প্রস্থানও হওয়া উচিত জমকালো ও অর্থপূর্ণ
১৯৯৮ সালে সিনেমায় তিনটা বড় ঘটনা ঘটলো—জসীম মারা গেলেন, শাবানা বিদায় নিলেন ও এ জে মিন্টু পরিচালনা ছাড়লেন।
এদেশের নির্মাতাদের মধ্যে এ জে মিন্টু ছিলেন সবচেয়ে দূরদর্শী। সিনেমার অমোঘ পতন তিনি সবার আগে দেখতে পেয়েছিলেন। পরে বড় নির্মাতাদের সবাই একে একে বিদায় নেন। কিন্তু তারা সিনেমার বিপর্যয়ের সঙ্গে তাল মেলাতে মেলাতে হতাশায় চূর হয়ে পরিচালনা ছাড়তে বাধ্য হয়েছেন। তাদের কারোরই এ জে মিন্টুর মতো সম্মানজনক বিদায়ের সৌভাগ্য হয়নি।
শহীদুল ইসলাম খোকনের শেষের ছবিগুলো দেখুন। চাষী নজরুলের শেষের ছবিগুলোতে তাকে পাওয়াই যায়নি।
নায়িকাদের কেউ কি শাবানার মতো দর্শকদের বুকে আক্ষেপ রেখে বিদায় নিতে পেরেছেন? কিংবদন্তি নায়িকাদের অনেকে কর্মহীন হয়ে ঘরে বসে গেছেন। তারা না পেয়েছেন তাদের নামের উপযুক্ত চরিত্র, না পেয়েছেন সোনালি দিনের মতো সম্মান। শেষ দশ বছরে ববিতার কোনো চরিত্র মনে রাখার মতো নয়। চম্পা নাটকের গুরুত্বহীন চরিত্রও বাদ দেননি। সুজাতা পর্দার বাইরে থাকলেই কি ভালো করতেন না?
অবশ্য আরেকজন নায়িকার প্রতিও দর্শকদের মুগ্ধতা কাজ করে। কিন্তু তিনি একঘেয়ে মা-ভাবীর চরিত্রে মাসে মাসে পর্দায় চলে এলে নিশ্চিতভাবেই মোহভঙ্গ হতো ভক্তদের। ‘আম্মাজান’ করার পর শবনম যে ক্যামেরা থেকে মুখ ফিরিয়ে নিলেন, এতেই বরং তার মহিমা বেড়েছে; তার ফিরে আসার জন্য প্রতীক্ষা বেড়েছে।
জসীমের মতো আচমকা নক্ষত্রলোকে হারিয়ে গেলেই বোধহয় ভাল করতেন কিংবদন্তি নায়করা। নামকাওয়াস্তে অভিনয়ের চেয়ে জমকালো বিদায় ছিল অনেক বেশি প্রত্যাশিত।
আলমগীর তার কোন চরিত্রটিকে ছাড়িয়ে যাওয়ার জন্য এখনও অভিনয় করেন আমাদের সত্যি জানা নেই। ইলিয়াস কাঞ্চন অভিনয় ছেড়ে দিলে কি অপূরণীয় ক্ষতি হবে সিনেমার?
ফারুকের শেষ ছবি ২০০৮ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত ‘ঘরের লক্ষ্মী’। এরপর গত পনেরো বছর তিনি ক্যামেরার সামনে আসেননি। এর আগে তিনি অভিনয় করেন ‘কোটি টাকার কাবিন’ ছবিতে ২০০৬ সালে। একদম পর্দায় আসতে চাইতেন না ওই সময়টায়। ফারুক ঠিক সময়ে নিজেকে সরিয়ে নিয়েছিলেন। তখন দূরে সরে না গেলে গুরুত্বহীন চরিত্রে অভিনয় করে দর্শকদের কাছে পূর্ব সম্মান হারাতেন, পরিণত হতেন বোঝায়।
আত্মপ্রকাশের মতো অবসরও অনিবার্য। ধুঁকে ধুঁকে টিকে থাকার চেয়ে প্রস্থান বেশি কাম্য। একদিন থামতেই হবে। সেই বিরতির মাহেন্দ্রক্ষণটা হওয়া উচিত স্বরচিত, জমকালো ও অর্থপূর্ণ।