Select Page

‘অপারেশন সুন্দরবন’ দেখে বোর হওয়ার সুযোগ নেই

‘অপারেশন সুন্দরবন’ দেখে বোর হওয়ার সুযোগ নেই

অপারেশন সুন্দরবনে ছোট-বড় অনেক চরিত্র আছে। এতগুলো চরিত্রকে এক গল্পে গাঁথা বেশ কঠিন বটে। দীপংকর দীপন মনে হচ্ছে খুব সহজেই কাজটা করতে পেরেছেন …

দীপংকর দীপনের ‘ঢাকা অ্যাটাক’ (২০১৭) এর পর বাংলা সিনেমায় নতুন একটা ধারা তৈরি হয়েছে। ‘কপ অ্যাকশন থ্রিলার’ বলা যায় ধারাটিকে। কিন্তু সত্যি বলতে, ঢাকা অ্যাটাকের থ্রিল এ ধারার অন্য ছবিতে পাওয়া যায়নি। ছবিগুলোর গল্প ও চিত্রনাট্য অনেকটাই বোরিং ছিল।

‘অপারেশন সুন্দরবন’ নিয়ে ব্যাপক প্রত্যাশার পাশাপাশি তাই একটু আধটু ভয়ও ছিল যে, এটিও এ ধারার আগের কয়েকটি ছবির মতো বোরিং হবে নাতো!

আশার কথা হচ্ছে যে, নির্মাতা বোর হওয়ার কোন সুযোগ রাখেননি। হয়তো ঢাকা অ্যাটাকের মতো অতো থ্রিলিং ক্লাইম্যাক্স নেই এ ছবিতে, তবে অন্য অনেক দিক থেকে ঢাকা অ্যাটাকের চেয়ে বেটার। গোটা ছবিই ছোট ছোট টুইস্ট দিয়ে সাজানো; যার ফলে প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত দর্শক ধরে রাখতে পেরেছে।

ম্যাড়ম্যাড়ে সস্তা বাংলা সিনেমার ভিড়ে ‘অপারেশন সুন্দরবন’ তুলনামূলক উন্নত সিনেমা হয়েছে আর এই বিষয়টিই দর্শকদের স্বস্তি দিবে।

ছবির গল্প সুন্দরবন এলাকার সাধারণ মানুষদের উপর বনদস্যুদের অত্যাচার- নির্যাতনের প্রেক্ষিতে বনদস্যু দমনে র‍্যাবের অভিযানকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠেছে। নির্মাতা এই গল্পকে যতটা সম্ভব উপভোগ্য বাণিজ্যিক সিনেমার আদলে তৈরির চেষ্টা করেছেন; তবে সেটা বাস্তবতাকে অগ্রাহ্য করে নয়। এখানেই দীপংকর দীপন তার কারিশমাটা দেখিয়েছেন। একইসঙ্গে বাস্তবসম্মত ও উপভোগ্য হয়েছে যা সচরাচর বাংলা সিনেমায় দেখা যায় না।

দীপংকর দীপনের নির্মাণশৈলী আধুনিক। তিনি প্রতিটা দৃশ্যকে একইসঙ্গে বাস্তবসম্মত বো উপভোগ্য করে তুলে ধরার চেষ্টা করেছেন। ফলে সিয়াম, রোশান কিংবা তাসকিনরা যখন সুন্দরবনের ভেতরে দুর্ধর্ষ অ্যাকশনে জড়িয়ে পড়ছে তখন সেটা ফিল্মি মনে হচ্ছেনা বরং বেশ বাস্তবসম্মতই মনে হচ্ছে। আবার তিন জোড়া প্রেমিক-প্রেমিকার রোমান্সের অংশটুকুও বাহুল্যবর্জিত ও সুন্দর।

দুই নায়ক সিয়াম আহমেদ ও রোশানকে একসাথে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে চলতে দেখা গেছে যা অন্যরকম ভালো লেগেছে। যে কয়েকটি দৃশ্যে তাদের একসাথে দেখা গেছে সেগুলো একটু হলেও বেশি উপভোগ্য লেগেছে।

সিয়াম রোশানের চেয়ে কিছুটা বেশি গুরুত্ব পেয়েছে এবং তার অভিনয়ও ছিলো বেশ ভালো। রোশানও ভালো সুযোগ পেয়েছে। নুসরাত ফারিয়া ও দর্শনা বণিকও ভালো চরিত্র পেয়েছে। বিশেষ করে ফারিয়াকে দারুণ স্মার্ট আর দর্শনাকে দারুণ প্রিটি লেগেছে।

তাসকিন রহমান ভিন্ন স্বাদের একটা চরিত্র করেছেন এবং আমার কাছে তাকে ভালো লেগেছে। তবে অন্য ভিলেনরা তেমন কোন চমক দেখাতে পারেননি।

মনোজ প্রামাণিক ভালো একটি চরিত্র পেয়েছেন এবং বরাবরের মতো তার সাবলীল অভিনয় দিয়ে চরিত্রটিকে নিজের করে নিয়েছেন। রওনক হাসানের চরিত্রটাও মন্দ না। মনোজ ও রওনকের প্রেমিকা মেয়ে দুটোও ইন্টারেস্টিং চরিত্র পেয়েছে।

রিয়াজ সে হিসেবে সাদামাটা একটি চরিত্র পেয়েছেন। তার অভিনয় দেখানোর সুযোগ ছিল না।

অপারেশন সুন্দরবনে ছোট-বড় অনেক চরিত্র আছে। এতগুলো চরিত্রকে এক গল্পে গাঁথা বেশ কঠিন বটে। দীপংকর দীপন মনে হচ্ছে খুব সহজেই কাজটা করতে পেরেছেন। ছবির কোন জায়গায় মনে হয়নি— নির্মাতা এতগুলো চরিত্রকে একসাথে গাঁথতে স্ট্রাগল করছেন। বরং মনে হয়েছে যেন স্মুথলি এগিয়েছে সবকিছু। এই বিষয়টাও নির্মাতা হিসেবে দীপংকরকে আরো বেশি গ্রহণযোগ্যতা এনে দেবে আগামীতে।

তবে সবকিছু ছাপিয়ে ছবির বিগ অ্যারেঞ্জমেন্ট, সুন্দরবনের ভয়ঙ্কর সুন্দর লোকেশন, বিএফএক্স ও ব্যাকগ্রাউন্ড মিউজিক ছবিটিকে আলাদা বিশেষত্ব দিয়েছে।

সুন্দরবনের মধ্যে ট্রলার, স্পিডবোট, হেলিকপ্টার এবং এসবের মধ্যে নায়কের এন্ট্রি হচ্ছে, ফাইট হচ্ছে, রোমান্স, কমেডি সব হচ্ছে আর মাঝে মাঝে ভিএফএক্সের মাধ্যমে বাঘ মামার এন্ট্রি হচ্ছে; সাথে পুরো ছবি জুড়ে রহস্যময় ব্যাকগ্রাউন্ড মিউজিক; সবকিছু মিলেমিশে সুন্দর সব দৃশ্যের তৈরি হচ্ছে আর এসব দেখতে দেখতে কখন যে সোয়া দুই ঘণ্টা পার হয়ে যায় তা টের পাওয়া যায় না।

মোটামুটি এই হচ্ছে অপারেশন সুন্দরবন।

খুব বেশি থ্রিল কিছু আশা না করে টাইম পাস করার জন্য পরিপাটি একটি ছবি দেখতে চাইলে ‘অপারেশন সুন্দরবন’ নির্দ্বিধায় দেখতে পারেন। বোর হওয়ার মতো বা হতাশ হওয়ার মতো কিছু নেই ছবিতে। আর যারা বাংলা সিনেমাপ্রেমী তারা তো অবশ্যই দেখবেন। বাংলা সিনেমার উন্নয়নের সাক্ষী হতে হলে ‘অপারেশন সুন্দরবন’- এর মতো ছবি তো দেখতেই হবে।


About The Author

Leave a reply