নায়িকা, অ্যাকশন বা অতিরিক্ত গান ছাড়াই দেখতে বাধ্য করে ‘ওমর’
নায়িকা, অ্যাকশন কিংবা অতিরিক্ত গান ছাড়া গল্পের ৮০ ভাগ একটা লোকেশনে রেখে দুই ঘন্টা দর্শককে সিনেমা দেখতে বাধ্য করতে পারে শুধু একটা ভালো স্ক্রিনপ্লে। ‘ওমর‘ স্ক্রিনপ্লেতে হাইলেভেল কিছু না হলেও লেখক সিদ্দিক আহমেদের প্রশংসা করতেই হয়।
একইসাথে মুহাম্মদ মোস্তফা কামাল রাজকেও ধন্যবাদ ভিন্ন জনরায় গিয়ে এমন একটা ঝুঁকি নেয়ার জন্য। তার নির্মিত ‘প্রজাপতি’, ‘তাঁরকাটা’ কিংবা ‘যদি একদিন’ খুব একটা দর্শকপ্রিয়তা পায় নি। শাকিব খান, অপু বিশ্বাস, ইন্দ্রনীল থাকার পরেও দর্শক মনে রাখেনি ‘সম্রাট’র কথা। তবে ব্যক্তিগতভাবে আমার ‘ওমর’ এর কথা মনে থাকবে।
গল্প ‘হেভিওয়েট’ বড় মির্জার ছেলে ছোট মির্জাকে খুন ও খুনের পর লাশ লুকানো নিয়ে। ট্রেলার থেকেই গল্প অনেকটা আন্দাজ করা যায়। নামভূমিকায় অভিনয় করা শরীফুল রাজ আর ছোট মির্জার নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা বদি লাশ লুকাতে চেষ্টা করলেও পারে না, উল্টা ওমর থাকতে বাধ্য হয় মির্জার বাড়িতে। এদিকে একমাত্র ছেলেকে খুঁজে না পেয়ে মির্জা পাগলপ্রায়! তার চোখ এড়িয়ে ওমর আর বদিকে লাশ লুকাতে হবে। তারা পারবে কী না, এই খুন শুধুই দুর্ঘটনা নাকি অন্যকিছু তাই গল্পে দেখানো হয়েছে।
সিনেমা দেখতে গিয়ে আফসোস হচ্ছিলো, ট্রেলারটা আসলেই গল্পের অনেকটা বলে দিয়েছে। ‘কেন খুন?’ বা ‘খুনের পর কী?’ এই প্রশ্ন রেখে মার্ডার মিস্ট্রি জনরায় দুনিয়ায় অনেক কাজ হয়েছে। ভালো লাগলো ডায়লগ আর স্ক্রিনপ্লে দিয়ে এই জনরায় খেলার জন্য। তবে অসুবিধা হলো, বিরতির পর গল্প অনেকটাই ধীর এবং অনুমিত হয়ে যায়। ক্লাইম্যাক্স বেশ আবেগঘন হলেও পুরোপুরি দর্শকের চোখ ভেজাতে পারেনি যথাযথ বিল্ড আপের অভাবে। একেবারে মাঝ থেকে শুরু হওয়ায়, অনেকে শুরুতে গল্পের প্রবাহ নাই ধরতে পারে।
শরীফুল রাজ ভিন্ন ভিন্ন জনরায় যেভাবে কাজ করছেন, সেটা দেখবার মতো। ওমর চরিত্রে কমেডি, চতুরতা কিংবা ইমোশনাল দিক ছিলো যেটা রাজ দারুণভাবে পুল অফ করেছে। ভালো করলেও বদি চরিত্রে খুব একটা ভ্যারিয়েশন আনার সুযোগ ছিলো না নাসিরউদ্দিন খানের। একইরকম শহীদুজ্জামান সেলিম, রোজী সিদ্দিকী, শিবলু মৃধা, নাফিস, আয়মন শিমলাও ঠিকঠাক পারফরম্যান্স দিয়েছে। তবে হতাশ হলাম জাত অভিনেতা ফজলুর রহমান বাবু আর তানভীরকে ভাল প্লেসমেন্ট না দেয়ায়।
রাজু রাজের ক্যামেরা, মহম্মদ কালামের সম্পাদনা আর রিপন নাথের সাউন্ড মিলেমিশে একাকার। শুরুতে ‘ভাইরাল বেবি’ আর শেষে ‘রব জানে’ দুইটা গান দর্শক পছন্দ করেছে। নাভিদ, স্যাভির মিউজিকও ভাল ছিলো।
মজার ছলে বদি ওমর ক্লাসের মানুষের মুখে গালিগালাজ দেয়া হলেও অতিরিক্ত ব্যবহার খারাপ লেগেছে। অনেক জায়গায় যুক্তিহীন ঘটনা, টাইম চেজিং চোখে পড়েছে। তবে সংলাপে মান্না আর চরিত্রের নামগুলোতে হুমায়ূন আহমেদকে ট্রিবিউট দেয়াটা ভাল ছিলো।
রেটিং: ৩/৫