ঈদের নাটকে যখন ঈদের গল্প
‘ঈদ’,বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় উৎসব। যার ছোঁয়া লাগে আমাদের টিভি নাটকেও। প্রতি ঈদে করেই নির্মিত হয় শতাধিক নাটক। কিন্তু ‘ঈদের গল্প’ কটা নাটকেই বা আসে। ইদানীংকালে সেটা ক্রমশ কমছে, তবে ২০০০ সালের পর নাটকে ঈদের গল্প বাড়তে থাকে। ঈদুল ফিতর ২০২২ উপলক্ষে টিভিতে প্রচারিত উল্লেখযোগ্য ঈদের গল্পের নাটক নিয়ে আজকের আয়োজন—
এই সিরিজের আরও লেখা: আমাদের টিভি নাটক
১.ঈদ ২০০০: তৌকীর আহমেদ পছন্দ করে বিয়ে করেন ঈশিতাকে। কিন্তু নববধূকে পছন্দ করেন না শাশুড়ি শর্মিলী আহমেদ। এদিকে ঈশিতার ননদ চাঁদনী। তাকে পছন্দ করে জয়। সামনে আসছে ঈদ। ঈশিতা প্ল্যান করে সে এমন কিছু করবে যাতে সবাই চমকে যায়, সঙ্গে খুশি হয়। আর সঙ্গে রাখে ননদ চাঁদনীকে। কিন্তু ঈদের দিন ঘটে যায় অন্য ঘটনা। এমনই গল্প নিয়ে ফারিয়া হোসেন নির্মাণ করেন এই জনপ্রিয় নাটক।
২.মোবারকের ঈদ: একই বাসায় থাকা এটিএম শামসুজ্জামান, আব্দুল কাদের ও টনি ডায়েস সিদ্ধান্ত নেয় ঢাকায় ঈদ করবে, সঙ্গে তাদের কেয়ারটেকার ফারুক আহমেদ। টনি ডায়েসের গভীর প্রেম বাড়িওয়ালার মেয়ে তানভীন সুইটির সঙ্গে। শত অনুরোধ করেও কাজের বুয়া মোবারকের মাকে আটকাতে পারেনি তারা। এমন সময় খবর আসে লটারিতে তারা টাকা জেতে, ঘটনা মোড় দেয় অন্যদিকে। মোহাম্মদ হোসেন জেমীর রচনা ও পরিচালনায় এই নাটকের শুরু থেকেই হাস্যরসাত্নকে পূর্ণ হলেও শেষে গিয়ে হয়ে উঠে মানবিক গল্প। বেশ জনপ্রিয় হয় এই নাটক।
৩.পথ যদি না শেষ হয়: ফেরদৌস হাসানের নাটক। দিলারা জামান ঠিক করে এই ঈদ তার বাবার গ্রামের বাড়িতে গিয়ে করবে, কিন্তু স্বামী আবুল হায়াতের ঘোর আপত্তি। অবশেষে ভাই আব্দুল কাদের ও ছেলে জয়সহ সবাই রওনা দেয়, পথে দেখা হয় রিচি সোলায়মানের পরিবারের সঙ্গে। ঈদের আগের দিন, পথে নানান বিড়ম্বনার পর অবশেষে সবাই বাড়িতে পৌঁছে। নানান হাস্যরসাত্নকের পর শেষে মোজাম্মেল হোসেনের উপস্থিতি চোখে জল এনে দেয়। প্রচার ২০০১ সালের ঈদে একুশে টিভিতে।
৪.ঈদ ভ্যাকেশন: অভিনয়শিল্পীর পরিবার। বাবা, মা, ছেলে তিনজনই ঈদের নাটক নিয়ে ব্যস্ত, এমন সময় বিদেশ থেকে আসে একমাত্র মেয়ে। সে দাদীর সঙ্গে সময় কাটায়। ছেলে প্রস্তাব দেয় বিদেশে ঈদের ছুটি কাটানোর জন্য, সবাই রাজি হলেও বেঁকে বসে মেয়ে। সারা যাকেরের পরিচালনায় এই নাটকে বিভিন্ন চরিত্রে অভিনয় করেন আসাদুজ্জামান নূর, সুবর্ণা মুস্তাফা, মিরানা জামান, ইরেশ যাকের ও নওশাবা। প্রচার হয় ২০০৮ সালে,এনটিভিতে।
৫.ধইরা খাড়া: বরিশালগামী নিম্নমধ্যবিত্ত মানুষগুলোর ঈদ যাত্রা নিয়ে এই নাটক। মীর সাব্বির ও বিজরী বরকতউল্লাহ ঈদে বাড়ি যাচ্ছে লঞ্চে করে, যাত্রাপথে পরিচয় হয় আজাদ আবুল কালাম ও তমালিকার সঙ্গে, যারা দুইজনই ভিক্ষা করে, আর আছে পকেটমার শতাব্দী ওয়াদুদ। লঞ্চের ভেতরের নানান কর্মকান্ড ও শেষে চমক নিয়ে সাজানো এই নাটকের নির্মাতা অনিমেষ আইচ। ২০০৯ সালে বিটিভিতে দিয়েছিল।
৬.গোলাপী পাঞ্জাবী: দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের বাজারে ঈদ। জিনিসপত্রের দাম চড়া। রাজা ও বাদশা দুই ভাই। সেই সময় ঈদে রেশনে কাপড় দেওয়া হলো শুধু সাদা আর গোলাপি। রাজা ও বাদশার আবদার, এবারের ঈদে তাদের গোলাপি পাঞ্জাবি চাই। আব্দুল খলিফার কাছে পাঠানো হলো দুটো গোলাপি রঙের পাঞ্জাবি মাপ দিয়ে বানাতে। কিন্তু তাতে তাদের আশা পূরণ হলো কী!
সৈয়দ শামসুল হকের রচনায় শাহনেওয়াজ কাকলীর নাটক ‘গোলাপী পাঞ্জাবী’। রাজা ও বাদশার চরিত্রে মামুন ও স্বপ্ন ছাড়াও প্রাণ রায়, রাইসুল ইসলাম আসাদ, মোমেনা চৌধুরী অভিনয় করেছিলেন। ২০০৯ সালের ঈদে বিটিভিতে প্রচার হয়েছিল। নাটকটির প্রযোজক ছিলেন রিচি সোলায়মান।
৭.ঈদের টিকেট: ঈদের সময় যাত্রার জন্য ঈদের টিকেট যেন সোনার হরিণ। ঈদের সময় বাসের টিকেট নিয়ে এই গল্প লিখেছেন আনিসুল হক। সকাল আহমেদের পরিচালনায় এই নাটকের মূল পাত্রপাত্রী মাহফুজ আহমেদ ও তিশা। ২০১০ সালে ঈদে প্রচার হয় বিটিভিতে।
লিংকঃ https://youtu.be/wYML1sI4CBg
৮.ঈদের ডায়েরী: মোশাররফ করিম-জয়া আহসানের জুটি বেঁধে একমাত্র নাটক। ইশতিয়াক আহমেদ রুমেলের পরিচালনায় এই নাটকে দেখা যায়, দুজন মিলে ঠিক করে ঈদের দিন বিয়ে করবে। কিন্তু সেদিন দূর্ঘটনায় মারাত্মক আহত হন জয়া, মোশাররফ তাকে নিয়ে হাসপাতালে হাসপাতালে ঘুরছে কারন ডাক্তাররা সবাই ঈদের ছুটিতে!
৯.জামাই দাওয়াত: গ্রামের এক পরিবারের তিন মেয়ে তাদের স্বামী নিয়ে বাবার বাড়িতে ঈদ করতে এসেছে। কিন্তু বড় ও ছোট জামাইয়ের মধ্যে মিল নেই, শেষ পর্যন্ত সবার রেষারেষিতে ঈদের খুশি ম্লান হওয়ার জোগাড়। বৃন্দাবন দাশের রচনায় আমিন আজাদের পরিচালনায় এই নাটকে অভিনয় করেছেন চঞ্চল চৌধুরী, শাহনাজ খুশি, হোমায়ারা হিমু, তাজিন আহমেদ, আমিন আজাদ, আফরোজা বানু, বৃন্দাবন দাসসহ অনেকে।
১০.মেন্টাল ফ্যামিলি: ভাই তার স্ত্রীকে নিয়ে শ্বশুরবাড়িতে ঈদ করতে যাবে, এমন সময় তার বোন এবং দুলাভাই হাজির তাদের সঙ্গে ঈদ করতে। এই নিয়ে খুশি নয় ভাবী, বিপদে পড়ে যায় ভাই। আবেগঘন এই গল্পের অনেকাংশই হাসির মোড়কে ফুটে উঠা। বৃন্দাবন দাসের রচনায় এই নাটকে অভিনয় করেছে চঞ্চল চৌধুরী, শাহনাজ খুশি, ফারহানা মিলি, আ খ ম হাসান, দিব্যজ্যোতি ও সোম্যজ্যোতি। পরিচালনায় ছিলেন দীপু হাজরা।