Select Page

মনে রেখো : ভুলে গেলাম!

মনে রেখো : ভুলে গেলাম!

নাম : মনে রেখো
ধরন : রোম্যান্টিক-কমেডি-ড্রামা
পরিচালক : ওয়াজেদ আলী সুমন
কাস্ট : বনি সেনগুপ্ত (লাকী), মাহিয়া মাহি (মুন), জয়ী দেব রায় (সোহেল), সাদেক বাচ্চু (লাকীর বাবা), মিশা সওদাগর (হিপ্পো), তুলিকা বসু (লাকীর মা), খুরশীদুজ্জামান উৎপল (মুনের বাবা), নাদের চৌধুরী (বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য), যাদু আজাদ (সোহেলের মামা), চিকন আলী (হৃতিক), সীমান্ত আহমেদ (লাকীর বন্ধু) প্রমুখ।
মুক্তি : ২২ আগস্ট, ২০১৮
ভাষা : বাংলা

নামকরণ : ছবিটির পুরো নাম “মনে রেখোঃ Mind It”। আদতে পুরো ছবি দেখার পর এই নামে কোনো সার্থকতা আমি খুঁজে পাইনি, যদিও নামটা সুন্দর এবং শুনতে ভালো লাগে। তবে যদি ছবির নাম “মনের আঙিনা” কিংবা এই টাইপের কিছু রাখা যেত তবে কিছুটা মিল পেতাম। সবমিলিয়ে সুন্দর কিন্তু গল্প অনুসারে নামটি খাটেনি।

কা.চি.স (কাহিনী+ চিত্রনাট্য+ সংলাপ) : গল্পটি কিছুটা এরকম… ভার্সিটি পড়ুয়া এক বখাটে ছেলে লাকী; কোনোবারই প্রথম বর্ষ সেমিস্টার পাস করতে না পারায় টানা ৫ বছর একই ক্লাসে পড়ছে। বলতে গেলে প্রায় ধনীর দুলাল, আবার তার মা ঐ ভার্সিটির গভর্নিং বডির সদস্য। সেই ভার্সিটিতে ‘মুন’ নামে এক নতুন স্টুডেন্টের আগমন ঘটে। প্রথম দেখাতেই লাকীর ভালো লেগে যায় এবং সে প্রপোজ করে বসে। কিন্তু মুনের পছন্দ ‘সোহেল’ এর মতো ভদ্র, ভীরু, মেধাবী ছেলে। এরপর অনেক দ্বন্দ্ব, কিছু টুইস্ট, কিছুটা কমেডি, হালকা মারামারি, মেলোড্রামা এবং রোম্যান্সের মিশেলে এগিয়ে যায় ছবির গল্প।

ছবির গল্প অনেক দূর্বল লেগেছে। সে তুলনায় চিত্রনাট্যের কাজ ভালো হয়েছে। সিক্যুয়েন্সগুলো গোছানো ছিল, একটার সাথে আরেকটার শক্ত গাঁথুনি ছিল। মনের দরজা খুলে দেখানোর সিক্যুয়েন্সটি ছিল এই ছবির বেস্ট পার্ট। ঐ সিক্যুয়েন্সে ডায়লগগুলো খুবই সুন্দরভাবে সাজানো হয়েছে, সেটের এরেঞ্জমেন্ট, লাইটিং.. সবকিছু পারফেক্ট ছিলনে। এই সিনটি অনেক দিন মনে থাকবে।

শেষের ক্লাইমেক্স অংশের কমেডি প্রথম প্রথম ভালোলাগলেও অতিরিক্ত বড় করে ফেলায় পরে বিরক্তিকর পর্যায়ে চলে। কমেডি পার্ট আস্তে আস্তে রূপ নেয় মেলোড্রামায়। সিক্যুয়েন্সটি আরো ছোট করা উচিত ছিল।

ছবির ডায়লগ মোটামুটি ছিল। পাঞ্চলাইনগুলো ভালো, কিন্তু সঠিক ডেলিভারি হয়নি।

এ অংশ কে দিচ্ছি ১০০ তে ৬৫।

টিমওয়ার্ক : সত্যি কথা বলতে, এই ছবিতে অভিনয়ই আপ টু দ্য মার্ক লাগেনি। বনির এ্যাকটিং মোটামুটি চলনসই; কিন্তু এটা ভাবা উচিত ছিল, তার প্লে করা লাকী ক্যারেক্টারটি হিরোইজম ভিত্তিক! তার লুক, স্টাইল, ডাবিং কোনটাই লাকী ক্যারেক্টারের সাথে মানানসই ছিল না। সম্ভবত ডাবিং অন্য কেউ করেছেন, তাই ভয়েসে সেই পাওয়ার ছিল না; কোনোরকমের জোশ পাইনি সেই ভয়েসে।

অন্য হিরো জয়ীর অবস্থা আরো করুণ। লুক কিছুটা থাকলেও স্টাইলের অভাব, নাচতে না পারা… এগুলো ছিলই। সাথে “গোশল করিয়ে দেবো”, “কিচু না”, “পারচি না”, “শকাল হলে” এইরকম উদ্ভট টাইপের বাংলা শব্দ আর উচ্চারণ শুনতে পাওয়া গেছে। সোজা কথায় বললে, ডাবিং এর অবস্থা চরম বাজে ছিল। দুইজন মিলে ছবির অনেক জায়গায়ই সিরিয়াসনেসের বদলে লেইম বানিয়ে ফেলেছে। এ্যাকটিং-এ এই দুইজনের কারো মধ্যেই কোনো জোর পাইনি; অথচ, লাকী এবং সোহেল ক্যারেক্টার দুইটিতে যতটা সুযোগ ছিল, এতে তারা অনেক কিছুই করে দেখাতে পারতেন।

বনি-জয়ীর তুলনায় মাহির অভিনয় বেটার মনে হয়েছে। কিন্তু সেই পুরোনো প্রব্লেম, অতিরিক্ত ন্যাকামি। তবে ছবির দ্বিতীয়াংশে ন্যাকামি অনেকখানিই কম ছিল, শেষের ক্লাইম্যাক্স যদি বাদ দেই।

ছবির শুরুতে মিশা সওদাগরের কমেডি ভিলেন টাইপের অভিনয় বেশ ভালোই লাগছিল। পরবর্তীতে পুরনো উচ্চকিত ডায়লগ ডেলিভারির কারণে তিনিও বিরক্তিকর পর্যায়ে চলে যান। সাদেক বাচ্চুরও একই প্রব্লেম। স্বাভাবিকের বদলে চিৎকার-চেঁচামেচি করে ডায়ালগ দেওয়া। হয়তো পরিচালক ওয়াজেদ আলী সুমন সবাইকে কমেডি সিক্যুয়েন্সে চেঁচামেচি করার নির্দেশ দিয়েছিলেন…

চিকন আলীর অভিনয় দেখে আমার কোনভাবেই লাকীর বন্ধু মনে হয়নি। মনে হচ্ছিল তার ওপর জোর করে লাকীর বন্ধুর পার্টটি করিয়ে নেওয়া হচ্ছে। সে তুলনায় সীমান্ত আহমেদসহ লাকীর অন্যান্য বন্ধু এবং হিপ্পো ভাইয়ের দুই চেলা সোজা এবং ত্যারা, এরা ভালো বিনোদন দিয়েছে।
এছাড়া খুরশীদুজ্জামান উৎপল, তুলিকা বসু, যাদু আজাদ, নাদের চৌধুরীসহ আরো অনেকে গতানুগতিক ছিলেন।

এ অংশ কে দিচ্ছি ১০০ তে ২০।

কারিগরি : এ দিক থেকে ওয়াজেদ আলী সুমন হার্ট বিট প্রডাকশনের কাছ থেকে যথেষ্ট সুযোগ-সুবিধা পেয়েছেন। টাকা ঢালতে কোনোপ্রকার কার্পণ্য করা হয়নি।

সিনেমাটোগ্রাফি মোটামুটি ভালোই হয়েছে, তেমন খারাপ লাগেনি। এডিটিং-এ অনেক জায়গায় দুর্বল ছিল, বিশেষ করে ফাইট সিক্যুয়েন্সে। কালার গ্রেডিং মোটামুটি চলনসই অবস্থানে ছিল। ব্যাকগ্রাউন্ড মিউজিক মোটামুটি পর্যায়ে ছিল, আরো ভালো করা যেত।

ভিএফএক্স ভালো হয়েছে। মোটামুটি চোখকে ফাঁকি দিতে পেরেছে। লোকেশন চয়েজ অন্যতম একটা প্লাস পয়েন্ট হয়ে থাকবে, মেকি মনে হয়নি। ফাইট কোরিওগ্রাফি কোনো জায়গায় অনেক ভালো হয়েছে, আবার কিছু জায়গায় অনেক বেশি দুর্বল ছিল। আর ফাইট সিনে ক্যামেরার কাজ ছিল আরো দুর্বল। কেন জানি ইদানিংকালের কোনো ছবিতেই আমরা ফাইট সিনগুলোতে ক্যামেরার কাজ ভালো পাচ্ছি না। ক্যামেরার এঙ্গেল ঠিকমতো পাচ্ছি না, যার কারণে দেখতে ভালো লাগছে না। আশিকুর রহমান, ইফতেখার চৌধুরী কিংবা দীপংকর দীপন…. এরা আমাদের দেখিয়েছেন এ্যাকশন সিক্যুয়েন্সে ক্যামেরা কীভাবে ধরতে হয়। এই ডিপার্টমেন্টে উন্নতি করা অতীব জরুরি।

এ অংশ কে দিচ্ছি ১০০ তে ৬৫।

বিনোদন : গান রয়েছে ৪টি। তার মধ্যে হৃদয় খান ও মিলার গাওয়া টাইটেল ট্র্যাকটি সবচেয়ে বেশি ভালো লেগেছে। নেপালে শ্যুট করা লোকেশন ভালো ছিল। এছাড়া ইমরানের গাওয়া “একটা গার্লফ্রেন্ড আমার চাই” হলে বসে এনজয় করেছি। বাকি দুইটি গান তেমন একটা ভালো লাগেনি। তবে আদিল শেখের কোরিওগ্রাফি অনেক ভালো ছিল। যার কারণে আকাশ সেনের গানের সুর-তাল ভালো না লাগলেও দেখতে অনেক ভালো লাগছিল।

ছবিতে ছোটখাটো বেশ কিছু কমেডি সিক্যুয়েন্স আছে, সেগুলো এনজয়েবেল ছিল। আবার কিছু সিক্যুয়েন্স বাজে অভিনয়ের কারণে জমেনি।

দুই নায়কের মধ্যে মাহির সাথে কারো রোম্যান্সই ঠিকঠাক মতো জমেনি। তবে এরেঞ্জমেন্ট অনেক ভালো ছিল, যেটা বাংলা মৌলিক গল্পের ছবিতে সচরাচর কম দেখা যায়।

এ অংশ পাবে ১০০ তে ৭০।

ব্যক্তিগত : ছবিটা মৌলিক গল্পের হলেও ঈদে মুক্তি পাওয়া বাকি দুটো ছবির তুলনায় এছবি আমার কাছে তুলনামূলক দূর্বল ঠেকেছে। তবে মেকিং বাংলাদেশি ছবির প্রেক্ষাপটে অনেক ভালো লেগেছে, বাজেট ভালো ছিল। কিন্তু যদি মেইন জিনিসটাই দূর্বল থাকে, তাহলে আর বাজেট, মেকিং এগুলোর তেমন কোনো গুরুত্ব থাকে না। শুধু মেকিং দিয়ে দুর্বল অভিনয় ঢাকার ব্যর্থ চেষ্টা লেগেছে…

রেটিং : ৫.৫/১০

ছবিটি কেন দেখবেন : মাহির ডাইহার্ট ফ্যানদের অনেক বেশি ভালোলাগবে। এছাড়া আপনি যদি এন্টারটেইনিং মুভি পছন্দ করেন, হলে গিয়ে আড়াই ঘণ্টা হাসি-খুশি কাটাতে চান, এ ছবি একবার দেখতে পারেন। কিন্তু, নিজের মস্তিষ্ক বাসায় তালাবদ্ধ অবস্থায় রেখে এরপর সিনেমাহলে যেতে হবে।


Leave a reply