Select Page

‘সিনেমা রিলিজের পর টাকা আনতে বস্তা নিয়ে গেলেন প্রযোজক’, তারপর …

‘সিনেমা রিলিজের পর টাকা আনতে বস্তা নিয়ে গেলেন প্রযোজক’, তারপর …

ঢাকাই সিনেমায় আজকাল পেশাদার প্রযোজক নেই বললেই চলে। ফলে নানা প্রলোভনে অনেই মৌসুমী প্রযোজক হয়ে আসেন, পরে সর্বশ্বান্ত হয়ে যায়। বিষয়টি কীভাবে ঘটে তা গল্পের মাধ্যমে তুলে ধরলেন পরিচালক অনন্য মামুন

‘সব চেয়ে বড় মাইনকা চিপায় প্রযোজক’ শিরোনামের দীর্ঘ পোস্টে তিনি লেখেন—

“আমাদের চলচ্চিত্রে এখনো কোন বড় প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান বা পরিবেশক নাই, যারা নিজ শক্তিতে অনিয়মকে থামাবে। হয় প্রযোজক কোন সুন্দরী রমনীকে নিজের করে পেতে চায়, বলে এটা চলচ্চিত্র বানানোর চিন্তা করেন বা পরিচালক তার বুদ্ধি বিনিয়োগ করে একজন প্রযোজক ম্যানেজ করে একটি চলচ্চিত্র বানানোর আয়োজন করেন, বা শখের বশে নায়ক হতে মন চাইলো, সাথে টাকাও আছে তাই একটি চলচ্চিত্র বানানোর আয়োজন করলে।

ব্যবসা বোঝেন বা চলচ্চিত্রকে ভালোবেসে চলচ্চিত্র বানানোর প্রযোজকের সংখ্যা ১০%।  চলচ্চিত্র শুটিং শুরু আগেই সবাই টাকা নিয়ে নিলো, যদি বড় স্টার কাউকে নিতে হয় তাহলে তো এ্যাডভ্যান্স ফুল পেমেট করে দিতে হবে।  সোস্যাল মিডিয়ায় নিউজে নাম চলে এলো প্রযোজকের। তিনি তো মহাখুশি। শুরু হলো সিনেমার শুটিং। সব চাইতে আজব ব্যাপার কি জানেন চলচ্চিত্র একমাত্র আজব জায়গা সেখান রোদ বৃষ্টি থাক না থাক শিল্পীর মাথায় কিন্তু ছাতা লাগবেই। একজন হিরো বা হিরোইনের জন্য কম করে হলেও দুজন সহকারী লাগে। হেয়ার মেকাপ ও পোশাকের লোকের কথা ছাড়াই বলছি। হিরো হিরোইন মিলারেল ওয়াটার খাচ্ছে এমন কি তার সহকারীরাও,  আর প্রযোজক বেচারা দুরে ছাতা ছাড়া দাঁড়িয়ে আছেন, হাতে পানির প্লাস। আামাদের চলচ্চিত্রে আমি শিল্পীকে সিগারেট দিতে দেখেছি, শিল্পী ধুমপান না করলেও তাকে সিগারেট দিতে হবে।

হায়দরাবাদ চেন্নাই মুম্বাই কাজ করেছি কখনো কাউকে সিগারেট দিতে হয়নি। হিরো হিরোইন বেনসন খাচ্ছে, আর প্রযোজক দূরে দাঁড়িয়ে ব্যান্ড ছাড়া  কোন কোম্পানির সিগারেট টানছেন আর কাশি দিয়ে যাচ্ছেন। বাজেট বেড়ে যাওয়ার ব্যাখাটা না দিলাম। মাঝে মাঝে তো হিরো হিরোইনের শিডিউল পাবার জন্য উপঢৌকন দিতে হয়। সিনেমার শুটিং শেষ হলো। এক দিনের ডাবিং হিরো হিরোইন ইচ্ছে করে ৫ দিন করলো। কারণ ডাবিং করলেই কনভেন্স ২/৩ হাজার পাওয়া যায়। প্রযোজক তো টাকা দিয়েই যাচ্ছে।  সিনেমা শেষ কারার জন্য নিজের গাড়িটাও বিক্রয় করে দিলেন। একদিন উনি সিএনজির ভাড়া দিচ্ছিলেন হঠাৎ দামি গাড়ি নিয়ে এসে তার সামনে নামলো নতুন নায়িকা। প্রযোজকে দেখেও কথা না বলে চলে গেলো মেকাপ রুমে। আর সিএনজিওয়ালা চেচিয়ে বলছে, ভাইজান ভাড়াটা মিটিয়ে দিন, নায়িকা পরে দেখেন। সিনেমার সব কাজ শেষ, হিরো হিরোইন বললো ভাই সিনেমা তো খুব ভালো হয়েছে বেদের মেয়ে জোসনার রেকর্ড ভেঙে দিবে, পাবলিসিটি টা ভালো করে করেন।

প্রযোজক আবার নতুন করে স্বপ্ন দেখা শুরু করলো। ১০% সুদে আবার টাকা লোন করলেন। মনে তো বড় স্বপ্ন এক বস্তা টাকা কামাবো, ১০% কি আসে যায়। পরিচালক সময়ের সব চাইতে বড় পাবলিসিটির প্ল্যান দিলো, কিন্তু হিরো হিরোইন ছাড়া কিছুই করা সম্ভব না। কি হবে এখন আবার গোল্লাছুট শুরু। হিরো হিরোইন নতুন করে টাকা দাবী করলো, অথবা শিডিউল নাই বলে নিষেধ করে দিলো। অনেক সুধীজন বুদ্ধি দিলো স্টার সিনেপ্লেক্সের দুই দিনের সব টিকিট কিনে ফেলেন। একটা সুপার হিট আওয়াজ তুলেন দেখবেন সিনেমার ব্যবসা কোথায় যায়।

প্রযোজক তাই করলে, মিডিয়া আসলো দেখলো সিনেমার টিকিট পাওয়া যাচ্ছে না। হিরো হিরোইন সাক্ষাৎকার নিয়ে যাচ্ছে চলচ্চিত্রের ইতিহাসের সব চাইতে বড় হিট  সিনেমা। হিরো হিরোইন তাদের সম্মানী ডাবল করে দিলো। একই স্বপ্ন নিয়ে তাদের বাড়িতে নতুন প্রযোজকদের লাইন লেগে গেলো।  সিনেমা রিলিজের দুই দিন পর প্রযোজক একটা বস্তা নিয়ে অফিস গেলেন টাকা আনতে। ম্যানেজার যাওয়ার সাথে উল্টো তাকে একটা হিসাব ধরিয়ে দিলো পোস্টার পাবলিসিটি বাবদ ৫ লাখ টাকা বাকি। প্রযোজক বলো, সব জায়গা তো হাউজফুল টাকা তো আসবেই। ম্যানেজার বললো, স্যার ৭০ হলে রিলিজ হয়েছিলো, কাল ৫০ থেকে নেমে গেছে। প্রযোজকের বুকে ব্যাথা উঠলো, উনি ঢাকা মেডিক্যাল গেলেন ডাক্তার দেখাতে। লম্বা সিরিয়াল, বুকের ব্যাথা আরও বাড়ছে তার। এমন সময় টিভি নিউজে দেখলেন, তার সিনেমার নায়িকা হালকা জ্বরে অসুস্থ্য হয়ে ইউনাইটেড হসপিটালের ভিএইপি কেবিনে চিকিৎসা নিচ্ছেেন। তা দেখে প্রযোজকের ব্যথা আরও বেড়ে গেলো। জ্ঞান হারিয়ে ফেলেন।

দিন চলে যায় পরিচালক, কিছু ছোট টেকনিশিয়ান ও অফিস ম্যানেজার পাওনা টাকা জন্য ফোন করে যাচ্ছে। তাই তিনি সিদ্ধান্ত নিলেন তার সিনেমার ডিজিটাল রাইটস বিক্রয় করে দিবেন। ৫/৭ লাখ টাকায় সব রাইটস বিক্রি করে যতটা পারেলন সবার পাওনা কিছুটা দিয়ে দিলেন। আর যা দিতে পারলেন না,  তার জন্য হাত ধরে মাফ চেয়ে নিলেন। কারণ প্রযোজক জানে ঋণের বোঝা নিয়ে তিনি বেহেস্ত যেতে পারবেন না। দিন চলে যায় মাঝে মাঝে প্রযোজকের নামে পিকনিকের দাওয়াত কার্ড আসে। কিন্তু চাঁদা দিতে হবে বলে তিনি পিকনিকেও যেতে পারেন না। একদিন সোশ্যাল মিডিয়ায় তার সিনেমার কিছু ক্লিপ দেখতে পান। বন্ধদের গর্ব করে বলেন, দেখ এটা আমার প্রযোজিত সিনেমা। কিন্তু বন্ধুরা ভুলটা ধরিয়ে দেয়। দেখা যায় সেখানে অন্য কোম্পানি লোগো ও নাম। প্রযোজক কপিরাইট অফিসে যোগাযোগ করলেন। তিনি জানতে পারলে যাদের কাছে তিনি সিনেমাটার ডিজিটাল রাইটস বিক্রি করেছেন, তারা এখন তাদের নামে সিনেমাটি নিয়ে নিয়েছেন। একটা প্রযোজকের এত টাকা দিয়ে বানানো সেই সিনেমার মালিক হয়ে গেছেই সেই ডিজিটাল কনটেন্ট কোম্পানি, তাও মাত্র ৫/৭ লাখ টাকায়। হায়রে সিনেমা হায়রে প্রযোজক শেষ পর্যন্ত নিজের এত কষ্টে বানানো সিনেমাটায় নিজের অস্তিত্ব টাও থাকলো না।”

কাজের ক্ষেত্রে বর্তমানে শাকিব খান অভিনীত ‘দরদ’ নিয়ে ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন অনন্য মামুন। এছাড়া একের পর এক ভারতীয় সিনেমা তার হাত ধরেই বাংলাদেশে আসছে।


মন্তব্য করুন