Select Page

গুণিনের গুণ বিচার

গুণিনগিয়াস উদ্দিন সেলিমের সিনেমা। শুধুমাত্র এই নামটাই যথেষ্ট সিনেমারটির প্রতি আগ্রহী হওয়ার জন্য। উনার নির্মিত ‘মনপুরা’ আমার সিনেমা হলে দেখা প্রথম ছবি, যেটা সব সময়ের প্রিয়। গিয়াসউদ্দিন সেলিম মানেই একটু ভিন্ন আঙ্গিকে ভালোবাসার ছবি। একটু ভিন্ন আঙ্গিকে ‘মনপুরা’র মতো এবারও তিনি বেছে নিয়েছেন গ্রাম।

সময়কাল স্বাধীনতা পরবর্তী সময়, যেহেতু ‘আলোর মিছিল’ সিনেমার গান চলছিল। প্রত্যন্ত এক কুসংস্কারাচ্ছন্ন  গ্রামে গুণিনের আধিপত্য। যে জ্বীন-ভূত থেকে গ্রামের মানুষদের রক্ষা করে।

রজব আলী গুণিনের বেশ বয়স হয়েছে,তার তিন নাতি। বড় নাতির বিয়ে হলেও বাকি দুই নাতি আলী ও রমিজ এখনো অবিবাহিত। এমন সময় বাবা মারা যাওয়ায় মাসহ নানীর বাড়িতে আসে রাবেয়া। প্রথম দেখাতেই তার প্রেমে পড়ে যায় গুণিনের দুই নাতি। তারপর গুণিনের মৃত্যু, তার উত্তরসূরী নিয়ে জটিলতা, ত্রিকোন প্রেমের জটিলতা ও একটি কঠিন সিদ্ধান্তের মধ্য দিয়ে এগিয়ে যাওয়া পাপবোধ নিয়ে গুণিনের কাহিনি।

সদ্য প্রয়াত হাসান আজিজুল হকের ছোটগল্প থেকে অনুপ্রাণিত এই সিনেমার কাহিনি। গল্পের মূল উপজীব্য বেশ চমকপ্রদ। শুরুতেই অভিনয়শিল্পীদের কথা বললে, মেজ নাতির চরিত্রে মোস্তফা মনোয়ার দারুণ করেছেন, অন্যতম চরিত্রও তিনি। আবার নিজেকে ঠিক ততটাই মানিয়ে নিয়েছেন সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব পাওয়া শরিফুল রাজ, তাকে গ্রাম্য লুকে এইভাবে মানিয়ে যাবে ভাবতে পারিনি। রাজের চরিত্রায়নে সেলিম মুনশিয়ানা দেখিয়েছেন। শিল্পী সরকার অপুর অভিনয় মুগ্ধতা ছড়ায়। এ ছাড়া স্বল্প সময়ে আজাদ আবুল কালাম, ইরেশ যাকের, দিলারা জামান থেকে বড় নাতির বউ সবাই বাস্তবানুগ অভিনয় করেছেন।

পরীমণিকে দেখতে ভালো লাগলেও সুবিচার করা হয়নি, খুব সম্ভবত এবারই প্রথম সেলিমের সিনেমায় নায়িকা বিশেষ হয়ে উঠলো না, একই কথা নায়লা আজাদ নূপুরের মত বর্ষীয়ান অভিনেত্রীর বেলাতেও। 

গান দুটি বেশ ভালো, আলাদা মাত্রা এনে দিয়েছে। গিয়াস উদ্দিন সেলিমের সিনেমায় এর আগে কামরুল হাসান খসরুর অসাধারণ সিনেমাটোগ্রাফি দেখলেও এই সিনেমায় তত মন না ভরালেও মন্দ নয়। বিশেষ ধন্যবাদ দিতে হয় শিল্প নির্দেশককে, তিনি সেই সময়ের প্রেক্ষাপট অনুযায়ী দারুণভাবে সাজিয়েছেন। সম্পাদনা যথাযথ।

সব শেষে আবারও গিয়াস উদ্দিন সেলিম। যিনি এই সিনেমার সৃষ্টিকর্তা। উনি এর চেয়েও ভালো নির্মাণ জানলেও এই সিনেমার নির্মাণ নিয়ে অভিযোগ নেই। কিন্তু উনার সিনেমায় নায়ক-নায়িকার ভালোবাসার যে রসায়ন আমরা দেখি, সেটা এখানে একেবারেই অনুপস্থিত,গভীরে গিয়ে দাগ কাটে না। সংলাপেও বিশেষ কিছু নেই। এই ব্যাপারে হতাশ হয়েছি। সঙ্গে ধীরগতির চিত্রনাট্য, যেটা কিছুটা হলেও মনোযোগ কেড়ে নেয়।

সবশেষে গুণিনের সিনেমার সমাপ্তি যে উপজীব্য বিষয় নিয়ে শেষ হয়েছে সেটা বেশ ভালো লেগেছে।


লেখক সম্পর্কে বিস্তারিত

চলচ্চিত্র ও নাটক বিষয়ক লেখক

মন্তব্য করুন