Select Page

‘বেঙ্গলি বিউটি’তে কী থাকছে? থাকছেন কারা?

‘বেঙ্গলি বিউটি’তে কী থাকছে? থাকছেন কারা?

‘বেঙ্গলি বিউটি’ পরিচালনা করেছেন রাহশান নূর। তিনিই এ ছবির নায়ক, বিপরীতে আছেন মুমতাহিনা টয়া। ছবিটি মুক্তি পাচ্ছে ২০ জুলাই। ছবিটির মুক্তি সামনে রেখে সাংবাদিকদের নিয়ে এক উন্মুক্ত আড্ডায় বসেছিলেন নির্মাতা। সঙ্গে ছিলো ছবিটি নির্মাণের ভাবনা, পেছনের গল্প ও মুক্তির প্রস্তুতির আলাপচারিতা। জাগো নিউজ অবলম্বনে জেনে নিন বিস্তারিত।

নির্মাতা রাহশান নূর আমেরিকা প্রবাসী। জানালেন, সিনেমা তার রক্তে। বাংলাদেশের প্রথম সাপ্তাহিক ম্যাগাজিন ‘বিচিত্রা’র সম্পাদক নুরুল ইসলাম পাটোয়ারীর নাতি তিনি।

প্রকৌশলী বাবা ও চিকিৎসক মা জীবিকার প্রয়োজনে বিদেশ পাড়ি দিলেও তাঁদের অন্তরজুড়ে ছিল বাংলাদেশ। তাই সেখানকার বাঙালিদের নিয়ে গড়ে তুলেছিলেন একটি কালচারাল ক্লাব। ক্লাবের জন্য টুকটাক অভিনয় করতে করতেই বাঙালি সংস্কৃতির সঙ্গে নিজেকে জড়িয়ে ফেলেছেন রাহশান।

রাহশান পড়াশোনা করেছেন অর্থনীতি নিয়ে, প্রধান বিষয় ছিল আন্তর্জাতিক ব্যবসা। কিন্তু স্বপ্ন ছিল চলচ্চিত্রের সঙ্গে জড়িত হবেন। বাংলাদেশের চলচ্চিত্রকে আন্তর্জাতিক পরিসরে নিয়ে যাবেন। এরই মধ্যে কয়েকটি ছবিতে অভিনয় করেছেন তিনি।

বাংলাদেশে নিয়মিত যাতায়াত ছিল। আগ্রহে ছিলো এ দেশীয় চলচ্চিত্রও। ধানমন্ডির একটি স্কুলের জন্য টাকা তুলতে আনাড়ি হাতে তুলে নিয়েছিলেন ক্যামেরা। বানিয়ে ফেলেন একটি ছবি ‘কিংস অব ডিভান’। ছবির অভিনয়শিল্পীরা ছিলেন পরিবার কিংবা বন্ধুজন। আনাড়ি হাতের সেই ছবি হলেও দেখানোর সুযোগ পেলেন তিনি। যুক্তরাষ্ট্রের চারটি শহরে সেই ছবি চলল। সেখান থেকে টাকা গেল স্কুলটিতে।

এরপর রাহশানের মাথায় চলচ্চিত্র ভর করল যেন। আর চারদিকে সবার অনুপ্রেরণা শক্তি হয়ে এলো। কিছুদিন পরই তিনি যুক্তরাষ্ট্রের একটি ছবিতে তিনি অভিনয় করলেন। নাম ‘প্রমিস ল্যান্ড’। যুক্তরাষ্ট্রের অভিবাসীদের নিয়ে ছিল এই ছবি।

২০১৩ সালে মুক্তি পায় রাহশান অভিনীত বাংলা ছবি ‘সীমানাহীন’। বাংলাদেশ, ভারত, যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য ও অস্ট্রেলিয়ায় ছবিটি মুক্তি পেয়েছিল। ২০১৫ সালে মুক্তি পায় ইংরেজি ছবি ‘দ্য স্পেকটেকুলার জিহাদ অব ট্যাজরহিম’। এ ছবিতে ধোবিঘাট, রকঅন ছবিখ্যাত মনিকা ডোগরা অভিনয় করেছিলেন রাহশানের বিপরীতে। এরপর ‘কার্স অব দ্য কোহিনূর’ নামের একটি হিন্দি ছবিতেও অভিনয় করেছেন রাহশান নূর। এতে আছেন বাংলাদেশের আরেক অভিনেতা আরেফ সৈয়দ (অনিল বাগচির একদিন)।

এরপরই মাথায় এলো বাংলাদেশের জন্য চলচ্চিত্র নির্মাণের কথা। ব্যাস, নানা সূত্র, চেষ্টা এক করে এগিয়ে চলার শুরু। আর সেটি শেষও হয়ে গেল। নির্মিত হলো রাহশান নূরের চলচ্চিত্র ‘বেঙ্গলি বিউটি’। এখানে পরিচালনার পাশাপাশি মূল পুরুষ চরিত্রে অভিনয়ও করেছেন তিনি। এটিও যুক্তরাষ্ট্রে মুক্তি পেয়েছে গেল ১২ ফেব্রুয়ারি। প্রায় ১২টি হলে ভালো ব্যবসা করেছে ছবিটি। পরিচালক সন্তুষ্ট। তিনি বলেন, ‘এই ছবিটি বানানো হয়েছে আন্তর্জাতিক বাজারকে মাথায় রেখে। এর সিনেমাটোগ্রাফি, সংলাপও তেমন করেই করা হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রে ছবিটি আমাকে সন্তুষ্ঠ করেছে। সেখানে প্রবাসীরা ছবিটি গ্রহণ করেছেন। এবার আমি নিজের দেশে ছবিটি মুক্তি দিতে চাইছি।’

তিনি আরও বলেন, ‘‘বেশ কিছু কারণ ছবিটি সেন্সরে আটকে ছিলো। আমি এই ছবিটি বানাতে গিয়ে বাংলাদেশে সিনেমা নির্মাণে নানারকম অভিজ্ঞতা সঞ্চয় করেছি। অভিজ্ঞতাগুলোকে সিনেমা নির্মাণের প্রতিবন্ধকতাও বলা যায়। এখানে শুটিংয়ের পারমিশন নিয়েও পাবলিক স্থানে নিশ্চিন্তে শুটিং করা যায় না। রাজনৈতিক সমস্যাও আসে। সহযোগী মনোভাব নয় পরিবেশ। তথ্যমন্ত্রীর লিখিত অনুমতি নিয়েও বাংলাদেশ বেতারে কাজের অনুকূল পরিবেশ পেতে আমাকে অনেক ঝামেলা পোহাতে হয়েছে। আমার কাছের মানুষেরা এইসব শুনে হেসেছে। বলেছে আমি এই পরিবেশে অভ্যস্ত নই বলেই এমনটা হয়েছে। এখানে কথার পরেও অনেক কথা থাকে। না বলার পরও অনেক হ্যাঁ নাকি থেকে যায়। তবে সেগুলো দেখে দেখে ও কাজের বেলায় ঠেকে ঠেকে শিখছি।

আর এতসবের পরেও সেন্সর ছাড়পত্র নিয়ে জটিলতা হয়েছে। মুক্তির অনুমতি পাওয়াটা ছিলো একটা যুদ্ধের মতোই। সিনেমা মানুষের বিনোদনের খোরাক দেয়, রুচির পরিবর্তন ঘটায়। এমন একটি শিল্পচর্চার পরিবেশ আরও সহজ ও সুন্দর হওয়া উচিত। আরও সহযোগী মনোভাব রাখা উচিত সবাইকে। কেউ কাজ করলে তাকে এগিয়ে যেতে সাহায্য করা দরকার। তবুও আনন্দের ব্যাপার এটাই, হলে আসছে ‘বেঙ্গলি বিউটি’।’’

কী দেখা যাবে ‘বেঙ্গলি বিউটি’-তে? রাহশান নূরের জবাব, ‘আকাশ কুসুম কোনো গল্প নয়, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের মৃত্যুর পর কিছু সত্য ঘটনা এখানে দেখা যাবে। একজন প্রবাসী বাংলাদেশ বেতারে আরজে হিসেবে কাজ করেন। তিনি এখানকার সিস্টেমের নানা রকম সমস্যা চিহ্নিত করে সেগুলো পরিবর্তন করে দিতে চান। সে নিয়ে তাকে অনেক প্রতিকূলতার মুখে পড়তে হয়। এক বিপ্লবী চেতনার যুুবকের এই লড়াইটা দেখা যাবে। পাশাপাশি থাকবে এক বাঙালি নারীর প্রেমের সৌন্দর্য ও মুগ্ধ উপস্থাপন। দেখা যাবে, বাংলা ও বাঙালির নানামাত্রিক ব্যাঞ্জনা। আছে কিছু শ্রুতিমধুর গানও।’

বাঙালি নারী চরিত্রের টয়ার সঙ্গে কাজের অভিজ্ঞতায় রাহশান তৃপ্ত। তার মতে, ‘একজন ডাক্তারি পড়ুয়া ছাত্রীর চরিত্রে অভিনয় করেছেন টয়া। সত্তর দশকের নারী হিসেবে তাকে অনেক হোম ওয়ার্ক করতে হয়েছে। টয়া কাজটির প্রতি মনযোগী ছিলো। সে সুন্দরী ও মেধাবী একজন অভিনেত্রী। তার অভিনয় চমৎকার। আমার ছবির চরিত্রের সঙ্গে সে দারুণভাবে নিজেকে মানিয়ে নিয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের দর্শকেরাও টয়ার অভিনয়ের প্রশংসা করেছে। তার সঙ্গে এই ছবির জার্নিটা মনে রাখার মতো।’

ছবিটির মুক্তির পরিকল্পনা নিয়ে তিনি বলেন, ‘আমি চেয়েছিলাম ছবিটি এখানকার জনপ্রিয় কোনো প্রযোজনা প্রতিষ্ঠানকে দিয়ে পরিবেশন করবো। কিন্তু এখানেও তিক্ত অভিজ্ঞতা হয়েছে আমার। শিল্পের চেয়ে বা সিনেমার চেয়ে এখানে ব্যবসা আর মানুষকে বোকা বানানোটাই যেন মূল ব্যাপার। ছবিটির গান ও ট্রেলার-টিজার সব নিজের ইউটিউব চ্যানেলেই প্রকাশ করেছি। কোনো বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানকে দেইনি। আর ছবি মুক্তির ব্যাপারেও চুজি থাকার চেষ্টা করেছি। ছবিটি শ্যামলী সিনেপ্লেক্স, বসুন্ধরা সিটির স্টার সিনেপ্লেক্স, যমুনার ব্লকবাস্টারে মুক্তি পাবে। চেষ্টা করছি বলাকা সিনেপ্লেক্সসহ পরিবেশ ভালো এমন কিছু হলে মুক্তি দিতে। ছবিটি দেখতে ঝাঁকে ঝাঁকে হয়তো দর্শক আসবেন না, কিন্তু যারাই আসুন আমি চাই তারা বিনোদিত থাকবেন ছবিটি দেখে।’

বাংলাদেশের বাজারে সিনেমা বানানো হুমকি। লগ্নির টাকা ফেরত পাওয়া অত্যন্ত কঠিন। সেই জায়গায় রাহশান নূর রয়েছেন নির্ভার। তিনি বলেন, ‘ছবিটি থেকে যা ব্যবসা করার প্রত্যাশা ছিলো সেটি আমি যুক্তরাষ্ট্রে করেছি। চীনেও বেশ বড় কমিউনিটি আছে আমাদের। সেখানেও অনেক হলে এটি বাণিজ্যিকভাবে মুক্তি দেব। তাই অর্থ লগ্নি নিয়ে ভাবছি না। আমার মনে হয়, প্রত্যেক বাংলাদেশি নির্মাতারই এখন বিশ্ববাজার নিয়ে ভেবে চলচ্চিত্র বানানো উচিত। কারণ, বিশ্বজুড়েই আমাদের বাঙালিরা রয়েছেন। তারা যে যেখানে থাকেন সেখানে সিনেমা দেখতে চান। এতে করে কিন্তু আমাদের বাজারটাও বড় হয়। আমি আশা করছি, ‘বেঙ্গলি বিউটি’ আরও অনেক দেশেই মুক্তি পাবে।’

সিনেমার ভবিষ্যত নিয়ে রাহশান জানান, নূরুল ইসলাম পাটোয়ারির নাতি হিসেবে তিনি গর্বিত। ত্রিশ বছর আগে তার দাদা মারা গেছেন। অথচ এখনো তার পরিচয় দিলে চলচ্চিত্রের মানুষদের কাছে স্নেহ পান তিনি। এমনকী ‘বেঙলি বিউটি’ নির্মাণের ক্ষেত্রেও অনেক সহযোগিতা তিনি পেয়েছেন। তিনি মনে করেন, এই দেশের চলচ্চিত্রে তার দাদার অনেক অবদান ছিলো বলেই সবাই তাকে মনে রেখে দিয়েছে। রাহশান, এদেশের চলচ্চিত্রে তার দাদার নামটিকে আরও উজ্জ্বল করতে চান। সম্ভব হলে ছাড়িয়ে যেতে চান দাদাকেও।


মন্তব্য করুন