![অনুদান পাওয়ার সাত বছর পর মুক্তি পাচ্ছে ‘আজব কারখানা’](https://i0.wp.com/bmdb.co/wp-content/uploads/2024/06/ajob_karkhana1_bmdb_image.jpg?resize=150%2C150&ssl=1)
‘হালদা’র ব্যর্থতা
হালদা নদীবর্তী মানুষের জীবনচিত্র নিয়ে নির্মিত তৌকীর আহমেদের সিনেমা ‘হালদা’। প্রথমে মনে করতে পারছিলাম না, তৌকীর এর আগে আর কোনো সিনেমা পরিচালনা করেছিলেন কি-না। পরক্ষণেই মনে পড়লো ‘অজ্ঞাতনামা’ও তার নির্মাণ। এটা মনে হওয়ায় যে কথাটি মাথায় এলো সেটা হচ্ছে, যে মানুষটি ‘অজ্ঞাতনামা’র মতো দুর্দান্ত একটা সিনেমা বানাতে পারলেন, তিনি কীভাবে ‘হালদা’র মতো এরকম আবজর্না বানালেন!
![](https://i0.wp.com/bmdb.co/wp-content/uploads/2017/12/halda-2.jpg?resize=861%2C484&ssl=1)
আমার জন্ম চট্টগ্রামে। বেড়ে ওঠা এই শহরেই। চট্টগ্রামের যে ক’টি নদী আছে তন্মধ্যে আমার সবচেয়ে পছন্দের নদী ‘হালদা’। আমি পাহাড়-প্রকৃতি ও নদীপ্রেমী একজন মানুষ। তাই হালদা তীরবর্তী জায়গাগুলোয় যাওয়া হয়েছে বহুবার। এ জন্য হালদা ও তীরবর্তী মানুষের জীবনচিত্র আমার পরিচিত। হালদার প্রবহমান ফটিকছড়ি, হাটহাজারী, রাঙ্গুনিয়া, রাউজান এলাকা আমার নিকটাত্মীয়দের আবাসভূমি। তাই ছোটবেলা থেকেই এখানকার মানুষের জীবন-জীবিকা, আচরণ-অভ্যাস, উৎসব-সংস্কৃতি আমার চেনা। সে অভিজ্ঞতা থেকে বলতে পারি ‘হালদা’ সিনেমায় হালদা পাড়ের মানুষের জীবন বিশেষত চট্টগ্রাম মানুষের কৃষ্টি-সংস্কৃতি তুলে ধরার যে চেষ্টা তৌকীর আহমেদ করেছেন, সেখানে তিনি শতভাগ ব্যর্থ।
সবচেয়ে জগাখিঁচুড়ি বানিয়ে ফেলেছেন চট্টগ্রামের মানুষের মুখের ভাষা। মোশাররফ করিম, নুসরাত ইমরোজ তিশা, ফজলুর রহমান বাবু, জাহিদ হাসান, দিলারা জামান, রুনা খানসহ প্রতিটি চরিত্রের মুখে চট্টগ্রামের ভাষার নামে যে বিদঘুটে আর উদ্ভট একটা ভাষা দিয়েছে, সেটার জন্য বাংলা ভাষার নতুন এক আঞ্চলিক ধারার প্রবর্তকের কৃতিত্ব তৌকীর আহমেদকে দেয়া যায়। চট্টগ্রামের ভাষা সম্পর্কে যাদের ধারণা আছে ‘হালদা’র চরিত্রগুলোর মুখে চিটাইঙ্গা ভাষা শুনে হাসতে হাসতে তাদের দাঁতকপাটি লেগে যেতে পারে।
![](https://i0.wp.com/bmdb.co/wp-content/uploads/2017/10/halda3.jpg?resize=960%2C960&ssl=1)
কাহিনি অসামঞ্জস্যপূর্ণ, চিত্রনাট্য অগোছালো, সংলাপে অসংগতি। একটা উদাহরণ দেই, সিনেমার বড় একটা অংশে তিশাকে গর্ভবতী দেখানো হয়েছে। গর্ভবস্থার একেবারে শেষের দিকে বাচ্চার নড়াচড়া অনুভব করে একজন হবু মা। তিশা যখন পেটের ভেতর বাচ্চার নড়াচড়া টের পাচ্ছিল মানে আট-নয় মাসের গর্ভবতী অবস্থায় তিশাকে দেখানো হয়েছে একেবারে স্বাভাবিক মানুষের মতো। মানে গর্ভবতী নারীর পেট যে বড় হয় তৌকীর আহমেদ বোধহয় সেটা জানে না। এবং শুটিং চলাকালে এটা কেউ তাকে মনে করিয়েও দেয়নি।
‘হালদা’য় জাহিদ হাসানকে দেয়া হয়েছে নেতিবাচক চরিত্রে। দর্শকের মন সাধারণত সবসময় নায়ক-নায়িকার সমর্থনে থাকে। কিন্তু মানুষের যে সহজাত উচিত-অনুচিত বোধ, সে জায়গা থেকে আমি হলফ করে বলতে পারি, এ সিনেমার দর্শকদের সমর্থন জাহিদ হাসানের দিকেই যাবে। অর্থাৎ কাহিনি এমনভাবে এগিয়েছে দর্শকের মনে হবে মোশাররফ করিম আর তিশার মিলন হওয়া ন্যায্য নয়, বরং জাহিদ হাসান যা করেছে সেটাই উচিত। এমনটা হয়েছে পরিচালকের অদক্ষতার কারণে। নায়ক-নায়িকাকে মহৎপ্রাণ বানাতে এবং খলনায়ককে খল বা কপট বানাতে পরিচালক পরিপূর্ণভাবে ব্যর্থ হয়েছে।
মজার ব্যাপার হচ্ছে, ‘হালদা’ জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পুরস্কার জিতেছে। পরিচালনা ও চিত্রনাট্যের জন্য তৌকীর আহমেদ দুই বিভাগে পুরস্কার জিতেছেন। অভিনয়ের জন্য তিশা, রুনা খান, জাহিদ হাসান জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার, সার্ক চলচ্চিত্র উৎসব, আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসব পুরস্কারসহ বহু পুরস্কারে ভূষিত হয়েছে। এদিকে আমাকে রেটিং দিতে বললে আমি হালদাকে দশে দুই দিবো। সেটাও বর্ষায় কিছু ন্যাচারাল বৃষ্টির দৃশ্য দেখানোর জন্য।