Select Page

এক দশকের ‘অবশ্যই-দর্শনীয়’ ২০ চলচ্চিত্র!

এক দশকের ‘অবশ্যই-দর্শনীয়’ ২০ চলচ্চিত্র!

দেখতে দেখতে আমরা আরেকটি দশক বিদায় নিচ্ছে। মাকড়সার জালের মতো ছড়িয়ে পড়া অশ্লীলতাকে বিদায় জানিয়েছি গত দশকেই। চার যুগ ধরে চলতে থাকা ঝিরঝির পর্দাকে বিদায় জানালাম এই দশকে। সাদরে গ্রহণ করলাম ঝকঝকে পর্দাকে, এনালগ থেকে সকল চলচ্চিত্র হয়ে গেলো ডিজিটাল। এরপরও আমাদের তৃপ্তি ঢেঁকুর তোলার সুযোগ হচ্ছে না। বাজেটে সীমাবদ্ধতা, অনুর্বর মস্তিষ্ক, সিনেমা হল সংকটসহ আরো নানারকম বাধা বিপত্তির মধ্যে পড়ে খুবই ধীরগতিতে সামনের দিকে এগোচ্ছে আমাদেরই এই ঢালিউড।

২০১০-২০১৯ এই দশ বছরে মোট চলচ্চিত্র মুক্তি পেয়েছে আনুমানিক সাড়ে পাঁচশো’র মতো, বছরপ্রতি গড়ে প্রায় ৫৫টি। তবে এর মধ্যে বেশিরভাগ চলচ্চিত্রই ছিল গতানুগতিক এবং একইসাথে নিম্নমানের। এর সাথে আবার ছিল নকলের ধকল, দর্শকের সাথে ধোঁকাবাজি। এতো ঝক্কিঝামেলা বদৌলতে এখনো আমাদের দেশের জনগণের বড় অংশ সিনেমা হল বিমুখ। বাংলা সিনেমার নাম শুনলে তাদের এখনো মনে পড়ে সেই অশ্লীল ছবির কথা, এফডিসি থেকে নির্মিত বাজে-জঘন্য সিনেমাগুলোর কথা।

তো এই বাজে-জঘন্য সিনেমা বানানো ইন্ডাস্ট্রিই এই দশকে কিছু মানসম্পন্ন মাস্টওয়াচ বাংলা সিনেমা উপহার দিয়েছে। যেগুলো দেখে হয়তো আপনি গর্বে বুক ফুলিয়ে হলিউডের রাস্তায় হাঁটাচলা করতে পারবেন না, কিংবা অস্কার জয় করবার মতো অনুভুতিও পাবেন না। তবে এই সিনেমাগুলোর সাথে আপনার কাটানো দুই-আড়াই ঘণ্টা যে বিফলে যাবে না— বলতে পারি। সেরকমই বিশটি সিনেমার হদিস জানুন।

১. রানওয়ে (২০১০)
ধরন: সোশ্যাল ড্রামা
পরিচালনা: তারেক মাসুদ
অভিনয়: ফজলুল হক, রাবেয়া আখতার মনি, আলী আহসান, নাজমুল হুদা বাচ্চু, জয়ন্ত চট্টোপাধ্যায় প্রমুখ।
★ বিমানবন্দরের রানওয়ের পাশে বসবাস করা এক পরিবারের গল্প। এ ছবিতে একজন সাধারণ মুসলিম তরুণকে কীভাবে জিহাদ ও পরকালের ভয় দেখিয়ে জঙ্গিবাদে উৎসাহিত করা হয়, তা ধাপে ধাপে দেখানো হয়েছে। ‘রানওয়ে’ মরহুম তারেক মাসুদ পরিচালিত শেষ ছবি, মুক্তি পায় ১৬ ডিসেম্বর।

২. গেরিলা (২০১১)
ধরন: ওয়্যার ড্রামা
পরিচালনা: নাসির উদ্দিন ইউসুফ
অভিনয়: জয়া আহসান, ফেরদৌস, শম্পা রেজা, শতাব্দী ওয়াদুদ, আহমেদ রুবেল, এটিএম শামসুজ্জামান প্রমুখ।
★ বলা হয়ে থাকে ‘গেরিলা’ ছবিতে দুজন ব্যক্তি জীবনের সেরা অভিনয় দেখিয়ে ফেলেছেন; একজন হলেন মূলচরিত্রের জয়া আহসান, আরেকজন হলেন খলচরিত্রে দ্বৈত ভূমিকায় শতাব্দী ওয়াদুদ। ছবির গল্প প্রখ্যাত কথাসাহিত্যিক সৈয়দ শামসুল হকের ‘নিষিদ্ধ লোবান’ উপন্যাস অবলম্বনে তৈরী, মুক্তি পায় ১৪ এপ্রিল।

৩. আমার বন্ধু রাশেদ (২০১১)
ধরন: পিরিয়ড ওয়্যার ড্রামা
পরিচালনা: মোরশেদুল ইসলাম
অভিনয়: চৌধুরী জাওয়াতা আফনান, রাইয়ান ইবতেশাম চৌধুরী, রাইসুল ইসলাম আসাদ, হুমায়রা হিমু প্রমুখ।

★ শিশুতোষ চলচ্চিত্রের মাস্টারমেকার মোরশেদুল ইসলামের এক অনন্য নির্মাণ ‘আমার বন্ধু রাশেদ’। এ ছবিতে দেখানো মুক্তিযোদ্ধাকে উদ্ধারে কয়েক কিশোরের পরিকল্পনা এবং বাস্তবায়ন দেখে গা শিউরে উঠেনি- এমন দর্শক খুব কমই খুজেঁ পাওয়া যাবে। মুক্তি পায় ১ এপ্রিল।

৪. ঘেটুপুত্র কমলা (২০১২)
ধরন: মিউজিক্যাল ড্রামা
পরিচালনা: হুমায়ুন আহমেদ
অভিনয়: মামুন, মুনমুন আহমেদ, তারিক আনাম খান, জয়ন্ত চট্টোপাধ্যায়, মাসুদ আখন্দ, তমালিকা কর্মকার প্রমুখ।
★ জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম তার জীবনের একটি সময় লেটো দলে গান গেয়ে পার করেছিলেন, এমনটা আমরা সবাই ছোটকাল থেকেই জেনে এসেছি বা পড়ে এসেছি। এই ‘লেটো’ নামটিকেই বাংলাদেশের কোনো কোনো জায়গায় ‘ঘেটু’ নামে ডাকা হতো, যারা নেচে-গেয়ে গত শতক বা তার আগে জমিদারদের আনন্দ দিতো। সাধারণত কমবয়সী কিশোরেরা নারী বেশে এই ঘেটু দলে গান গাইতো এবং নাচতো। জমিদারের স্ত্রীরা এই ঘেটু দের মনে করতো নিজেদের সতীন, কারণ অনেক সময় নিকৃষ্ট মনমানসিকতার জমিদারেরা এই কিশোরদের সাথে শারীরিক সম্পর্ক স্থাপন করতো।হুমায়ুন আহমেদের শেষ ছবি ছিল ‘ঘেটুপুত্র কমলা’। ৭ আগস্ট মুক্তি পায়।

৫. পিতা (২০১২)
ধরন: ওয়্যার ড্রামা
পরিচালনা: মাসুদ আখন্দ
অভিনয়: মাসুদ আখন্দ, জয়ন্ত চট্টোপাধ্যায়, কল্যাণ কোরাইয়া, সায়না আমিন, উপমা, শামীমা নাজনীন প্রমুখ।
★ গল্প কিছুটা টিপিক্যাল হলেও উপস্থাপনা ছিল খুবই টানটান এবং সময়োপযোগী। ছবিতে ভায়োলেন্সের ওপর হালকা জোর দেওয়া হয়েছে, সে জন্য দূর্বলচিত্তের দর্শকদের একটু মানসিক প্রস্তুতি নিয়ে ‘পিতা’ দেখা উচিত। মুক্তি পায় ২১ ডিসেম্বর।

৬. মৃত্তিকা মায়া (২০১৩)
ধরন: ড্রামা
পরিচালনা: গাজী রাকায়েত
অভিনয়: তিতাস জিয়া, রাইসুল ইসলাম আসাদ, শর্মী মালা, মামুনুর রশীদ, লুৎফর রহমান জর্জ, অপর্ণা ঘোষ প্রমুখ।
★ গতানুগতিক ড্রামানির্ভর ছবিতেও যে বিভিন্নভাবে চড়াই উতরাই তৈরি করে উপভোগ্য বানানো যায়— ‘মৃত্তিকা মায়া’ এর উদাহরণ। ছবিটি মুক্তি পায় ৭ সেপ্টেম্বর।

৭. টেলিভিশন (২০১৩)
ধরন: সোশ্যাল কমেডি ড্রামা
পরিচালনা: মোস্তফা সরয়ার ফারুকী
অভিনয়: কাজী শাহীর হুদা রুমি, নুসরাত ইমরোজ তিশা, চঞ্চল চৌধুরী, মোশাররফ করিম, মুকিত জাকারিয়া প্রমুখ।
★  নোয়াখালীর এক প্রভাবশালী চেয়ারম্যান তার গ্রামে টেলিভিশন দেখা নিষিদ্ধ করে। তার ভাষ্যমতে এর মাধ্যমে মানুষের মস্তিষ্কে বদচিন্তার আবির্ভাব হয়, এতে করে পরবর্তীতে ধর্মের ওপর খারাপ প্রভাব পড়ে। উল্লেখ, স্মার্টফোন তখন এতোটা সহজলভ্য ছিল না তাই টেলিভিশনই ছিল ঘরে ঘরে বিনোদনের মূল কেন্দ্র। প্রথম দিকে শুধুমাত্র মুসলিম পরিবারের ওপর এই নিষেধাজ্ঞা থাকলেও পরবর্তীতে হিন্দুধর্মাবলম্বৗদের ওপরও এই নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়। পরবর্তীতে সেই চেয়ারম্যানের ছেলেসহ গ্রামের অন্যান্য মানুষেরা এর বিরুদ্ধে কীভাবে অবস্থান নেয় এবং এর পরিণতি কেমন হয় সেটাই কিছুটা হাস্যরসাত্মক ভঙ্গিমায় দেখানো হয়েছে। ‘টেলিভিশন’ মুক্তি পায় ২৫ জানুয়ারি।

৮. উধাও (২০১৩)
ধরন: সাসপেন্স থ্রিলার
পরিচালনা: অমিত আশরাফ
অভিনয়: মনির আহমেদ, শাহেদ আলী, কাজী নওশাবা আহমেদ, অনিমেষ আইচ প্রমুখ।
★   সুন্দর গল্প, দারুণ অভিনয়, টানটান চিত্রনাট্য, উত্তেজনাকর মুহূর্ত এবং একের পর এক টুইস্ট ‘উধাও’কে স্পেশাল বানিয়েছে। ৪ অক্টোবর গুটিকয়েক হলে মুক্তি পায়।

৯. পিঁপড়াবিদ্যা (২০১৪)
ধরন: ড্রামা
পরিচালনা: মোস্তফা সরয়ার ফারুকী
অভিনয়: নূর ইমরান মিঠু, শিনা চৌহান, মুকিত জাকারিয়া প্রমুখ।
★  মানুষের স্বপ্ন-আকাঙ্ক্ষা যদি মিষ্টির সাইজের হয়, মানুষের সামর্থ্যের পরিমাণ থাকে পিঁপড়ার সমতুল্য। তাই দুই/আড়াই কি.মি. থেকে মিষ্টির ঘ্রাণ পাওয়া গেলেও, ঐ মিষ্টি পিঁপড়া একা খেতে পারে না। জনপ্রিয় পরিচালক মোস্তফা সরোয়ার ফারুকী তার এই ‘পিঁপড়া বিদ্যা’ এর মাধ্যমে এই মেসেজটাই দেওয়ার চেষ্টা করেছেন। আমাদের সমাজের প্রতিটি বেকারের স্বপ্ন থাকে বিদেশি কোনো সুন্দরীকে পটিয়ে বিদেশ চলে যাওয়া। মুখে কেউ স্বৗকার না করলেও, খারাপ সময়ে যে একবারও তাদের মাথায় এই চিন্তা আসেনি, সেটা কেউই অস্বীকার করতে পারবে না। এছবিতে আমাদের সমাজের বেকারদের একদম বাস্তব চিত্র ফুটে উঠেছে। তখনকার সময়ে এধরনের কনসেপ্টের ওপর ছবি এক ধরনের নীরিক্ষাধর্মী হিসেবে কাজ করেছে, তাই মুক্তির পর দর্শকদের কাছে মিশ্র প্রতিক্রিয়া পেয়েছিল। মুক্তি পায় ২৪ অক্টোবর।

১০. মেঘমল্লার (২০১৪)
ধরন: সাসপেন্স ড্রামা
পরিচালনা: জাহিদুর রহমান অঞ্জন
অভিনয়: শহীদুজ্জামান সেলিম, অপর্ণা ঘোষ, জয়ন্ত চট্টোপাধ্যায় প্রমুখ।
★  আমরা যারা বর্তমান টিনএজার আছি কিংবা বিশ্ববিদ্যালয় জীবন পার করছি তারা আশাকরি সবাই উচ্চ মাধ্যমিক বাংলা বইয়ে নন্দিত লেখক আখতারুজ্জামান ইলিয়াসের ‘রেইনকোট’ গল্পটি পড়েছি। জাহিদুর রহমান অঞ্জনের ‘মেঘমল্লার’ সেই রেইনকোট গল্প অবলম্বনে তৈরি। মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক চলচ্চিত্র হলেও ছবিতে কোনো অ্যাকশন দৃশ্য কিংবা গোলাগুলি নেই। পুরো ছবিটিই একটু ধীরগতিতে সাসপেন্স রেখে রেখে সামনে এগোয়, যা এক অন্যরকম অনুভূতি জাগায়। ছবি ২৫ সেপ্টেম্বর মুক্তি পায়।

১১. জালালের গল্প (২০১৫)
ধরন: ড্রামা
পরিচালনা: আবু শাহেদ ইমন
অভিনয়: আরাফাত রহমান, মোশাররফ করিম, তৌকীর আহমেদ, মৌসুমী হামিদ, শর্মী মালা প্রমুখ।
★   ছবির গল্প মুলত জালাল নামে এক এতিমের জীবনের তিনটি সময়ের প্রেক্ষাপট নিয়ে তৈরি; শৈশব, কৈশোর ও যৌবন। মূলত এই তিন বয়সে বাংলাদেশের তিন ধরনের সামাজিক পরিস্থিতি ও পারিপার্শ্বিকতার কথা ফুটে উঠেছে। মুক্তি পায় ২৫ সেপ্টেম্বর।

১২. গাড়িওয়ালা (২০১৫)
ধরন: ড্রামা
পরিচালনা: আশরাফ শিশির
অভিনয়: মারুফ, কাব্য, রাইসুল ইসলাম আসাদ, রোকেয়া প্রাচী, মাসুম আজিজ প্রমুখ।
★  হাবিল ও কাবিল দুই ভাই সারাদিন তাদের বেয়ারিংয়ের তৈরি গাড়ি নিয়ে সারা গ্রামে ঘুরে বেড়ায়। এই গাড়ি নিয়ে বিভিন্ন প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করে। কিন্তু প্রতিবারই তারা সালাম মেম্বারের ছেলে আলমগীরের কাছে পরাজিত হয়। কারণ আলমগীরের গাড়ি তাদের থেকে উন্নত। তাদের বাবা কয়েক বছর যাবৎ নিখোঁজ। সংসার চালানোর জন্য তাদের মা ধান ভানার কলে কাজ করে।হাবিল ও কাবিল দুজনে পাশের গ্রামের ডোবা থেকে শাপলার ফুল চুরি করে তা বাজারে বিক্রি করে নতুন বেয়ারিং কিনে। নতুন বেয়ারিং দিয়ে তৈরি গাড়ি দিয়ে তারা আন্তঃগ্রাম গাড়ি চালানো প্রতিযোগিতায় জয় লাভ করে। সেই নতুন গাড়ি নিয়ে একদিন শহরে গেলে হাবিল তার বাবাকে খুঁজে পায় এবং তার পিছু নিয়ে একটি বাড়িতে ঢোকে। কিন্তু সেখানে গিয়ে সে যা দেখে, তা দশ বছরের হাবিলকে অকাল পরিণত করে তুলে এবং সংসারের দায়িত্ব কাঁধে তুলে নিতে বাধ্য করে। ছবিটি ২৬টি দেশের ৭৮টি ফেস্টিভালে অংশগ্রহণ করে। তবে উৎসবের মান নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে বারবার। মুক্তি পায় ৪ নভেম্বর।

১৩. আয়নাবাজি (২০১৬)
ধরন: পলিটিক্যাল সাসপেন্স থ্রিলার
পরিচালনা: অমিতাভ রেজা চৌধুরী
অভিনয়: চঞ্চল চৌধুরী, মাসুমা আখতার নাবিলা, পার্থ বড়ুয়া, লুৎফর রহমান জর্জ, জামিল আহমেদ, গাওসুল আজম শাওন প্রমুখ।
★  ‘চারপাশ বদলে যায়, থেমে যায় সময়, মিথ্যা যখন সত্যি হয়। আমার জন্য সব সত্যি, বাকি সব কিছুই, অভিনয়।’ ‘আয়নাবাজি’ চলচ্চিত্রের একটি বিখ্যাত সংলাপ। ৩০ সেপ্টেম্বর মাত্র ২০ হলে মুক্তি পাওয়া এই ছবি পরবর্তীতে টানা ১০০ দিন সফলভাবে দেশব্যাপী হলগুলোতে রাজত্ব করেছে, এ যেন কল্পনাকে বাস্তবে রূপান্তরের মতো ঘটনা। মুক্তির আগ পর্যন্ত কেউই আশা করেনি এতো অডিয়েন্স এ ছবিকে সাদরে গ্রহণ করবে। চঞ্চল চৌধুরী তার ক্যারিয়ার সেরা পারফরমেন্স দেখিয়েছেন এছবিতে, ছোট-বড় মিলিয়ে এছবিতে তার সর্বমোট ৭টি ক্যারেক্টার ছিল! এর মধ্যে অ্যান্টিহিরো চরিত্রও ছিল!

১৪. অজ্ঞাতনামা (২০১৬)
ধরন: ড্রামা
পরিচালনা: তৌকীর আহমেদ
অভিনয়: ফজলুর রহমান বাবু, মোশাররফ করিম, শহীদুজ্জামান সেলিম, নিপুণ, শতাব্দী ওয়াদুদ প্রমুখ।
★  বহুবছর পর তৌকীর আহমেদ পরিচালনায় ফিরলেন এবং যখন ফিরলেন, দশকের পর দশক মনে রাখা যাবে এমন কাজই উপহার দিলেন। মানবপাচারকে কেন্দ্র করে তৈরি করা অত্যন্ত হৃদয়বিদারক  ছবিটি ২৫ সেপ্টেম্বর মুক্তি পায়। অনেকেই প্রচারণার ঘাটতির কারণে সিনেমাহলে ছবিটি উপভোগ করতে পারেনি বলে অভিযোগ তোলে। ইউটিউবে পাইরেটেড ভিডিও রাতারাতি কয়েক লাখ ভিউ পায়।

১৫. খাঁচা (২০১৬)
ধরন: পিরিয়ড ড্রামা
পরিচালনা: আকরাম খান
অভিনয়: আজাদ আবুল কালাম, জয়া আহসান, মামুনুর রশীদ প্রমুখ।
★  ১৯৪৭ সালে ব্রিটিশ ভারত ভাগের পরে দুইপারের পরিবারগুলো নিজেদের পূর্বপুরুষের ভিটেমাটি ছেড়েছিল বাধ্য হয়ে- সেই করুণ শেকড় ছাড়ার গল্প থেকেই আকরাম খান বেছেছেন নিজের সিনেমার রসদ, বাংলার অন্যতম শক্তিশালী কথাসাহিত্যিক হাসান আজিজুল হকের একই নামের গল্প থেকে। সিনেমায় মোট চারটি সময়ের গল্প দেখানো হয়েছে; ১৯৪৭, ১৯৫৪, ১৯৫৭, ১৯৬৪। আজাদ আবুল কালাম অনবদ্য পারফরমেন্স প্রদর্শন করেছেন। অনেকেই মনে করেন ‘খাঁচা’ চলচ্চিত্রটির জন্য তার জাতীয় পুরস্কার প্রাপ্য ছিল। মুক্তি পায় ২২ সেপ্টেম্বর।

১৬. ঢাকা অ্যাটাক (২০১৭)
ধরন: পুলিশ অ্যাকশন থ্রিলার
পরিচালক: দীপঙ্কর দীপন
অভিনয়: আরিফিন শুভ, মাহিয়া মাহি, এবিএম সুমন, কাজী নওশাবা আহমেদ, তাসকিন রহমান, শতাব্দী ওয়াদুদ প্রমুখ।
★  বড় বাজেটের সাথে ভালো উপস্থাপনার ছবি। পুরো ছবিজুড়ে অ্যাকশন ও থ্রিলের পাশাপাশি সাসপেন্স বিরাজমান ছিল। বান্দরবনের গহীন জঙ্গলের ভেতরে একটি গানফাইট সিক্যুয়েন্স ছিল যা অত্যন্ত উপভোগ্য। এছাড়া শুধুমাত্র পুলিশ কিংবা ডিফেন্সে কাজ করা লোকদের বীরত্ব-ই দেখানো হয়নি, তাদের পারিবারিক জটিলতা, পরিবারের প্রতি ইমোশন-ভালোবাসাও ফুটিয়ে তোলা হয়েছে। আর এছবির খলনায়কের এন্ট্রি, তার মানানসই অভিনয় তো শেষ ৩৫ মিনিট কাঁপিয়ে দিয়েছে! তাসকিন রহমান এই ছবি দিয়ে বড় স্টার হয়ে গেছেন। ছবিটি ৬ অক্টোবর মুক্তি পায়, ঢাকার ব্লকবাস্টার সিনেমাসে ছবিটি টানা ১৫০ দিন চলার রেকর্ড করেছিল।

১৭. ডুব (২০১৭)
ধরন: ড্রামা
পরিচালনা: মোস্তফা সরোয়ার ফারুকী
অভিনয়: ইরফান খান, নুসরাত ইমরোজ তিশা, পার্নো মিত্র, রোকেয়া প্রাচী, নাদের চৌধুরৗ প্রমুখ।
★  জাজ মাল্টিমিডিয়া ও এসকে মুভিজ সারাজীবন বাণিজ্যিক ছবি বানিয়ে গেলেও ‘ডুব’ এর মতো ভিন্ন ঘরানার একটি ছবিতে তারা লগ্নি করেছেন। ভারতের ইরফান খান নিজেও প্রযোজক ছিলেন। ‘ডুব’ মূলত অনুতাপের গল্প, অনুশোচনার গল্প। দ্বিধাবিভক্ত হয়ে পড়া দুটি পরিবারকে মিলিয়ে দেওয়ার গল্প। এ ছবির কারিগরি দিকগুলির প্রশংসা করে শেষ করা যাবে না। এককথায় চোখের শান্তি, কানের শান্তি। সিনেমাটিতে একটি গুরুত্বপূর্ণ মেসেজ দেওয়ার চেষ্টা করেছে; মৃত্যু সবসময় সবকিছু নিয়ে যায় না, মাঝেমধ্যে কিছু দিয়েও যায়। মুক্তি পায় ২৭ অক্টোবর।

১৮. মাটির প্রজার দেশে (২০১৮)
ধরন: সোশ্যাল সাসপেন্স ড্রামা
পরিচালনা: বিজন ইমতিয়াজ
অভিনয়: মাহমুদুর রহমান অনিন্দ্য, শিউলি রহমান, চিন্ময়ী গুপ্ত, রোকেয়া প্রাচী, জয়ন্ত চট্টোপাধ্যায়, মনির হোসেন প্রমুখ।
★  আরেকটি চোখ জুড়ানো, কান জুড়ানো, মন জুড়ানো ছবি। সিনেমাটোগ্রাফি, এডিটিং, ব্যাকগ্রাউন্ড মিউজিক সবই অনেক যত্ন নিয়ে তৈরি। পাঁচ বছর সময় নিয়ে ‘মাটির প্রজার দেশে’ তৈরী করা হয়েছে, যা হয়তো ভবিষ্যতে এক‌টি ক্লাসিক ছবি হিসেবে গণ্য হবে।মূল চরিত্রে মাহমুদুর রহমান অনিন্দ্য ও চিন্ময়ী গুপ্ত খুবই দারুণ অভিনয় করেছেন। চোখে দীর্ঘদিন লেগে থাকার মতো ছবি ‘মাটির প্রজার দেশে’। মুক্তি পায় ১৩ মার্চ।

১৯. দেবী (২০১৮)
ধরন: হরর-সাইকোলজিক্যাল থ্রিলার
পরিচালনা: অনম বিশ্বাস
অভিনয়: জয়া আহসান, চঞ্চল চৌধুরী, শবনম ফারিয়া, অনিমেষ আইচ, ইরেশ যাকের প্রমুখ।
★ রানু, সদ্য বিবাহিত যুবতী, যিনি স্মৃতি বিভ্রমে ভুগছেন এবং কৈশোরে ঘটে যাওয়া একটি ঘটনার ফলে মানসিক অসুস্থতার কারণে তার এক্সট্রা সেন্সরি পারসেপশন বেড়ে গেছে। এক্সট্রা সেন্সরি পারসেপশন বা ইসিপি হলো মানুষের একটি বিরল আধ্যাত্মিক ক্ষমতা যার ফলে কোনো মানুষ ভবিষ্যতে কী ঘটতে যাচ্ছে তা পূর্ব থেকে আন্দাজ করতে পারেন। তুমুল সাড়াজাগানো এই ছবির দুটি দিক আমার বেশি ভালো লেগেছে। প্রথমত, সাউন্ড ডিজাইন। এতোটা শার্প আমি এর আগে কোনো বাংলাদেশী ছবিতে পাইনি। দ্বিতীয়ত, জয়া আহসানের অভিনয়। মানসিক বিকারগ্রস্ত চরিত্রে তিনি এতোটাই মিশে গিয়েছিলেন যা বারবার দেখার মতন।মুক্তি পায ১৯ অক্টোবর।

২০. লাইভ ফ্রম ঢাকা (২০১৯)
ধরন: ড্রামা
পরিচালনা: আব্দুল্লাহ মোহাম্মদ সাদ
অভিনয়: মোস্তফা মনওয়ার, তাসনুভা তামান্না, তানভীর আহমেদ চৌধুরী প্রমুখ।
★ লিস্টে জায়গা পাওয়া সবশেষ ছবি, এই বছরের একমাত্র ছবি, একমাত্র সাদাকালো ফরমেটের ছবি! এরকম নানারকম বিশেষত্বের সাক্ষী এই ছবি। লাইভ ফ্রম ঢাকা একটি বিষণ্ন, গুমোট এবং অনেকটাই বিমূর্ত চলচ্চিত্র। সাদাকালো এই সিনেমাটিতে সাদা কম, কালো বেশি। চরিত্র কম, দৃশ্যকল্প বেশি। মূল চরিত্র সাজ্জাদ গাড়ি চালিয়ে এখানে ওখানে যায়, একে ওকে ফোন করে, একই দৃশ্যের পুনরাবৃত্তি বারবার ঘটে, তবে প্রতিবারই কিছু না কিছু নতুন চরিত্র যুক্ত হয়। এই যেমন শেয়ার মার্কেটে দরপতনের খবর চলছে টিভিতে, রেডিওতে। এই একবার বলছে বিশ্ববিদ্যালয়ে মারপিটের খবর, গাড়ির হর্ন, ট্রেনের হুইসেল, লঞ্চের ভেঁপু, সবসময় আমাদের জানিয়ে দিচ্ছে, এই শহরে প্রাণ নেই, এই শহর জাদুর শহর না। এই শহর এক অন্ধকার জাদুর শহর! মুক্তি পায় ২৯ মার্চ।


মন্তব্য করুন