধ হতে হল বাকীসময়টা।

অভিরুচিতে ডিজিটাল প্রজেকশন হয়, তবে সেটা সম্ভবত জাজ মাল্টিমিডিয়ার করা না, রেইন ফিল্মসের কিনা সেটাও বুঝতে পারি নি, প্রজেকশন খারাপ লাগল না। সাউন্ড আর দশটা সিনেমা হলের মতই।

ইন্ডাস্ট্রি পাল্টাতে হলে সিনেমা হলের অবস্থাও পাল্টাতে হবে। অভিরুচির মালিক সেটা বুঝতে সক্ষম হবে – আপাতত এই শুভকামনা করি, পরে প্রয়োজনে তার সাথে যোগাযোগ করে কিছু করার চেষ্টা করা যেতে পারে।


২ টি মন্তব্য

  1. papillon

    অভিরুচি নিয়ে চমতকার রিভিউ অনেকটা স্মৃতিকাতর করল। আমার শৈশব থেকে দেখেছি অভিরুচি বরিশালে 4টি হলের মধ্যে সবচে’ পঁচা হল। এক সময় এই হলে শুধু ইংরেজি ছবি চলত যার বেশিরভাগ হংকংয়ের সস্তা ক্যাটাগরির। এই হলের দর্শকও ছিল উঠতি যুবক থেকে মাঝবয়সী একটু আধটু অশ্লীল দৃশ্যের সমঝদার। ইংরেজি ছাড়া এই হলে পুরনো বাংলা (2য় বার প্রদর্শনের জন্য) ছবি চলত আর নতুন ছবির মধ্যে বিশেষ করে ইবনে মিজানের সাপের ছবি, ওয়াসিম অন্জু, বা জাভেদ রোজিনার ফোক ধাচের ছবি। তখন অভিরুচি হল 2 তলা এবং এর সামনে অনেকখানি খোলা জায়গা ছিল পার্কিং এর জন্য। সম্ভবত 90 এর পরেই অভিরুচি বদলে যায়। পুরনো বিল্ডিং ভেঙে আধুনিক হলটি গড়ে তোলা হয়। অভিরুচীর নীচের রেস্টুরেন্টটাই ছিল তখন বরিশালের সবচে পশ রেস্তোরা। এছাড়া দোতলায় ভাল একটি স্ন্যাকসের দোকান ছিল। অভিরুচীর তখনকার সাজসজ্জা ঢাকার মধুমিতা বা বলাকার সমতুল্য ছিল। বাংলা সিনেমার পড়তি অবস্থায় অভিরুচীরে অবস্থাও পড়ে গেল। আপনার লেখায় অভিরুচির ভগ্নদশা জেনে আসলেই খারাপ লাগছে।বাংলা সিনেমার অবস্থার উন্নতি না হলে হলের পেছনে কেউ বিনিয়োগ করতে আসবেনা। সেসময় অভিরুচির মালিক ছিল বিএনপি নেতা ওবায়দুল হক চানের পরিবার। মালিকানা বদল হয়েছে কিনা বলতে পারবনা।

  2. সাব্বির

    কাজের প্রয়োজনে দেশের অনেক জেলায় যেতে হয়। হাতে একদিন বা দুই দিন সময় একট্রা রাখি ঐ এলাকাটা ঘুরে দেখার জন্য। কয়েক সাপ্তাহ আগে গিয়েছিলাম যশোর। সেখানকার সব চেয়ে পুরানো হল মনিহার। ঢাকার বাহিরের অনান্য হলের তুলনায় মোটামুটি ভাল। কিন্তু ইচ্ছে করলেই আরো ভালো করা যায়। একটু পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন, ভালো ভাবে আসন বিন্যস এগুলোর প্রতি যদি কর্তৃপক্ষ একটু নজর দিতেন খুবই ভাল হল। এছাড়া নোয়াখালী, ফেনী, কুমিল্লা এসব অঞ্ছলের হল গুলোর অবস্থা আরো করুন। দেখার কেউ নেই।

মন্তব্য করুন