Select Page

ঈদুল আজহা ২০১৯ : ভালো লাগা নাটক

ঈদুল আজহা ২০১৯ : ভালো লাগা নাটক

গত কয়েক ঈদের মধ্যে ভাল নাটকের খরায় সবচেয়ে বেশি ভুগেছে ছিল গত রোজার ঈদ। সে তুলনায় এবারের ঈদে মোটামুটি ভাল ভাল নাটক হয়েছে। চোখে পড়ার মত বিষয় এবার সামাজিক বিভিন্ন সমস্যাগুলো নিয়ে প্রচুর নাটক হয়েছে। এবারের ঈদে ৪০-৫০ এর মত নাটক দেখা হয়েছে। ইউটিউবে না আসার কারণে বেশ কিছু আগ্রহের নাটক দেখা মিস হয়েছে। দেখা নাটকগুলি থেকে যেগুলো ভাল লেগেছে সেগুলো নিয়ে লিখছি!

কিংকর্তব্যবিমূঢ়
পরিচালনা : ইফতেখার আহমেদ ফাহমি
অভিনয় : চঞ্চল তিশা

সংক্ষেপে : এক এতিম জাদুকর! স্ত্রী নিয়ে থাকে থাকে মামা শ্বশুরের বাড়ি। সেজন্য মামার হাজার কথা শুনতে হলেও দিনশেষে সে খুশি! কারণ যে মানুষটির ভালবাসার সবচেয়ে বেশি দরকার সে তাকে ভীষণ ভালবাসে। একটাই দুঃখ তারা নি:সন্তান। কাহিনীক্রমে এক বাচ্চা জাদু দিয়ে নিয়ে আসে। এ ও কি সম্ভব? জাদুর সেই বাচ্চা কি পারবে নি:সন্তান দম্পতির বাচ্চার অভাব পূরণ করতে? খুব চমৎকার গল্প শেষে সুন্দর টুইস্ট এবং ফাহমির অসাধারণ গল্প বলার ভঙ্গি। সব মিলিয়ে এবারের সবচেয়ে পছন্দের নাটক।

এই শহরে
পরিচালনা : আশফাক নিপুণ
অভিনয় : মেহজাবিন, নিশো

সংক্ষেপে: হাসপাতাল থেকে এক বাচ্চা চুরি হয়। সেই চুরির সাথে জড়িত এক আয়া। স্বামী স্ত্রী বাচ্চা চুরি করে বিক্রির পেশায় জড়িত। সেই বাচ্চাকে কেন্দ্র করে আমাদের চারপাশের প্রতিদিনকার বেশ কিছু অপরাধকে এক সুতোয় বাঁধা হয়েছে এই নাটকে। চমকপ্রদ কাহিনী, শেষে সুন্দর টুইস্ট এবং গতানুগতিক নিপুণের সুন্দর গল্প বলার ভঙ্গি মিলিয়ে বেশ ভাল লেগেছে এই টেলিফিল্ম।

আমাদের সমাজ বিজ্ঞান
পরিচালনা : শাফায়াত মনসুর রানা
অভিনয় : ইয়াশ, তানজিকা, তানিয়া বৃষ্টি

সংক্ষেপে : ২২-৩০ বছর বয়সী মধ্যবিত্ত ছেলেদের টেলিফিল্মটি দেখলে হুট করে মনে হবে আমাদের নিজের গল্প বলা হচ্ছে। নিজের স্বপ্ন, ইচ্ছে, প্যাশনের সঙ্গে যখন আমাদের ফ্যামিলি তথা সমাজের বিস্তর ফাঁরাক থাকে তখন একটা মানুষের জীবন কতোটা দুর্বিষহ হয়ে যায় তা নিয়ে গল্প আমাদের সমাজ বিজ্ঞান! শাফায়াত মনসুর রানা এম্নিতেই খুব সময় নিয়ে কাজ করেন। মূল চরিত্রে ইয়াশের চমৎকার অভিনয়ে নাটকটি প্রাণ পেয়েছে।

দরজার ওপাশে
পরিচালনা : তানিম রহমান অংশু
অভিনয় : অপি করিম, জয়রাজ।

সংক্ষেপে : বাংলাদেশে জন্ম নেয়া মেয়েদের আদিকাল থেকেই নিপিড়ন সহ্য করে যেতে হয়। যুগ পাল্টেছে মেয়েরা শিক্ষিত হচ্ছে, চাকরি করছে তবে মেয়েদের প্রতি দৃষ্টিভঙ্গিতে খুব বেশি পরিবর্তন আসে নি। তেমনি এক নারীর গল্প। সোসাইটি, সিস্টেম, ক্ষমতা কে চ্যালেঞ্জ করে নিজের পরিধির বাইরে গিয়ে সমলিঙ্গের কারও সাথে ঘটে যাওয়া ভয়াবহ এক অপরাধের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের গল্প। তানিম রহমান অংশুর পরিচালনা উপভোগ্য। ভিন্ন ধরনের চরিত্রে অপি করিমের সাবলীল অভিনয় উপভোগ করার জন্য হলেও নাটকটি দেখা উচিৎ!

সাবলেট
পরিচালনা : মিজানুর রহমান আরিয়ান
অভিনয় : পূর্ণিমা, অপূর্ব

সংক্ষেপে : পৃথিবী নাকি গোল হয়। তাই বোধহয় বহু বছর আগে যার আসার কথা ছিল তখন না আসলেও বর্তমানে সেই প্রাক্তনকে আবিষ্কার করে একই ছাদের নিচে। সেই প্রাক্তন আরেকজন কে নিয়ে ভাল আছে এই ভাবনা অনেক কষ্ট দিচ্ছে। কেমন সেই কষ্ট? দুই প্রাক্তনের আক্ষেপ হাহাকারের গল্প সাবলেট। গোছানো কাহিনী এবং পূর্ণিমার সুন্দর অভিনয়ে ভীষণ ভাল লেগেছে নাটকটি!

ক্ষণিকের আলো
পরিচালনা : সাগর জাহান
অভিনয় : অপি করিম, চঞ্চল

সংক্ষেপে : সাগর জাহান কমেডি নাটকের জন্য পরিচিত। চুপ ভাই কিছু বলবেন এর দীর্ঘদিন পর তার সিরিয়াস কোন গল্পের নাটক ভাল লাগল। বাড়ি থেকে পালিয়ে প্রেমিকের মেসে আশ্রয় নেন অপি করিম। কিন্তু প্রেমিক সেখানে নেই। তখন বাড়ি ফিরে যাওয়াও সম্ভব নয়। অন্যদিকে প্রেমিকের রুমমেট সহজ সরল চঞ্চলের পক্ষেও মেস বাড়িতে একজন মেয়েকে আশ্রয় দিলে বিপত্তির সম্মুখীন হতে হবে। তখন অপি কি করবে? চঞ্চলেরই বা কি করা উচিৎ তা নিয়ে নাটক ক্ষণিকের আলো।

উবার
পরিচালনা : সাজিন আহমেদ বাবু
অভিনয় : তৌসিফ, সাবিলা, তারিক আনাম খান

সংক্ষেপে :পরিবারের কর্তা পরিবারের সদস্যদের স্বপ্ন পূরণের জন্য পরিবারের সবার অগোচরে কাজের পাশাপাশি উবার চালান। উবার চালাতে গিয়ে এক অদ্ভুত অভিজ্ঞতার সম্মুখীন হন। তার মেয়ে আরেক ছেলের সাথে পালিয়ে যাবার সময় সেই ছেলে উবার ডাকে। সেই কল তার কাছে আসে। তখন সেই বাবা (উবার চালক) কি করবে? নিজের পরিচয় প্রকাশ করে মেয়েকে আটকানো উচিৎ? নাকি যে মেয়ে আরেক ছেলের হাত ধরে পালাতে চাইছে তাকে পালাতে দেয়া উচিৎ? জানতে হলে দেখতে হবে নাটক উবার। কিছু প্লটহোল থাকলেও নাটকটি মোটামুটি ভাল লেগেছে।

আগন্তুক
পরিচালনা : আশফাক নিপুণ
অভিনয় : নিশো, ইয়াশ, সাফা

সংক্ষেপে : বরাবরই আশফাক নিপুণ সমাজের আলোচিত ইস্যুতে নাটক বানান। এটিও তেমন। পরিচিত ধাঁচের গল্প হলেও পরিচালনার কারণে পুরো নাটক উপভোগ করা গিয়েছে। ভিন্নধর্মী চরিত্রে নিশো বেশ ভাল করেছেন।

মধ্যরাতের সেবা
পরিচালনা : জিয়াউর রহমান
অভিনয় : রাশেদ সীমান্ত, অর্ষা

সংক্ষেপে : হাসপাতালে বোনের বাচ্চা দেখতে একজনের বাইকে চড়ে অর্ষা। তখন ঘটতে থাকে অদ্ভুত সব ঘটনা। যাতে অর্ষা বিরক্ত হয়। এভাবে গল্প এগুতে থাকে। পুরো নাটক কমেডি ধাঁচের হলেও শেষটুকু চমকপ্রদ! অর্ষা স্বভাব সুলভ ভাল অভিনয় করেছেন। নতুন হিসেবে রাশেদ সীমান্ত অবাক করেছেন।

ট্রাস্ট মি
পরিচালনা : সুমন আনোয়ার
অভিনয় : চঞ্চল, তিশা

সংক্ষেপে : নামের সাথে গল্পের তেমন মিল নেই। এক নি:সন্তান দম্পতির এক বাচ্চা কুড়িয়ে পাবার ও তাকে নিয়ে স্বপ্ন দেখার গল্প। শেষটুকু অনুমেয় হলেও গল্পের কারণে নাটকটি ভাল লেগেছে।

রাজন দ্য কিং
পরিচালনা : মুরসালিন শুভ
অভিনয় : মোশাররফ, অর্ষা

সংক্ষেপে : ডাকাত দলের নতুন সদস্য মোশাররফ! নিজের সাহসের অভাবে এই পেশায় কোনভাবেই মানিয়ে নিতে পারছিল না। প্রেম নাকি বোকাকে বানায় চালাক চালাককে বোকা। বোকা মোশাররফকে পারবে পরিবর্তন করতে? তা নিয়ে নাটক রাজন দ্যা কিং। কাহিনীতে ভাল টুইস্ট আছে। এ ধরনের গল্পে উত্তেজনা যোগ করতে যে মানের পরিচালনা প্রয়োজন তা পুরোপুরি না থাকলেও মোটামুটি ভাল কাজ।

ডেইট
পরিচালনা : মাবরুর রশীদ বান্নাহ
অভিনয় : তাহসান, সারিকা

সংক্ষেপে : বিয়ের প্রতি অনাগ্রহী তাহসান বিয়ের জন্য পাত্রী দেখতে যায়। চঞ্চল স্বভাবের সেই পাত্রী সারিকা তাহসানের সাথে একের পর এক অদ্ভুত কান্ড ঘটাতে থাকে। খুব ভাল কাহিনী না থাকলেও স্ক্রিনপ্লে ও সারিকার অভিনয়ের কারণে মোটামুটি ভাল লেগেছে নাটকটি।

ভিউ
পরিচালনা : মাহমুদুর রহমান হিমি
অভিনয় : নিশো, মেহজাবিন

সংক্ষেপে : একজন স্বামী কিংবা বাবার জন্য কঠিনতম পরিস্থিতি কি? স্ত্রী সন্তান সম্ভবা! অবস্থা শংকটাপন্ন। তখন তাকে সিদ্ধান্ত দিতে হবে স্ত্রী কে বাঁচাবে নাকি তার সন্তানকে বাঁচাবে?এক জোড়া নব্য বিবাহিত কপোত কপোতির গল্প নিয়ে নাটক ভিউ। শেষটুকুর কারণে ভাল লেগেছে।

কুহু ভালবেসেছিল অর্ককে
পরিচালনা : রাজীবুল ইসলাম রাজীব
অভিনয় : রিচি, রিয়াজ

সংক্ষেপে : কুহুর ছোট ভাইয়ের হোম টিউটর অর্ক। হুমায়ূন আহমেদের নাটকগুলোর চরিত্রের মত অদ্ভুত শিক্ষক সে। অদ্ভুত সব কান্ড কারখানা! এক সময় সে জানতে পারে কুহু তাকে ভালবাসে। আসলেও কি বাসে? নাকি বামুনের চাঁদের স্বপ্ন? জানতে হলে টেলিফিল্মটি দেখতে হবে।

বুক ভরা ভালবাসা ২
পরিচালনা : মুহাম্মদ মোস্তফা কামাল রাজ
অভিনয় : শবনম ফারিয়া, তৌসিফ
সংক্ষেপে : বুক ভরা ভালবাসা ১ এর সিকুয়েল এই নাটকটি। নব্য বিবাহিত মধ্যবিত্ত দম্পতির টানাটানির সংসারের গল্প। এই নাটকে শবনম ফারিয়ার চরিত্রটি ৯০ দশকের সামাজিক সিনেমাগুলোর শাবানাকে মনে করিয়ে দেয়। প্রথম নাটকটি যাদের ভাল লেগেছে তারা দেখতে পারেন।

বিহাইন্ড দ্যা পাপ্পি, কেইস ৩০৪০, কুহক, টাইমলাইন নাটকগুলি নিয়ে আগ্রহ থাকলেও পুরোপুরি দেখার সুযোগ না হওয়াতে মন্তব্য জানানো গেল না। তবে খুব প্রত্যাশা নিয়ে কিছু নাটক দেখে হতাশ! উল্লেখযোগ্য : আশ্রয়, রঞ্জনা আমি আবার আসব, একটু পর রোদ উঠবে, ডুডল অফ লাভ, মি এন্ড ইউ, ইনায়েত, ফেরা, চিহ্ন!

বি: দ্র: ভাল লাগাটা একান্তই আমার ব্যাক্তিগত মতামত! সেক্ষেত্রে ইউটিউব ভিউ কিংবা লোকজন ভাল বলছে তা আমলে নেয়া হয়নি।


মন্তব্য করুন