প্রহেলিকা : ঈদের সেরা ছবি
ঈদের পাঁচ ছবির মধ্যে বিষয় ও নির্মাণগুণে ‘প্রহেলিকা’ সেরা ছবিতে পরিণত হয়েছে। গল্প বলার ধরন ও নির্মাতার একাধিক লক্ষ্য ছবিটিকে এ বিশেষত্ব দিয়েছে।
চয়নিকা চৌধুরী নাটকে জনপ্রিয় একজন নির্মাতা। সেখানে তার একটি সিগনেচার স্টাইল ছিল। চলচ্চিত্রেও তিনি সেটিকে ধরে রাখছেন। প্রথম ছবি ‘বিশ্বসুন্দরী’র পর দ্বিতীয় ছবি ‘প্রহেলিকা’তেও তার সে সিগনেচার বিদ্যমান। বিষয়বৈচিত্র্যও রয়েছে।
‘প্রহেলিকা’ নামের সাথে ছবির সম্পর্কটা খুব সূক্ষ্মভাবে মেইনটেইন করা হয়েছে। স্টোরি টেলিংয়ে ক্লাইমেক্স পর্যন্ত ছবির রহস্যজনক আবহটিকে ধরে রাখা হয়েছে। গল্পে রহস্য এবং নির্মাণে মিউজিক্যাল ছবির গুণে থ্রিলার জনরায় নিয়ে সময়ের অন্যান্য ছবির থেকে ছবিটিকে আলাদা করা যাবে।
গল্পটা সহজ। খুনের মামলা কাঁধে নিয়ে মাহফুজ আহমেদকে পাঠিয়ে দেয়া হয় নতুন এক জায়গায়। সেখানে এসে মাহফুজ সম্পূর্ণ নতুন একটি পরিবেশ দেখতে পায় যেখানে জটবাঁধা এক জীবনের হাতছানি। সেখানে শবনম বুবলী ও নাসির উদ্দিন খানের মধ্যকার জগতের সাথে মাহফুজ নিজেকে রহস্যময় একটি গন্তব্যে যেতে থাকে। জানে না কোথায় তার ঠিকানা। মাহফুজের সামনে কঠিন একটি সময় অপেক্ষা করছে সে কি তা পারবে জয় করতে!
ছবির প্রধান চরিত্রই তিনটি। মাহফুজ, বুবলী ও নাসির উদ্দিন খান। তিন চরিত্রকেই পরিচালক বিল্ডআপ করেছেন কমতি রাখেননি। এটা একজন নির্মাতার গুণ বলতে হবে যেখানে প্রধান চরিত্রগুলোর সাথে সুবিচার করা হয়েছে এবং চরিত্রগুলোও নিজেদের সেরাটা দিয়েছে। মাহফুজ ছবির পুরো সময়টাই প্রথমদিকের সাথে শেষেরদিকে বিশাল পার্থক্যে উপস্থাপিত হয়েছে। ক্লাইমেক্সে তার অভিনয় প্রমাণ করে তার কাছ থেকে অভিনয়জগত এখনো কতটা প্রত্যাশা করে এবং তার এখনো কতটা দেয়ার আছে চলচ্চিত্রকে। বুবলীর সম্ভাবনা আগামী দিনে যে বাজি ধরে বলা যায় এ ছবিতে তার পারফরম্যান্স সেটাই বলে। মাহফুজ-বুবলী রসায়নও অদ্ভুতভাবেই সফল, তাদের বোঝাপড়া দেখে মনে হবে বেশকিছু ছবির জুটি তারা।
নাসির উদ্দিন খান নেগেটিভ রোলে নিজেই নিজের প্রতিদ্বন্দ্বী। নেগেটিভ রোল কিন্তু গতানুগতিক ছিল না, একদম অন্যরকম একটি নেগেটিভ রোল। রাশেদ মামুন অপু ছবির বড় একটি অংশের অভিনেতা। এ কে আজাদ সেতুও নিজের চরিত্রে দারুণ, তার চোখও কথা বলে।
সাংকেতিক সংলাপে রহস্য করে কথা বলাটা ছবির শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত ছিল। সংলাপের মধ্যে রহস্যের আবরণ। সংলাপগুলো ছবির প্রধান তিন অভিনয়শিল্পীদের মধ্যে সমানভাবেই ছিল। মিউজিক্যাল ছবির জন্য অনেকগুলো গান ব্যবহৃত হয়েছে। গানের এক্সিকিউশনে রাগসঙ্গীতের ব্যবহার বেশি এবং শিল্পসম্মত ছিল। সেট সাজানোর বিষয়টাও রাগসঙ্গীতের সাথে যথার্থই পোট্রে করা হয়েছে। ‘মেঘের নৌকা’-র রোমান্টিক গানের পর স্যাড ভার্সনের গানগুলোও ভালো।
ইনডোর লেকেশন বেশি ছিল ছবিতে তবে পাহাড়ি পরিবেশ, সেন্টমার্টিনের লোকেশনে গান চমৎকার সিনেমাটোগ্রাফিতে করা হয়েছে। বিজিএম ভালো তবে কিছু জায়গায় সাউন্ডের আধিক্য ছিল।
ঈদের ছবি শুধু নাচেগানে ভরপুর কমার্শিয়াল ফর্মুলা ছবিই হতে হবে এ ধারণা থেকে বেরিয়ে নতুন কিছু করার চেষ্টাটি ‘প্রহেলিকা’তে আছে। ছবির বিষয় ও ভিন্নরকম উপস্থাপনার প্রচেষ্টায় ঈদের অন্যসব ছবির থেকে এটি পুরোপুরি আলাদা হয়েই ঈদের সেরা ছবি হয়েছে।
রেটিং : ৮/১০
প্রহেলিকা একটি টেনেটুনে লম্বা করা নাটক যেখানে মাহফুজের টুপি কখনো পানিতে ভেসে উঠে না৷ এমন অবৈজ্ঞানিক আজগুবি ভিততিহীন গল্প নিয়ে নির্মিত নাটককে আপনি সেদা ছবি বলেন কিভাবে?
এই নাটকে চমৎকার গান জুড়ে দেওয়া হয়েছে আর বাংলাদেশের সুন্দর কিছু দৃশ্য৷ সময় আর পয়সা কিছুটা উশুল হয়েছে তা দেখে। কিছু নেই এটার মধ্যে দেখার৷
নারী দূর্বল, পরনির্ভরশীল দেখতে আজকাল দর্শকদের আর ভালো লাগে না৷
ধন্যবাদ রোদেলা নীলা। যদি বিস্তারিত লেখেন খুশি হবো।