Select Page

জো বিছাড় গ্যায়ে: বলিউড সিনেমার মতো পাকিস্তানি সিরিয়ালে বাংলাদেশ নিয়ে মিথ্যাচার

জো বিছাড় গ্যায়ে: বলিউড সিনেমার মতো পাকিস্তানি সিরিয়ালে বাংলাদেশ নিয়ে মিথ্যাচার

পিপ্পা কিংবা স্যাম বাহাদুর—বলিউডের সিনেমায় বাংলাদেশ প্রসঙ্গ বারবার আসছে। কেবল ১৯৭১ না, এই সময়ের কথাও তারা আনছে সিরিজে এবং প্রায় কোনোটিতেই বাংলাদেশের অবস্থানকে ইতিবাচক রাখা হচ্ছে না। এর আগে গুন্ডে (২০১৪) নিয়ে অনেক বাওয়াল হইছে। এই সব কিছুর মধ্যে আবার পাকিস্তানের কিছু সিরিয়াল, অভিনেতার প্রতি সফট কর্নার তৈরি হচ্ছে আমাদের একাংশের। বলিউডের সিনেমা বহুল চর্চিত কিন্তু পাকিস্তানের ড্রামা ততটা না। আজকে একটা পাকিস্তানি টিভি সিরিজের খোঁজ দিতে ইচ্ছা করি এবং সেখানে বাংলাদেশ ও মুক্তিযুদ্ধের উপস্থাপন কী রকম সেটাও বলতে চাই। তার আগে অবশ্য আরেকটু ত্যানা প্যাঁচানো দরকার।

২০১৩ সালের পর বেশকিছু পরিবর্তন আসছে একাংশের মধ্যে। পাকিস্তানি ড্রামা খুব জনপ্রিয় হচ্ছিল। একদিকে কে-পপ, একদিকে তার্কিশ ইতিহাস বেজড সিরিজ, আরেক দিকে পাকিস্তানি ড্রামা। এরই মধ্যে একটা পাকিস্তানি ড্রামায় রবীন্দ্রসঙ্গীতের ব্যবহার বাংলাদেশের মানুষের মধ্যে পাকিস্তানের প্রতি দারুণ হামদর্দি তৈরি করছিল। বলিউড যখন একের পর এক সিনেমায় মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে নিজেদের মতো ‘ইতিহাস’ তৈরি করে যাচ্ছিল তখন ওই নির্দিষ্ট একটা ইস্যু সোশ্যাল মিডিয়ায় খুব বড় হয়ে উঠছিল। কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে রবীন্দ্রনাথ কি বাংলাদেশের? তার জাতীয়তা নিয়ে প্রশ্ন উঠছে না, এখানে বাংলাদেশ একটা স্বাধীন, সার্বভৌম রাষ্ট্র এবং রবীন্দ্রনাথ সেই দেশের সংস্কৃতির একটা অংশ মাত্র, তাকে দিয়ে বাংলাদেশকে ডিফাইন করা যায় না। রবীন্দ্রনাথকে আইয়ুব খানের আদেশে ব্যান করা আর তার কন্সিকুয়েন্স এখানে একটা বড় ফ্যাক্ট এবং সেটা অন্য আলোচনা। মোদ্দা কথা, একটা পাকিস্তানি সিরিয়ালে রবীন্দ্রনাথের গান ব্যবহারে পাকিস্তান বাংলাদেশের জন্য ভালো হয়ে যায় না।

যে টিভি সিরিজের ছবি দেখা যাচ্ছে সেটার নাম ‘জো বিছাড় গ্যায়ে’। He who got Separated. উর্দু যারা বোঝেন তারাও হয়ত খেয়াল করবেন না যে বলা হয়ছে ‘বিছাড় গ্যায়ে’, কথাটা এখানে গুরুত্বপূর্ণ। ‘গট সেপারেটেড’, শুধু সেপারেটেড বলা হয়নি। অর্থাৎ, নামেই বলা হচ্ছে এখানে অন্য কোনো শক্তি ছিল। আর এই পুরো সিরিজে সেই জিনিসটাই প্রতিষ্ঠা করার চেষ্টা দেখা গেছে। সেটা পাকিস্তান করবেই, জানা কথা। ভারতের বক্তব্য তারা বাংলাদেশকে ‘স্বাধীনতা এনে দিয়েছে’ আর পাকিস্তানের বক্তব্য ‘ভারত আমাদের ভাইকে ভুল বুঝিয়ে আলাদা করেছে’। অন্তত এই বয়ানে দুই শত্রু একমত।

পাকিস্তানি সিরিয়ালে বাংলা গান দেখে যারা আপ্লুত তারা এই সিরিজের দুটো পর্ব দেখলে বুঝবেন কতটা বিশ্রীভাবে বাংলাদেশকে উপস্থাপন করা হইছে। এখানে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রফেসার আধা উর্দুতে কথা বলে। বাংলাকে বলে ‘বঙ্গাল’। তার বক্তৃতার ভাষা কমিউনিস্টদের মতো। পোশাকে সত্তরের কলকাতার ভাব স্পষ্ট। অন্তত আজকের দিনে পশ্চিমবঙ্গের সিনেমায় সত্তর দশকের কলকাতার মানুষের পোশাক এমন দেখানো হয়।

আরও দেখানো হয়েছে প্রফেসর সাহেব বিশ্ববিদ্যালয়ে বসে মদ খান রাতের বেলা। বাঙালি ছাত্রদের প্রভাবিত করে বিহারী ছাত্রদের ওপর হামলা করাচ্ছেন ইত্যাদি ইত্যাদি।

ওয়াহাজ আলী নামে একটা ছাগল এই সিরিজে মূল চরিত্র। ছাগল বলার কারণ কিছুদিন আগে (যদি ভুল না করে থাকি) একে নিয়ে বাংলাদেশী নারীরা তুমুল লুতুপুতু করল এই ফেসবুকে। ছাগলটার অভিনয় কিছুই হয় না। এর উপর যে চরিত্রে অভিনয় করছে তার নাম শাফী ইমাম রুমী। কেবল রুমী হলেও মেনে নিতাম কিন্তু শাফী ইমাম রুমী নামটাও যে ইচ্ছাকৃত দেওয়া সেটা বোঝাই যায়। কিন্তু এই রুমী জাহানারা ইমামের ছেলে না। ওয়াহাজ অভিনীত চরিত্রটার ধরণ ধারন কেতাবি ‘বিচ্ছিন্নতাবাদী’দের মতো। কিংবা আসলে কী সেটা সিরিজের নির্মাতারাও জানে না।

গল্প একদিকে রুমী আর সোনিয়ার। অন্যদিকে ক্যাপ্টেন ফারুকের। ফারুকের গল্পটা সমান্তরালে চলে এবং পথ এক জায়গায় এসে মেশে। তার মধ্যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, বাংলাদেশ, পাকিস্তান আর্মি, শেখ মুজিবুর রহমান এমনকি নেহরুও আসে। এর কোনোটাই বাস্তবের সাথে মেলে না। রূপকথার কাছাকাছি চলে গেছে কোনো কোনো জায়গায়।

২.
ভারত বা পাকিস্তান কারো ঠ্যাকা নাই বাংলাদেশের ইতিহাস ঠিকমতো দেখানোর। কিন্তু এই সিরিজ নিয়ে লেখার উদ্দেশ্য, বলিউডের সিনেমার পাশাপাশি পাকিস্তানও যে নিজের বলয়ে বাংলাদেশ নিয়ে মিথ্যাচার করে যাচ্ছে সেটা জানানো। দুর্ভাগ্য এই যে, ওই দুটো দেশ নিজেদের উদ্দেশ্য হাসিল করে গেলেও আমরা আজ অবধি ঠিকমতো মুক্তিযুদ্ধের একটা ভালো সিনেমা নির্মাণ করতে পারি না। এমনকি ‘পিপ্পা’য় কাজী নজরুলের গান নিয়ে আলাপ হলেও ইতিহাস বা বাংলাদেশের উপস্থাপনায় কোথায় কোথায় ভুল আছে তা নিয়েও লেখা সেভাবে আসে না। মজার ব্যপার, পিপ্পায় লুঙ্গি আর শার্ট পরার ধরন যতটা বাস্তবভাবে দেখানো হইছে, বাংলাদেশের অনেক সিনেমায় তা হয় না।

*’ম্যারি মি আফ্রিদি’ কুৎসিত লাগলে ওয়াহাজের ছবি পোস্ট করে লুলামি করাও কুৎসিত।


লেখক সম্পর্কে বিস্তারিত

মাহমুদুর রহমান

জীবনপুরের পথিক রে ভাই, কোন দেশেই সাকিন নাই। কোথাও আমার মনের খবর পেলাম না...

মন্তব্য করুন