Select Page

রিল একটা সিনেমা হল দুইটা!

রিল একটা সিনেমা হল দুইটা!

রিল একটা সিনেমা হল দুইটা; অর্থাৎ সিনেমার প্রিন্ট একটা অথচ প্রদর্শিত হচ্ছে দুই হলে, কি অবাক লাগছে? একটু অবাক লাগারই কথা, বিশেষ করে বর্তমান তরুণ দর্শকদের কাছে অবাক লাগারই কথা। আসলে মূল কথা হলো দুটো সিনেমা হলে একই ছবি চালবে কিন্তু ছবির প্রিন্ট মানে রিল একটাই থাকবে। আজ তেমনই অজানা কিছু জানানোর চেষ্টা করবো।

বজ্রপাত ছবির দৃশ্য

একটা সময় বিশেষ করে আশির দশকের দিকে এই ব্যাপার বেশি দেখা যেতো, যা নব্বই দশকের মাঝামাঝি পর্যন্তও ছিলো। তবে ঈদের মতো বড় কোনো উৎসবে মূক্তিপ্রাপ্ত ছবির ক্ষেত্রেই বেশি ঘটতো। এ ক্ষেত্রে বেশিরভাগ জেলা ভিত্তিক হলের ক্ষেত্রেই দেখা যেতো। ঢাকা-চট্টগ্রামের মতো বড় বড় শহরেও হতো তবে তা সংখ্যায় বেশ কম।

এই এক রিলে দিয়ে দুটি হলে চালানোর ব্যাপারটি সবচেয়ে বেশি কাজ করতো সে সব ছবির অতিরিক্ত চাহিদার জন্য। আবার অনেক সময় রিল সংকটেও এমনটা হতো। দেখা গেছে, কোথাও একই ছবি দুটি হল চাচ্ছে, কিন্তু রিল সংকট আছে। তখন যদি সেখানকার হল দুটি কাছাকাছির অবস্থানে থাকে তাহলে এই এক রিলে দুটি হলে সিনেমা অনেকেই চালিয়েছে। তবে অবশ্যই ছবির প্রযোজকদের সন্মতিতে।

দেখা গেছে, একটি হলে ছবিটি সময় মতো শুরু হয়েছে অথচ একই ছবির আরেকটি হলে তখনও শো শুরু হয়নি। সে ক্ষেত্রে প্রথম হলটিতে দুটি রিল চালানোর পরে অপর হলটিতে তখন ছবি শুরু হয়েছে। অর্থাৎ দুই রিলের সময়ের একটা গ্যাপ রেখে তা করা হতো। যাতে করে রিল নিয়ে এক হল থেকে আরেক হলে যাতায়াতের সময় রাখা হতো।

আমার নিজেরও এরকমভাবে সিনেমা দেখার বেশ কয়েকবারের অভিজ্ঞতাও হয়েছে। এই মুহূর্তে নব্বই দশকের হিংসা, বজ্রপাত, অর্কমা ছবিগুলোর কথা মনে পড়ছে।

আমি তখন রাজশাহীতে, এই শহরে মোট চারটি সিনেমা হল ছিলো— বর্ণালী, উপহার, কল্পনা (উৎসব) ও স্মৃতি (অলকা)। ‘অর্কমা’ চলছিলো উপহার ও উৎসবে। বাসার কাছেই উপহার হওয়াতে সেখানেই দেখতে গেছি। কিন্তু নির্দিষ্ট সময় পার হয়েও যখন শো শুরু হয়নি তখনই বুঝে গেলাম নিশ্চয়ই ছবির রিল একটা আর চলছে দুইটা হলে। এরকম অভিজ্ঞতা আগেও হয়েছে তাই কিছুক্ষণ অপেক্ষা করলাম। যথারীতি দুই রিলের সমান সময় রেখে ছবিটি পরে শুরু হলো। অবশ্য এমটা সপ্তাহ জুড়ে হতো না। রিল সংকট কেটে গেলে বা নতুন প্রিন্ট করানো হয়ে গেলে দু-একদিন পরই যার যার হলে সময় মতোই ছবি চালানো হতো।

বজ্রপাত ছবির দৃশ্য

এই সময়টায় একটি মজার ব্যাপারও কাজ করতো। তা হলো রিল সংকট যে ছবির ক্ষেত্রে ঘটতো; সে সময়ের তরুণ উঠতি দর্শকরা ভাবতো সে ছবিটি চরম হিট, যার জন্য রিলই পাওয়া যায় না। আবার যদি সে সব ছবির মধ্যে কারো প্রিয় নায়ক বা নায়িকা থাকতো তাহলে তো বেশ মধুর একটা তর্কও শুরু হয়ে যেতো— কার নায়ক-নায়িকাকে আগে রাখবে ভেবে, যা বর্তমান সময়ে ফেসবুকে হয়ে থাকে। তবে পার্থক্য একটা— তখনকার দর্শকরা সিনেমা হলে ছবি দেখে বন্ধু বান্ধবদের সঙ্গে মধুর তর্ক করে সময় কাটাতো আর এখনকার উঠটি দর্শকরা সিনেমা হলে তো দুরের ব্যাপার সিনেমা না দেখেই ফেসবুকে তর্ক করে বেড়ায়, যা মোটেও কাম্য নয়।

আমাদের সময়ের দর্শকরা সিনেমা হলে ছবি দেখতো ছবি বুঝতো। অনেকে আবার পরিচালক-প্রযোজক দেখে ছবি দেখতো (নায়ক-নায়িকা নয়)। প্রতিটি দর্শকেরই কোনো না কোনো পছন্দের তারকা থাকতো। কিন্তু এই তারকা ছাড়া ছবি দেখা যাবে না এমন মনোভাব কখনই থাকতো না, সবাই সবার ছবি দেখতো। সুস্থ আলোচনা সমালোচনা করতো; যাতে করে আরেকজন দর্শক ছবিটি দেখতে আগ্রহী হয়।

আমি আমার প্রায় লেখায়ই আফসোস করে বলি, যদি আবার সেই সিনেমা হলে ছবি দেখার সময়টায় ফিরে যেতে পারতাম! কত আনন্দ আর ভালোলাগা যে ফেলে এসেছি সেখানে, আবার যদি তাদের ফিরিয়ে আনতে পারতাম!


লেখক সম্পর্কে বিস্তারিত

আরিফুল হাসান

চলচ্চিত্র বিষয়ক লেখক

মন্তব্য করুন