Select Page

২০২২ সালের সেরা দশ চলচ্চিত্র

২০২২ সালের সেরা দশ চলচ্চিত্র

দেখতে দেখতে আরো একটি বছর শেষ হয়ে এল। দেশের প্রথম সারির পত্রিকাগুলো ইতোমধ্যেই চলচ্চিত্রের সালতামামী প্রকাশ করেছে। আশা কথা হলো, বেশ কয়েক বছর পর এ বছর অর্ধশতের বেশি চলচ্চিত্র মুক্তি পেয়েছে। মানের দিক থেকে ২০২২ সাল সন্তোষজনক না হলেও কিছু ভালো চলচ্চিত্র মুক্তি পেয়েছে। সেখান থেকে সেরা ১০ চলচ্চিত্র।

দশ. তালাশ

রোম্যান্টিক থ্রিলার ঘরানার এ চলচ্চিত্র দিয়ে অভিষেক হয় নায়ক আদর আজাদের (এর আগে অন্য নামে ইমপ্রেসের একটি ছবিতে দেখা যায় তাকে)। তার বিপরীতে ছিলেন শবনম বুবলী। সৈকত নাসির পরিচালিত চলচ্চিত্রটি অর্ধ কোটির কম বাজেটের হলেও ভালো গল্প, যুতসই অভিনয় এবং ভালো নির্মাণশৈলীর কারণে এই লিস্টে জায়গা করে নিয়েছে। সিনেমা হলের অল্প ব্যবসার পাশাপাশি ওটিটি রাইটস থেকে পাওয়া টাকায় লগ্নিও তুলে এনেছে। এ চলচ্চিত্রের শেষ টুইস্টটি অনেকাংশেই অপ্রত্যাশিত ছিল। চলচ্চিত্রটি অফিসিয়ালি বায়োস্কোপে দেখতে পাওয়া যাচ্ছে।

নয়. অপারেশন সুন্দরবন

‘ঢাকা অ্যাটাক’-খ্যাত পরিচালক দীপংকর দীপনের দ্বিতীয় চলচ্চিত্র। অভিনয়ে রিয়াজ, সিয়াম, রোশান, নুসরাত ফারিয়া, ভারতের দর্শনা বণিক, তাসকিন, রাইসুল ইসলাম আসাদ, আরমান পারভেজ মুরাদ, মনোজ প্রামাণিক, রওনক হাসানসহ অনকে। বিশাল স্টারকাস্ট নিয়ে সুন্দরবনে জোঁকের মতো লেগে থাকা জলদস্যুদের বিরুদ্ধে র‌্যাবের দুঃসাহসিক অভিযানকে ঘিরে সাজানো হয়েছে এ চলচ্চিত্র। অভিনেতারা সেরকম আহামরি পারফরম্যান্স দিতে না পারলেও, গল্পের ভালো গাঁথুনি ও একইসাথে গতিময় চিত্রনাট্যের কারণে, চলচ্চিত্রটি এই লিস্টে জায়গা করে নিয়েছে। প্রত্যাশিত ব্যবসা না করলেও সিনেমা হলে ১০০ দিন পার করেছে।

আট. দামাল

রায়হান রাফী পরিচালিত চলচ্চিত্রটি বানানো হয়েছে স্বাধীন বাংলা ফুটবল দলকে কেন্দ্র করে, সঙ্গে জুড়ে দেয়া হয়েছে বর্তমান সময়ের কিছু ঘটনা। মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক ও একইসাথে স্পোর্টস ঘরানার দেশের সিনেমায় এই প্রথম। এই চলচ্চিত্রের বিভিন্ন চরিত্রে রয়েছেন সিয়াম, শরীফুল রাজ, বিদ্যা সিনহা মীম, সুমিত সেনগুপ্ত, রাশেদ মামুন অপু, ইন্তেখাব দিনারসহ অনেকে। মুক্তিযোদ্ধাদের সাধারণ জীবনযাপন থেকে শুরু করে পরিবার হারানো, মুক্তিযুদ্ধে যোগ দেওয়া ও পরবর্তীতে ফুটবল দল গঠন করে তহবিল গঠন; সবকিছুই বেশ আবেগঘন আবহে তুলে ধরা হয়েছে।

‘পরাণ’-এর ভূমিধস সাফল্যের পর রাফী এ সিনেমা ঘিরে অনেক প্রত্যাশা থাকলেও বক্স অফিসে সফল নয়। তবে লম্বা সময় ধরে প্রেক্ষাগৃহে প্রদর্শিত হচ্ছে।

সাত. কুড়া পক্ষীর শূন্যে উড়া

নবীন নির্মাতা মুহাম্মাদ কাইয়ুম পরিচালিত চলচ্চিত্রটি খুব বেশিসংখ্যক দর্শকের কাছে পৌছাতে সক্ষম হয়নি। ইন্ডি ঘরানার হওয়ায় প্রেক্ষাগৃহগুলো আগ্রহ দেখায়নি। সম্প্রতি কলকাতা চলচ্চিত্র উৎসবে একটি বিভাগে যৌথভাবে সেরা নির্বাচিত হয়ে আলোচনায় এসেছে, যার পুরস্কারমূল্য ৫১ লাখ রুপি। এর আগে দেশে যারাই দেখেছেন, বেশির ভাগ প্রশংসা করেছেন।

হাওর অঞ্চলের একদল মানুষের সহজ-সরল ও একইসাথে কঠিন সংগ্রামের গল্প উঠে এসেছে এই চলচ্চিত্রে। ছয় মাস পানির নিচে থাকা অঞ্চলটিকে মৌসুম অনুযায়ী খুব সুন্দরভাবে ক্যামেরাবন্দী করা হয়েছে।

ছয়. শান

নবীন পরিচালক এম রাহিম পরিচালিত পুলিশ অ্যাকশন ঘরানার চলচ্চিত্র। অভিনয়ে সিয়াম, পুজা চেরি, তাসকিনসহ অনেকে। রোম্যান্টিক ইমেজ দিয়ে জনপ্রিয়তা পাওয়া সিয়ামের প্রথম পূর্ণাঙ্গ অ্যাকশন চলচ্চিত্র ছিল এটি। বাংলা বাণিজ্যিক ঘরানার চলচ্চিত্রের বিবেচনায় ‘শান’-এর গল্প ও নির্মাণশৈলী বেশ ভালোই বলা যায়। ছোটোখাটো কিছু দূর্বল দিক থাকলেও চলচ্চিত্রটি শেষ পর্যন্ত আমাদের মনোযোগ ধরে রাখতে পারে এবং একটি পরিপূর্ণ তৃপ্তিদায়ক ফ্যামিলি এন্টারটেইনার হিসেবে দাঁড়াতে পারে। তবে প্রত্যাশা মতো ব্যবসা করেনি। চলচ্চিত্রটি অফিশিয়ালি বায়োস্কোপে দেখতে পাওয়া যাচ্ছে।

পাঁচ. পরাণ

এ বছরে প্রথম বিস্ময়কর সাফল্য পাওয়া চলচ্চিত্র। বরগুনায় ঘটে যাওয়া চাঞ্চল্যকর রিফাত হত্যা ঘটনার ছায়া অবলম্বনে চলচ্চিত্রটি নির্মিত হয়েছে। অভিনয়ে এককথায় কাঁপিয়ে দিয়েছেন শরীফুল রাজ ও বিদ্যা সিনহা মীম। কিছু দুর্বলতা থাকলেও রায়হান রাফীর দূর্দান্ত স্টোরিটেলিং ‘পরাণ’কে সফল করতে বিশেষ ভুমিকা রেখেছে। স্বল্প বাজেটে চলচ্চিত্রটি দর্শক-সমালোচক উভয়েরই মন জয় করতে সক্ষম হয়। ইতোমধ্যেই ১৫০ দিন সিনেমা হলে চলার রেকর্ড স্পর্শ করেছে। চলতি বছরের সবচেয়ে বেশি আয়ের ছবি এটি।

চার. দেশান্তর

আশুতোষ সুজন পরিচালিত পিরিয়ড ড্রামা ঘরানার চলচ্চিত্র। যেখানে ১৯৪৭ সালের ব্রিটিশ ভারত ভাগের সময়ে ঘটে যাওয়া দুটি পরিবারের হৃদয়বিদারক গল্প উঠে এসেছে। বিভিন্ন চরিত্রে অভিনয় করেছেন আহমেদ রুবেল, মৌসুমী, রোদেলা টাপুর, ইয়াশ রোহান, শুভাশীষ ভৌমিক, মোমেনা চৌধুরী প্রমুখ। নির্মলেন্দু গুণের লেখা গল্পটি যদিও একটু সরলরৈখিক, কিন্তু আশুতোষ সুজন প্রথম ছবিতেই তার নির্মাণ মুনশিয়ানা দেখাতে সক্ষম হয়েছেন। চমৎকার দৃশ্যায়ন, সাথে ব্যাকগ্রাউন্ড মিউজিকের যথাযথ ব্যবহার ও যুৎসই অভিনয় ‘দেশান্তর’কে এই লিস্টে জায়গা করে দিয়েছে। তবে রীতি মোতাবেক সিনেমাটি তেমন সমাদর পায়নি। এ নিয়ে অনেকেই আফসোস করেছেন।

তিন. হাওয়া

নাটক ও বিজ্ঞাপনে নতুন মুখ তবে সিনেমায় নবীন মেজবাউর রহমান সুমনের মিস্ট্রি ঘরানার চলচ্চিত্র এটি। বাংলার চিরাচরিত ফোক গল্পের মডার্ন অ্যাডাপটেশন বলা যায়। বাংলাদেশের চলচ্চিত্রের বিগত কয়েক বছরের ইতিহাসে সর্বোচ্চ সাফল্য পাওয়া চলচ্চিত্র হলো এটি। চঞ্চল চৌধুরী কেন সেরাদের সেরা, সেটাই যেন আবার প্রমাণ করে দিলেন ‘হাওয়া’র মাধ্যমে। অবিশ্বাস্যই মনে হতে পারে যার জন্যে যথাযথ বিশেষণ! এছাড়া শরীফুল রাজ, নাজিফা তুষি, নাসির উদ্দিন খান, সুমন আনোয়ার, সোহেল মণ্ডলসহ আরো অনেক জাত অভিনেতার সমাহার ঘটেছিল।

ক্যামেরার পেছনে যারা কাজ করেছেন, তাদের হাজার প্রশংসা করলেও বোধহয় কম হয়ে যাবে। ইন্টারন্যাশনাল কোয়ালিটির প্রডাকশন দেখার সৌভাগ্য হয়েছে এই চলচ্চিত্রের মাধ্যমে। চলচ্চিত্রটি দেশে ১৫০ দিন চলার রেকর্ড স্পর্শ করেছে। বিদেশেও রেকর্ড ব্যবসা করেছে। এছাড়া ৩০ ডিসেম্বর মুক্তি পেয়েছে ভারতে। বাজেট বিবেচনায় এই বছর ‘পরাণ’ দেশে সবচেয়ে বেশি ব্যবসা করলেও বৈশ্বিক আয়ে ছাড়িয়ে গেছে ‘হাওয়া’।

দুই. গুণিন

মনপুরা, স্বপ্নজাল-খ্যাত পরিচালক গিয়াসউদ্দিন সেলিমের পিরিয়ড ড্রামা ঘরানার চলচ্চিত্র হলো এটি। হাসান আজিজুল হকের গল্পে অভিনয়ে আজাদ আবুল কালাম, শরীফুল রাজ, পরীমনি, ইরেশ যাকের, মোস্তফা মনোয়ারসহ অনেকে। ১৯৫০ এর দশকের মানুষের ভ্রান্ত ধারণা ও প্রাচীন বিশ্বাসকে ঘিরে গড়ে তোলা ধরা হয়েছে গল্পে। ছোটখাটো কিছু লুপহোল থাকলেও চলচ্চিত্রটির পরিচ্ছন্ন নির্মাণ ও অভিনেতাদের ভালো অভিনয় চলচ্চিত্রটিকে বিশেষ করে তুলেছে। ওটিটি প্লাটফর্ম চরকির প্রযোজনা হলেও সিনেমাটি প্রথমে প্রেক্ষাগৃহে মুক্তি পায়। এ ছাড়া চলতি বছরে ‘পাপপূন্য’ নামে আরেকটি ছবি মুক্তি দিয়েছেন গিয়াসউদ্দিন সেলিম।

এক. শিমু

আন্তর্জাতিক বাজারে বড় পরিসরে বছর দুয়েক আগে মুক্তি পয় ‘মেড ইন বাংলাদেশ’, তবে বাংলাদেশে মুক্তি পায় ‘শিমু’ নামে। শ্রমিকনেত্রী ডালিয়া আখতারের জীবনে ঘটে যাওয়া সত্য ঘটনা অবলম্বনে নির্মিত হয়েছে চলচ্চিত্রটি। অভিনয় করেছেন রিকিতা নন্দিনী শিমু, মোস্তফা মনোয়ার, নভেরা আহমেদসহ অনেকে। মেহেরজান, আন্ডার কন্সট্রাকশন-খ্যাত পরিচালক রুবাইয়াত হোসেনের চলচ্চিত্রটি ভালো নির্মাণশৈলী ও একইসঙ্গে ভালো অভিনয়ের জন্য বিশেষকিছু হয়ে থাকবে। রিকিতা নন্দিনী একদম শিমু চরিত্রটির সঙ্গে মিশে গেছেন, খুবই ভালো পারফরম্যান্স উপহার দিয়েছেন।

এই ছিল আমার দৃষ্টিতে সেরা ১০ চলচ্চিত্র। সবার পছন্দের সঙ্গে মিলবে এটাই স্বাভাবিক। আপনারাও সেরা ১০ চলচ্চিত্রের লিস্ট তৈরি করতে পারেন। ধন্যবাদ।


লেখক সম্পর্কে বিস্তারিত

চলচ্চিত্র বিষয়ক ব্লগার ও ইউটিউবার

মন্তব্য করুন