Select Page

কনকচাঁপা: বিয়ে কনেই গেয়ে উঠেন গায়েহলুদের গান

কনকচাঁপা: বিয়ে কনেই গেয়ে উঠেন গায়েহলুদের গান

গায়েহলুদের গানের মহড়া চলছে। কিন্তু পড়শিরা গলায় তুলতে পারছিলেন না। এ দেখে কনে রোমানা মোর্শেদ কনকচাঁপা নিজেই কণ্ঠে তুলে নেন গান। গানের নেতৃত্বে থাকা পারুল আপা যতই ধমক দিয়ে থামিয়ে দেন কনকচাঁপার গলা ততই উচ্চকিত হয়। শেষে মা বললেন, ওই পাগলি গাক, তোরা কিছু বলিস না, কী হবে গাইলে।

এক ফেসবুক পোস্টে গায়েহলুদের দিনটি স্মরণ করে এ গল্প লিখেছেন কনকচাঁপা।

‘১৯৮৪ সালের ৫ ডিসেম্বর। ৩৯ বছর আগের এই দিনের গল্প। সেদিন আমার গায়েহলুদ ছিল। আমি জন্মগতভাবেই একই সঙ্গে অপরিপক্ব আবার পরিপক্ব ছিলাম, ছিলাম বা আছি ইনট্রোভার্ট আবার এক্সট্রোভার্ট। অনেক কিছু বুঝতাম আবার অনেক কিছু বুঝতাম না।’

বিয়ের সেই দিনটি যেন এখনো স্মৃতিতে অমলিন হয়ে রয়েছে। কনে সাজবেন এই ছিল আনন্দের উৎসব। এই গায়িকা লিখেছেন, ‘বিয়ে হচ্ছে এতে যত না খুশি, তার চেয়ে বিয়ের কন্যা সাজতে পারছি—এটাই ছিল যেন বেশি আনন্দের। খুব ঘরোয়া আয়োজনে বিয়ে হয়েছিল। যেখানে বসে আছি ওটা আমার খাট। অর্ধেক বাঁশের বেড়া আর অর্ধেক টিন দিয়ে গড়া বাবার নিজের বাড়ি। বিছানার দুই পাশে দুটি জানালা ছিল। দক্ষিণ ও পশ্চিম এর জানালা, এখান দিয়েই কত আকাশ দেখেছি, কত স্বপ্ন এঁকেছি, জানালার পাশেই জল টলটলে পুকুরে ডুবসাঁতার খেলেছি, বেড়ার ফাঁকের আলোর ফুলের সঙ্গে  কত খেলেছি অথবা সেই আলোর নাচন আমাকে ভোরবেলা জাগিয়ে দিয়েছে।’

‘হলুদ লাল কাগজ আমার নিজের হাতে আঠা দিয়ে লাগানো। বিয়ে হচ্ছে এ জন্য কোনো লাজলজ্জার বালাই ছিল না। বরং দুশ্চিন্তা ছিল আমাকে সাজানোর জন্য ফুল পাওয়া যাবে কই! হলুদে যে গান গায়, সেই গানও কেউ পারে না।’

গান প্রসঙ্গে কনকচাঁপা লিখেছেন, ‘গায়েহলুদের দিন সকালে রত্নাপা কয়েকজনকে শেখাচ্ছিলেন। তাতেও ভুল হচ্ছিল দেখে আমি গলা মিলাচ্ছিলাম। পারুল আপা যতই ধমক দিয়ে আমাকে থামিয়ে দেন আমি ততই জোরে গাই, কী যন্ত্রণা! শেষে আম্মা বললেন ওই পাগলি গাক, তোরা কিছু বলিস না, কি হবে গাইলে।’

আনন্দের মধ্যেই গায়েহলুদের দিন গোসলের সময় হঠাৎ কান্না! তিনি লিখেছেন, ‘হলুদ মাখিয়ে যখন খালা বোনরা ফুল ভেজানো পানিতে গোসল করাচ্ছিলেন তখনই প্রথম আমার কান্না পেল। গোসলের পানির ভেতরেই কেঁদে নিলাম আরাম করে। কারণ, কেউ তা টের পেল না। সে কান্না বিয়ের জন্য নয়, প্রমিজ, আমি কাঁদছিলাম আমার দ্বিতীয় গোসলের জন্য! ভাবছিলাম যে আমার জীবনে বাদ রইল শেষ গোসল।’

মন খারাপ নিয়েই বেশ কিছু সময় কেটে যায়। আবারও মেতে ওঠেন আনন্দে। এবার আসে মেহেদি পর্ব। হাতে মেহেদি লাগানোর স্মৃতি যেন এখনো চোখের সামনে ভাসে। ‘রাতে মামি, রত্নাপা, আর শিলী খালাম্মা হাতে ঝাঁটার কাঠির ডগায় বাটা মেন্দি লাগিয়ে ফুল লতাপাতা এঁকে দিচ্ছিলেন। তাঁকে ফুল লতাপাতা না বলে কাকের ঠ্যাং বকের পাখনা বলাই ভালো।

সেই মেন্দির ডিজাইন দেখে মনে হচ্ছিল বিয়ে বাড়ি ছেড়ে পালাই। কিন্তু আবার এখনকার বিয়ের কন্যাদের অর্থাৎ সিমেন্টের বউ অথবা আটা ময়দা সুজির বউদের দেখলে মনে হয় ওই সরল আঁকা মেন্দির ফুলে কতই না আশীর্বাদ লুকানো ছিল।’

বিয়ের পরে কেটে গেল চার দশক। সংসার বড় হয়েছে। নাতি–নাতনিদের সঙ্গে সময় কাটে। কিন্তু সেদিন সুন্দর মেহেদীর সাজের আশাভঙ্গ নিয়ে এখনো আফসোস রয়েই গেছে এই গায়িকার। কিন্তু বিয়ের দিনটি তো আর বারবার আসে না। এই গায়িকার মতে, ‘জীবনও একটাই, বিয়েও একবারই।’ তিনি সবশেষে লিখেছেন, ‘তারপরও এই একটি ছবিই আমার কাছে হীরার মতো দামি। কিছুক্ষণ পরেই মন খারাপ কেটে গেল। জুবলীমামি চুল আঁচড়ে শুকিয়ে দিচ্ছিলেন। খুবই আশ্চর্য যে ক্যামেরার এই রিলে শুধু এই ছবিই পাওয়া গেছে। আর সব ছবি হাওয়া।’ সেই ছবিটি তিনি ভক্তদের সঙ্গে ভাগাভাগি করেছেন।

কনকচাঁপার স্বামী সংগীতপরিচালক মঈনুল ইসলাম খান। গানের মাধ্যমে তাদের পরিচয়। বিটিভির ‌‘অন্তরঙ্গ’ অনুষ্ঠানে ‘এলোমেলো চুল আর ললাটের ভাঁজ’ গান গাওয়ার মাধ্যমে ১৯৮২ সালে সংগীতাঙ্গনে প্রবেশ কনকচাঁপার। এর চার বছর আগে নতুন কুঁড়ির সংগীত পরিচালনার মাধ্যমে ১৯৭৮ সালে দেশীয় সংগীতাঙ্গনে আত্মপ্রকাশ করেছিলেন মঈনুল ইসলাম খান। দুজনের প্রথম পরিচয়টা ’৮২ সালের দিকেই। কনকচাঁপার প্রথম গানটির সুর করেছিলেন মঈনুল ইসলাম খান। সেখান থেকেই ভালো লাগা ও ১৯৮৪ সালের ৬ ডিসেম্বর, বিয়ের পিঁড়িতে বসা।


Leave a reply