![অনুদান পাওয়ার সাত বছর পর মুক্তি পাচ্ছে ‘আজব কারখানা’](https://i0.wp.com/bmdb.co/wp-content/uploads/2024/06/ajob_karkhana1_bmdb_image.jpg?resize=150%2C150&ssl=1)
মহানায়ক বুলবুল আহমেদ অধ্যায়
মহানায়ক আমাদেরও আছে। তিনি বুলবুল আহমেদ
![](https://i0.wp.com/bmdb.co/wp-content/uploads/2022/09/bulbul_ahmed2_bmdb_image-1.jpg?resize=854%2C481&ssl=1)
তিনি বাংলাদেশী চলচ্চিত্রে একজন জেন্টেলম্যান অ্যাক্টর। তাঁর মধ্যে অনন্যসাধারণ ব্যক্তিত্ব আছে। আভিজাত্য আছে। বাণিজ্যিক ছবির মধ্যেই বৈচিত্র্য বজায় রেখে নিজেকে এক্সপেরিমেন্ট করেছেন ঈর্ষণীয়ভাবে। তাঁর মতো এভাবে আর কেউ পারেননি। বাংলাদেশের চলচ্চিত্রে ঠিক এ জায়গাতেই একজন বুলবুল আহমেদ সবার থেকে আলাদা।
বাংলাদেশী চলচ্চিত্রে যত অভিনেতা আছেন সবার থেকে তিনি আলাদা। জন্ম ৪ সেপ্টেম্বর, ১৯৪১। মৃত্যু ১৫ জুলাই ২০১০। মূলনাম তবাররুক আহমেদ। চলচ্চিত্র নাম বুলবুল আহমেদ। স্ত্রী অভিনেত্রী ডেইজি আহমেদ। কন্যা ঐন্দ্রিলা আহমেদও অভিনেত্রী।
সরকারি কর্মকর্তা ছিলেন পেশায়। মঞ্চনাটকে অভিনয় করতেন। বেতার, টিভিতে আবৃত্তি করতেন এমনকি অনুষ্ঠান ঘোষকও ছিলেন। চলচ্চিত্রে একাধারে অভিনেতা, প্রযোজক, পরিচালক। প্রথম ছবি ‘ইয়ে করে বিয়ে।’ প্রযোজিত ছবি ‘মহানায়ক, ভালো মানুষ, রাজলক্ষ্মী শ্রীকান্ত।’ পরিচালিত ছবি ‘রাজলক্ষ্মী শ্রীকান্ত, আকর্ষণ, গরম হাওয়া, কত যে আপন।’
![](https://i0.wp.com/bmdb.co/wp-content/uploads/2022/09/bulbul_ahmed_bmdb_image.jpg?resize=960%2C720&ssl=1)
উল্লেখযোগ্য ছবি – মহানায়ক, সীমানা পেরিয়ে, সূর্যকন্যা, রূপালি সৈকতে, মোহনা, দেবদাস, জন্ম থেকে জ্বলছি, রঙিন নবাব সিরাজউদ্দৌলা, দি ফাদার, বধূ বিদায়, যাদুর বাঁশি, পুরস্কার, শুভদা, সোহাগ, কালো গোলাপ, হারানো মানিক, সময় কথা বলে, আরাধনা, শহর থেকে দূরে, দহন, সঙ্গিনী, নওজোয়ান, মীমাংসা, জীবন নিয়ে জুয়া, কলমিলতা, স্মৃতি তুমি বেদনা, গাঙচিল, বদনাম, অপমান, রাখে আল্লাহ মারে কে, ফেরারী বসন্ত, পেনশন, ঘর সংসার, পদ্মা মেঘনা যমুনা, মা ও ছেলে, শেষ উত্তর, ভালো মানুষ, ওয়াদা, লাভ ইন আমেরিকা, দুই প্রেমিক, সারেন্ডার, ত্রাস, বিক্ষোভ, এই ঘর এই সংসার, অধিকার চাই, দীপু নাম্বার টু, দুই জীবন, ক্ষুধা, এখনো অনেক রাত, মৌমাছি, নিঃশ্বাসে তুমি বিশ্বাসে তুমি, প্রাণের চেয়ে প্রিয়, শ্বশুরবাড়ি জিন্দাবাদ, দুই নয়নের আলো, তুমি শুধু আমার।
নির্মাতা আলমগীর কবিরের সাথে বুলবুল আহমেদের অনবদ্য মেলবন্ধন ছিল। নির্মাতা-শিল্পীর মানিকজোড়ে আমরা পেয়েছি ‘মহানায়ক, সীমানা পরিয়ে, সূর্যকন্যা, রূপালি সৈকতে’-র মতো মাস্টারপিস সব ছবি। প্লেবয় হয়ে ‘মহানায়ক’ মাতিয়েছেন, শ্রেণিবৈষম্যের বিরুদ্ধে সমাজতান্ত্রিক চেতনা তুলে ধরেছেন ‘সীমানা পেরিয়ে’-তে, নারীর জাগরণে প্রেরণা যুগিয়েছেন ‘সূর্যকন্যা’তে।
![](https://i0.wp.com/bmdb.co/wp-content/uploads/2022/09/bulbul_ahmed_kobori_bmdb_image.jpg?resize=960%2C720&ssl=1)
সাহিত্যনির্ভর ছবির মধ্যে অপরাজেয় কথাশিল্পী শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের কালজয়ী সৃষ্টি ‘দেবদাস’ নিয়ে যত চলচ্চিত্রায়ণ হয়েছে বুলবুল আহমেদই সেরা কাজটি করেছেন। মুহাম্মদ জাফর ইকবালের উপন্যাস নিয়ে নির্মিত ‘দীপু নাম্বার টু’ ছবিতেও তিনি ছিলেন উল্লেখযোগ্য।
নিজের পরিচালিত ছবির মধ্যেও ‘রাজলক্ষ্মী শ্রীকান্ত’ ছিল শরৎচন্দ্রের ‘শ্রীকান্ত’র চলচ্চিত্রায়ণ। নিজে অসাধারণ অভিনয়ও করেছেন। অন্যান্য পরিচালিত ছবিগুলোও উপভোগ্য বাণিজ্যিক ছবি।
‘মহানায়ক’ ছবি পুরো বাংলাদেশী চলচ্চিত্রে একটাই আছে। মাস্টারপিস এ ছবিতে অপরাধকে শৈল্পিকভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে এবং তার কারিগর এ ছবির স্টাইলিশ অভিনেতা বুলবুল আহমেদ। প্লেবয় ক্যারেক্টারাইজেশনকে তিনি ক্লাসিক পর্যায়ে নিয়ে গেছেন। পকেট মারার বিষয়টাকে বুলবুল আহমেদ ছবিতে ব্যাখ্যা করেন ‘পকেট সাইনটিস্ট’ হিশাবে। সহকর্মী যখন কাজরীকে প্রতারণার সময় প্রেম ও আবেগের বিষয়ে সিরিয়াস থাকতে বলেন তখন বুলবুলের সংলাপটি ছিল অনবদ্য-‘আবেগের থেকেও দুর্ধর্ষ এক জিনিস আছে তার নাম বিবেক সে আপনি বুঝবেন না।’ ‘সূর্যকন্যা’ ছবিতে ইন্দিরা মঞ্চে উঠে জনসভা কল্পনা করে নিজেকে নেতা মনে করে দেয়া ভাষণটি বুলবুল আহমেদের নিপূণ অভিনয়শৈলীর প্রমাণ। ‘জন্ম থেকে জ্বলছি’, ‘দি ফাদার’, ‘পুরস্কার’ ছবিগুলোতে নায়কের অন্যরকম মহিমা তুলে ধরেছেন যেখানে অভিনয়ের বিভিন্ন এক্সপেরিমেন্ট আছে। কিশোর সাইকোলজি তুলে ধরতে বুলবুল আহমেদ তাঁর ছাত্রদের হারজিতের বাস্তবতার মধ্যেও বন্ধুত্বের গুরুত্ব তুলে ধরেন ‘পুরস্কার’ ছবিতে। ‘রঙিন নবাব সিরাজউদ্দৌলা’ ছবির ঐতিহাসিক মোহনলাল চরিত্রটিও তাঁর দখলে। নবাবকে তাঁর দুঃসময়ে পাশে দাঁড়ানোর জন্য মরিয়া তিনি। নিজের বোনকে চোখের সামনে ফাঁসিতে ঝুলতে দেখেন। তাঁর অভিনয় দেখলে যে কোনো দর্শকের চোখ ভিজে আসবে।
![](https://i0.wp.com/bmdb.co/wp-content/uploads/2022/09/bulbul_ahmed1_bmdb_image.jpg?resize=960%2C720&ssl=1)
কালজয়ী গানও আছে বুলবুল আহমেদের সিনেমায়। যেমন – হাজার মনের কাছে প্রশ্ন রেখে – মহানায়ক; আমার এ দুটি চোখ পাথর তো নয় – মহানায়ক; আমি যে আঁধারে বন্দিনী – সূর্যকন্যা; বিমূর্ত এই রাত্রি আমার – সীমানা পেরিয়ে; জন্ম থেকে জ্বলছি মাগো – জন্ম থেকে জ্বলছি; এ আকাশকে স্বাক্ষী রেখে – সোহাগ; তুমি বলে ডাকলে – আরাধনা; শত জনমের স্বপ্ন – রাজলক্ষ্মী শ্রীকান্ত; সামাল সামাল সামাল সাথী – ওয়াদা; তুমি ছাড়া আমি একা – দুই জীবন; আবার দুজনে দেখা হলো – দুই জীবন; আব্বু আমার বন্ধু – দুই জীবন।
শ্রেষ্ঠ অভিনেতা হিশাবে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পেয়েছেন তিনবার – সীমানা পেরিয়ে (১৯৭৭), বধূ বিদায় (১৯৭৮), শেষ উত্তর (১৯৮০)। শ্রেষ্ঠ পার্শ্ব অভিনেতা হয়ে পেয়েছেন ‘দীপু নাম্বার টু’ ছবিতে ১৯৯৬ সালে।
বুলবুল আহমেদ-এর কন্যা ঐন্দ্রিলা বাবাকে নিয়ে বই লিখেছেন ‘একজন মহানায়কের কথা’ নামে। বইতে অভিনেতা বুলবুল আহমেদের জীবন ও কর্ম স্মৃতিচারণায় উঠে এসেছে।
![](https://i0.wp.com/bmdb.co/wp-content/uploads/2022/09/bulbul_ahmed3_bmdb_image.jpg?resize=856%2C489&ssl=1)
বুলবুল আহমেদ নানা বুলবুলের একটি মালা। তিনি বাংলাদেশের চলচ্চিত্রে একটি শিল্পিত নাম। অনেক তারকার ভিড়েও তিনি নিজ গুণে ‘বিশেষ’ হতে পেরেছেন। তাঁর প্রতি অসীম শ্রদ্ধা।