Select Page

অঞ্জনের ‘আগামীকাল’, সঙ্গীত–দৃশ্যায়ন যেখানে প্রধান আকর্ষণ

অঞ্জনের ‘আগামীকাল’, সঙ্গীত–দৃশ্যায়ন যেখানে প্রধান আকর্ষণ

কোন সিনেমা দেখার পূর্বে আমরা সিনেমা প্রেমীরা ট্রেলার দেখে একটা ধারণা নেবার চেষ্টা করি। সেই ক্ষেত্রে অঞ্জন আইচ পরিচালিত ‘আগামীকাল’-এর ট্রেলারের গান ও দৃশায়ন আমাকে হলমুখী করেছে। এটা রহস্যময়, সাইকো থ্রিলার গল্প কিনা সেটা নিয়ে খুব একটা চিন্তা ছিল না; সিনেমায় পরিচিত অনেক মুখ,পরিচালক-প্রযোজক পরিচিত তাই হয়তো আগ্রহ ছিল দ্বিগুণ। কিন্তু মাসুদ মঞ্চ ইন্টারন্যাশনালের প্রযোজনায় চলচ্চিত্রটির ‘আগামীকাল’ নামকরণের সার্থকতা কোথাও খুঁজে পাইনি। যদি এমন হয়, পরিচালক পরের কোন সিনেমায় রূপার জীবনের চতূর্থ অধ্যায় দেখাবেন; তাহলে আগামীকালের জন্যে অপেক্ষা করতে রাজি আছি।

শিরোনামে যা বলছিলাম, পুরো সিনেমার দূর্দান্ত আকর্ষণের জায়গা হচ্ছে কক্সবাজার ও বান্দরবানের অসাধারণ কিছু লোকেশন। অঞ্জন খুঁজে খুঁজে সুন্দর লোকেশন বেছে নিয়েছেন দৃশ্য ধারণের জন্য, তার উপরে আছে ড্রোন শটের দারুণ কাজ। এক সিনেমায় এতবার ড্রোন শটের ব্যবহার বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে আমি প্রথম দেখলাম। সিনেমাটা দেখতে চোখে এত আরাম হয়েছে যে মনে হয়েছিল সনি স্কয়ারে আরো কিছু সময় বসে থাকি। ১৬০ মিনিটের সিনেমা ইন্টারভেলের আগে যথেষ্ট ধীর গতিতে চললেও শেষে গিয়ে একদম তরল পদার্থের মতো গল্পটা গলে গলে পড়ে যায়। মনে হয়, শতাব্দী ওয়াদুদ হঠাৎ সিআইডি হয়ে আবির্ভাব হয়ে পুরো গল্পটা একদম ঝাড়া মুখস্ত বলে ফেললেন আর আমি দর্শক হিসেবে হলাম পুরাই হতাশ।

রূপা নামের একটি অনাথ মেয়ের জীবনের তিন অধ্যায়ের গল্প এটি, যেখানে ডাক্তারীর শিক্ষার্থী শাফায়েতের সঙ্গে থাকে সম্পর্ক, এক মাসে বিসিএস পুলিশ হয়ে যাওয়া অবন্তী এবং রূপা তার নীরব শত্রু, স্বামী টুটুল চৌধুরী অত্যাচারী, স্মাগলাম (যদিও সিনেমার কোনো দৃশ্যে তা দেখানো হয়নি)। তারপর কিছু পরিকল্পনার মধ্য দিয়ে শাফায়েত গায়েব, পাহাড় থেকে অদৃশ্য টুটুল, মনোবিজ্ঞানীর  বেশ ধরে সিআইডি’র প্রবেশ, পিআইবি রূপন্তী হাল ছেড়ে দিল, অবশেষে রহস্য উন্মোচিত হয়ে গেল। পুরো গল্পে আমি কোন নতুনত্ব পাইনি, মনে হয়েছে হিন্দি চ্যানেলের ক্রাইম সিরিয়াল দেখছি, ২০২২ সালে এসে মদখোর স্বামীর হাতে বেল্ট দিয়ে রূপার মার খাওয়া খুবই চোখে লেগেছে। আজকাল দিনে অনেক আধুনিক উপায় আছে টর্চারের, পরিচালক কেন বাংলা সিনেমার সেই আদি উপায় বেছে নিলেন তা বুঝিনি। মদ খাওয়া মানেই স্ত্রীকে প্রহার করা এটতো যুগে যুগে বাংলা সিনেমার অনেক পরিচালক দেখিয়ে গেছেন, আধুনিক পরিচালকের ফ্রেমে আমরা পুরনো দর্শক তা দেখতে চাই না।

‘আমার জীবনে সবকিছুই খুব নিখুঁত শুধু জীবনটা ছাড়া’ মমর কণ্ঠে এ আক্ষেপ থেকে ছবির সংলাপ সম্পর্কে পুরো ধারণা পাওয়া যায়। সিনেমাটির মুল উপজীব্য সংলাপ। ব্যতিক্রমী চরিত্রে ছিলেন আশীষ খন্দকার, তার সংলাপ ডেলিভারি যথেষ্ট প্রাণবন্ত এবং মজার ছিল। টুটুল চৌধুরীর কণ্ঠে ‘হানি, আমার টিয়া পাখি’ শুনতে মজা পাচ্ছিলাম। সব চাইতে আকর্ষণীয় ছিল সাবেরী আলমের সংলাপ, জমিদার রানী হিসেবে তাকে দূর্দান্ত মানিয়েছে এবং যেখানে যতটা অভিনয় দেওয়ার তিনি পরিমিতি রেখেছেন। পাশাপাশি পোশাক সাজস্বজ্জা ঠিক ছিল, অবন্তীকে (সূচনা) প্রেমিকার সাজের চাইতে পুলিশের পোশাকে বেশি সাবলীল লেগেছে (ওজন আরো কমানো দরকার)। প্রেমিকা অবন্তীকে রোমান্টিক লাগেনি, সাদা-লাল শাড়িতে মেকাপ ছিল খুব চড়া, লাবণ্যতা হারিয়েছে। মম’র বিপরীতে অভিনয় করবার জন্যে সুচনাকে আরো অনেক কঠোর পরিশ্রম করতে হবে।

আগেই লিখেছি সাবেরী আলম এই সিনেমায় আনপ্যারালাল। কিন্তু শতাব্দী ওয়াদুদ আমাকে দারুণ হতাশ করেছেন। শুধু অভিনয় দিয়ে না, ক্যামেরায় তার স্ফীত ওজন ছিল স্পষ্ট, বাংলাদেশের সিআইডি অফিসারদের মনে হয় না এতটা ভারী শরীর আজকাল দেখা যায়। যেহেতু এটা সিনেমা সেক্ষেত্রে চরিত্রের সঙ্গে ওজন মিলিয়ে নেওয়াটা খুব জরুরি। ফারুক আহমেদের মতো অভিনেতার চরিত্রের কোন সঠিক ব্যবহার করা হয়নি, এটা হতাশাজনক। ইমন বরাবরের মতো চমৎকার, অভিনয় দিয়ে পুষিয়ে দিয়েছেন। টুটুল চৌধুরী প্রয়োজনের বাইরে চিৎকার করেছেন, তার কপাল কুঁচকে সংলাপ বলাটা বেশ চোখে লেগেছে। সুজাত শিমুলের কমেডি সত্যি দর্শকদের ঠোঁটে মৃদু হাসি সৃষ্টি করতে সক্ষম হয়েছে। আর সবশেষে জাকিয়া বারী মম ছিলেন এই সিনেমার প্রাণ, প্রথম থেকে শেষ অব্দি প্রতিটি দৃশ্যে তিনি পরিস্থিতির শিকার একজন নারীর ভূমিকা স্ক্রিনে ধরে রাখতে শতভাগ সফল হয়েছেন।

গান রিলেটেড সিনেমার গল্প এই দেশে খুব কম হয় কিন্তু অঞ্জন গল্পের সঙ্গে গানের কথার অসাধারণ সমন্বয় করেছেন। নিজের লেখা গান চিত্রনাট্যে দারুণভাবে প্রকাশ করতে তিনি সফল। সুজন আরিফের সুরে, কোনালের কণ্ঠে ‘অক্সিজেন বিহীন’ বেশ শ্রুতিমধুর লেগেছে। ইমন সাহার ‘ছায়ার মধ্যে আছি আমি’ও ভালো লেগেছে। কমল সরকার সিনেমাটোগ্রাফির জন্যে আলাদাভাবে সাধুবাদ পাওয়ার দাবি রাখেন। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের চিরচেনা ‘হৃদয়ের একূল অকুল দূকুল ভেসে যায়’ গানটির যথার্থ ব্যবহার করেছেন পরিচালক।

একটা লম্বা সময় অঞ্জন আইচ নাটক নির্মাণে সফলতার সঙ্গে ব্যয় করেছেন, পরিচিত অনেক পরিচালকের নামের সঙ্গে তিনি উচ্চারিত হন। ‘আগামীকাল’ তার ক্যারিয়ারের নতুন অধ্যায়ের শুরু মাত্র, সামনে আসছে ‘কানামাছি’। আমার বিশ্বাস, যতটা অসঙ্গতি এবার চোখে পড়েছে সেগুলো কাটিয়ে নিলে অঞ্জন আইচের পরবর্তী সিনেমায় সব ঠিক হয়ে যাবে।

রেটিং: ৭/১০


লেখক সম্পর্কে বিস্তারিত

পড়ার ফাঁকে যে টুকটাক লেখার অভ্যেস ছিল তা বন্ধুরা জানতো না।ক্লাশ নাইন থেকেই ছোট গল্প আর ছোট ছোট টূকরো কবিতা লিখতে শুরু করেছিলাম।প্রিয় কবি সৈয়দ শামসুল হক ও মহাদেব সাহা।কিন্তু ১৯৯৭ সালে প্রথম আর্টিকেল লিখলাম প্রথম আলোতে-“মেয়েদের নিজেস্ব কোন বাড়ি নেই”অনেক সাড়া পেলাম ।এরপর লিখলাম “সেনানিবাস এবং আমরা”।এখানটায় এসেই নাম বদলে হয়ে গেলাম-রোদেলা নীলা।রাজনীতি নিয়ে কথা বলতে গেলে নিজেকে একটু আড়ালে রাখাটা দরকার।তবে আমার সব শংকা দূর হয়ে গেল যখন দেশে এলো বাংলা ব্লগ.২০০৫ সাল থেকে কেবল রোদেলা হয়েই বিচরণ করছি সামহোয়ার ইন ব্লগ,প্রথম আলো ব্লগ,শব্দনীর ব্লগ,আমার ব্লগ ,ঘুড়ি ব্লগ এবং নক্ষত্র ব্লগে। আমার জন্ম ২৬ শে ফেব্রুয়ারী ১৯৭৭ সালে।ঢাকার মিরপুরে,এখানেই আমার বেড়ে ওঠা,তবে পৈতৃক নিবাস কালিহাতী, টাঙ্গাঈলে।অংক নিয়ে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এম এস সি করলেও হিসেব নিকেশ কোন দিন বুঝিনি।তাই হয়তো ব্যক্তি জীবনকে ওভাবে সেই অর্থে সাজাতে পারিনি। আমার প্রকাশিত বই গুলো হচ্ছে-ফাগুনঝরা রোদ্দুর(২০১০),ভাষাচিত্র প্রকাশনী পঞ্চপত্রের উপপাদ্য(২০১২),এক রঙ্গা এক ঘুড়ি প্রকাশনী সংকলন-আলোর মিছিল ও নক্ষত্র(২০১৩ ও ২০১৪) একক গল্প গুচ্ছ-রোদ্দুরের গল্প ,দ্বৈত কবিতার বই (২০১৫),যমুনা প্রকাশনী। সামনে একটি কবিতার বই বের করার ইচ্ছে আছে যা হবে প্রবাসীদের জন্যে ইংরেজী ভাষায়।

মন্তব্য করুন