Select Page

নাটক ২০২০: দেখতে পারেন এ দশটি (লিংক)

নাটক ২০২০: দেখতে পারেন এ দশটি (লিংক)

টিভি নাটক ২০২০। করোনার প্রভাবে নাটক নির্মাণ কম হলেও মানের দিক থেকে সন্তোষজনক বলা যায়। পুরো বছর জুড়ে টিভিতে প্রচার হওয়া নাটক, টেলিফিল্মের মধ্যে অন্যতম সেরা নাটকের কথা জেনে নিন।

১০. শেষটা সবাই জানে: নীরা টুকটাক মিডিয়ার সঙ্গে জড়িত, তবে ক্যারিয়ার গড়তে চায় বিদেশেই। সেই লক্ষ্যেই কাজ করছে, অন্যদিকে রাকিন পড়াশুনায় ভালো না, তবে ক্যাম্পাসে জনপ্রিয় কারণ যেকোন অনুষ্ঠানে মাইকিংয়ে সুন্দর করে কথা বলার জন্য ডাক পড়ে। নবীনদের ওরিয়েন্টেশন ক্লাসের জন্য এই অনুষ্ঠানে কাছাকাছি আসে দুজন। এরপর! শাহনেওয়াজ মিঠুর পাঠানো গল্পটা আপাতদৃষ্টিতে সাদামাঠা হলেও নুহাশ হুমায়ূন বুদ্ধিদীপ্ত চিত্রনাট্যে বেশ জমিয়ে ছিলেন, তেমনি নির্মাতা হিসেবেও। সাফা কবির বেশ ভালো, তবে বাজি হচ্ছেন জুনায়েদ। মাসুদ রানার রিয়েলিটি শোর প্রথম রানারআপ এই ছেলে দেখতে বেশ চার্মিং,অভিনয়টাও ঠিকঠাক। নিজের পরিচিতি, পরিবারের ইমোশন দৃশ্যে থেকে রোমান্টিকতায় সাবলীল। নিজেকে ধরে রাখতে পারলে ভবিষ্যৎ উজ্জ্বল। বাড়তি পাওনা ছিলেন ফজলুর রহমান বাবু, দীপা খন্দকার ও আব্দুল কাদের (সম্ভবত এটাই শেষ অভিনয়)। গল্পের নামের মত অসমাপ্ত সিরিজের শেষটা হয়তো সবাই জানে তবে এখানেই রয়েছে চমক। যার কারনে এই নাটকটি দর্শকদের অনেকদিন মনে থাকবে।

৯. জন্মদাগ: যেই দাগ মানুষের মধ্যে থেকে যায় সারাজীবন। গল্পটা তোলা থাক, তবে যেই গল্প দেখিয়েছে তাতে দর্শকদের জন্য বেশ চমকপ্রদ ব্যাপার হয়ে যায়। এই মুহূর্তে যখন বাংলাদেশে একটা স্পর্শকাতর ইস্যু নিয়ে তোলপাড় যেটা সব সময়ই থাকা উচিত। সেই ইস্যুর বিপরীতে গিয়ে কাজ করাটা সাহসিকতাই বটে। ভিকি জাহেদ এই নাটকের নির্মাতা, তার নাটকের নিয়ম হচ্ছে পুরো নাটককে একপাশে রেখে শেষে সেটা বদল করে ফেলা এবং সেটায় তিনি বারবার সফল হচ্ছেন দেখেই দর্শকদের বাহবা পাচ্ছেন। বলা যায় এটায় তিনি দারুণ শেষ টেনেছেন। অভিনয়ে মেহজাবীনকে পুরো অন্যরকম পাওয়া যাবে, অভিনেত্রী হিসেবে তিনি তো ভালোই। আফরান নিশোর অভিনয় ওখুব ভালো, তার মুখে সংলাপগুলো ভালো লেগেছে। সমসাময়িক প্রতিদ্বন্দ্বী থেকে তিনি গল্প নির্বাচনের জন্য এগিয়ে যাচ্ছেন, নির্মাতারাও তাকে নিশ্চিন্তে বেছে নিচ্ছেন।

৮. উপহার: আফরান নিশো-মেহজাবীনের ছিমছাম সংসার। দুজনই চাকরিজীবী, খুব ব্যস্ত। এক সকালে তাদের ঘুম ভাঙে বাইরের লোকদের শোরগোলে, গিয়ে দেখে তাদের জন্য আনা হয়েছে উপহার। তবে এটা নিছক কোন উপহার নয়, খুব দামি উপহার। গাড়ি উপহার পেয়েছেন তারা, কিন্তু এত দামী উপহার তাদের দিবে কে!

সন্দেহের তীর যায় তাদের দুজনেরই প্রাক্তনের দিকে, কিন্তু জানা যায় তারা দেয় নি। কিন্তু পরিচয় গোপনে তাদের উপহার দেয়ার রহস্য আর বের হয় না, মধ্যবিত্ত পরিবারে গাড়ি রাখাও আরেক হ্যাপার কাজ। ড্রাইভার, গ্যারেজ ভাড়া সব মিলিয়ে ঝামেলাও যেমন বাড়ছে, তেমনি সংসার খরচ। এদিকে নিশোর অফিসের বস দামী গাড়ি কেনার সন্দেহে অফিসের টাকার হিসাব না মেলায় দোষ দেয় নিশোর ঘাড়ে, সাময়িক চাকরিচ্যুত হন। হতাশায়, কষ্টে রাস্তায় বেরিয়ে ফোন দেয় নিজের খুব কাছের মানুষকে!

এমনই গল্প নিয়ে আরিয়ান নির্মাণ করেন ‘উপহার’। শুরু থেকেই নাটকটি জমজমাট হয়ে হয়ে ওঠে, মাঝে কিছুটা ধীরগতির মনে হলেও শেষে গিয়ে গল্পের মোড়ে দর্শকদের আবার মনোযোগ দিতে বাধ্য এবং সন্তুষ্টি নিয়ে দর্শকরা দেখবেন। নাটক শেষে যে বার্তা এসেছে সেটা এই সময়ের জন্য ভীষণ প্রাসঙ্গিক, তবে নির্মাতা এটা দর্শকের ওপর চাপিয়ে দেননি, গল্পের প্রয়োজনেই সময় অনুযায়ী এসেছে। নিশোর পরিমিত অভিনয়, মেহজাবীনও দিয়েছেন যথাযথ সঙ্গ, দুজনকে দারুণ মানিয়েছে। বিশেষ হয়ে এসেছেন আবুল হায়াত, গানটাও ভালো।

৭. গজদন্তিনী: গল্পের নায়ক অন্তুর গল্পকথক হয়ে প্রবেশ করেন এই নাটকে, ইচ্ছা না থাকলেও ফুফার নানান আজব কর্মকান্ডের সমাধান দিতে প্রায়ই যেতে হয় ফুফুর বাসায়। তেমনি একদিন দরজায় নক দিতেই দরজা খুলে দেয় এক অচেনা তরুণী, কথার ছলে দেখতে পান একটি বাড়তি দাঁতের। মুগ্ধ হয়ে নাম দেন গজদন্তিনী। সেই অচেনা মেয়েটির নাম রুমকি, সম্পর্কে ফুফার ভাগ্নী। এরপর ভালোবাসা, দারুণ কিছু মুহূর্ত। তবে হঠাৎই আগমন ঘটে শাহেদের, যার সাথে বিয়ে হবে রুমকীর। এরপর! জোবায়েদ আহসানের এই লেখাটা অনেকেরই পরিচিত। বই পোকা গ্রুপে তিনি ধারাবাহিক আকারে এই গল্পটি প্রকাশ করেছিলেন। গল্পটাই চমৎকার, দারুণ কিছু সংলাপ আর হিউমারের কারণে বেশ উপভোগ্য, কমেডিও ভালো। নির্মাতা মিজানুর রহমান আরিয়ান চিত্রনাট্য ও নির্মাতা ঠিকঠাকভাবে সাজিয়েছিলেন। তবে মূল গল্পে নায়কের মাঝে হিমুর প্রবল প্রভাব থাকলেও নাটকে কেন যেন সেটা দেখা যায়নি।

অভিনয়ে আফরান নিশো বেশ ভালো, তিনিই বেশি গুরুত্ব পেয়েছেন। নাম ভূমিকায় থাকা স্নিগ্ধ মেহজাবীনের সৌন্দর্য ও হাসিতে আবার মুগ্ধ হবেন, অভিনয়ও সাবলীল। স্বল্প সময়ে মনোজ কুমার দ্যূতি ছড়িয়েছেন, সেরা সংলাপটি তার বচনেই। অনেকদিন বাদে অভিনয়ে দেখা গেল আজিজুল হাকিমকে, এক সময়ের এই চিরসবুজ তারকার ভগ্ন শরীর দেখে খারাপ লেগেছে। শুরুর দিকে তিনিই জমিয়েছিলেন, তবে পুরো নাটকে গুরুত্ব কম। উনার স্ত্রীর চরিত্রে ছিলেন মুনিরা ইউসুফ মেমী। অনেক বছর পর এই দুজনকে একসাথে পাওয়া গেল, আরিয়ানকে বিশেষ ধন্যবাদ। সোমেশ্বর অলির কথায় আপেল মাহমুদের সুরে বাড়তি পাওনা ছিল শাওন গানওয়ালার কন্ঠে গান।

৬. জানবে না কোন দিন: ঢাকা শহরের এক নব দম্পতির গল্প। করোনাকালীন সময়ে দুজনেই গৃহবন্দী। করোনাকে স্বামী খুব একটা পাত্তা না দিলেও স্ত্রী বেশ ভীতু। কিন্তু স্ত্রীরই করোনা পজিটিভ ধরা দেয়, সাহস জোগাতে স্বামী জানায় দুজনেই করোনা পজিটিভ। স্ত্রীর পাশে থাকতে গিয়েই সত্যিই স্বামীর করোনা পজিটিভ ধরা পড়ে। তারপর?  মিজানুর রহমান আরিয়ান হৃদয় বিদারক গল্প ফুটিয়েছেন এই নাটকে। অপূর্ব ও তাসনিয়া ফারিনের অনবদ্য অভিনয় নাটকটিকে পূর্ণতা দিয়েছে।

৫. বোধ: মানুষ বাঁচে তার কর্মের মধ্য দিয়ে, মৃত্যুর পর বোঝা যায় তিনি আসলে কী ছিলেন। পারভেজ ইমামের লেখা ও রাফাত মজুমদার রিংকুর এই নাটকে দেখা যায় মোশাররফ করিম গ্রামের চেয়ারম্যান, বিশাল প্রতিপত্তি। তবে মানুষ ভালো নন, অন্যের স্ত্রীকে ক্ষমতাবলে রক্ষিতা বানান। একদিন তিনি দেখা পান এক আজব মানুষের, তাকে শুধু তিনিই দেখতে পান। তার মাধ্যমে নিজের সত্তা, বোধের পরিচয় পান মোশাররফ করিম। মোশাররফ করিম যে দারুণ অভিনেতা আরেকবার তিনি প্রমাণ করেছেন সঙ্গে আশিষ খন্দকারের শক্তিশালী অভিনয়। যোগ্য সঙ্গ দিয়েছেন তাসনুভা তিশা, রুনা খান, শহীদুল্লাহ সবুজ। চিত্রনাট্য আরও শক্তিশালী হলে এর অবস্থান আরও ওপরে থাকতো, তবে এই গল্প বেছে নেবার জন্য নবীন নির্মাতা রিংকুকে ধন্যবাদ।

৪. মুখ ও মুখোশের গল্প: যান্ত্রিক শহরের ফাঁদে কাছের মানুষদের সম্পর্কের জটিলতা নিয়ে ‘মুখ ও মুখোশের গল্প’। জিসান ও নীতু এই যান্ত্রিক শহরের দম্পতি, বিয়ের সাত বছর কেটে গেছে। সুখী দম্পতির এই স্বাভাবিক সম্পর্কের মাঝেই ঘটে যায় অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা, মুখের আড়ালে হয়ে উঠে যেন মুখোশের গল্প! সোশ্যাল মিডিয়া ও যান্ত্রিকতার মোহের ফাঁদে ভুল পথে পা বাড়ান। রাগ আসে, অভিমান আসে তবে প্রতিশোধ নয়। এটাই এই গল্পের শক্তিশালী দিক, যা তৃপ্তি দেয়। মুখোমুখি বসে দুজন নিজেদের মুখোশের আত্মহনন করছে, যা মন ছুঁয়ে গেছে। অভিনয়ে তাহসান-তিশা জুটিকে অনেকদিন পর পুরোনো রূপে পাওয়া গেছে। নির্মাতা আশফাক নিপুণকেও অভিনয়ে পাওয়া গেছে প্রায় পাঁচ বছর পর, এই ত্রয়ী দর্শকদের হতাশ করেননি। ওহ হ্যাঁ! বিশেষ করে বলতে হয় আরাফাত মহসিনের আবহ সংগীত, যেটা গল্পের সঙ্গে সমানতালে এগিয়ে চলে মুগ্ধ করেছে।

৩. তোমার পাশে হাঁটতে দিও: অনি পেশায় ডাক্তার, মফস্বলে আসে পেশার উদ্দেশ্যে, মাতৃভক্ত ছেলে। সেখানে পরিচয় হয় পক্ষাঘাতগ্রস্ত তটিনীর সঙ্গে। এরপর ধীরে ধীরে সেটা রূপ নেয় প্রণয়ে, কিন্তু অনির মা মেনে নেয় না। অনি ফিরে আসে শহরে, তবে ভালোবাসার টান কি এখানেই শেষ! আহমেদ সেজানের পাঠানো গল্পটা বেশ ভালো, ধীরগতিতে হলেও অনম বিশ্বাসের চিত্রনাট্য ও নির্মাণ বেশ ভালো। ময়মনসিংহের ব্রহ্মপুত্র নদের পাড়ের দৃশ্যগুলো মন ভরায়। অভিনয়ে ‘ন ডরাই’-খ্যাত সুনেরাহ বিনতে কামাল, মফস্বলের মেয়ের তুলনায় আধুনিকা মনে হলেও অভিনেত্রী হিসেবে প্রতিশ্রুতিশীল। খায়রুল বাশারকে এর আগে স্বল্প চরিত্রে দেখলেও এবারই প্রথম মুখ্য চরিত্রে অভিনয় করলেন। আর সুযোগটাও দারুণভাবে নিয়েছেন। পুরো নাটকে পরিমিত অভিনয় এবং শেষ দৃশ্যের অভিনয়ে নিজেকে প্রমাণ করেছেন। পুলক অনিলের কবিতা আর ইমন চৌধুরীর আবহ সংগীত, গান আরও পূর্ণতা দিয়েছে। আরও ছিলেন সাবেরী আলম ও মুসাফির সৈয়দ।

বিশেষ: নির্বাসন, যে শহরে টাকা উড়ে, ইরিনা, আমার অপরাধ কি?, এক্সট্রা আর্টিস্ট, সে ভালোবেসেছিল, দেখা হবে, হ্যামলেটের ফিরে আসা ও ফ্রোজেন কার।

২. ভিকটিম: আশফাক নিপুণের টেলিফিল্ম, গল্প গড়ে উঠেছে আফরান নিশো ও অপি করিমের সুখের সংসারে ছন্দপতন আসে নিশোর এক প্রাক্তন নারী সহকর্মীর কারণে। সে অভিযোগ করে নিশো তাকে যৌন হয়রানি করেছে, এতে সামাজিক ও পারিবারিকভাবে বিরূপ প্রভাব পড়ে নিশোর ওপর,অপি করিম কি আসল সত্য বের করতে পারবে কে ভিকটিম! অপি করিম এই নাটকের মূল আকর্ষণ, আফরান নিশোও চমৎকার অভিনয় করেছে, আরও আছে সাফা কবির ও আল মনসুর।

১. ইতি, মা: মধ্যবিত্ত পরিবারের এক আবেগঘন গল্প। বাবাকে হঠাৎ হারিয়ে ঋণে জর্জরিত পরিবারের একমাত্র উপার্জনকারী বড় মেয়ে,আর বড় ছেলে চাকরির উদ্দেশ্যে পাড়ি জমায় ঢাকায়। ছোট ছেলে রাজনীতিতে জড়িয়ে গোল্লায় গেছে। এমন সময় মেয়ে জানতে পারে মায়ের এক অপূর্ণ ইচ্ছার কথা, সে জানায় ভাইকে। তারপর দুজনেই ঠিক করে মায়ের সেই অপূর্ণ ইচ্ছা পূরণ করবে তার জন্য পাড়ি দিতে হয় কঠিন পথ। এই সময়ের আলোচিত নির্মাতা আশফাক নিপুণের টেলিফিল্ম ‘ইতি, মা’ র গল্প এভাবেই তুলে ধরা হয়েছে। বড় মেয়ের চরিত্রে ঈশিতার দারুণ অভিনয়, আফরান নিশোও খুব ভালো করেছেন, সঙ্গে মায়ের চরিত্রে শিল্পী সরকার অপুর মায়াভরা অভিনয়। এলিটা করিমের গাওয়া ‘মা’ গানটিও মন ছুঁয়ে যায়।


মন্তব্য করুন