Select Page

নাটক-চলচ্চিত্রে জীবনানন্দ দাশ

নাটক-চলচ্চিত্রে জীবনানন্দ দাশ

আমার সবচেয়ে প্রিয় কবি জীবনানন্দ দাশের মৃত্যুবার্ষিকী ২২ অক্টোবর।

রবীন্দ্র পরবর্তী আধুনিক কবিদের মধ্যে অন্যতম প্রধান আধুনিক কবি তিনি। যত দিন যাচ্ছে জীবনানন্দ তার আবেদন নিয়ে আরো বেশি প্রাসঙ্গিক হচ্ছেন আমাদের কাছে। তাঁর কবিতার প্রভাব নতুন প্রজন্মে ছড়িয়ে পড়েছে, ছড়াবে আগামীতেও কারণ ধ্রুপদী গুণ আছে। সেকালেও ছিল জীবনানন্দের কবিতার পাঠককে গ্রাস করার শক্তি একালে তো আরো প্রবল হচ্ছে।

অনেক নামে তাঁর নাম ‘প্রেমের কবি’, ‘রূপসী বাংলার কবি’, ‘মহাপৃথিবীর কবি’ এরকম আরো আছে অনেক। জীবনানন্দের কবিতার আবেদন চলচ্চিত্রেও এসেছে অনেক সময় অনেকভাবে। সেটা ওপার বাংলার চলচ্চিত্রেও যেমন এসেছে আমাদের এখানেও এসেছে। সেরকম কয়েকটি কাজ নিয়ে এই লেখাটি লেখার একটা চেষ্টা করেছি।

জিঘাংসা:

জীবনানন্দ যারা পড়েছেন তারা ‘বনলতা সেন’কে চেনেন না এটা বিশ্বাস করা যায় না। বনলতা সেন নামটি দিয়েই জীবনানন্দকে একনামে চেনা যায়। আরো আছে অনেককিছু তবে এটাই চিরপরিচিত। এ ছবির সুপারহিট গান ছিল ‘ও অনুপমা ও নিরুপমা’। গানটির শিল্পী খুরশীদ আলম ও রুনা লায়লা। অপূর্ব সুরের গান। এ গানের ‘মুখ’ অংশের কথাগুলোতে আছে-

পাখির বাসার মত দুটি চোখ তোমার

ঠিক যেন নাটোরের বনলতা সেন।

নাটোরের বনলতা সেনের কথা জীবনানন্দের ‘বনলতা সেন’ কবিতায় কয়েকবার উল্লেখ আছে। নামটা ইতিহাস এখন। সোনালি দিনের হিট নায়ক ওয়াসিম ও সহশিল্পী জবা চেীধুরীর লিপে গানটি অপূর্ব…

দারুচিনি দ্বীপ:

হুমায়ূন আহমেদের অসাধারণ জীবনমুখী উপন্যাস থেকে বানানো ছবি। উপন্যাসের বা ছবির নামটিও যদি বলি জীবনানন্দের ‘বনলতা সেন’ কবিতা থেকে নেয়া। কবি বলেছেন ‘সবুজ পাতার দেশ যখন সে চোখে দেখে দারুচিনি দ্বীপের ভিতর।’ অসাধারণ রোমান্টিক লাইন।

এ ছবিতে আসাদুজ্জামান নূর বিন্দুর বাবা থাকেন যিনি একজন নাবিক। বিন্দু বাবার কাছে চিঠি লেখে মন খারাপ করে। বাবা তখন কোনো না কোনো সমুদ্রে অবস্থান করছে। বাবা নূর জাহাজে তখন মনে মনে কবিতা বলতে থাকে যেটা আসলে কবিতার মত আবৃত্তি করলেও সেটি জীবনানন্দের লেখা একটা গান ছিল যার লাইনগুলো এরকম—

রাতের আঁধারে নীল নীরব সাগরে

আমাদের এ জীবন জনহীন বলয়ে

কোথায় কখন অতিদূর থেকে ভেসে আসে।

নূরের এক্সপ্রেশন তখন অসাধারণ..

পদ্মপাতার জল:

তন্ময় তানসেন তাঁর রুচিশীল এ ছবিতে জীবনানন্দের কবিতাকে গান হিশেবে অসাধারণভাবে উপস্থাপন করেছেন। কবির ‘তোমায় আমি’ কবিতার কথাগুলো সিনেমায় ইমন-মীমের লিপে আসে-

তোমায় আমি দেখেছিলাম বলে

তুমি আমার পদ্মপাতা হলে;

শিশির কণার মতন শূন্যে ঘুরে

শুনেছিলাম পদ্মপত্র আছে অনেক দূরে

খুঁজে খুঁজে পেলাম তাকে শেষে।

গানের সাথে সাথে পিয়ানোর সুর দুয়ে মিলে একদম কাব্যিক হয়ে যায়..

একজন সঙ্গে ছিল:

মেীসুমী ও আসিফ ইকবাল এ ছবিতে জীবনানন্দের ‘ফসলের দিন’ কবিতাটি আবৃত্তি করে। মেীসুমীর লাল শাড়ি, খোঁপায় ফুল, মুখে মিষ্টি ভুবন ভোলোনো হাসি আর আসিফ ইকবালের চশমা চোখে ব্যক্তিত্ববান সাবলীল অভিনয়ে দুজনে চলে কবিতা আবৃত্তি –

যে ভালোবাসে কত ভালোবাসা দেখাতে সে পারে জেনেছি সেদিন

যেতে হবে বলে তুমি গেছ চলে দূরে গেছ সরে

যেতে হবে তাই আমি হাতখানা ধরে

তোমারে আনিনি ডেকে কাছে।

ঘরের চারদিকে তখন রজনীগন্ধা, হাসনাহেনা আরো সব ফুলের বাহারি শোভা। কী যে রোমান্টিক!

টলিউডে বিভিন্ন ছবিতে জীবনানন্দের বিভিন্ন কবিতার ব্যবহার হয়েছে। সাম্প্রতিক সময়ে যৌথ প্রযোজনার ‘শঙ্খচিল’ ছবিতে কবির ‘আবার আসিব ফিরে’ গানটি ব্যবহৃত হয়েছে প্রসেনজিৎ, কুসুম শিকদার ও শিশুশিল্পীর মাধ্যমে। ‘গয়নার বাক্স’ ছবিতে একই কবিতা আবৃত্তি করে শ্রাবন্তী চ্যাটার্জি। থ্রিলার জনরার ছবি ‘বাইশে শ্রাবণ’-এ জীবনানন্দের একাধিক কবিতা ব্যবহৃত হয়েছে। গৌতম ঘোষ জীবনানন্দের ‘হাওয়ার রাত’ কবিতাটি আবৃত্তি করে এছাড়া ‘বনলতা সেন’ কবিতাটি চিরকুট আকারে ব্যবহৃত হয়েছে সিরিয়াল কিলিং-এর মোটিফ হিসেবে।

বলিউডে ‘হে রাম’ মুভিতে জীবনানন্দ দাশের ‘মুহূর্ত’ কবিতার বাংলা আবৃত্তি করা হয়েছে আশ্চর্যজনকভাবে। অভিনেত্রী রাণী মুখার্জী এ আবৃত্তি করেছে।

প্রিয় কবি জীবনানন্দ দাশ এভাবেই চলচ্চিত্রে থেকেছেন তার অপূর্ব সব কবিতার গ্রাস করা অনুভূতিতে। তিনি আছেন, থাকবেন আগামী দিনেও তাঁর সৃষ্টিতে। তাঁর কাজ নিয়ে আরো সিনেমা হতে পারে। মাসুদ পথিক-এর নির্মিতব্য ‘লাশকাটা ঘর’ কিংবা তৌকির আহমেদ-এর চিন্তায় আছে জীবনানন্দ বিষয়ক চলচ্চিত্র। অপেক্ষায় থাকব সেগুলোর জন্য।

নাটক

——–

কবি জীবনানন্দ দাশের কবিতা/গল্প থেকে নির্মিত নাটক :

বনলতা সেন – মাহফুজ আহমেদ

এ নাটকে বনলতা সেন কবিতার থিম থেকে জীবনের দিকে আহবান করা হয় একজন হতাশাগ্রস্ত মানুষকে। একজন সাংবাদিক হতাশাগ্রস্ত ঐ মানুষটিকে বনলতার বেশে জীবনমুখী করে এবং তাদের মধ্যে প্রেম হয়। প্রধান চরিত্রে রিচি সোলায়মান ও মোশাররফ করিম।

নগর ঢাকায় জনৈক জীবনানন্দ – আশুতোষ সুজন

কবি পিয়াস মজিদের গল্প থেকে নেয়া এ নাটকে দেখানো হয়েছে কবি জীবনানন্দ পুনর্জন্ম পেয়ে আবার তাঁর জন্মভূমিতে ফিরে এসেছেন। ঢাকা শহরের বিভিন্ন জায়গায় তাঁকে নিয়ে চর্চা হয়। তিনি দেখেন আর অবাক হন। মৃত্যুর পরেও তিনি প্রবলভাবে বেঁচে আছেন। কবির চরিত্রে আশীষ খন্দকার, কবির স্ত্রী ও বাসযাত্রীর চরিত্রে অগ্নিলা।

এখানে জীবনানন্দ নেই – হিমেল আশরাফ

এ নাটকে জীবনানন্দের কবিতার বিভিন্ন লাইন নিয়ে একজন ভ্রমণপিপাসুর জীবনের রঙিন সময়গুলোকে দেখানো হয়েছে। তার জীবনে প্রেম ও হতাশার প্রকাশ আছে। প্রধান চরিত্রে মোশাররফ করিম। 

১৩৩৩ – ওয়াহিদ তারেক

এ নাটকটি কবির ১৩৩৩ কবিতা থেকে নেয়া। কবিতার থিম অনুযায়ী মেয়েটি একসময় ছিল পতিতা। তার জীবনে প্রেম আসলেও সমাজ-সংসার তার স্বপ্নকে সফল হতে দেয় না। প্রধান চরিত্রে তিশা, সহশিল্পী নাঈম।

আকাশলীনা – শামীম শাহেদ

জীবনানন্দের কবিতা থেকে ‘লীনা’ নামের মেয়েটি নাম ধার করে হয়ে যায় আকাশলীনা। তার জীবনে প্রেম আসে এবং সে প্রেমের পরিণতি হয় ট্র্যাজেডির। প্রধান চরিত্রে অপি করিম।

কুয়াশার ভিতর মৃত্যুর সময় – মাহফুজ আহমেদ

জীবনানন্দের গল্প থেকে একই নামে নির্মিত নাটক। এক দম্পতির সুখে-দুঃখের গল্প। প্রধান চরিত্রে জয়া আহসান।

এছাড়া ‘বনলতা ও জোনাকির গল্প, চারুলতা’ নাটকে অভিনেতা মোশাররফ করিমের আবৃত্তিতে জীবনানন্দ দাশের কবিতা এসেছে।

কবি জীবনানন্দ দাশকে নিয়ে আগামীতে আরো কাজ হোক চলচ্চিত্র ও নাটকে।


Leave a reply