প্রযোজক-পরিচালক শফি বিক্রমপুরীর ইন্তেকাল

প্রভাবশালী প্রযোজক, পরিচালক ও পরিবেশক শফি বিক্রমপুরী আর নেই (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)। আজ বুধবার (১৮ অক্টোবর) ভোর ৪টায় ব্যাংককের একটি হাসপাতালে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি। মৃত্যুকালে শফির বয়স হয়েছিল ৮০ বছর। 

মৃত্যুর খবরটি নিশ্চিত করেছেন চলচ্চিত্র পরিচালক সমিতির উপমহাসচিব অপূর্ব রানা। তিনি জানান, দীর্ঘ দিন ধরেই অসুস্থ ছিলেন শফি বিক্রমপুরী। গেলো জুন মাসে তিনি ঢাকার ইউনাইটেড হাসপাতালের আইসিইউতে ভর্তি ছিলেন। এরপর অবস্থার উন্নতি না হওয়ায় ব্যাংককে নিয়ে যাওয়া হয়। কিন্তু তাকে বাঁচানো গেলো না।

শফি বিক্রমপুরীর নামের সঙ্গে জড়িয়ে আছেন অনেক আলোচিত ও জনপ্রিয় সিনেমা। প্রযোজনা ও পরিচালনার পাশাপাশি দুটি প্রেক্ষাগৃহ নির্মাণ করে প্রদর্শক হিসেবেও বিরাট ভূমিকা রেখেছিলেন।

মাত্র ২২ বছর বয়সে প্রযোজক হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেছিলেন শফি বিক্রমপুরী। ১৯৬৫ সালে মুক্তি পাওয়া সেই ছবির নাম ‘গুনাই বিবি’। এতে তিনি যৌথ প্রযোজক ছিলেন। এছাড়া ১৯৭২ সালে খ্যাতিমান পরিচালক সুভাষ দত্ত পরিচালিত মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক সিনেমা ‘অরুণোদয়ের অগ্নিসাক্ষী’ এবং শহিদুল হক খান পরিচালিত ‘কলমি লতা’ সিনেমা দুটিও যৌথভাবে প্রযোজনা ও পরিবেশনা করেন তিনি।

হলিউডের বিখ্যাত ইংরেজি ছবি ‘এঞ্জেলিক’ ও ‘ফান্টুমাস’ সিনেমা দুটিও পরিবেশনা করেন তিনি।

পরিচালক হিসেবে শফি বিক্রমপুরীর অভিষেক হয় ১৯৭৮ সালে ‘রাজদুলালী’ সিনেমার মাধ্যমে। তার প্রযোজিত ও পরিচালিত অন্যান্য সিনেমার মধ্যে রয়েছে- ‘ডাকু মনসুর’, ‘বাহাদুর’, ‘জীবন তৃষ্ণা’, ‘সবুজ সাথী’, ‘সকাল সন্ধ্যা’, ‘মাটির কোলে’, ‘শশীপুন্নু’, ‘শান্তি-অশান্তি’, ‘জজসাহেব’, ‘দেনমোহর’, ‘অবুঝ মনের ভালোবাসা’ ইত্যাদি।

১৯৮৯ সালে ঢাকার মালিবাগে ‘পদ্মা’ এবং ‘সুরমা’ নামে দুটি সিনেমা হল নির্মাণ করেছিলেন তিনি। এছাড়া ঢাকা ও নারায়ণগঞ্জের সিনেমা হল মালিক সমিতির সভাপতি হিসেবেও দীর্ঘ দিন দায়িত্ব পালন করেছিলেন এই চলচ্চিত্রজন।

১৯৪৩ সালের ৪ জুলাই মুন্সীগঞ্জ (সাবেক বিক্রমপুর) জেলার শ্রীনগর থানার মত্তগ্রামে জন্ম শফি বিক্রমপুরীর। সেই সুবাদেই নামের সঙ্গে বিক্রমপুরী যুক্ত করেছিলেন। তবে পাঁচ বছর বয়স থেকেই পরিবারের সঙ্গে তার ঢাকায় বসবাস।

শফি বিক্রমপুরী অনেক জনপ্রিয় শিল্পী কলা-কুশলীকে চলচ্চিত্রে আত্মপ্রকাশের সুযোগ করে দিয়েছেন। ঢাকার স্মৃতিকথা নিয়ে ‘ঢাকায় ৫০ বছর’ নামে একটি বই লিখেছেন তিনি। বইটি ২০০৮ সালে প্রকাশিত হয়। এছাড়া একজন সমাজ সেবক হিসেবে তিনি বিক্রমপুরে প্রতিষ্ঠা করেছেন নাসিমা শফি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, বেগম ফাতেমা আরশেদ আলী উচ্চ বিদ্যালয়, আল মদিনা জামে মসজিদ এবং নেত্রকোনায় পাঁচকাহনিয়া ফাতেমা আমীর আলী দারুল উলুম মাদ্রাসা এবং দশাল আশরাফুল উলুম হাফে।